ঈদ : একাল ও সেকাল

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী ১৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:৩৭:১০ বিকাল

​​হাজার কিম্ভুত টাইপের হলেও ছেলেবেলার ঈদ খুব বেশি ম্লান ছিলো না। ঈদের আগের রাতের মধ্যেই ঈদকার্ড বিতরণের একটা ব্যাপার ছিলো। ২ টাকা আর ৫ টাকায় কিছু কার্ড পাওয়া যেত। ৫ টাকার কার্ডগুলো এমবোস করা থাকতো। তখনো গোটা এলাকায় কিছু 'বাড়িওয়ালার' ছেলে ভাইয়েরা বিল্ডিং এর উপরে 'সাউন্ড বক্স' লাগিয়ে গান বাজাতো। সম্ভবত সেগুলোকে 'ডেক সেট' বলা হতো। বিটিভিতে অনুষ্ঠানের ঘোষিকাদের মাথার কাপড় ফেলে দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা দেয়ার ব্যাপারটা থাকত ঈদ হবে কিনা তা জানার মূল উৎস।

ঢাকায় কাটানো শৈশবের তীব্র একাকীত্বে কাটানো ঈদগুলোর মাধ্যমে হয়ত আল্লাহ আমাকে উপলব্ধি করতে তৈরি করে দিয়েছিলেন যে ঈদ শরীর-মনের স্ফূর্তির চেয়ে অনেক আত্মিক বিষয়। প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন সময়ে আমার জীবনে ঈদ ছিলো মলিন। নানান কারণে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়া হত না, ঢাকার আশেপাশে পরিচিত কিছু 'বন্ধু' তখন গ্রামে চলে যেত। আমি বাসার সামনের খোলা জায়গাটায় নতুন কেনা প্যান্ট-গেঞ্জি পড়ে আনমনে ঘুরতাম। কী জানি! এভাবেই হয়ত একলা একলা চিন্তা করা আর সবকিছুকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখতে থাকাটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো।

ছোটকালে চোখ অনেক তীব্র থাকে। আমি দেয়াল-লিখনগুলোর কোন অক্ষর হালকা অস্পষ্ট হয়ে গেলে সেটাও টের পেতাম। তখন রাস্তায় বের হলে উদ্ভিন্নযৌবনা কিশোরী-যুবতীদের নিজেদেরকে প্রদর্শনের ব্যাকুলতা নিয়ে হাঁটতে দেখতাম না। এখনকার ঈদের প্রস্তুতিগুলো অনেক বেশি শরীরকেন্দ্রিক। কামের প্রচার ও প্রভাব প্রতিটি বিষয়ে। গতকাল ঈদের দিন রাস্তায় তরুণ-তরুণীদের ঝাঁক দেখেছি ঢাকার রাস্তায়, ওদের অনেক মন্তব্যও কানে এসেছে যেগুলো স্পষ্ট নোংরা। একসময় ভাবতাম মেয়েরা স্বভাবতই লজ্জাবতী, সময় বদলেছে এই ধারণা দূর করার। অজস্র মেয়েই এখন নিজেকে প্রদর্শনের উদগ্র বাসনায় থাকে তা আচরণেই সুস্পষ্ট হয়, তাকে "দেখতে কেমন লাগছে, কতটা আকর্ষণীয়া" সেটা পথের পুরুষ, এবং পরপুরুষের কাছ থেকে জানতে পারার নিষিদ্ধ আগ্রহের ব্যাকুলতায় থাকে।

প্রজন্ম হঠাৎ কেমন বদলে গেলো! পর্ণগ্রাফির জঘন্য চরিত্রের নোংরা নারীদের নামে পোশাক বিক্রি হয় বাজারে, হিন্দি সিরিয়ালের অভিনেত্রীর পরা পোশাকের জন্য অস্থির হয় বালিকা-কিশোরীরা। একসময় এত বেশি অর্থস্বর্বস্ব ছিলো না ঈদ। ঈদ মানেই রাস্তায় নেমে নিজেদের নোংরামিকে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপার ছিলো না। টেলিভিশনেও সারাদিন বিবাহবহির্ভুত প্রেম ও পরকীয়ার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা "বিনোদন" ছিলো না। একটা বিশাল প্রজন্ম এখন শুধুই কাম চেনে। এই গেলো রমাদানেই কত বাজে সব অভিজ্ঞতা হলো!

ভিন্নধারার অসাধারণ কিছু মানুষও আছে। হয়ত এই সংখ্যাটা ঐ স্রোতের তুলনায় কম। এই মিডিয়া মাত্র ক'টা বছরেই সর্বগ্রাসী হয়ে ধ্বংস করে দিলো প্রতিটি পরিবারের ভেতরের লজ্জাবোধ, মিতব্যয়িতা। হঠাৎই আত্মপ্রচারণা, হিংসা, লোভ, প্রচুর কেনাকাটার নেশায় পেয়ে বসলো সবাইকে... উপলব্ধি করলাম, আল্লাহর ইচ্ছায় বক্র অন্তরগুলো বক্রতার সুযোগ পেতেই থাকে। সত্যাশ্রয়ীরা খারাপদের নোংরামিকে দেখে নিজেদের দূরে রাখার আগ্রহে সত্যের ও ঈমানের স্বাদ পেয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের অন্তরগুলোকে ঈমানের উপরে জারী রাখুন।

বিষয়: বিবিধ

১০১৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

255574
১৮ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৮
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
255583
১৮ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৫১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : অনেক বছর পর এক ছেলেবেলার ক্লাস্মেইটের সাথে ফেসবুকে দেখা, কথা বলার এক ফাকে আমাকে বলে, তোর জি এফ আছে? দুষ্টামি করে বললাম, বয়স হয়েছে না! তার জবাবে সে যা বলল, আমি একেবারে থ হয়ে গেলাম, বলে কেন, তুই কে গে? এই হল মেয়েদের অবস্থা, যেসব কথা আমরা পুরুষ্রা বলতে লজ্জা পাই, এখন মেয়েরা দেদারসে তা বলে যাচ্ছে। অনেকটা বলা যায়, কলকাতা আর্ট ফিল্মের নাইকাদের স্টাইলে। ধন্যবাদ আপনাকে।
255607
১৮ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫২
মামুন লিখেছেন : আমিন। অনেক ভালো লাগলো, আপনাকে লিখাটির জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File