প্রেম-বিয়ে সংস্কৃতি এবং অসুস্থ দুষ্টচক্রগুলো এমন কেন?
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নচারী ১২ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:১১:৩৮ সন্ধ্যা
প্রেম-ভালোবাসা এবং বিয়ে বিষয়ে আমার সাধ্যমতন কিছু অতি স্বল্প আকারে লেখা লিখেছিলাম একসময়। স্রেফ এতটুকুর কারণেই অনলাইনে এবং বাস্তব জীবনে বিভিন্ন তীর্যক তীক্ষ্ণ ভাষায় কটুক্তি ও সমালোচনা আমি শুনেছি। কিছু কথার কারণে কষ্টও পেয়েছিলাম। সে যাই হোক, আমি জানি, এই বিষয়টাতে আমি কেন বারবার গুরুত্বপূর্ণ বলতে চেয়েছি। কেবল ইচ্ছে হলেই লিখতে বসিনি, অনেক সময় নিয়েই ভেবে কথাগুলো বলতে চেয়েছি কেননা আমার জীবনের বেড়ে ওঠার সময়গুলোর অভিজ্ঞতার আলোকেই কিছু কথা জানাতে চেয়েছি। আমি প্রচুর মানুষের সাথে মিশেছি সবসময় হাইস্কুলের সময় সময় থেকেই -- আমার তা ভালো লাগত। আমি ভার্সিটি লাইফের কখনো হলের বাইরে কাটাইনি, মিশেছি, জেনেছি, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেছি। আমার এই দীর্ঘ সময়ে উপলব্ধি ছিলো বেশ কিছু যার একটি হলো, তরুণ প্রজন্মের আনপ্রোডাক্টিভিটি, সময় নষ্ট করা, দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া, মেধা কমে যাওয়ার পেছনে যেই জিনিসটাকে আমার খুব বড় মনে হত তা হলো -- প্রেম।
কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না, চলমান সময়টা বড্ড কঠিন। পূর্বেকার অন্য যেকোন সময়ের চাইতে কঠিন, আগামীতে আরো বেশি ফিতনাময় হবে তা বলাই যায়। এখন যারা দ্বীনের বোধসম্পন্ন মানুষ, তারা অনেক চিন্তিত থাকেন একটা সন্তানের বেড়ে ওঠা নিয়ে নিয়ে এবং আল্লাহর কাছে অনেক বেশি করে দু'আ করে সাহায্য চাইতে থাকেন; এটাই স্বাভাবিক। আমি ক্লাস এইট পেরিয়ে যেসব বিষয় ক্লাসমেটের কাছে শুনে অবিশ্বাস নিয়ে ভয়ে শিউরে উঠে রাতে ঘুমাতে পারিনি, সেসব বিষয়ে এখনকার কিন্ডারগার্টেনের ছেলেমেয়েরাই দিব্যি তা জানে। মনে পড়ে, 'আলিফ লায়লা' দেখবো বলে এশার সলাতে (৮:৩০/৮:৪৫) সালাম ফিরিয়ে দৌড়ে বাসায় ফিরতাম। তখন জুঁই নারিকেল তেলের অ্যাডে বলত, 'তোমার ঘন কালো চুলে হারিয়ে যায় মন' -- এমনটা দেখেও লজ্জা পেতাম। একটা ছেলে এরকম বেশরমের মতন কথা বলছে, চিঠি লিখছে তা মানতে পারতাম না, জানতাম এটা ঠিক নয়। আল্লাহর অশেষ রাহমাতে টেলিভিশনের প্রতি ন্যূনতম ভক্তিও উঠে গিয়েছিলো ক্লাস সেভেন-এইটের সময়েই। এই জীবনে দিব্যি টিভির দর্শন ছাড়াই খুব ভালোভাবেই বেঁচে আছি আলহামদুলিল্লাহ। ক'দিন আগে পন্ডসের অ্যাডে দেখলাম বলে "এমন নরম কোমল ত্বক শুধু ছুঁতে চায় মন" -- এমন টিভি কমার্শিয়াল ভাতিজি এবং ভাগ্নের সামনে বসে দেখা খুবই অস্বস্তিকর। তাও ভালো, স্যাটেলাইট চ্যানেলে ডিওডোরেন্ট স্প্রে-গুলোর টিভি কমার্শিয়াল দেখার মতন অসভ্য বিষয় দেখতে হয়নি, পানাহ চাই আল্লাহর কাছে।
আমি জানিনা কয়টা পরিবার আদৌ 'ডিশের লাইন' ছাড়া টেলিভিশন কল্পনা করতে পারেন। তবে, আমি জানি, আমি এবং আমাদের ভাই-বোনদের টেলিভিশনের তেমন কোন উপস্থিতি ছাড়াই দিব্যি জীবন কেটে গেছে, এবং তা অবশ্যই চাপিয়ে দেয়া ছিলো না, এগুলোর প্রতি আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত বিরক্তিবোধ থেকেই তা হয়েছিলো। ক্রমাগত লজ্জাহীনতা দেখতে থাকলে, একসময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে, অথচ এসব স্বাভাবিক না। 'টম এন্ড জেরি' কার্টুনে টম কোন বিড়াল পেলেই যেই অঙ্গভঙ্গি করে এগিয়ে যায়, তা বোধকরি হলিউডের বড়দের 'এজ রেটের' ফিল্মগুলোর সাথেই মানায়, এতে মেয়ে বিড়াল অথবা নারী কারোই পোশাক গ্রহণযোগ্য নয়। প্রায় কার্টুনগুলোই এমন। আমাদের কি মনে হয় শিশুরা এসব বুঝেনা বা শিখেনা? তাদের 'অবজার্ভেশন পাওয়ার' অত্যন্ত বেশি সেটা মা-বাবা মাত্রই জানেন। সিনডারেলা, মিনি এবং মিকি মাউসের মূল চরিত্রগুলোতে 'স্ট্যান্ডার্ড' বা শিক্ষণীয় বিষয় কতখানি ভেবে দেখি আমরা? ইসলামের চোখে এই নির্লজ্জ এবং আদবহীন বিষয়গুলোর প্রসার করা তো সম্পূর্ণ নিষেধ। সন্তানদের কাছে এই পথগুলো খুলে দিলে একসময় তারা 'ডিসেনসিটাইজড' হয়ে যাবে। তাদের সামনে আদর্শের অভাব হয় কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবাদের সেরা চরিত্র তাদের কল্পনায় আর গল্পে জীবন্ত থাকছে না। কিন্তু ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আমরা তাদের দিয়ে রাখি কম্পিউটার বা টেলিভিশন পর্দায় চরিত্রহীনতার প্রদর্শনীতে। ওতেই ভয়, কেননা যখন 'খারাপ/অস্বাভাবিক' বিষয়গুলো 'স্বাভাবিক' হিসেবে প্রকাশ পাবে ছোটদের কাছে, তখন তার প্রতি ওদের অপছন্দ ও ঘৃণা তৈরি হবে না। ভবিষ্যত চরিত্রে তার প্রভাব থাকবে। আমাদের দ্বীনে 'হায়া' বা লজ্জা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা কেবল উপলব্ধিরই নয় বরং সময়ের সাথে সাথে তাকে গড়ে তোলারও।
কলেজ জীবনে এসে খেয়াল করতাম যেই কোচিং সেন্টারে মেয়ে থাকত, সেটাতে অনেকেই পড়তে যেতে চাইত। এখন তো ফেসবুকেই অনেক ফ্রেন্ড বানিয়ে, ইনবক্সের আলাপে, ফটো কমেন্টে কতকিছু হয় যা কেউ ভাবেনি আগে!! সেই সময়ের এই রোমান্সের মূলে ছিলো হিন্দি মুভিগুলো, অথবা হলিউডি মুভি। বন্ধুরা অনেকেই উল্টাপাল্টা প্রেম করতে গেলে যদি দু'কথা বলতাম তখন শাহরুখের 'কাল হো না হো' দেখে শেখা একটা ডায়লোগ দিতো -- 'ছাও, মুসকো রাও, কেয়া বাতাও, কাল হো না হো'... এত চিন্তা করে আর কী হবে ক'দিনের এই জীবনে? ভালো কথা, মনে পড়লো যে সেই সময়ের প্রেমিক হৃদয়ের কেউ কেউ বিয়ে করে ডিভোর্সও হয়ে গেছে তাদের বনিবনা হয়নি বলে। চিন্তা করতে শেখার আগেই বড় সিদ্ধান্ত আবেগের বশে নিলে মানিয়ে নেয়া হবে কী করে? এমন কিছু ক্ষতি তো আছেই অপরিণত 'প্রেম করাই লাগবে' রোগের। কলেজে পড়ি তখন, একবার এক বন্ধুর বাসায় ঈদের দিন দাওয়াতে গিয়েছি। বলাই বাহুল্য, উপস্থিত ক্লাসমেটদের প্রায় সবারই 'গার্লফ্রেন্ড' ছিলো। বন্ধুর বড় বোন হঠৎ হাজির হয়ে সবার 'ইয়ের' খোঁজ নিচ্ছিলেন, আমি অস্বস্তিতে মাথা নিচু করে খাচ্ছিলাম। একসময় আমার কাছে প্রশ্ন এলে আমি কিছু না বললেও বন্ধুরাই বললো। আমাকে তিনি বিষ্ময়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমার কোন ফোন ফ্রেন্ডও নাই?!!" সে অনেক বছর আগের কথা। সেদিন উনার অবাক হওয়া দেখে আমি যেন বিষণ্ণ হয়ে গেলাম, এই 'ফোন ফ্রেন্ড' জিনিসটা আমি পরে অন্যদের জিজ্ঞাসা করে বুঝেছিলাম। এটা হলো -- ফোনে আলাপ হবে, মজা হবে, খোঁজখবর নেয়া হবে... !! কী অদ্ভুত সব আবিষ্কার শয়তানী বুদ্ধির লোকেদের।
ভার্সিটি হলে যখন থাকি, তুমুল প্রেমের বন্যা চারপাশে। ক্লাসের শেষে, বিকালে রিকসায় করে কোথাও অনেকেই ঘুরে। একটু রাত হলেই ফোন কানে নিয়ে ছেলেরা হলের বারান্দার দেয়ালে উঠে কথা বলতে শুরু করে। রাত গভীর হয়, ফোনওয়ালার সংখ্যা ও আনাগোনাও বাড়ে। এই সময়ে নিজেকে প্রতিদিন উত্তর দিতে হত, কেন আমি ওদের মতন হতে চাইনা। এটাই মনে হয় সবার হয়, নিজেকে প্রশ্ন করা, উত্তর পাওয়া নিজের ভিতর থেকেই। এমন নয় যে মনের কথা বলা, আলাপচারিতা আর খুনসুটি করার ইচ্ছা কারো হয় না -- এ আবেগ সাধারণ, সবার। বেশিরভাগ পরিবারে বিবাহপূর্ব সম্পর্ক প্রেম গ্রহণীয় থাকে না -- সেটা ধর্মীয় কারণেই হোক বা পারিবারিক অন্য কারণেই হোক। অথচ ছেলেমেয়েরা অনেকে লুকিয়ে প্রেম করে শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত করে। ৬-৭ বছর পেরিয়ে যায় অথচ বাবা-মা জানতে পারেন না দিব্যি তারা প্রতিদিন কত যোগাযোগ করে। এভাবেই কেউ সম্পর্ক ভাঙ্গে, নতুন সম্পর্ক গড়ে। আর, বিয়ে? সে ত বহুদূর... প্রশ্ন করলে তাদের অনেকের কাছে উত্তর পাবেন, "এখনো আমরা এতটা ভাবছিনা, আরো কিছুদিন যাক। বিয়ে অনেক খরচ আর দায়িত্বের ব্যাপার"... কী যাবে? কতদূর? কেন? দায়িত্ব কী ভীতিকর? আর দায়িত্বহীন আনন্দ? তা কেন নিচ্ছ??
ভার্সিটির হলগুলোতে বহু কম্পিউটারেই পর্ণগ্রাফি পাওয়া যাবে। অনেকগুলো ভার্সিটির কথা আমি জানি, বন্ধু-ছোটভাই-বড়ভাইদের কাছে শুনেছি। এটাও জানি, হলের নেটওয়ার্কে ঢুঁ দিলে শত গিগাবাইটের পর্ণোগ্রাফির মুভিওয়ালা ছেলেরাও দিব্যি ফেসবুকে বসে বসে 'নারীমুক্তির' গান গায়। নারীর প্রতি এদের ধারণা তারা নারী নিয়ে আলাপ করার সময় যা বলে, তা থেকেই সহজে অনুমেয়। হলের টিভিরুমে 'চিয়ার গার্ল' অথবা 'সুন্দরী মডেল' দেখালে যারা সর্বপ্রথম কিছু রগড়গে মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়, এই 'মুক্তমনারা' সে দলেই পড়ে। সাইবার ক্যাফে তে অনেক আগে যেতাম, যখন নিজের মডেম ছিলো না -- সেখানে 'ব্রাউজারের হিস্টরি' ঘাঁটতে হত না, অ্যাড্রেসবারে কিছু চাপলেই ভীতিকর হয়ে বেরিয়ে আসত। প্রকৌশলবিদ্যার ছাত্র হবার কারণেই হয়ত, একটা কম্পিউটারে বসে কয়েক সেকেন্ডের মাঝে অনেক কিছু বুঝে ফেলতে পারি। মনে আছে, আগের অফিসে থাকতে 'প্রভার ভিডিও' বের হবার পরে "সকল বিবাহিতরা" দৌড়ে অপর বিবাহিতের কম্পিউটারে দেখতে গিয়েছিলো। কেউ দেখাচ্ছে, কেউ দেখতে যাচ্ছে। তারাই আবার 'ছি ছি' করলো পরে। এমন নির্লজ্জতা সহ্য করা কঠিন! কিন্তু এমনটাই মনে হয় বাস্তবতা। বছরের পর বছর ধরেই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক বয়ষ্করা অফিসের ইন্টারনেট ইউজ করে এসব ডাউনলোড করেন -- তারা সন্তানের জনক। জানতে পেলে লজ্জা পাই, উনাদের হয়না। এক বাসায় গিয়ে ল্যাপটপে একটা কাজ করে দিতে ধরতেই দেখলাম এর আগেই কিছু পর্ণ সাইটে ঢুঁ দেয়া হয়েছে। এমন অভিজ্ঞতা অজস্রবার হয়েছে নানান জায়গায়...
এমন একটা ভয়াবহতাময় কঠিন সমাজেই আমাদের বসবাস। এখানে বাস্তবতাগুলো জেনে, বুঝেও এই নোংরা আর ধ্বংসের স্রোতের বিপরীতে যারা জীবনধারণ করতে চান, তারা স্বপ্নবাজ মানুষ। তারা অন্তরে আলো জ্বেলে সেই আলো ছড়িয়ে দিতে চান। তারা সচ্চরিত্র হতে চান, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা মানুষ নন। ইসলামের সবখানেই বিয়েকে সর্বাগ্রে রাখা হয়েছে। যেই ছেলেরা দ্বীনেকে আঁকড়ে ধরতে চায়, চরিত্র রক্ষা করতে চায়, চোখকে সংযত রেখে পথ চলে, জীবনকে সাজায় -- সে কি তা বছরের পর বছর ধরে করবে? এখানে পরিবারগুলোর চিন্তা করা প্রয়োজন আন্তরিকভাবে। জীবনকে যাপন মানে নিজেরা পরীক্ষাকে জটিল করে ফেলা নয়, যেখানে সহজ সমাধান শেখায় সুন্নাহ, আমাদের সেরা মানুষদের রেখে যাওয়া জীবনাদর্শ। আমাদের আগের প্রজন্মের বাবারা খুব অল্পই ৩০ পেরিয়েছিলেন, মায়ের অল্পই ২৫ পেরিয়েছিলেন। সেই অভিভাবকদের অনেকেই অনেক কিছুর দোহাই দিয়ে সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত চান বিধায় বিয়েকে পিছিয়ে পিছিয়ে তিরিশের ওপারে নিয়ে গেছেন। নিঃসন্দেহে তাদের নিয়াত সুন্দর, কিন্তু বোধের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু এই সন্তানরা কেমন সময় অতিক্রান্ত করছে? সন্তানদের নিয়েও কি তারা এই শহরের প্রায় নগ্ন নারীদের বিলবোর্ড, টেলিভিশন কমার্শিয়াল দেখছেন না? বিষয়টা চিন্তা করার। খুব বড় বিষয়, অবশ্যই ভাবতে হবে বিপদ থেকে বাঁচতে।
আমার এক ছোট ভাই, ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। সুন্দর চরিত্রের এই ছেলেটি নানান রকম ফিতনাহর যন্ত্রণায় জর্জরিত। সামনে কমপক্ষে চার বছরের নীলনদ সাঁতরাতে হবে, এরপর রয়েছে চাকরির বাজারের যুদ্ধ। বাসায় নির্লিপ্ত তো বটেই। শুধু ক্রমাগত রোজা রাখা আর বাসায় আন্তরিকভাবে জানানো ছাড়া সমাধান দিতে পারলাম না। আরো ৬-৭ বছর আগে শারীরিকভাবে যোগ্য হওয়া ছেলেটার হালাল সমাধান যে সূদুরপরাহত সে তো আমি ২৮-২৯ চলতে থাকা মানুষদের দিকে তাকিয়েই জানি! অথচ ইসলাম বলেছে এই সীমানা প্রাপ্তবয়ষ্ক হলেই হবে। সে তো অনেক আগেই। যে নিজের মনটাকে পবিত্র রাখতে চাইছে, তার জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী এলে টের পেত এই পবিত্রতা কত সুন্দর আর দারুণ। তারা দু'জনে দু'জনের দুর্গের মতন হয়। পবিত্র জীবনসঙ্গিনী একজন মু'মিনের জন্য দুর্গস্বরূপ, তাকে অশ্লীলতা, অন্যায় থেকে রক্ষা করবে। একজন মুসলিমাহ তার জীবনসঙ্গীকেও অমন করেই পাবেন। তাদের জীবনের কঠিন সময়ে পরস্পরকে সঙ্গী করে পেয়ে তাদের বন্ধন যে আরো সুদৃঢ় হবেই ইনশা আল্লাহ, তা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধি লাগে না। কত সুন্দরই না সমাধান। আর্থিক সমস্যা কখনই অত বেশি মুখ্য নয়, আর সেই সমস্যা কেউ এড়াতেও পারবে না। দু'জনে মিলে সেই জীবনের পথে এগিয়ে গেলেই বরং কল্যাণকর...
পুর্বেকার প্রজন্মের সাথে আমাদের বড় ক্ষতি বিয়ের বয়স পিছিয়ে যাওয়া। এখন তো যারা প্রেম করছে, তারা বিয়ে করবে বলে তা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে, তারাও বিয়ের আগে বছরের পর বছর এই হারাম সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিনই তারা যিনার পাপে নিজেদেরকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। শেখাবে কে তাদের? আল্লাহর নির্দেশ তো এমন নয়। এখন তো যেন ছেলেরা সবই পারে -- ইতরামি, ফাইজলামি, গার্লফ্রেন্ড পালা, ফাস্টফুডে আর পার্কে নষ্টামি, রিকসাথে হুড তুলে বেহায়াপনা; শুধু বুঝি পারে না বউয়ের দায়িত্ব নেয়ার হিম্মত নিতে। এখন তো পারিবারিক পরিবেশগুলোও আলাদা। মেয়েদের পরিবার চায় অনেক টাকাওয়ালা ছেলে, এতে মেয়ের ভবিষ্যত 'নিশ্চিত' হবে। অথচ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীনদারীকে সর্বাগ্রে দেখতে বলেছেন, আল্লাহ নিশ্চয়তা দিয়েছেন চরিত্র রক্ষায় বিয়ে করলে তার অভাবকে তিনি মুক্ত করবেন। অন্যদিকে ছেলেরাও দ্বীনদার মেয়ে ভুলে সুন্দরী চায়। অথচ রূপের চটক আর চমক কারই খুব বেশিদিন থাকে না। কিন্তু দু'জন ছেলে-মেয়ে পারস্পরিক চরিত্র রক্ষায় বিয়ের বন্ধনে জড়ালে ইনশাআল্লাহ জান্নাতে তারা অপরূপ হয়ে একে অপরের কাছে ধরা দিবেন। দুনিয়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সীমাবদ্ধতা আর সেখানে থাকবে না। এই পৃথিবীতে চরিত্র রক্ষার আশায় পরস্পরের 'চাদরস্বরূপ' হয়ে, অন্যের জন্য হালাল ইবাদাত হয়ে ধরে দিলে ইনশাআল্লাহ আগামী প্রজন্মও আসবে সুন্দর ও সুনিপুণ চরিত্রের।
রিযিকের মালিক তো কেবলই আল্লাহ -- তিনি তো যাকে ইচ্ছা বেহিসাব দেন। চরিত্রের জন্য বিয়ে করা দম্পতির রিযিককে তিনি প্রশস্ত করে দিবেন, তা তিনি জানিয়েই দিয়েছেন। ভাইয়েরা যেন একজন দ্বীনদার মেয়েকেই খুঁজেন, টেলিভিশনের নায়িকাদের সাথে তুলনা করে স্ত্রী খুঁজতে না যান। সত্যি কথা হলো, আমরা যদি ইসলামিক উপায়ে দৃষ্টি অবনত করে চলতাম, তাহলে যাকেই জীবনসঙ্গী পেতাম -- তাকেই আমাদের অপরূপা মনে হত। একজন মুসলিমাহর জীবন অনর্থক সৌন্দর্যচর্চা করে সময় নষ্টের জন্য নয়। মুসলিম ভাইও স্ত্রীকে পার্লারে গিয়ে তার সময়-অর্থ-মানসিকতাকে নষ্ট করতে দিতে চাইতে পারেন না। মুসলিম হিসেবে আমাদের কাজ অনেক বড়। আমাদের উদ্দেশ্য তো সেই নূরকে ধারণ করে চারপাশে ছড়িয়ে দেয়া যেই আলো আমাদের রবের ভালোবাসায় প্রজ্বলিত। আমরা তো ক্ষুদ্র দুনিয়াবী, তুচ্ছ, অর্থহীন বিষয়ে ডুবে থাকতে পারিনা কেননা জানি এই দুনিয়ার জীবন অল্প ক'দিনের। আমাদের লক্ষ্য তো সেই রবের সন্তুষ্টি যিনি সাজিয়ে রেখেছেন অনন্তকালের জীবন --তার প্রিয় বান্দাদের জন্য।
পরিবারগুলোতে সচেতনতা প্রয়োজন। এই সময়ের নষ্ট স্রোতে তরুণ ভাই ও বোনদের দরকার নিজেদের ভেসে যেতে না দেয়া, বরং এই স্রোতকে উলটে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া। আমরা তো জানি আমাদের লক্ষ্য কী! আমরা তো অযথা ভেসে যেতে পৃথিবীতে আসিনি। আমরা সেই আল্লাহর দাসত্ব করি, যিনি সৃষ্টি করেছেন জগতের প্রতিটি বস্তু, বানিয়েছেন আমাদের, তার রাহমাতের বর্ষণে আবিষ্ট রেখেছেন আমাদেরকে। আমরা অসহায় আর দুনিয়ার তুচ্ছতায় ডুবে থাকা মানুষদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেব -- এমনটাই হবে আমাদের স্বপ্ন, হৃদয়ের চাওয়া। আমাদের সামনে আদর্শ তো সেই মানুষটি যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, যিনি সর্বোত্তম আদর্শ; যিনি এই সৃষ্টিজগতের প্রতি রাহমাতস্বরূপ ছিলেন। তার পথ অনুকরণ করে আমরা হবো সমাজের, পরিবারের জন্য রাহমাত। এই ভ্রষ্ট-নষ্ট প্রবাহ নিয়ে ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের জন্য এই সমাজটাই ঠিক করে রেখেছিলেন, এটাই আমাদের পরীক্ষা, এটাকে বদলাতে হবে, অন্যায়কে সরিয়ে ন্যায়কে, অশ্লীলতার জায়গায় লজ্জাকে, অসুন্দরকে সরিয়ে সুন্দরকে স্থাপন করতে হবে। আমাদের সবর করতে হবে, লেগে থাকতে হবে কাজে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটা সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষার পরিমন্ডল তৈরি করতে হবে। প্রতিটি ভালো কাজের বিনিময় আমরা সাদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে পেতে থাকবো ইনশাআল্লাহ কবরের অন্ধকারে আলো হিসেবে। সময়টা সচেতনতার, দু'আ করার, আন্তরিকভাবে কাজ করে যাওয়ার। এই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মূর্খতা জায়গা করে নিয়েছে। নিজেদেরকে দিয়েই তার পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। আল্লাহর জন্য যে প্রাণ কাজ করে, সেইই তো সফল। আমরা এই সমাজে 'গুরাবা', আগন্তুক; আমরা ব্যতিক্রম, ভিন্ন, আমাদের প্রিয় মানুষটি আমাদের কথাই তো বলে গিয়েছিলেন। আমাদের মতন অপর গুরাবাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিন -- সাহায্যের, সহমর্মিতার, ভালোবাসার। সাহায্য করুন দুনিয়া নামের বিভ্রমের জায়গায় ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, উৎসাহ দিয়ে আর স্বপ্ন জাগিয়ে রেখে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের শক্তি দিন, সবর করার, যোগ্যতা দিন যেন দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি নিজ জীবনে, পরিবারে আর আমাদের সমাজে। নিশ্চয়ই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আল্লাহকে খুশি করা, তার ইবাদাত করা এবং লক্ষ্য আমাদের জান্নাতের বাগান, যা কেবল শান্তিই শান্তি, যে পরম আনন্দের উদ্যান কেবল মুত্তাকীদের জন্যই। আল্লাহ আমাদের সেখানে যাবার যোগ্য করে দিন।
প্রথম প্রহর, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
বিষয়: বিবিধ
৩০৮৩ বার পঠিত, ৪১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলে বর্তমান প্রজন্ম ধর্ষণ বিরোধী মনমানসিকতা ধারণ করে ঠিক, কিন্তু তারা কি ভেবে দেখেছে যাকে তারা প্রেম বলে ধারণা করে সেটাও আসলে একটি "নিরব ধর্ষণ"??
তবে , ১৭-১৮ বছর বয়সের ছেলের পক্ষে বিয়ে করে ফ্যামিলি মেনটেইন করা খুব কঠিন , কারণ সে তখনও ছাত্র , অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে খুব বেশী হলে ।
এরকম একটা ছেলের কাছে কোন মেয়ের অভিভাবকরা তাদের মেয়েকে দিবে না ।
এসব ক্ষেত্রে উভয়ের পরিবার তথা সমাজকে এগিয়ে আসতে হয় ।
কিন্তু সেটা তো পুঁজিবাদীরা হতে দেবে না । তাহলে তো তাদের ব্যবসা লাটে উঠবে ।
উপরে উল্লেখিত - আপনার এই পয়েন্ট টা যথার্থ।
অবশিষ্ট পয়েন্টস্ ফ্যামিলি মেইনটেইন করতে না পরা ও অভিভাবকরা মেয়ে বিয়ে দেবেনা - স্যেকুলার সেন্স এ যথার্থ মনে হলেও বিশ্বাসী সেন্স পুরোপুরিই ভুল।
কারন বিয়ের পরদিন ও কারো ১০০% সক্ষম স্বামী সে সেন্স এ ফ্যামিলি মেইনটেইন করতে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হবেন। (রিজিক দাতার বিষয়টা বললাম না)। আর আমার জানা মতে ১ ডজনের ও বেশী বাবা মা তাদের মেয়েকে ১৪/১৫তে বিয়ে দিতে চাইছেন, চেয়েছেন । পারছেন না তথাকথিত কুফরী আইন - যা বলছে ১৮ র আগে বিয়ে দেয়া যাবে না।
@ লিখক - লিখাটি অনেক বড় হওয়ায় ধৈর্য ধরে শেষ করতে হয়েছে। কিন্তু মুরুব্বী সুলভ লিখাটিতে অনেকগুলো থটস ও উদাহরন চমৎকার ভাবে একীভূত হয়েছে।
ধন্যবাদ হতভাগা ভাইকে - প্রতিউত্তর দেবার সুযোগ করে দেবার জন্য আর লিখককে লিখার জন্য।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
আপনার কথার সারমর্ম বুঝা গেল না। অশ্লিলতার কারনে আপনি টেলিভিশন দেখেন্না। তাহলে টেলিভিশনের এতসব অশ্লিল বিজ্ঞাপনের খবর রাখেন কি করে। বস্তুত টেলিভিশনে অশ্লিলতা তারাই খুঁজে পায় যার শয়নে স্বপনে অশ্লিলতা। অথচ আপনি হয়তো জানেন না যে আজকের দিনে টেলিভিশন হছ্ছে মানুষের সবচেয়ে সৃজনশিল শিক্ষা, জ্ঞান এবং বিনদনের মাধ্যম। খবর, রাজনীতি, আলোচনা, ইতিহাস, কৃষ্টি সংস্কৃতি, আবহাওয়া, পর্যটন, ভ্রমন, নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল, খেলাধুলা,চিকিৎসা, স্বাস্থ, শিক্ষা, বিতর্ক, বিজ্ঞান......... কি নেই আজকের টেলিভিশনে। ধর্মের নাম জপে আপনি দরজা জানালা বন্ধ করে আদিম যুগে ফিরে যেতে পারেন না। কম্পিউটার প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তাই।
আপনি ইসলাম ধর্মের কথা বারবারই বলছেন। অবশ্যই। অন্য যে কোন ধর্মের মত ইসলাম ধর্মেও নৈতিকতার অনেক উপাদান আছে হয়তো। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখি? মুসলিম প্রধান অঞ্চলের মানুষ গুলৈ অন্যদের চেয়ে বেশি অসৎ এবং অনৈতিক। শুধু তাই না ; শিক্ষা, দিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, আবিস্কারে মুসলিম প্রধান অঞ্চল ভয়াবহ ভাবে পিছিয়ে আছে। ইসলামের শরিয়া শাসিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে অঢেল সম্পদ থাকার পরও তাদের অনৈতিক পংকিল জীবন, জ্ঞান শিক্ষা বিমুখতার দায় দায়িত্ব ইসলাম এড়াতে পারে না। অন্যদিকে সম্পদহীন মুসলিম দেশ গুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ঘুষ, দূর্নীতি, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, নারী নির্যাতন, যৌনতা, বহুবিয়ে, তালাক, জৌতুক, বাল্যবিয়ে কি এক অসহনীয় চিত্র। এখন আপনি কি বলবেন এসব অঞ্চলে ইসলাম নেই? আপনি, আমি, অন্যরা সবাই এ অঞ্চলেরই মুসলমান। এই দায় আপনি কার উপর চাপাবেন।
আন্যের দিকে আঙ্গুল উচিয়ে নিজ ধর্মের বড়াই করলে হবে না, নিজেদের দিকটাও দেখতে হবে। শুধু মুখে বল্লে হবেনা, অন্যকে ভাল কিছু দেখাবার উদাহরন, উপাদান ইসলামে আছে কি?
Please Don't argue without logic .
আপনি লিখককে টিভি বিমুখ থেকে কিভাবে টিভির নেগেটিভ আবিষ্কার করল - তা নিয়ে প্রশ্ন করলেন। কিন্তু কোথায় লিখক ভুল কিছু এ্যানালাইজ করলো - তা উল্লেখ করলেন না।
অথচ নিজেকে প্রশ্ন করলেন না - ইসলামের প্রতি নিজের চোখ কান নাক মাথা মগজ সব কিছুকে বন্ধ রেখে আপনি - ইসলামের নেগেটিভ কিভাবে খুজে পাচ্ছেন? অথচ আপনি এমন একটি বিষয়কেও সামনে আনতে পারছেন না যা ফ্যাক্টচুয়ালী কারেক্ট, যুক্তিগ্রাহ্য।
আপনি মধ্যপ্রাচ্য ও ডেভলপিং দেশ সমূহের লিটারেলী শৃংখলিত ও দাসবৃত্তিতে আবদ্ধ মুসলিমদের কে 'ইসলাম' নামক একটা 'কোড অব লাইফ' এর সাথে তাল গোল পাকিয়ে ইসলামকে দুষে দিলেন।
আজকের বিশ্বে লিটারেলী কোন মুসলিম নেই - যে কিনা ১০০% ফ্রী। আর মুসলিমদের যে অবস্থা হবে - তা সব কিছুর স্রষ্টা অনেক আগেই বলেছেন, জানিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে আমরা তা প্রত্যক্ষ করছি এবং আগামী দিনে কি হবে তাও স্রষ্টা জানিয়েছেন কোরানে এবং তার দূত বা গোলাম মোহাম্মদ সঃ আমাদের জানিয়েছেন - মুসলিমদের এ পরীক্ষা ফেইস করতে হবে - যার মাধ্যমে আল্লাহ সত্যকে মিথ্যা হতে পার্থক্য করবেন।
আপনার জন্য একটা ইউটিউব এর লিন্ক দিলাম নিচে - যদি তা দেখে আপনার ফেয়ার মতামত দেন - তবে হয়তো আপনার থট প্রসেস এ ডিফারেন্ট মতামত আসবে লিখকের লিখার প্রতি।
ধন্যবাদ।
এক বিবেচনায় আপনার সাথে একমত যে মুসলমানরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে পিচিয়ে রয়েছে। আসলেই সত্য মুসলমানরা মানব সভ্যতা বিরোধী আধুনিক মারনাস্ত্র প্রথমেই তৈরী করেনি, এটাও সত্য যে মুসলমানরা পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করে তার পতিক্রিয়া কেমন হতে পারে তার পরীক্ষা নিরিক্ষা করে মানব সভ্যতার ইতিহাসে নজীর রাখেননি। মানুষের সভ্যতাকে ধ্বংস করার, মানুষ হয়ে অপর মানুষকে হিংস্রার আধুনিক মারনাস্ত্রগুলোর ভান্ডার কিংবা আবিস্কারক এলিট সোসাইটির হাংগরদের তালিকা বা ক্লাবের সদস্য হতে পারেনি মুসলমানরা।
ইসলামের রাজনৈতিক উত্থানের আশাংকায় ভীত আপনাদের মত ধর্মহীন মানুষ কথায় কথায় মধ্যপ্রাচ্যের বিলাসী এবং অপচয়বাদী নাফরমান শাসকরা নিজেদের ক্ষমতার কুরসিকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের স্বার্থের অনুকুলে ইসলামের কিছু কিছু নিয়ম কানুনের চর্চাকেই ইসলামের প্রকৃত আদর্শ বলে প্রচার প্রচারণার আড়ালে নিজের অজ্ঞতাকে লুকাতে পারবেন না। যারা ইসলামের প্রকৃত সোর্স পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ নিয়ে পড়াশুনা করে এবং সে অনুযায়ী নিজের এবং তার চার পাশের জগতটাকেও রাঙ্গায়িত করার চেষ্টা করে তাদের দৃষ্টিতে আপনাদের দূর্বলতা কোথায় সহজেই ধরা পড়ে যায়। আপনাদের মত ইসলামফৌবিয়ায় আক্রান্তদের কাছে কোরআন সুন্নাহর রেফারেন্স টেনে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। কারণ এসবের উপর আপনাদের বিশ্বাস এবং আস্থা নেই। তার পরেও আপনি প্রসংজ্ঞ টেনেছেন বিধায় দুয়েকটা উদারণ না দিলেই নয়। কোরআনে বলা হয়েছে, অপচয়কারী শয়তানের ভাই, তোমরা অপচয় করো না। দেখুন তো কথিত শরিয়াহ শাসিত মধ্যপ্রচ্যের শাসকদের অপচয়ের নমুনাটা কেমন? কোরআনে বলা হয়েছে তোমরা ইয়াহুদী খ্রীস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। কিন্তু মধ্য প্রাচ্যের কথিত শরিয়াহর পুজারী শাসক রাজা বাদশারা মুসলমানদের সম্পদ তথা মাঠির নিচের খনিজ সম্পদের আহরিত অর্থের অপব্যবহার করে নিজেদের স্বৈরাচারী গতি রক্ষার জন্য খ্রীস্টান এবং ইয়াহুদীদের কিভাবে তোষণ করছে? সাম্প্রতিককালের গাজায় হামাস এবং ইয়াহুদীবাদী ইস্রাইলের অসম যুদ্ধের ক্ষেত্রে কথিত ইসলামওয়ালা শাসকদের কাদের পক্ষে হয়ে দাড়ানো উচিত ছিল। আর বাস্তবতায় আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? এসব নাফরমান শাসক নামের আধুনিক গোলামদের কর্মকান্ডকেই যদি ইসলাম বলে জ্ঞান করেন তাহলে আপনার মত চিন্তার জগতে পশ্চাদমূখিতাদের সাথে বির্তক করে কোন লাভ নেই।
আপনি বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের উদাহরণ টানলেন। যদি শেখ হাসিনার মত ধর্মহীন (যে কিনা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না, এখান প্রসংগক্রমে তার একটি উক্তি উল্লেখ করা যায়। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত লাকুম দ্বীনুকুম ওয়াল ইয়াদিনকে নিজের অজ্ঞতাহেতু বোখারী শরীফের হাদিস বলে গোটা দেশের মানুষের কাছে হাসির পাত্রে পরিনত হয়েছিলেন) অবৈধ শাসকদেরকেই ইসলামের আদর্শ মনে করে থাকেন তাহলে আপনাকে বুঝানো সাধ্য কারো নেই।
null1914: The Shaping of the Muslim World
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : ভিডিও শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। যদিও ইয়াসির কাদিকে আমি পছন্দ করি না। সত্যিকার অর্থে ইয়াসির কাদিদের কথা শুনে শুনেই আমরা বড় হয়েছি। তবে দিন যতই যাচ্ছে এইসব পন্ডিতের কথা ততটাই অসার প্রমানিত হয়। মুসলমানদের দুর্ভাগ্য, ইয়াসির কাদির মত ঝাকে ঝাকে পন্ডিত তাদের আছে। কিন্তু মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের মত একজনও নেই। যদি থাকতো, তা হলে আমাদের ৫৫টি মুসলিম দেশের প্রায় সব গুলোই আজকের তুরস্কের মতই হতো। ধন্যবাদ।ইতিহাস ও স্যেকুলার সোর্স বলে - 'মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এর মত মাথামোটা একগুয়ে কোলাবরেটর - যদি তার্কিতে না জন্মাতো - তবে মুসলিমরা এমনভাবে অত সহজে খন্ড বিখন্ড ন্যাশান হতো না এবং ফলশ্রুতিতে 'বৃটেন এনেক্সড টু সাদাচামড়ার' এমন এক একটা কেনা দাস এ পরিনত হত না।
আর এ্যাবসুলুট গোলাম জাতি সমূহ (আজকের মুসলিমপ্রধান দেশ সমূহ) প্রভুর ডিকটেশান অনুযায়ী চলবে এটাই স্বাভাবিক, ক্রীতদাস স্বাধীন ভাবে চলবে ও বা কিভাবে? আর সে চলায় স্বভাবতঃই জ্ঞান, বিজ্ঞান, উন্নয়ন ইত্যাদি থাকবে কেন? সে চলায় থাকবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রভুর মনোরন্জনের জন্য জামা কাপড় বানানো (বাংলাদেশ দ্রষ্টব্য), ফ্রেস ও ক্যামিকেল ফ্রি সব্জী উৎপাদন সহ সব ধরনের কায়িক ও মানুষিক শ্রম প্রদান। যা আমরা দেখছি আটলান্টিক হতে প্যাসিফিক পয্যন্ত একই চিত্র। দাসেরা কমপিট করে কে কার চেয়ে আরো বেশী ও বড় দাসে পরিনত হবে? (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার কমপিটিশান দেখুন? আবদুল্লাহ আর সিসিকে দেখুন, ইরাক আর লিবিয়াকে দেখুন)
সেকুলার সোর্স এর বাহিরে কোরান ও হাদীস অনুসারে আমরা জানি ফেরাউনের লাশ পাওয়া গেলে পৃথিবীর লাস্ট স্টেইজ এর সাইন সমূহ একটার পর একটা পরিষ্কার হয়ে এক্সপোজড হবে।
৩০০০ বছরের ও বেশী পুরোনো ফেরাউনের লাশ ১৮৯৭/৯৮ সালে আবিষ্কার হল। একই সময়ে জিওনিস্ট মুভমেন্ট শুরু হল। যার লক্ষ্য হল কোরান ও হাদীস এর ঘোষনা অনুযায়ী জেরুজালেম কে পৃথিবীর সেন্টারস্টেইজ এ আনা। জেরুজালেম হতে পৃথিবীর শাসন নিশ্চিত করা ও তার মধ্য হতে এন্টি ক্রাইস্ট (দজ্জাল) কে পৃথিবী ৩৭ দিনের জন্য শাসন করতে সুযোগ দেয়া - যাতে করে সত্যিকারের ঈমানদারকে বিভাজন করা যায়।
কোরান (সুরা আম্বিয়া ৯৫-৯৬) অনুসারে ইয়াজুজ মাজুজ (যখন মানচিত্রের উপরদিক হতে মানে ইউরোপ হতে) নেমে আসবে তখন আল্লাহ ইতোপূর্বে সারা পৃথিবীতে শাস্তি হিসাবে ছড়িয়ে দেয়া বনী ইসরাইলদেরকে পবিত্র ভূমিতে ফেরাতে শুরু করবেন। আমরা তা দেখেছি।
হাদীস অনুসারে সূর্য পশ্চিম দিক হতে উঠলে দাব্বাতুল আরদ তথা ভূপৃষ্ঠ হতে এমন এক পশু উত্থিত হবে - যা কোন সেইন আচরন করবে না - আমরা ১৯৪৫ এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পশ্চিমের আকাশে সূর্য তথা ইউএস (যেটা মূলতঃ চোর বদমাশ ও ফেরার দের দেশ ছিল) কে উঠতে দেখলাম আর তারপর পর ১৯৪৮ এ দাব্বাতুল আরদ ইসরাইলকে উঠতে দেখলাম।
আমরা হাদীস অনুসারে দ্বীপে দজ্জাল তথা প্রতারনাকে শৃংখলিত দেখেছিলাম - যে কিনা ছাড়া ফেলে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষকে তার বশীভূত করতে চাইবে - আর আমরা বিশ্বের টপমোস্ট ডিসিভার তথা প্রতারক দ্বীপ হিসাবে বৃটেনকে পেলাম - যে সারা বিশ্বে প্রতারনা শঠতা ছড়ালো এবং মানুষকে তার বশীভূত করলো - তথা স্লেভারীতে জড়ালো। এমনি করে আমরা আজকের পৃথিবীর বিশ্লেষন করি এবং মেনে নিই - কারন কোরান ও হাদীস আমাদেরকে এমন কোন বিষয় নেই যা অগ্রীম জানায়নি। যেটা ফ্যাক্টস তা হল আমরা কোরান ও হাদীস হতে শিক্ষা না নিয়ে দজ্জাল তথা প্রতারক হতে শিক্ষা নিই।
হাদীস আমাদেরকে ক্লিয়ার করেছে - মুসলিম বিশ্বে মাটির নীচে সম্পদ থাকবে আর সে সম্পদ দজ্জালের পেছনে পেছনে মাটির নিচ হতে বের হয়ে চলে যাবে, হাদিস আমাদের ক্লিয়ার করেছে আজকের এই সময়ে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দজ্জালের দুটি পা থাকবে - আমরা যথাযথভাবে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েছি। হাদীস আমাদেরকে বলেছে পৃথিবীর কোন মানুষ থাকবে না - যার সাথে সামহাউ সুদের সম্পর্ক থাকবে না। আজকে আমরা এ টু জেড সবাই সামহাউ সুদের সাথে জড়িত।
আপনি আপনার রেশানাল ফ্যাকাল্টি দিয়ে বলুন ২০০ বছর আগে কোন ব্যাংকার কিংবা কোন ইকোনোমিস্ট এমন প্রিডিকশান করতে পারতো কিনা?
এ্যানিওয়ে - আপনি যদি আপনার পছন্দ অপছন্দকে প্রায়োরিটি না দিয়ে জ্ঞানার্জনকে প্রায়োরিটি দিতে চান তবে 'জেরুজালেম ইন কোরান' নামক বইটি পড়তে পারেন। আশা করি বইটি আপনার চিন্তার জগতকে বর্তমানের সন্কুচিত অবস্থান হতে সম্প্রসারিত করবে এবং আপনার ভাল ও লাগবে।
এবং চেষ্টা করতে পারেন আপনার কাছে কাউন্টার কোন যুক্তি কিংবা রেশানালিটি আছে কিনা - তা সেকুলার জ্ঞান হতে হোক কিংবা অন্য কোন সোর্স হতে হোক।
ভাল থাকবেন।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : যে কথা শুনাইলেন এরপর আর কাউন্টার যুক্তি থাকে না। চালিয়ে যান, আপনাদের ভবিষ্যত উজ্জল। ধন্যবাদ।কদ্দুর ধর্মতত্ত্ব পাঠ করলে এমন সরল সমাধান মাথায় আসে সেটা আমি বলতে পারব না । কিন্তু এই লোক গুলোই যখন আফসোস করে বলে- ইসরাঈল সবচেয়ে বেশি যোগ্য, ইনডিয়া অনেক এগিয়ে যাচ্ছে, সৌদীর লোকে অসভ্য, আরব জাতি অপদার্থ, ইত্যাদি- তখন আর এদের কথা বুঝতে পারিনা । ইসরাঈল বা ইনডিয়াতে তো বিয়ের মাধ্যমে কেউ যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে শুনিনি । আরব জাতি তো অল্প বয়সেই বিয়ে করা শুরু করে, তাহলে তারা এতোটা অপদার্থ হলো কেনো !
আফসোসের জায়গাটা মূলত এটাই । আমরা ধর্মীয় দায়িত্বের মধ্যেও ভাগাভাগি করি । যেটা আমাদের নিজেদের বেশি পছন্দ সেটার পক্ষে প্রচারণা চালাই বেশি । অথচ উম্মাহর এখন কোন জিনিসের বেশি প্রয়োজন সেটার পক্ষে ক্যাম্পেইন করিনা । কারণ এটা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিজের কোন স্বপ্ন নেই । যেমন ধরুন কারো সংসার জীবনে খুব সুখ পাচ্ছে বিয়ের পর । হয়তো পরিবার নিয়ে সে প্রবাসে থাকছে । সে অন্য সবাইকে বুুদ্ধি দেয়া শুরু করলো- তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলো, সুখ আর সুখ পাবে । কিন্তু বিদেশে যাবার ভিসাটা নিয়ে তার কোনই ক্যাম্পেইন নাই । উচ্চতর শিক্ষা বা যথাযথ কর্মসংস্থান বিষয়ে তার মোটা মাথায় কোন কার্যকর বুদ্ধি নাই । আমি যতদূর জানি জনসংখ্যার কারণে মুসলিম জাতি কখনোই পিছিয়ে পড়েনি । পিছিয়েছে বিজ্ঞানের কারণে, পিছিয়েছে শিক্ষার অভাবে, পিছিয়েছে দক্ষতার অভাবে । ওগুলার ক্যাম্পেইন কবে শুরু হবে !
১। আমার মনে হয়নি লিখক কিংবা অন্য কেউ বিয়েকে 'সকল সমস্যার সমাধান' মিন করেছেন - বরং আমার মনে হয়েছে নারী পুরুষ সংশ্লিষ্ট 'বহু ইভিল এ্যাক্ট' যেমন জেনাহ'র পরিমান, ইভ টিজিং এর পরিমান, পর্নোগ্রাফীর কনজাম্পশান ও প্রোডাকশান, কর্লগার্ল ও প্রস্টিটিউশান এর ডিমান্ড, শোবিজ, সেক্স কমার্শিয়ালাজেশান ইত্যাদি অনেক অনেক ইভিল এ্যাক্টের প্রকোপ কমবে - যার আলটিমেট রেজাল্ট হল ব্যাক্তি ও পরিবারের মিলিয়নস অব টাকার সাশ্রয়, মানুষিক স্ট্রেস ও টেনশান হতে মুক্তি এবং সর্বোপরী ম্যাচূউরড ব্যালেন্সড সোশাইটি।
২। রাষ্ট্রীয় সামর্থ্যের জায়গা তথা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি ইত্যাদির সাথে ব্যক্তিমানুষের সুখ, শান্তি ও মানুষিক ও শারীরিক সুস্থতা ও আকর্ষন সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি - তুলনীয় নয়, তুলনা হতে পারেনা। ইসলামে আমি যা দেখি তা হল প্রচন্ড প্রাগমিটিজমের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে পরিবার আর পরিবারের বাহিরে সোসাইটি আর তারপর রাষ্ট্র আর তারপর পৃথিবী ও ন্যাচারকে আলাদা আলাদা করে সীমারেখা টানা হয়েছে এবং তাদের রোলস ও রেসপনসিভিলিটি গুলোকেও আলাদাভাবেই ডিফাইন করা হয়েছে। আর আলাদা আলাদা রোলস প্লে করলে সবকিছুতে হারমোনী নিশ্চিত হয় - ঠিক যেমন চাঁদ ও সূর্য। দুটি আলাদা রুলস ও রেগুলেশানে চলছে -কিন্তু হারমোনি নিশ্চিত করছে, কন্ট্রাডিকশান করছে না।
৩। নিশ্চয়ই ওগুলোর (বিজ্ঞান ইত্যাদি) ক্যাম্পেইন সমান তালে হওয়া উচিত। কিন্তু বিয়ে, ছেলে মেয়ের আকর্ষন ইত্যাদি বিষয়সমূহকে অবজ্ঞা করার ও কিছু নেই। বরং ব্যক্তি মানুষের জীবনে এটা এতটাই মৌলিক, এতটাই অংগাংগি ভাবে জড়িত যে আপনি ওসব নিয়ে লিখালিখি করে কোন ফল ই যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে পারবেন না - যদি হিউম্যান ভ্যালুজ ও ডিগনিটি ইতোমধ্যে নষ্ট হয় (যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূলতঃ হয়েছে)। তার উপর কাউকে না কাউকে তো কলম ধরতেই হবে দেশের ইয়াং জেনারেশান যে ভাবে এই এডিকশান স্লপে দিনকে দিন গহীনে ডুবতে বসেছে। এই পাপবৃত্তি হতে মুক্ত করার জন্য বা রাখার জন্য লিখালিখি না করাটা কিভাবে উত্তম বলে বিবেচিত হতে পারে?
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন...
মনেপড়েগেলো হঠাৎ....... তাই মনটা হালকা করলাম আপনাকে বলে
লেখককে মহান আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন!
-- স্বপ্নচারী
মন্তব্য করতে লগইন করুন