দলবদ্ধতা বনাম দলান্ধতাঃ অমুক শায়খ নির্দলীয়, আমি কেন দলবদ্ধ হব!
লিখেছেন লিখেছেন সময়ের কথা ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ০২:৫৮:২২ রাত
মুসলিমরা একসময় রাসুল (স) এর নেতৃত্বে একসাথে কাধে কাধ মিলিয়ে দলবদ্ধ হয়ে ইসলাম পালন করতো। খলীফা রাশেদীনের যুগেও এই ধারায় ছিল মুসলিমরা। সেযুগের শেষপ্রান্তে এই দলবদ্ধতায় চিড় ধরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে সংকটের মাধ্যমে (আলী (রা) ও মুয়াবিয়া (রা) এর মধ্যকার ঘটনার জের ধরে)। মুসলিমদের দলবদ্ধতাকে সর্বোচ্চ সুন্দরভাবে টিকিয়ে রাখতে এমনকি শেষ রক্তবিন্দু দিয়েই চেষ্টা করেছিলেন রাসুল (স) এর নাতি হুসেইন (রা)। কিন্তু না, রক্ষা হয়নি। দলবদ্ধতায় চিড় ধরে। এই চিড় বড় হয়ে মুসলিমদেরকে অনুতে পরমানুতে ভাগ করতে করতে উমাইয়া খলীফা, আব্বাসীয় খলীফা এবং সর্বশেষ উসমানী খলীফার যুগ পার হয়। এই যুগগুলোতে মুসলিমরা যতটা না উম্মাহ হিসেবে দলবদ্ধ ছিল তাঁর চেয়েও বেশী শাসিত ছিল কোন সম্রাট, সুলতান বা বাদশাহের মাধ্যমে। সর্বশেষ উসমানী খিলাফার পতনের পর মুসলিমদেরকে ম্যাক্রো লেভেলে (বড় স্কেলে কিন্তু সমগ্র উম্মাহ হিসেবে নয়) দলবদ্ধ রাখার শেষ সুতোটাও ছিড়ে যায়। উসমানী খিলাফাহ নামমাত্র সুতোটাও কেটে যাওয়ার পর প্রজ্ঞাবান মুসলিমদের চৈতন্যদোয় হয়। খিলাফার মৃত কফিনের বুক চিরে জেগে ওঠে নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়ার আহবান। কিছু ইসলামী সংগঠন গড়ে ওঠে যেগুলো মুসলিমদেরকে সংগবদ্ধ হয়ে ইসলাম পালনের আহবান জানায়, সংগবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে বাস্তবতার আলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরে। কিন্তু যেহেতু ইসলামী সংগঠনগুলো নবী দ্বারা পরিচালিত নয়, তাই কোন মুসলিম কোন ইসলামী সংগঠনে যোগ দিলেও আরেকজন মুসলিম সংগবদ্ধতার ইসলামী স্পিরিট ও প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে সেখানে যোগ দেয়াটাকে জরুরী মনে করেনি বা করছে না। দলবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ হয়েই ইসলাম পালনের কথা আল্লাহ ও তাঁর নবী বার বার বলেছেন। কেবল সংঘবদ্ধতার বাক্য দিয়ে মহান রব ও তাঁর নবী থেমে যাননি, বরং সংঘবদ্ধতার স্বরুপ, প্রকৃতি, নেতৃত্ব, আনুগত্য, অসংগবদ্ধতার ক্ষতি, ইত্যাদি বিষয়ে বাস্তব উদাহরনসহ অসংখ্য নির্দেশাবলী দিয়ে দিয়েছেন। গত কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলিমরা ইসলামের আলোকে সংগবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তাকে পাশ কাটিয়ে অসংগবদ্ধই ছিল। তাই এযুগে এখনো অসংগবদ্ধতাই স্টাইল। আমি কোন ইসলামী সংগঠন করি না, একথা বলাটা এযুগে কারো জন্যে কোন লজ্জা বয়ে আনে না, যদিও দলবদ্ধতার ব্যাপারে ইসলামী বিধানের সরাসরি লংঘন হচ্ছে। বরং সমাজে আরো মান বাড়িয়ে দেয়। সংঘবদ্ধ মুসলিমদের তুলনায় ইসলামের জন্যে সংঘবদ্ধ হয়নি এমন মানুষ সংখ্যায় বেশী। আশেপাশে তাকালে আওয়ামীলীগ-বিএনপি-কমিউনিষ্ট ইত্যাদি বিভিন্ন মতাদর্শে মানুষ সংগঠিত হলেও ইসলামের নামে সংগঠিত মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কমই। এই অসংঘবদ্ধদের সংখ্যাধিক্য এবং শত শত বছরের অসংগবদ্ধতার অভ্যস্ততা অসংগবদ্ধতাকেই ইসলাম বানিয়ে দিয়েছে। তাই এখন কতক মুসলিম সংগবদ্ধতার প্রয়োজনই অনুভব করে না, আর কতক মুসলিম চাকুরী করা পাঞ্জেগানা নামাজের ঈমামকে উম্মাহর ঈমাম চিন্তা করে সংগবদ্ধতার ফ্যান্টাসি অনুভব করে। সংগবদ্ধতার যে রসায়ন রয়েছে তা নিয়ে এরা নিজেদের জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে চিন্তা করলেও কেবল ইসলামী সংগবদ্ধতার ক্ষেত্রে এসে এরা একজন চাকুরীজীবি মুর্দাদীলের ঈমামকে উম্মাহর ঈমাম বানিয়ে দেয়, আর উম্মাহর সুর্যসন্তানদের সাথে সঙ্গবদ্ধ হতে অস্বীকার করে। উপরের কথাগুলো মাথায় রাখলে, দলবদ্ধ বা সংগবদ্ধ ইসলামের জন্যে তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কিছুটা অনুমান করা যায়। যারা দলবদ্ধ নয় ইসলামের জন্যে, তাদের জীবন দলবদ্ধদের জীবনের চেয়ে সহজ, তাদের ইসলামও সহজ ভার্সানের ইসলাম (সঠিক ভার্সান কিনা চিন্তার বিষয়)। অসংগবদ্ধ লাখোকোটি মুসলিম এখন কোন জনপ্রিয় শায়খকে দলবদ্ধ না হতে দেখে দলীল হিসেবে পেশ করে। অমুক শায়খতো দলবদ্ধ না, সে কি ইসলাম কম বুঝে! তাইলে আমিও তাঁর মত অসংগবদ্ধ থাকবো, অসুবিধা কি! ইসলামী সংগঠনগুলোতে কম বুঝদার বা বেশী বুঝদার মানুষ থাকতে পারে। ইসলামী সংগঠনে থাকলেই কেউ জান্নাত পেয়ে যায় না। কম বুঝদার কারো আচরনে দলবদ্ধতার পাশাপাশি দলান্ধতার কিছু প্রকোপ থাকতে পারে। কিন্তু অবশ্যই ইসলামী সংগঠনে যারা দলভুক্ত থাকে ইসলামের রাহে তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও ইসলামের সংবদ্ধতার বিধানের অনুসৃতি অন্যদের চেয়ে বেশী। শায়খের পরিচয়ে নয়, বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বানী ও কর্মপদ্ধতিতে খুজুন ইসলামের বিধান। ইসলামের রাহে সঙ্গবদ্ধ হয়ে জীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষার অনুপম উদাহরন তৈরি কারীদের যারা অসংগবদ্ধ তারা দলান্ধ বলতে পারে। ইসলামের রাহে যারা সংগবদ্ধ হয়ে কাজ করে তাদেরকে কাফিররা ধর্মান্ধ বলতে পারে। আল্লাহর কাছে এই দলান্ধ বা ধর্মান্ধরাই হয়তো প্রিয় হবে বেশী, ইনশা আল্লাহ।
---------------------------
ইসলামী সমাজ কায়েমে যারা বাস্তবতা নয় বরং অলীক স্বপ্নকে আকড়ে থাকে আর মুসলিমদের মাঝে উগ্রতা বা বুজদীলীর বিষবাষ্প ছড়ায় তাদের উদ্দেশ্যে একটি পোষ্টঃ যেদিকে তাকাই ফতোয়াবাজদের বসন্তঃ মিশর নাকি ফেইলড কেস, আসলেই কি তা? তাহলে সাকসেস কেস কোনটা?
একটি বারুদ পোষ্ট, চিন্তাকে কিছুটা নাড়া দেবে আশাকরিঃ মুসলিম হিসেবে ডাঃ জাকির নায়েককে শ্রদ্ধা করা গেলে, মাওলানা মওদুদী বা নিজামীকে নয় কেন?
তামীম ইকবালের বিয়েতে মাওলানা নিজামীর উপস্থিতি নিয়ে একটি স্বপ্নচিত্র আকা হয়েছে এই পোষ্টটিতেঃ তামিমের বিয়েতে সপরিবারে মাওলানা নিজামীঃ কেসস্টাডি
ইসলামে গোড়ামীর কোন স্থান নেই। তাই গোড়ামীর জাল ছিন্ন করে সঠিক চিন্তায় ইসলামের সৌন্দর্যকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা দেখুন এই পোষ্টেঃ গোঁড়াদের ঘোড়সওয়ারী ও তীরন্দাজীর ইসলাম বনাম বুঝদারদের ক্রিকেট-ফুটবল সমেত ইসলাম
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান নিয়ে অনেকের প্রশ্নের অন্ত নেই। শিয়া-সুন্নীর বিভেদ কেবল নয়, বরং কাফির-মুসলিমের বিভেদে গিয়েও আলোচনা শেষ হয় না। ইরান নিয়ে কিছু চিন্তাকর্ষক কথা পড়ুন এক নিঃশ্বাসেঃ ইসলামী ঐক্যের ভিত্তিঃ ইরান প্রসঙ্গে আলোচনা
ইসলামের সঠিক বুঝ পাওয়ার ক্ষেত্রে এই পোষ্টটিতে কিছু চিন্তাকর্ষক পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছেঃ ইসলামের যুগ বা জাতিবদ্ধতার বিশ্লেষনঃ ইসলাম কি আরবীয়, মধ্যযুগীয় বা প্রাচীন যুগীয়
আমার ফেসবুকঃ Mohamad Ahsanul Haque Arif
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাই বলে অন্য দলকে কাফের বা অন্য কোন
গালি দেয়া ঠিক না
মন্তব্য করতে লগইন করুন