উত্তম মুসলিমরা পৃথিবীতে অমুসলিম বা ট্রেডিশনাল মুসলিম কারো দ্বারাই ওয়েলকামড না
লিখেছেন লিখেছেন সময়ের কথা ০৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:৩৮:৩১ বিকাল
আমেরিকায় জম্ম নেয়া, বড় হওয়া, এবং নাগরিকত্ব থাকা মুসলিমদেরও অনেক আমেরিকান মনে করে যে তারা আমেরিকান না। ডেনমার্কের একটি রাজনৈতিক দলতো তাদের নির্বাচনী কথাবার্তাতেই নিয়মিত বলে 'No more Muslim'। জার্মানীতে মুসলিমদের প্রতি ঘৃনায় এমনও হয়েছে যে আদালতে পুলিশের সামনেই ছুরিকাঘাতে একজন জার্মান মুসলিম নারীকে হত্যা করে আরেকজন জার্মান। অর্থাৎ অমুসলিমদের দেশে ইসলাম ওয়েলকামড না। এতো গেল পাশ্চাত্যের অমুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর কথা।
#CAIR: Anti-Muslim Message Seen on Truck in Oklahoma City (PHOTO)
আমাদের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর কি অবস্থা! চারটি উদাহরন দিই।
১/ তুরস্কে ইসলামপন্থী একেপার্টির (এরদোগানের) সরকার যখন তুরস্ককে অর্থনৈতিক দিক থেকে আধুনিক বিশ্বের কাছে রোল মডেলের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, হিউম্যান রাইটস থেকে শুরু করে জীবনের যাবতীয় দিক ও বিভাগে তুরস্কের উন্নয়ন এমনকি অনেক ইউরোপীয় দেশকেও অবাক করে দিয়েছে, তখনও আমি অনেক তার্কীশের সাথে কথা বলেছি। জ্ঞানহীন ট্রেডিশনাল মুসলিম তার্কীশরা মনে করে এরদোগান ইসলামী না, তাকে ইসলামের দিক থেকে গ্রহন করার বিশেষ কোন কারন নেই। ইসলাম বিরোধী তার্কিশরা মনে করে এরদোগানের সরকার ইসলামী ভাবাপন্ন যা তারা তুরস্কের জন্যে গ্রহনযোগ্য মনে করে না। আর উভয় পক্ষই মনে করে এরদোগানের সরকারকে তারা কেবল বাধ্য হয়ে মেনে নিচ্ছে অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়নের জন্যে, কিন্তু ইসলামের জন্যে না। এমনকি তাদের ইসলামী মানসিকতাই যদি আজকের অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়নের শেকড় হয়, তাতেও তারা তুরস্কে ইসলামী সরকার মেনে নেবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এইজন্যে এরদোগান বার বার আলাদা করে বলতে হচ্ছে, আমরা ইসলামপন্থী না। তারপরো এরদোগানের দল কমপক্ষে ৩ বার নিষিদ্ধ হয়েছিল তুরস্কে। এমনকি সরকার পরিচালনাকালীন সময়েও নিষিদ্ধের আবেদনে ৬-৬ ভোটে বেনিফিট অফ ডাউটে টিকে গিয়েছিল। তুরস্কের ইতিহাসের তারকা সাইয়্যেদ বদীউজ্জামান নুরসী জীবনের লম্বা সময় কাটিয়েছেন জেলখানায়, আদনান মেন্ডেরেসকে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল নাটকীয়ভাবে। একেপার্টির লোকদেরকে দেশদ্রোহী অপবাদ দেয়া হয়। অর্থাৎ মুসলিম দেশে ইসলাম ওয়েককামড না।
২/ দীর্ঘ ৬০ বছরের সামরিক শাসন ও প্রশাসন ব্যবস্থায় অব্যবহিত পরে মিশরে আসলো মুসলিম ব্রাদারহুডের (মুহাম্মাদ মুরসীর) ইসলামপন্থী সরকার। এক বছরও সময় দেয়া হয়নি তাদেরকে। জ্ঞানহীন ট্রেডিশনাল মুসলিমদের মতে তারা ঠিকমত দেশকে ইসলামাইজ করতে চেষ্টা করেনি, সুতরাং তারা অযোগ্য। আর ইসলাম বিরোধী সেকুলাররা বলেছে, মুরসীর সরকার দেশকে ইসলামাইজ করে মধ্যযুগীয় করে ফেলছে, সুতরাং তারা মিশরের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে অযোগ্য। পাশাপাশি দ্রব্যমুল্য, বানিজ্য-ঘাটতি ইত্যাদি অনেক রাজনৈতিক গেমতো ছিলই নবগঠিত সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক ছায়ায় গঠিত ৬০ বছরের প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পরিশেষে ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধের পর্যায়েই রাখা হয়। মিশরের ইতিহাসের তারকা হাসান আল বান্নাকে রাস্তায় হত্যা করা হয়, সাইয়্যেদ কুতুবকে দেয়া হয় ফাসি। জয়নব আল গাজালীর মত মহিলার উপর নির্যাতনের স্বাক্ষী হয়ে আছে 'কারাগারের রাতদিন' বইটি। ব্রাদারহুডের মানুষদেরকে দেশদ্রোহীর অপবাদ দেয়া হয়। অর্থাৎ মুসলিম দেশে ইসলাম ওয়েলকামড না।
৩/ ১৯৪৭ এ অপরিপক্ষ সেকুলার মনোবৃত্তি সম্পন্ন রাজনীতিবিদদের হাত ধরে ইসলামের নামেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই জামায়াত ইসলামী (সাইয়্যে আবুল আলা মওদুদী) ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রনয়নের প্রস্তাব করেন। এব্যাপারে তারা ততকালীন সরকারকে পাকিস্তানের আলেম-ওলামাদের ঐক্যমত্যে ২২টি পয়েন্টসহ ইসলামী শাসনতন্ত্রের একটি রুপরেখাও দেন। কিন্তু ইসলামী শাসনতন্ত্রতো প্রনয়ন হয়ইনি বরং উস্তাদ মওদুদীকে জীবনের দীর্ঘসময় কাটাতে হয় কারাগারে, ফাসির মঞ্চেও তাকে পাঠানো হয় (যদিও পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারনেই তাকে ফাসি দেয়া হয়নি), জামায়াত ইসলামীকে বলা হয় ভারতের দোসর এবং পাকিস্তানে অপাংক্তেয়। একাধিকবার নিষিদ্ধ করা হয় জামায়াত ইসলামীকে (ততকালীন পাকিস্তান জামায়াত ইসলামী)। দেশদ্রোহীর অপবাদ দেয়া হয় তাদেরকে। অর্থাৎ মুসলিম দেশে ইসলাম ওয়েলকামড না।
৪/ ১৯৭১ এ বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জম্মের পরে প্রথম সংবিধানেই ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায় এমন কথায় কোন রাজনৈতিক দল হতে পারবে না বলে আইন করা হয়। ১৯৭৭ এ অন্য সরকার এসে সংবিধান পরিবর্তন করে বহুদলীয় ও মতের রাজনীতি অনুমোদন করে। এপ্রেক্ষিতে ইসলামী আদর্শের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা আবার সরব হয়ে ওঠে প্রথমে 'ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ' সংগঠনের নামে, পরবর্তীতে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নামে। কিন্তু যারাই এই কথাগুলো তুলেছে তাদেরকে বরাবরের মতই দেশদ্রোহী আখ্যা দেয়া হয়। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় রচনা করা হয় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা গল্প ইসলামী কার্যক্রমের ও নেতৃবৃন্দের নামে। নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে। তাদের নেতৃবৃন্দকে বহু বছর ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়, কাওকে কাওকে ফাসিও দেয়া হয়। ইসলামী বইকে জঙ্গী বই হিসেবে সারাদেশে উপস্থাপন করা হয়, আর সারাদেশের মুসলিমরা ভিডিওতে কুরআন শরীফকে জঙ্গী বই বলে কাওকে গ্রেফতার করতে দেখেও মনের ঈমানই বড় ঈমান বানিয়ে চুপ করে থাকে। অর্থাৎ মুসলিম দেশে ইসলাম ওয়েলকামড না।
পরিশেষে একটা প্রামান্য উদাহরন দিই। রাসুল (স) এবং তাঁর অনুসারীদেরকে মক্কার মানুষরা যে পয়েন্টগুলো ধরে বিরোধীতা করতো তাঁর মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু পয়েন্ট ছিল স্বামী-স্ত্রীতে বিভেদ ঘটানো, পরিবারে ভাঙ্গন ধরানো, গোত্রীয় সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরানো, বাপ-দাদার সময় থেকে জেনে আসা শিক্ষাগুলোর ভুলত্রুটি বের করার দায়, ইত্যাদি। তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হয়েছিল, ৩ বছর সময় শীবে আবু তালিবে সমাজচ্যুত অবস্থায় রাখা হয়েছিল তাদেরকে মক্কার গোত্রীয় নিয়মনীতির ব্যাপারে বিদ্রোহ করার অজুহাত দেখিয়ে। তাদেরকে অনেককে অত্যাচার করতে করতে হত্যা করা হয়েছিল, এমনকি সর্বশেষে রাসুল (স) কেও হত্যা করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল তাঁর ঘরে ঢুকেই। তারা মদীনায় চলে যাওয়ার পরেও মক্কার কাফিররা কমপক্ষে ৪ বার সৈন্য সমাবেশ করেছিল মুসলিমদেরকে নির্মুল করার জন্যে। অর্থাৎ মুসলিমরা ওয়েলকামড ছিল না ইতিহাসের প্রারম্ভেও।
সমাধান কি! আজকে সেকুলার বা অমুসলিমরা শক্তির জোরে মুসলিমদেরকে মুসলিম বা অমুসলিম সকল দেশগুলো থেকেই disown (এরা আমাদের না) করছে, মুসলিমরা কি তাদেরই মতো শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতা দখল করে সেকুলার বা অমুসলিমদেরকে দেশকে হটিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেবে! আফসোস মুসলিমরা এই জানোয়ারসুলভ বিপরীত আচরনটি কখনো করেনি বা দেখায়নি। বরং রাসুল (স) যেভাবে মক্কা বিজয়ের পরে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন সেসব খুনীদের যারা তাকে হত্যার জন্যে তলোয়ার ধার করে রেখেছে, মুসলিমরাও বার বার ক্ষমতায় এসে সেকুলার বা অমুসলিমদের ক্ষমা করারই চেষ্টা করেছে। সময় বলে দেবে আল্লাহ পৃথিবীতে কাকে বিজয়ী করবেন, ইনশা আল্লাহ।
একটি হাদিসে নবীজি (সা) বলেন : “যে নিঃসঙ্গ ও অপরিচিত অবস্থায় ইসলাম তাঁর যাত্রা শুরু করেছিল আবার সে অবস্থায় ফিরে যাবে তবে গোরাবাদের জন্য সুসংবাদ। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন কারা গোরাবা? নবীজি (সা) বললেন : “ঐ অল্পসংখ্যক ও অপরিচিত মানুষ যারা দীনের কঠিন ও দুঃসময় আমার আদর্শ, প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত থাকবে।”
ছবির রেফারেন্সঃ https://www.facebook.com/CAIRNational/photos/a.92140837694.89999.42590232694/10152439379577695/?type=1
আমার ফেসবুক পেজ এখানে
বিষয়: বিবিধ
১৬২৬ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গনতন্ত্র ও ইসলাম এর অধিকাংশ বিষয়ে মিল রয়েছে। কিছু বিষয় সাংঘর্ষিকও আছে। সেটির সংস্কারের করে ইসলামের আলোকে চলার জন্যেই ইসলামী রাজনীতি।
কমেন্টের জন্যে ধন্যবাদ।
ইসলামে, সমস্থ ক্ষমতার মালিক আল্লাহ
আর
গণতন্ত্রে সমস্থ ক্ষমতার মালিক জনগণ
গণতন্ত্র বলছে অধিকাংশের মতামত অনুসরণ করতে
আর
ইসলাম হচ্ছে, কোরআন হাদীস থেকে বিধান থেকে বিধান আসার পরে মুমিনের আর কোন স্বাধীনতা থাকে না। কোরআন বলেছে তোমরা অধিকাংশের মতামত গ্রহণ করো না,যদি কর তাহলে তুমি পথভ্রষ্ট হবে। আর কোরআন
ধন্যবাদ।
এর পরের কথা হলো, এই পোষ্টটি গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে তর্কের ক্ষেত্র নয়। সেগুলো নিয়ে তর্কের অনেক পোষ্ট রয়েছে। এই তর্ক সেখানে করাই ভালো। পাঠকরা দেখে যেটি সঠিক মনে হয় সেদিকে যাবে। এই পোষ্টে এই পোষ্টের সাথে সম্পর্কিত কমেন্টই করুন।
মিসরে মুরসির সরকারের মাঝামাঝি সময়ে ইন্টারনেটে অনেকেই তার বিরোধিতা করছিলেন। সেটা নিয়ে সেসময় সোনারবাংলাদেশ ব্লগে আমি একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। সেই পোস্টে অনেকে এই মত প্রকাশ করেছিলেন যে গনতন্ত্র ইসলাম সম্মত নয়। আমি তাদেরকে সহজ একটি প্রশ্ন করেছিলাম যে কিভাবে তবে ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে? আইসিস কিংবা তালেবান এর কর্ম আমরা দেখছি।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
রাখেন আপনার হাদীস। সামান্য ক্ষমতা থাকলে আজকেই মুসলমানরা আমেরিকার হোয়াইট হাউজে জোর করে কলেমার পতকা ঝুলিয়ে দিত। খলিফা ওমর, আইসিস, তালেবান স্টাইলে সব অমুসলিমের বাড়ীতে হলুদ পতাকা উত্তলনে বাধ্য করত। পাকিস্তান স্টাইলে সব হিন্দুকে গলা ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বেড় করে দেয়া হত। আর বাংলাদেশ স্টাইলে প্রতিদিনই মন্দিরে মূর্ত্তি ভাংগার প্রতিযোগিতা হোত।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7228
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : এ কারনেই বুদ্ধিমান আমেরিকারা আগে ভাগেই মুসলিমদের নাটবল্টু টাইট করে দিয়েছে, যাতে দাঙ্গাপ্রিয় মুসলিমরা নড়াচাড়া কম করে।মন্তব্য করতে লগইন করুন