ফিলিস্তিন ইস্যুতে আমাদের করণীয়
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত প্রজন্ম ১২ জুলাই, ২০১৪, ০২:১০:১৩ দুপুর
অনেকেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে বলছেন আমাদের করার কিছু নেই শুধু দোয়া করতে পারি। শুধু দোয়াতেই শেষ নয় বরং আমাদের অনেক কিছু করার আছে। আমাদের যা করা উচিতঃ
১। ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করা তবে এটি এমন মহুর্তে যখন আল্লাহ্ দোয়া ও সুপারিশকে বেশী পছন্দ করেন এবং এই উপলক্ষ্যে আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ককে গভীর ও নিবিড় করা। কিন্তু আমরা কতটুকু করছি?
২। যে কারণে আল্লাহ্ মানুষকে গড়ে পরীক্ষা করেন তা থেকে নিজেকে বাছিয়ে রাখা। এর একটি হচ্ছে পাপ। তবে এটি ফিলিস্তিনিদের নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল ও মজবুত ইমানদার মানুষগুলো সেখানে। আরেকটি হচ্ছে কোন একটি ক্ষুদ্র জনপদের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলা পৃথিবীর সকল মানূষের পরীক্ষা নেন এজন্য যে তাদের দায়ীত্বকে পরীক্ষা করার জন্য। এখানে আমরা কি করছি? আমরা কি আমাদের সাধ্য অনুযায়ী ফিলিস্তিনের জন্য কিছু করছি? আবার কিছু করতে গিয়ে অযৌক্তিক আবেগে অনেকে নিজের দেশেই চরমপন্থা অবলম্বন করে। আমাদের এ ইস্যুতে ঈমান বহির্ভূত জীবনের গুরত্ব সম্পর্কে আপামর জনতার মাঝে সচেতনতা তৈরি করা উচিৎ। কিন্তু এটি শুধু কতেক ফেসবুক আইডি ওয়ালা মানুষের কাছে সীমাবদ্ধ থাকায় এত বড় বিপদ দেখেও আমার দেশের মানুষগুলো নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন আর তাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারছেনা। আমরা আগেই এমন কান্ড ঘটিয়ে যার কারণে ভেলিড ইস্যুতেও রাস্তায় নেমে রাস্ট্রীয় বিবৃতির দাবী জানাতে সাহস পাইনা। এখানে হিকমতের বাহানা ধরি। এমন কি আমরা করছিনা?
৪। যে কারণে ফিলিস্তিনিরা এমন মজবুত ঈমান অর্জন করতে পেরেছেন তা কি আমাদের মধ্য খুজে দেখেছি এবং অর্জন করার চেষ্টা করেছি? তারা কুরআনকে সর্বদা সঙ্গী হিসেবে রাখে। কুরআনের জ্ঞান আমাদের কতটুকু আছে? আমাদের দেশের কয়জন মানুষকে আমরা কুরআন শিখাতে পেরেছি?
৫। আল্লাহর দরবারে তাদের ধরনা আর কান্নায় কপোল নয় শুধু, বুক ভিজে জায়নামাজ ভিজে যায়। কিন্তু আমাদের অন্তর আজ পাথর থেকে শক্ত হয়ে গিয়েছে আমাদের অপরাধ আর গুনাহের কারণে। আমরা কি আল্লাহর অবাধ্যতা ছেড়ে দিয়ে আমাদের অন্তরকে নরম করা চেষ্টা করছি? আল্লাহর কাছে হাত তুললে আমাদের অন্তর কতটুকু বিগলিত হয়?
৬। তারা তাদের সন্তানদেরকে ছোট থেকে আল্লাহ্, রাসূল ও কুরআনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছে? আমাদের সন্তানদের অন্তরে আল্লাহ্, রাসূল ও কুরআনের ভালবাসা আমরা কতটুকু জম্মাতে পেরেছি?
৭। আমরা বাচ্চাদের ডাক্তার ইনিজনিয়ার বানানোর আগে আল্লাহর খাটি বান্দা বানানোর করি?
৮। মানবতার কল্যাণে কাজ করার আগে মানবতার স্রষ্ট্রার সাথে আমাদের নিজেদের এবং সন্তানদের সম্পর্ককে কতটুকু স্থাপন করতে পেরেছি?
৯। আমাদের যাবতীয় কাজে বিজাতীয়দের অনুসরণ থেকে বেচে থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের লাইফ স্টাইলে কি আমরা তা দেখাতে পারছি?
১০। মেডিয়া, লেখনির অঙ্গন, কথা বলার স্থান, প্রতিনিধিত্বের পরিসর যে যেখানে আমারা আছি সে সেখানেই এই বর্বর হামলাকে ঘৃণা করা উচিৎ। আমরা তা করছি? সাথে সাথে এই হামালার কারণগুলো ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অঙ্গনে খুজে বের করার চেষ্টা করেছি?
১১। তাদেরকে আল্লাহ্ যে কারণে এমন পরীক্ষা করছেন এমন পরীক্ষায় যাতে আমাদের মত দূর্বল ঈমানের মানুষেরা না পড়ি সে জন্য নিজেরদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। তাদের ঈমান মজবুত থাকায় আল্লাহ্ তাদেরকে এই পরীক্ষার জন্য পছন্দ করেছেন। কিন্তু আমরা কি আমাদের দায়িত্ব পালন করছি?
১২। তাদের জন্য বিশ্বস্ত বাহনে সাহায্য পাঠানো প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কি কখনো জিজ্ঞস করেছি যে এই অসহায় মানুষগুলোকে আমি কিছু সাহায্য পাঠাতে চাই কিন্তু উপায় কি?
১৩। ইহুদীদের এই কাজকে ফিলিস্তিন বিরোধী না বলে গোটা মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিৎ। আমরা কি এমনটা করতে পারছি?
১৪। ফিলিস্তিনের গণহত্যার অন্তরালে রয়েছে মিশরের সিসি সহ অন্যান্য মুসলিম দেশের ইহুদী দালালদের উলত্থান। আমরা কি এমন দালালদের রায় প্রদান থেকে নিজেদের নিবৃত করতে পেরেছি?
১৫। ইহুদীদের দোসর ও সমর্থকদেরকে বর্জন করা এবং জনমনে তাদের ব্যপারে ঘৃণা তৈরি করা। এজন্য কি উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি?
১৬। তাদের প্রোডাক্ট ও সংস্কৃতিকে পুরোপুরি বর্জন করা এবং এই সচেতনতা জনমনে তৈরি করা উচিৎ। আমরা কতটুকু করছি?
১৭। যাদের কারণে পুরা জনপদ অশান্তিতে থাকে তাদের কি আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে বর্জন করতে পেরেছি?
১৮। যারা ইসরাইলী দালাল, জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সময় আমরা তাদেরকে এমনভাবে মনে রাখি?
১৯। যে সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি, মেডিয়া ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, এক্টর ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের পারপরমেন্সকে আমাদের বিনোদন থেকে কি মাইনাস করতে পেরেছি?
২০। বিশ্বকাপের অন্তরালে ফিলিস্তিন আক্রমণ। কিন্তু রাতভর খেলা দেখে নিজের জীবনের মূল্যবান সময়কে নষ্ট হওয়া থেকে কতটুকু নিজেকে রক্ষা করেছি? খেলা দেখার পরও কি গভীর রাতে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে ফিলস্তিনিদের স্মরণ করেছি?
“আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেননা যতক্ষন তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে সচেষ্ট না হয়”।
কথাগুলোকে আপাতত দৃষ্টতে কোন বন্ধুর দৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক ও প্যাঁচাল মনে হতে পারে। এটি হতে পারে শুধু আমাদের চিন্তার দৈন্যতার কারণে। কারণ আমরা অতি হালকা বিষয়কে খুব সিরিয়াসলি নেই এবং তুচ্ছ বিষয়কে জীবনের ভাইটাল পার্ট হিসেবে মনে করি। আবার খুব সিরিয়াস বিষয়কে না ভেবেই খুব ইজিলি নেই এবং জীবন রক্ষার উপকরণ এমন বিষয়কেও উপেক্ষা করে চলি। একটু ভেবে দেখুন। আপনার ও এমন অনুভূতি জাগ্রত হবে। মনযোগ দিয়ে দীর্ঘ লিখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৫৭৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন