সৈয়দ আবদাল আহমদ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা আমার দেশ থেকে কপি করে দেয়া হল। ''শাহবাগিদের বিরুদ্ধে আলেম সমাজের সর্বাত্মক প্রতিরোধ'' সৈয়দ আবদাল আহমদ
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ ১৭ মার্চ, ২০১৩, ১১:০০:৪৮ রাত
বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রাম রুখে দিয়েছে শাহবাগিদের। ইসলামবিদ্বেষী শাহবাগি ব্লগার চক্র চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তাদের এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল ১৩ মার্চ। কিন্তু দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর নেতৃত্বে আলেম সমাজ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। দৃঢ়কণ্ঠে তারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, শাহবাগিরা ইসলামকে অবমাননা করেছে, আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে ঘৃণা ছড়িয়েছে। চট্টগ্রামের মাটিতে তাদের স্থান নেই। ইসলামের বাণী বাংলাদেশে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম অঞ্চল দিয়েই। নবম শতাব্দীতে হজরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহ.) ও তাঁর বিপুলসংখ্যক অনুসারী সুফি চট্টগ্রামেই আগমন করেন। হজরত বায়েজিদ বোস্তামিসহ বারো আউলিয়ার মাজার রয়েছে চট্টগ্রামে। সেই চট্টগ্রামে নাস্তিক-মুরতাদরা ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, আলেম-ওলামাকে নাজেহাল করবে এবং মানুষে মানুষে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াবে—তা হতে পারে না।
তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নামে শাহবাগিরা প্রথমে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করার কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচি ঘোষণার পরই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর নেতৃত্বে আলেম সমাজ সাফ জানিয়ে দেন, শাহবাগি নাস্তিকদের তারা চট্টগ্রামে প্রতিরোধ করবেন। এদিন চট্টগ্রামে আলেম সমাজের পক্ষ থেকে হরতাল আহ্বান করা হয় এবং লালদীঘি ময়দানে পাল্টা-সমাবেশ ডাকা হয়। এই পরিস্থিতিতে শাহবাগিরা তাদের সমাবেশ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে করার ঘোষণা দেন। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের ডিসি ও এসপি আল্লামা শফীর শরণাপন্ন হয়ে শাহবাগিরা যাতে সমাবেশ করতে পারে, সে অনুরোধ জানান। কিন্তু আল্লামা শফী তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইসলামবিদ্বেষীরা চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে পারবে না।
সরকারের সহযোগিতায় শাহবাগিদের সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি চলতে থাকে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় প্রশাসন চট্টগ্রামের তিনটি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে। এদিকে আল্লামা শফী এক ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন আহ্বান করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শাহবাগি নাস্তিকদের প্রতিরোধ করা ঈমানি দায়িত্ব। সমাবেশের আগের দিন ১২ মার্চ আন্দরকিল্লায় হাজার হাজার আলেম-ওলামা সমবেত হন। তারা ঘোষণা করেন, ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে কাফনের কাপড় পরে প্রতিরোধ হবে। যেখানে শাহবাগি নাস্তিক, সেখানেই কাফনের কাপড়ের প্রতিরোধ। পীর-আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামের মাটিতে শাহবাগি খোদাদ্রোহী নাস্তিক ব্লগারদের ঠাঁই নেই। আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর শত্রুরা যদি চট্টগ্রামে এসে সমাবেশ করে, তাহলে নবীপ্রেমিক হাজার হাজার তৌহিদি জনতা তাদের প্রতিহত করবে। একই দিন হাটহাজারী মাদরাসায় বদর যুদ্ধের অনুপ্রেরণায় ৩১৩ জন আলেম শহীদ হওয়ার জন্য চট্টগ্রামের রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ নেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রশাসন সারা চট্টগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করে। গভীর রাতে শাহবাগিরা তাদের সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করে। এ অবস্থায় আলেম-ওলামাও তাদের হরতাল স্থগিত করেন। পরদিন শাহবাগিদের নেতা ডা. ইমরানের নেতৃত্বে ব্লগাররা আলেমদের সঙ্গে আলোচনার জন্য চট্টগ্রামে রওনা দেয়। কিন্তু আল্লামা শফী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইসলাম অবমাননার জন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে। তাদের সঙ্গে আবার আলোচনা কী? ফলে ফেনী থেকে প্রশাসন শাহবাগিদের ঢাকায় ফেরত পাঠায়।
শুধু চট্টগ্রামে নয়, ইসলামবিদ্বেষীদের দেশের সব জায়গা থেকেই প্রতিরোধের আওয়াজ উঠেছে। খুলনার আলেম-ওলামারা ঘোষণা দিয়েছেন, শাহবাগিদের পদ্মা পার হতে দেয়া হবে না। হজরত খান জাহান আলীর (রহ.) পুণ্যভূমি খুলনায় তাদের ঠাঁই নেই। সিলেট থেকেও তাদের প্রতিরোধ করার ডাক এসেছে। হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরাণ (রহ.)-এর পুণ্যভূমিতে তাদের যেতে দেয়া হবে না। এর আগে সিলেটে মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধেও আলেম সমাজ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তেমনি হজরত শাহ মকদুম (রহ.)-এর পুণ্যভূমি রাজশাহীতেও শাহবাগিদের প্রতিরোধের ডাক এসেছে। একইভাবে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে দেশের আলেম-ওলামারা আগামী ৬ এপ্রিল নাস্তিকদের প্রতিরোধে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী জর্জ বার্নার্ড শ’ বলেছিলেন, তাকে কোনো ধর্ম বেছে নেয়ার কথা বলা হলে তিনি নিশ্চিতভাবে ইসলাম ধর্ম বেছে নিতেন। কারণ এই ধর্ম শুধু একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানই নয়, মানবিক মহত্ত্বে ভরা। শুধু তা-ই নয়, বার্নার্ড শ’ মহানবী (সা.) সম্পর্কে বলেন, ‘আমি এ মানবশ্রেষ্ঠ মানুষটি (রাসুল সা.) সম্পর্কে গভীরভাবে গবেষণা করেছি। আমার অভিমত হচ্ছে, তাঁকে বিশ্ব মানবতার ত্রাণকর্তা হিসেবে অভিহিত করা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর মতো একজন মহান ব্যক্তি যদি গোটা আধুনিক পৃথিবীর সর্বময় নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তাহলে একমাত্র তিনিই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এবং বিভক্ত পৃথিবীর সব সমস্যা সমাধান করতে পারতেন।’ অথচ দুঃখজনক হচ্ছে, এদেশের কিছু মুসলমান নামধারী সন্তান পবিত্র ইসলাম এবং প্রিয় নবীজী সম্পর্কে কটূক্তি করছে, অশালীন বক্তব্য দিচ্ছে।
মঞ্চ স্থাপনের আড়ালে শাহবাগিদের অপতত্পরতা
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার নাম করে শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম শুরু হলেও এর আড়ালে রয়েছে এক সুদূরপ্রসারী হীন উদ্দেশ্য। তাদের এই হীন উদ্দেশ্যই জাতির কাছে প্রথম প্রকাশ করে দেয় আমার দেশ পত্রিকা। ওই সমাবেশের প্রথম দু’দিন পত্রিকাটি শাহবাগের সমাবেশকে ইতিবাচকভাবেই দেখছিল। কিন্তু পত্রিকাটি যখন দেখল তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আড়ালে তারা ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদকে উসকে দিচ্ছে, ইসলাম ও আলেম-ওলামাকে টার্গেট করছে এবং আওয়ামী ধারার বাইরের রাজনীতিকদের সমালোচনা করছে—তখন পত্রিকাটি শাহবাগের সত্য ঘটনা তুলে ধরার দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নেয়। অন্য সব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া যখন শাহবাগ-বন্দনায় মাতোয়ারা, তখন স্রোতের বাইরে গিয়ে আমার দেশ শিরোনাম করে ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’। ওই রিপোর্টে শাহবাগ থেকে উচ্চারিত ‘ফাঁসি চাই, জবাই করো’, ‘বিচার নয়, ফাঁসি চাই’, ‘খতম করো সকাল-বিকাল নাস্তা করো’ ইত্যাদি স্লোগান ও হুমকি-ধমকি তুলে ধরা হয়। কিন্তু তাতেও দেখা যায় শাহবাগিরা থামেনি। বরং তারা তাদের ঘৃণ্য কার্যক্রম আরও বাড়িয়ে দেয়। আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম পত্রিকা বন্ধের হিংসাত্মক স্লোগান তোলে। এসব পত্রিকা ঘেরাও করার কর্মসূচি দেয়। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে খতম করার ন্যক্কারজনক হুঙ্কার দেয়। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক ওয়েবসাইটে ইসলামকে টার্গেট করে মহান আল্লাহ ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য ও বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে শাহবাগিদের এই তাণ্ডব। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চলছে তাদের এই নির্লজ্জ কার্যক্রম। এরই মধ্যে সারা দেশের মানুষের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। শাহবাগিরা যে জাতিকে বিভক্ত করেছে, সমাজে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে এবং দেশের চিরায়ত মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে; তা আজ স্পষ্ট। শাহবাগি নাস্তিক ব্লগারদের সঙ্গে আওয়ামীপন্থী মিডিয়ার ভূমিকাও ন্যক্কারজনক। নীতি নৈতিকতা বর্জিত হয়ে একতরফাভাবে তারা পুরো পত্রিকাজুড়ে শাহবাগিদের প্রচার করেছে। টেলিভিশনগুলো দিনের পর দিন সরাসরি সম্প্রচার করেছে। দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বড়জোর বছরে একবার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, শাহবাগের সমাবেশ এবং ব্লগার ইমরানের বক্তব্য প্রতিদিন প্রতিটি টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। এর ফলে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। অবুঝ শিশুদের মুখেও আজ শোনা যায়, ‘ফাঁসি চাই, জবাই করো’। তারা এগুলোর কী বোঝে? এ অবস্থায় সচেতন মানুষ বসে থাকতে পারে না। দেশের আলেম-ওলামারা জাতির কাণ্ডারি হিসেবে এগিয়ে এসেছেন। আল্লামা শফী এক খোলা চিঠির মাধ্যমে ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের অপতত্পরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শাহবাগিদের অপতত্পরতার বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছেন—জাতিকে বিভক্ত করা, ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া এবং ইসলাম সম্পর্কে কুত্সা ছড়ানোর এই মঞ্চ সরকার বন্ধ না করলে জনগণের মঞ্চ তৈরি হবে।
ভয়াবহ ইসলাম অবমাননার তথ্য তুলে ধরলেন আল্লামা শফী
শাহবাগি নাস্তিকরা ইসলামকে টার্গেট করে কী ভয়াবহ অপপ্রচারে নেমেছে, তার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন দেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। গত ১০ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শাহবাগ চত্বরে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের নামে অবস্থান কর্মসূচি ও ‘জাগরণ মঞ্চের’ মূল হোতাদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ইসলাম অবমাননার ধৃষ্টতা প্রদর্শিত হয়েছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা আল্লাহ-রাসুল (সা.), উম্মাহাতুল মুমিনিন, সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের মৌলিক বিধানগুলোর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, বামপন্থী নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে বর্তমান সরকার এ দেশ থেকে ইসলাম বিতাড়নের দীর্ঘমেয়াদি নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের বলিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে প্রতিনিয়ত ইসলাম, মুসলমান ও আলেম-ওলামাদের হেয়প্রতিপন্ন করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে
তারা আলেম-ওলামা ও মাদারিসে দ্বীনিয়ার বিরুদ্ধে হরদম মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে জাতিকে বিভক্ত করার অপতত্রতা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তথাকথিত ব্লগার নামধারী একশ্রেণীর ধর্মদ্রোহী যুবক ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে চরম আপত্তিকর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে মেতে উঠেছে। তারা অবাধে ও নির্বিঘ্নে নবী-রাসুলদের নিয়ে মনগড়া, কুরুচিপূর্ণ, অপবাদমূলক বিভিন্ন মন্তব্য প্রচারে দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এক ব্লগার লিখেছে—আল্লাহ সর্বব্যাপী, তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন (নাউজুবিল্লাহ)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অভিহিত করেছে মোহাম্মক (মোহাম্মদ+আহাম্মক), মহাউন্মাদ হিসেবে (নাউজুবিল্লাহ)।
আল্লামা শফী বলেন, শাহবাগের তথাকথিত প্রজন্ম চত্বরে নাস্তিক-আল্লাহদ্রোহীর নেতৃত্বে মুসলমান সন্তান-সন্ততিদের দ্বারা অগ্নিপূজা ও পৌত্তলিকদের অনুকরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে। শাহবাগিদের মূল উদ্যোক্তা আসিফ মহিউদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম রাতুল, আরিফ জেবতিক, নিঝুম মজুমদার ও রাজীব হায়দার শোভনসহ স্বঘোষিত নাস্তিকরা (সামহয়্যার ইন, মুক্তমনা, ধর্মকারী, নূরানী চাপা সমগ্র প্রভৃতি) ব্লগে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) তথা ইসলাম সম্পর্কে চরম অবমাননাকর লেখা ও মন্তব্য করে যাচ্ছে। শাহবাগ মঞ্চ থেকে যুদ্ধাপরাধ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির কুশপুত্তলিকাকে সম্বোধন করে ‘তোকে বাঁচাতে এলে আল্লাহকেও ফাঁসি দেয়া হবে’ বলে (নাউজুবিল্লাহ) প্রকাশ্যে আল্লাহদ্রোহের মহড়া দেয়া হচ্ছে। নারী-পুরুষের উদ্দাম নৃত্য, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, মদ, গাঁজা ইত্যাদি অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে শাহবাগ চত্বরে। মুসলমানদের ফরজ বিধান পর্দাকে কটাক্ষ করে ‘হোটেলের পতিতার’ পোশাক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অন্যদিকে শাহবাগ মঞ্চ থেকে ওলামা-মাশায়েখদের জঙ্গি, মৌলবাদী ও জারজ সন্তান বলে গালি দেয়া হচ্ছে।
আল্লামা শফী আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এ বিচারের নামে অবিচার এবং আলেম-সমাজ, মাদরাসা, দাড়ি-টুপি, পর্দা তথা দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রে এ দেশের আলেম সমাজ ও তৌহিদি জনতা নীরব দশর্কের ভূমিকা পালন করতে পারে না। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশ হাজার হাজার আলেম-ওলামা, পীর-বুজুর্গ, মুহাদ্দিস-মুফাসসির, মুফতি, ওলি-আউলিয়ার জন্মভূমি। এঁদের পদচারণায় বাংলাদেশের মাটি ইসলামের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছেন ইমামুল হিন্দ শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.)-এর উত্তরসূরি, হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতুভী (রহ), ফকিহুল হিন্দ রশীদ আহমদ গঙ্গুলী (রহ.) ও শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)-এর লাখো রুহানি সন্তান। অথচ এ দেশ থেকে ইসলামকে সমূলে উত্খাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী গোষ্ঠী এবং তাদের এদেশীয় এজেন্ট মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক-মুরতাদ ও তসলিমা নাসরিনের ভাবশিষ্য বামপন্থী ব্লগার। এরা ইহুদি স্যাম বাসিলকেও ছাড়িয়ে গেছে। শাহবাগ মঞ্চে ঘাদানিক নেতা নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী শাহরিয়ার কবির এবং কাদিয়ানি নেতা আবদুল আউয়াল খান পাশাপাশি বসে বক্তৃতা করেছে। কাদিয়ানিরাও এতে শরিক হয়েছে। কাদিয়ানি কোম্পানিগুলো তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও খাদ্য শাহবাগে সরবরাহ করেছে। একদিকে তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, অন্যদিকে কাদিয়ানিদের নিয়ে ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও ব্লগারদের পক্ষ নিয়ে ইসলাম অবমাননামূলক পোস্টগুলো সম্পর্কে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। অথচ হাইকোর্ট এগুলো বন্ধের জন্য আগেই নির্দেশ দিয়েছে।
বাংলাদেশে আক্রান্ত ইসলাম সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে ওলামা-মাশায়েখদের সামনে আল্লামা শফী বলেন, ক্ষমতায় গেলে কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে বর্তমান সরকার। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসেই তারা আসল চেহারায় ফিরে গেছে। সংবিধান সংশোধন করে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ মুছে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থাপন করেছে। ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি, বোরকাবিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি করেছে। ইসলাম নিয়ে কটূক্তি, আলেমদের নির্যাতন, দাড়ি-টুপি ও বোরকা ব্যবহাকারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, জেহাদি বইয়ের নামে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী পুস্তকের ব্যাপারে অপপ্রচার, ভাস্কর্যের নামে দেশব্যাপী মূর্তি নির্মাণ, ইসলামী রাজনীতি দমন ও মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ সরকার ব্যাপকভাবে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছে। জাতীয় সংসদেও রাসুল (সা.) ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন বলে এমপিরা জঘন্য মিথ্যাচার করছেন।
আল্লামা শফী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম অবরুদ্ধ করে রাখা প্রসঙ্গে বলেন, দেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মুসল্লিদের জন্য এখন আর নিরাপদ নয়। কারণ সরকারের পুলিশ বাহিনী পুরো মসজিদ ঘিরে রাখে। মুসল্লিরা মসজিদে যেতে পারেন না। তারা পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মসজিদের উত্তর গেট একেবারে বন্ধ। ওলামায়ে কেরাম সভা-সমাবেশ, ওয়াজ-তাফসির করতে গিয়ে সরকারের নিষেধাজ্ঞার শিকার হচ্ছেন। অনেক মসজিদের খতিব জুমার সময় নাস্তিকদের বিরুদ্ধে বয়ান করার কারণে অপমানিত হয়েছেন। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নাজুক সময়ে কোনো মুসলমান নীরবে ঘরে বসে থাকতে পারে না। মহান আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল (সা.)-কে গালি দেয়া হলে, ইসলামের বিধান ও প্রতীকগুলোকে অবমাননা করা হলে এর প্রতিবাদ করতে হবে। নইলে আল্লাহর গজব ও আজাব থেকে কেউ আমরা রেহাই পাব না।
সরকারের রোষানলে বিচারপতি
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ব্লগারদের ইসলামবিরোধী তত্পরতা লক্ষ করে ক্ষুব্ধ হন। তিনি পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবাদ ফটোকপি করে পাঠান সহকর্মী বিচারকদের কাছে। কিন্তু সরকার তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেয়। রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতিও জানান। বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, এর জন্যে যদি তার চাকরি যায় তাতে তার কোনো আপসোস নেই।
জনতার মঞ্চ, লগি-বৈঠা, শাহবাগি মঞ্চ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে যে, অপকর্মের জন্য এদেশের সাধারণ মানুষ তাদের পছন্দ করে না। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, একেবারে স্বচ্ছ ভোট হলে আওয়ামী লীগের কোনো লাভ নেই। কারণ ভোটে তারা কখনোই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাই ক্ষমতার জন্য দলটি বারবারই অরাজকতাকে বেছে নেয়। অরাজকতা, মাস্তানি, পেশিশক্তি এবং ফ্যাসিবাদই আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার মূল অবলম্বন। এজন্য বার বার তারা এসবের আশ্রয় নেয়। এরশাদের পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের সময় নিরপেক্ষ নির্বাচনে যখন তারা ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারল না, এরপর থেকেই তাদের উপলব্ধি আসে, ভোটের দিকে চেয়ে লাভ নেই। অরাজকতার পথ তারা বেছে নেয়। ১৭৩ দিন হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ এবং ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে তারা বলা যায় জোর করেই ছিয়ান্নব্বই সালে ক্ষমতায় আসে। একইভাবে ২০০৬ সালে তারা লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা করে ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারকে ক্ষমতায় এনে ২০০৯ সালে ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করে শাহবাগি মঞ্চের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে। যদিও দেশের মানুষ তাদের হীন উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারছে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
বিষয়: বিবিধ
১২১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন