ওরাল ভ্যাকসিনের ল্যাবরেটরী টেস্ট : ফিকে হয়ে আসছে ‘পোলিও মুক্ত দেশ গড়া’র স্বপ্ন পোলিও টিকা : প্রতিষেধক না অভিশাপ! মূল : ডা. হারুনা কায়েটা, নাইজেরিয়ান চিকিৎসা বিজ্ঞানী
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১০:২১:৪৮ রাত
প্রথম কিস্তি
নাইজেরিয়ার ডা. হারুনা কায়েটা সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, শিশুদের খাওয়ানোর পোলিও টিকায় প্রথমত রয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রজনন ক্ষমতা চিরতরে নষ্ট করে দেয়ার উপাদান। দ্বিতীয়ত, বিগত নয় বছর ধরে গোটা পৃথিবীতে লাখ লাখ শিশুকে খাওয়ানো পোলিও টিকায় ক্যান্সারের ভাইরাস মেশানো হচ্ছে এবং তৃতীয়ত, ওরাল পোলিও টিকা পঙ্গুত্ব প্রতিরোধের পরিবর্তে পঙ্গুত্বের জন্য দায়ী প্রমাণিত হওয়ায় আমেরিকা, বৃটেন ও কানাডায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ ডাকঢোল পিটিয়ে প্রতিষেধকের মোড়কে এই ভয়ানক বস্তুটিই বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের লক্ষ লক্ষ শিশুকে খাওয়ানো হচ্ছে মারাত্মক রোগটি থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দেবার অবিচল আস্থায়। এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর এ ধারাবাহিক প্রতিবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছে পাকিস্তানের প্রথম সারির জাতীয় পত্রিকা ডেইলি উম্মত। ...................এর পাঠকদের জন্য লেখাটি সংক্ষিপ্ত ও ঈষৎ সম্পাদিত আকারে অনুবাদ করা হলো।
‘ইউনিসেফ’র পক্ষ থেকে পোলিও নির্মূলে শিশুদেরকে টিকা খাওয়ানোর কর্মসূচি প্রকৃতপক্ষে শিশুদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়ারই পরিকল্পনা।’ এটি কোনো ‘চরমপন্থী মোল্লা’ কিংবা কূপমণ্ডুক রক্ষণশীল ব্যক্তির উক্তি নয়। পিলে চমকানো এ বিস্ফোরক মন্তব্যটি নাজেরিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল্স সাইন্টিস্ট ডা. হারুনা কায়েটার। আজ থেকে আট বছর আগে ২০০৪ সালে তিনি মন্তব্যটি করেছিলেন। এরই মধ্যে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ কেউ তার এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ কিংবা নাকচ করেননি। কারণ তাঁর মন্তব্যটি গভীর গবেষণালব্ধ এবং প্রায় অকাট্য সিদ্ধান্তরূপে উপস্থাপিত হয়েছিল। বক্ষ্যমান প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট অংশে এ কাহিনীর বর্ণনা আসবে। প্রসঙ্গটি আপাতত এখানে রেখে আমরা সামনে অগ্রসর হবো।
গোটা পৃথিবীতে ঢোল পেটানো হলো, এ বছর পুরো ভারতের কোথাও পোলিও সম্পর্কে কোনো সমস্যা রেজিস্টার্ড হয়নি। অথচ কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ায় পরিচালিত এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট শিশুদের খাওয়ানোর পোলিও টিকা (ঙৎধষ াধপপরহব) এর সামনে মস্তবড় এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। উল্লিখিত অনুসন্ধানী নিবন্ধে তথ্য রয়েছে; এ বছর দেশটিতে এ বিষয়ে ৪৭ হাজার ৫০০ সমস্যার ঘটনা সামনে আসে। এসব ঘটনায় শিশুদের পোলিওর মতো ধ্বংসাত্মক রোগের বিষয়টি উঠে এসেছে। গুরুতর ব্যাপার হল, এ শিশুদের মধ্যে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে-দেয়া পোলিও রোগের উপসর্গ লক্ষ্য করা গেছে। যাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে পোলিও টিকা খাওয়ানো হচ্ছিল। যাতে প্রমাণিত হয় যে, খোদ পোলিও টিকার মধ্যেই রোগটির উপাদান রয়েছে। এ যেন সর্ষের ভেতরেই ভূত! এ প্রসঙ্গেও তথ্য-উপাত্তসহ আলোচনা করা হবে।
একুশ শতকের শুরুলগ্নে পরিচালিত এই অনুসন্ধানে বলা হয়েছে ১৯৫৪Ñ ১৯৬৩ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বের শিশুদের উপর প্রয়োগ করা পোলিও ভ্যাকসিন-এ ঝঠ-৪০ নামের ভাইরাস মেশানো ছিল। যা মানুষের মস্তিষ্ক, অন্ত্র ও হাড়ের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ১৯৬০ সালে শনাক্ত করতে সক্ষম হন যে, বানরের ঘাড় থেকে তৈরি করা পোলিও ভ্যাকসিনে ঝঠ-৪০ ভাইরাস রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো বিষয়টি তখন থেকে ধামাচাপা দিতে তৎপর ছিলো এবং পোলিও টিকার মারাত্মক ঝুঁকির বিষয়টি বর্তমানে এড়িয়ে যাবার চেষ্টাই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কেন ? প্রবন্ধে এর বিস্তারিত উত্তরও পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
পোলিও ভ্যাকসিন-বিরোধীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত মৌলিক তিনটি অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিবেদনের গোড়াতে ভূমিকা সন্নিবেশিত হয়েছে। উত্থাপিত অভিযোগত্রয়ের প্রথমটি হল, পোলিও টিকা মেয়েদের বন্ধ্যা এবং ছেলেদের প্রজনন ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস করে দেয়। দ্বিতীয় অভিযোগ, এই টিকা রোগটি প্রতিরোধ তো দূরের কথা নিজেই রোগটি সৃষ্টির উপাদান বহন করে। আর তৃতীয় অভিযোগটি সবচে’ ভয়ানকÑ পোলিও টিকা মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে! এসব তথ্য আদৌ কোনো উড়ো কথা বা সঙ্কীর্ণ চিন্তার ফসল নয়। এ বিষয়ে অকাট্য তথ্য-প্রমাণসমৃদ্ধ একাধিক প্রবন্ধ ইন্টারনেট এবং এতদসংশ্লিষ্ট উপাত্তে ভরপুর বইপত্র মুদ্রিত আকারে পাওয়া যায়। অন্যদিকে তথ্যগুলোর প্রবক্তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সেসব বিশেষজ্ঞও এখনো পৃথিবীতে বেঁচে আছেন। মেডিকেল সাইন্সের ছাত্র থেকে শুরু করে সাধারণ লোকÑ যে কেউ এসব প্রবন্ধ এবং তথ্য উদ্ঘাটনকারী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে পারেন।
কেন্দ্রীয় গুরুত্বের দিকটি হওয়া উচিত, পোলিও টিকার সমালোচকদের উত্থাপিত অভিযোগগুলোর কোনো রকম যাচাই, অনুসন্ধান বা তদন্ত ব্যতিরেকে প্রত্যাখান করতে গিয়ে আবেগ বা রাজনৈতিক রঙ চড়ানোর পরিবর্তে ব্যাপারটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণেই বিচার করা। আন্তর্জাতিক পরিসরে পোলিও টিকার প্রচারকদের আওড়ানো প্রতিটি বুলি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস বা এর অন্ধ সমর্থক হওয়ার চেয়ে পোলিও ভ্যাকসিনের ল্যাব টেস্ট ও নিরপেক্ষ ফার্মাসিউটিক্যালস বিশেষজ্ঞ দ্বারা বিশ্বাসযোগ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া কি জরুরি নয় যে, প্রতিষেধকের নামে অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে নিজেদের অজান্তে আপন সন্তানদের বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত করছি না তো ? বিষয়টি সহজে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই; কারণ এটি জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্ন। পোলিও টিকা-বিরোধীদের গবেষণা সম্পর্কে আনুপুঙ্খ আলোচনায় যাবার আগে আমরা কয়েকটি মৌলিক তথ্য সামনে এনে গোলকধাঁধাটি খোলাসা করে বোঝার চেষ্টা করবো। প্রথমত, বাছাই করা যে ওয়েবসাইটগুলোতে তথ্য নেয়া হয়েছে প্রবন্ধের তথ্য যাচাইয়ের স্বার্থে সাইটগুলোর লিঙ্ক লেখার সঙ্গে প্রকাশ করা হবে।
রিপোর্টটি তৈরির সময় পাকিস্তানের বেশ ক’জন ফার্মাসিউটিক্যালস বিশেষজ্ঞেরও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে, যাদের প্রায় সবাই বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। চাকুরির অবস্থানগত কিছু সীমাবদ্ধতা বা অপারগতার বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের নাম উহ্য রাখা হলো। এখন সারা বিশ্বে পোলিও টিকা প্রয়োগের দু’রকমের পদ্ধতি চালু আছে। এর একটি ঙৎধষ ঢ়ড়ষরড় ঠধপপরহব। এটি রোগীকে মুখে খাওয়ানো হয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে, অন্যদিকে দ্বিতীয় পদ্ধতি ওহধপঃরাধঃবফ ঢ়ড়ষরড় ঠধপপরহব অর্থাৎ সংক্ষেপে ওচঠ, ইনজেকশনের মাধ্যমে রোগীর দেহে এটি প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে গোটা দুনিয়ায় মুখে খাওয়ার (ঙৎধষ ঠধপপরহব) টিকা সম্পর্কে যতো অভিযোগ। কারণ অনুসন্ধানী রিপোর্টগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে এটি যে রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োগ করা হয় তা বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠতে পারে। একারণেই প্রথমে আমেরিকা এবং পরে বৃটেন ও আমেরিকায় পোলিওর ওরাল ভ্যাকসিন বা মুখে খাওয়ার টিকা নিষিদ্ধ করা হয়।
একটি বিখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানির ফার্মাসিউটিক্যালস সাইন্টিস্ট ডেইলি উম্মতকে বলেন, ‘...যেকানো মেডিসিন প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে প্রধানত ঔষধটি শতভাগ খাঁটি হওয়ার দিকেই দৃষ্টি রাখা হয়। তাতে যেন কোনো প্রকারের ক্ষতিকর কিছুই না মেশানো হয় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেকোনো প্রডাক্টের বেলায় যে নীতি-কৌশল অনুসরণ করা হয় পরিভাষায় তাকে ঈড়হঃধসরহধঃরড়হ, ঋড়ৎসঁষধঃরড়হ ও অফঁষঃৎধঃরড়হ বলা হয়। ফর্মুলেশন বলতে ঔষধে বিদ্যমান ডিক্লিয়ার্ড অংশগুলোকে বোঝায়। অর্থাৎ মেডিসিন ক্রেতা জানতে পারে যে, ঔষধে কী কী উপাদান রয়েছে। যদিও এসব উপাদানের নিজস্ব কিছু ক্ষতিকর প্রভাব থাকতে পারে। তবুও সাধারণত প্রতিষ্ঠিত ধারণা হলো এসবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (ঝরমযঃ বভভবপঃ) নেই। ঈড়হঃধসরহধঃরড়হ পরিভাষাটি দিয়ে বোঝানো হয়, অজ্ঞাতসারে, অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো উপাদান মেশানো হয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সচরাচর যেকোনো মেডিসিন প্রডাক্ট বাজারে আসার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় ঈড়হঃধসরহধঃরড়হ আছে কি না ? ঠিক একইভাবে অফঁষঃৎধঃরড়হ এর-ও পরীক্ষা/টেস্ট করা হয়। এডাল্টরেশন হলÑ ম্যানুফ্যাচারার বা প্রস্তুতকারক সজ্ঞানে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে ঔষধটিতে ক্ষতিকারক কোনো উপাদান মেশানো। ঔষধটির গায়ে সেসব উপাদানের নাম উল্লেখ করা হয় না। কাজটি মানবিক ও আইনি বিচারে অপরাধ হওয়ায় তা গোপনেই সারা হয়। তাই ঔষধ প্রস্তুত ও বিপণনের ক্ষেত্রে উল্লিখিত পরীক্ষা দু’টি নীতিকৌশলের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ওরাল পোলিও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ অভিযোগ এডাল্টরেশন বিষয়েই।
বিভিন্ন দেশের নিরপেক্ষ ও নীতিনিষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী যারা নিজেদের মতো করে স্বাধীনভাবে পোলিও টিকার পরীক্ষা চালিয়েছেন তারা সবাই এতে মানবদেহের জন্য উল্লিখিত মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদানগুলো শনাক্ত করেন। যা নিঃসন্দেহে অফঁষঃৎধঃরড়হ এর পর্যায়ে পড়ে। হয়তো তাঁদের কণ্ঠ চেপে রাখা হয়েছে নতুবা তাতে কর্ণপাতই করা হয়নি। অন্যদিকে বিশেষ অ্যাজেন্ডা সামনে রেখে সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে যে, ‘পোলিও টিকা নিরাপদ’। এই প্রোপাগান্ডায় মিডিয়াও প্রথম কাতারে থাকতে তৎপর রয়েছে। পোলিও টিকার প্রকাশিত উপাদানের একটি হল ঞবিবহ ৮০। ‘টুইয়েন এইটি’ সম্পর্কে আপনি ইন্টারনেটে প্রচুর বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট পাবেন। ঞবিবহ ৮০ গুগলে লিখে সার্চ দিলে আপনি এর গুণাগুণ সম্পর্কে বহু তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাবেন। এটি প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করার পাশাপাশি মেয়েদের গর্ভধারণ ক্ষমতাকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। অথচ পোলিও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর এ দু’টি অঙ্গের কোনো সংশ্লেষ নেই। পোলিও টিকা বিষয়ে উত্থাপিত সমূহ অভিযোগ ও তার পরিগঠনের ধাপগুলো সংক্ষিপ্ত অথচ মৌলিক বিবরণ দেয়ার পর এবার এ বিষয়ে বর্তমান প্রতিবেদনের ধারাবাহিক ভাষ্যের দিকে এগুতে চাই। রিপোর্টের শুরুতেই ভূমিকা পেড়েছিলাম প্রথমত, নাইজেরিয়ান ফার্মাসিউটিক্যালস্ স্পেশালিস্ট এর অনুসন্ধান নিয়ে।
নাইজেরিয়ান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. হারুনা কায়েটা অনুসন্ধানী গবেষণাটি সম্পন্ন করার সময় ফার্মাসিউটিক্যাল সাইন্সেস আহমদ বেল্লু ইউনিভার্সিটির জারিয়ার ডীন অব ফ্যাকাল্টিও ছিলেন। তাঁর মনে যখন এ ভাবনার উদয় হলো যে, তাঁর দেশসহ গোটা বিশ্বে পোলিও প্রতিরোধে যে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে তার পেছনে গোপন কোনো অ্যাজেন্ডা নেই তো ? ২০০৪ সালে যখন নাইজেরিয়াতে পোলিও টিকা বিষয়ক কর্মসূচি ও প্রচারাভিযানের চার বছর পূর্ণ হয় তিনি ওরাল পোলিও ভ্যাকসিনের কিছু নমুনা সঙ্গে নিয়ে টেস্টের জন্য ভারত সফর করলেন। কারণ এ জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তখন নাইজেরিয়ায় ততো উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। ডা. হারুনা কায়েটা ভারতের ল্যাবরেটরী বিশেষজ্ঞদের সামনেই পোলিও টিকার নমুনাগুলো টেস্ট করেন। সবচেয়ে বড় কথা হল পরীক্ষার ক্ষেত্রে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) কর্তৃক সুপারিশকৃত প্রযুক্তি এঈএঅঝ ঈঐঙজগঅ ঞঙএজঅচঐণ ও জঅউওঙঘ ওগগটঘঙ ব্যবহার করেন। যাতে এসব টেস্টের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে কেউ অভিযোগের আঙুল না উঠাতে পারে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় ওরাল ভ্যাকসিনে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে।
এই ল্যাবরেটরী টেস্টের পর দেশে ফিরে তিনি দেশের সাপ্তাহিক ট্রাস্ট পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘...ওরাল ভ্যাকসিনে আমি পরিষ্কারভাবে অফঁষঃৎধঃরড়হ উদ্ঘাটন করেছি; এতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদানের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি লক্ষ্য করি তা হলো, এটি মানুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে দেয় এবং এ ভ্যাকসিনে নেশাগ্রস্ত করার উপাদানও রয়েছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, নাইজেরিয়াকে পোলিও মুক্ত করার নামে ইউনিসেফ প্রকৃতপক্ষের আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিভিন্নভাবে পঙ্গু করে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’ সাপ্তাহিক ট্রাস্টের সাংবাদিক ডা. হারুনার কাছে জানতে চান যে, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক কোম্পানি এতে ক্ষতিকারক উপাদান মেশাবে কেন ? জবাবে তিনি বলেন, তিনটি কারণে তারা এ কাজ (প্রকৃতপক্ষ কুকাজ) করে থাকতে পারেÑ এক. প্রস্তুতকারক কোম্পানি ও এর প্রমোটকারীদের কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা রয়েছে। এর সমান্তরালে তৃতীয় বিশ্বের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হতে পারে তাদের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য আর অধিকতর অনুসন্ধানই তাদের সম্ভাব্য গোপন অ্যাজেন্ডা উদ্ঘাটন করতে পারে। দুই. ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারীগণ আমাদের Ñতৃতীয় বিশ্বের নাগরিকÑদের বোকা মনে করে। তাদের ধারণা আমরা এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেধা ও যন্ত্রপাতি কোনোটিই রাখি না। তিন. সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এ ধরনের মানবতাবিরোধী বৈশ্বিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা আমাদের ভেতর থেকে অ্যাজেন্ট পেয়ে যায়; যারা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নিজের জাতির পায়ে কুড়াল মারতে কুণ্ঠিত হয় না। ডা. হারুনা কায়েটা মারাত্মক ক্ষতিকর এই ভ্যাকসিন আমদানীকারকদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশও করেন।
ডা. হারুনা কায়েটার বিস্তারিত সাক্ষাৎকারটি নাইজেরিয়ার সাপ্তাহিক ট্রাস্ট পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে পাওয়া যায়। আরও বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন ষবভরংরঃবহবংিব.পড়স
(অসমাপ্ত)
অনুবাদ
খন্দকার মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন