কোটা প্রথাঃ প্রতিরোধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু করতে হবে।

লিখেছেন লিখেছেন শাহেদ তাসলীম শাহাদাত ১০ জুলাই, ২০১৩, ১২:৩৮:৩৯ দুপুর

২০০৬-২০০৭ শিক্ষা বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। বলতে গেলে একেবারেই নবীন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এতো বড় আঙ্গিনায়। ক্লাস শুরু হয়ে গেলো, ব্যস্ততাও একটু বাড়লো। হঠাৎ একদিন এক বন্ধু বললো আজ একটা মিছিলে যেতে হবে। আমি বললাম কিসের মিছিল? ও বললো কোটা বিরোধী মিছিল। আমিও তার কথায় সায় দিলাম। কারণ, কোটার সম্পর্কে আমার পূর্বেই ধারণা ছিল। এর পর মিছিল করলাম, মানববন্ধন করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে পরে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এত বড় মিছিল আমি আর দেখিনি।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ততকালিন ছাত্রলীগ নেতারা কোটা বিরোধী ঐ মিছিলকে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করেছিলো, যা পরে এক ভাই থেকে শুনলাম। আমি নিজেও বুঝতে পেরেছি মিছিল আয়োজনকারীদের যে কোন হামলা প্রতিরোধের পূর্ব প্রস্তুতি দেখে। ঐ মিছিল কোন নির্দিষ্ট ছাত্রসংঘঠনের ছিলোনা, ছিলো সাধারণ ছাত্রদের। আমি দেখেছি ঐ মিছিলে ছাত্রলীগের কর্মীদের (প্রথম বর্ষের), ছাত্রদলের কর্মীদের এবং ছাত্রশিবিরের কর্মীদের। তথাপি, ছাত্রলীগ এটাকে শিবিরের মিছিল বলে লেভেল দিয়েছিলো। তাই যাহোক, মিছিল শেষে আমি যখন ডিপার্টমেন্টে গেলাম, তখন আমার এক বন্ধু (ছাত্রলীগ কর্মী) আমাকে ক্ষোভের সুরেই বললো, তুই ডিপার্টমেন্টে কেন, তুই মিছিলে যা (মানে আমি মিছিলে গেলাম কেন, তাই তার ক্ষোভ)। তার কথা শুনে আমিতো পুরাই স্পিকার হয়ে গেলাম। আমি ওকে বললাম, আমি ডিপার্টমেন্টে থাকবো নাকি মিছিলে থাকবো সেটা কি তোকে বলতে হবে! গ্রামের পোলা, তাই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লীগ, দল ও শিবিরের পলিটিক্স ওতো বুঝতাম না তাই।

অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে কোটা বিরোধী মানববন্ধনে আমার বন্ধু Kamrul তার গলায় প্লাকার্ড ঝুলিয়েছিলো, প্লাকার্ডে লেখা ছিলো, "কোটা প্রথা বাতিল করো, নয় আমাকে গুলি করো।" অবশ্য এর পর প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা অন্য কেউ বন্ধুর বুকে গুলি করার জন্য তাকে না খোঁজলেও, ছাত্রলীগ কিন্তু ঠিকই খুঁজেছিলো। এবং পরে তাকে নির্মমভাবে আহত করে ফেলে রেখে গিয়েছিলো জগন্নাথ হল মাঠে।

এর পর আরো অনেক কথা। মোদ্দাকথা হল, যতবারই কোটা বিরোধী আন্দোলন জমে উঠেছিলো, কোন না কোন অশুভ শক্তি একে দমন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। যদিও এই আন্দোলন ছিল মেধাবীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। কোন দলের বিরুদ্ধে ছিলোনা। আজ সবাই কোটা প্রথার ভয়াবহতা আরো গভীরভাবে উপলব্দি করতে শুরু করেছে। তাই সময় থাকতে এটার একটা বিহিত না করলে এটা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলেই আমার মনে হয়।

কোটা নিয়ে আরো অনেক লেখালেখি হয়েছে। তাই কথা না বাড়িয়ে বলবো, কোটার প্রথার বিরুদ্ধে এখনি সর্বাত্তক আন্দোলনের ডাক দিতে হবে। এবং তা হতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

-শা হে দ তা স লী ম শা হা দা ত

বিষয়: বিবিধ

১০৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File