মাতুব্বর ও সরকারের উন্নয়ন
লিখেছেন লিখেছেন প্রফেসর ১২ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:০২:৩৩ দুপুর
আমাদের গ্রাম এখনো মাতুব্বর দ্বারা শাসিত। ১৪ জন মাতুব্বর আছে। গুটিকয়েক পরিবার ব্যতিত প্রায় সকলেই কোন না কোন মাতুব্বরের প্রেজা ( প্রজা)। পারিবারীক ও সামাজিক দ্বন্দ, জমি-জমা নিয়ে ঝামেলা, হঠৎ কোন গন্ডগোল, নারীঘটিত সমস্যা, বিয়ে-তালাক ইত্যাদি বিষয় মিমাংসায় মাতুব্বরদের ভূমিকা থাকে। মাতুব্বরদের না মেনে কেও থানায় গেলেও লাভ নেই। কারণ মাতুব্বরদের সহযোগিতা ছাড়া থানা কিছু করতে পারে না। দরবারের মাধ্যমে মাতুব্বরদের বড় ধরনের আয় হয়। দুই পক্ষ থেকেই টাকা খাওয়া হয়। রায় ঠিক করা হয় টাকার পরিমানের উপর। যে বেশী দিবে রায় তার পক্ষে যাবে। ভালো কাজ করতে গেলেও মাতুব্বরদের অনুমোদন লাগে। যেমন ঈদের মাঠ ও গোরাস্তানের সংস্কার, ঈদের দিন মাইকের ব্যবস্থা করা, মাঠ সাজানো, মাদ্রাসার উন্নয়ন ইত্যাদি যাই করেন না কেন মাতুব্বরদের অনুমোদন ছাড়া কিছু করতে গেলে বিপত্তি। এই প্রথম এবার ঈদের নামাজ পড়েছি যান্ত্রিক ত্রুটিহীন মাইকের শব্দে। মাইক আছে কিন্তু গ্যারগ্যার আওয়াজ নাই – ভাবতেই পরি না- এবার তা সম্ভব হয়েছে হিলফুল ফুজুল ইসলামী যুবসংগঠন নামে গড়ে উঠা একটি নতুন সংগঠনের বদৌলতে। সবাই ইমামের খুতবা ও ওয়াজ শুনতে পেরেছে খুবই স্পষ্টভাবে মাইকের কল্যাণে। ঈদের মাঠের গেটকে সাজানো হয়েছিল নানা রংগিন কাগজের মাধ্যমে। সাজানো আহমারি কিছু না হলেও প্রথম হওয়ার কারনে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। বাঁধা আসলো শেষ মূহুর্তে- প্রেজা যার সবচেয়ে বেশী সেই মাতুব্বর মাইকে কৈফয়ত চাইলেন । কৈফয়তের সারমর্ম হলো যারা এগুলো করেছে তারা কেন মাতুব্বরদের সাথে আলোচনা করে নাই। এটা ঠিক হয় নাই। মাতুব্বরের পাশ থেকে একজন বলে উঠলো গ্রামে থাকতে দিয়েছি এইতো বেশী। আবার এসব করা হচ্ছে মাতুব্বরদের বাদ দিয়ে। গ্রামের হুজুরও তালমিলিয়ে বলতে বাধ্যহলেন হাঁ এটি ঠিক হয় নাই। আগামীতে খেয়াল রাখতে হবে। মজার বিষয় হলো চেয়ারম্যান ও মেম্বার থেকেও অনেক ক্ষেত্রে এরা প্রভাবশালী। আবার এরা যখন মেম্বারে দাড়ায় তখন জিততে পারে না। চেয়ারম্যানে দাড়ানোরমত সামাজিক মর্যদা তাদের নেই ফলে দাড়াতেও পারে না। এমন কি তাদের কথায় কেউ ভোটও দেয়া না। মাতুব্বর হিসেবে টিকে থাকার জন্য জন সমর্থনের কোন প্রয়োজন হয় না। লাঠির শক্তিই তাদের সমর্থন বাড়ায় বা কমায়। সরকারী দল সাধারণত যার লাঠির শক্তি বেশী থাকে তাকে নিয়ে নেয় বা সে সরকারী দলে আসে। তাই প্রশাসনও চলে তাদের কথায়। সমস্যা হয় মাতুব্বরের ছেলে বা গুষ্ঠির মধ্যে কেউ যদি বেঁকে বসে। অধিকাংশ গ্রামের মাদ্রাসা বা মসজিদের হুজুর তাদের ভয়ে ভীতু থাকে। তবে কেও যদি শক্ত হয়ে দাড়ায় তাহ’লেও তারা সেখানে কাবু হয়ে পড়ে। অনেক সময় মাতুব্বরের যুবক সন্তান হুজুরের ভক্ত হয়ে যায় যেমন হেফাজতের ভক্ত হয়ে পড়ে। দেখা যায় পোস্টার লাগানো থেকে শুরু করে হেফাজতের সকল কাজ মাতুব্বরের যুবক ছেলেই করছে। মাতুব্বর তখন অসহায়। মাতুব্বর প্রথা কিছুতেই ভাংগা যাচ্ছে না। আগে মুতুব্বরদের সাথে প্রশাসনের খুব বেশী যোগাযোগ ছিল না। এখন খুবই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। গ্রামের ঈদের মাঠ থেকে একটি রাস্তা গ্রামের শেষ প্রান্তে যেয়ে উঠেছে। রাস্তাটি মাটির এবং অনেক নীচু। ফলে বৃষ্টি হলেই কর্দমাক্ত হয়ে যায়। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কেন রাস্তাটি পাকা হয় না। পরে ছোট ভাইয়ের সাথে আলাপে জানতে পারলাম গ্রামের সব রাস্তাই কাগজে-কলমে পাকা হয়েছে অথবা উন্নত হয়েছে। বাস্তবে মাতুব্বররা টাকা উঠিয়ে নিয়েছে কোন রকম কাজ ছাড়াই। এই হলো সরকারের উন্নয়নের চিত্র।
বিষয়: বিবিধ
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন