অন্য ধর্মে ও ইসলামে মায়ের সম্মান
লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ২৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:৫৩:১৩ রাত
বাইবেলের পুরাতন নিয়মের (Old Testament) অনেক স্থানে পিতামাতার সাথে সৎব্যবহারের নির্দেশ এবং অসৎব্যবহার সম্বন্ধে সতর্কবাণী এসেছে। বলা হয়েছে-"কোন মানুষ তার পিতামাতাকে গালি দিলে তাকে হত্যা করা হবে"। (লেভিটিকাসঃ ২০/৯)
জ্ঞানী পুত্র তার পিতাকে উৎফুল্ল করে আর মুর্খ ব্যক্তি মাতাকে অপমানিত করে"।(প্রভার্বস:১৫/২০)
কিছু কিছু অধ্যায়ে বলা হয়েছে শুধুমাত্র পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করতে।
"জ্ঞানী পুত্র পিতার শাসনকে মেনে নেবে আর উপহাসকারী কারো ধমকের উপেক্ষা করে না"।(প্রভার্বস:১৩/১)
কিন্তু, কোথাও আলাদাভাবে মাতাকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার দাবিদার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি যে মাতা তার সন্তানকে গর্ভে ধারণ,প্রসব ও দুধ খাইয়ে লালন পালন করেছেন কোথাও সে মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়নি। মাতা তার সন্তানদের থেকে উত্তরাধিকার পায় না অথচ পিতা তার উত্তরাধিকার হয়।
অন্যদিকে বাইবেলের নতুন নিয়মে (New Testament) মাকে কোন মর্যাদা দেয়া হয়নি। বরং মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারকে স্রষ্টার পথে অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নতুন নিয়ম অনুযাযী কোন খৃষ্টান যীশুর অনুসারী বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ না সে তার জন্মদাত্রী মাকে অপছন্দ করে। যীশুর নামে প্রচারিত আরেকটি কথা পাওয়া যায় " কোন মানুষ যতক্ষন না তার পিতা, মাতা,স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ভাইবোনদেরকে অপছন্দ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে আমার ছাত্র বলে গণ্য হবে না"। (লুকঃ১৪/২৬)
নতুন নিয়মের আরেকটি অধ্যায় রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে যে, যীশু তার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন। উদাহরণ স্বরুপ যখন তিনি তার ছাত্রদেরকে শিক্ষা দিতেন তখন তার মা তাকে খোজ করলে তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করতেন না। "তখন তার ভাতৃবর্গ ও মা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকত। একদল ছাত্র যারা তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন তারা বললেন: বাইরে আপনার মা ও ভাইয়েরা দাঁড়িয়ে আছে তারা আপনাকে ডাকছে। তিনি তাদেরকে বলতেন কে আমার মা বা ভাই? তারপর উপবিষ্টদেরকে বলতেন: আমার মা ও ভ্রাতৃবর্গ! যারা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কাজ করবে তারাই আমার ভাই, বোন বা মা"। (মার্কসঃ৩/৩১-৩৫)
অথবা কেউ বলল: ধর্মীয় শিক্ষা পরিবার পরিজন থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যীশু তার মায়ের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার শিক্ষাদান কার্য অব্যাহত রাখলেন। অপর একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে- মায়ের মর্যাদা অনেক। তিনি সন্তানকে প্রসব করেছেন, তাকে লালন-পালন করেছেন মর্মে একজনের কথায় যীশু একমত পোষণ করেননি। " যখন তিনি কথা বলছিলেন তখন সমবেত জনতার মধ্য থেকে একজন মহিলা উচ্চস্বরে বলে উঠলেন যে, কতইনা সৌভাগ্য সে পেটের যে পেট আপনাকে ধারণ করেছে। কতই না সৌভাগ্য ঐ স্তনদ্বয়ের যার থেকে আপনি দুগ্ধ পান করেছেন। কিন্তু, তিনি বললেন: কতই না সৌভাগ্য তাদের যারা আল্লাহর কালাম শুনেছে ও তা আত্মস্থ করেছে"। (লুকঃ১১/২৭-২৮)
কুমারী মারইয়াম আ. এর মত সন্মানিতা নারীর সাথে যদি সন্মানিত ব্যক্তি যীশু এ রকম ব্যবহার করেন তাহলে, সাধারণ মা ও সাধারণ পুত্রের অবস্থা কি হতে পারে?
কিন্তু ইসলামে মায়েদেরকে যে সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হয়েছে তার কোন তুলনা হয় না। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহ তায়ালার পরেই পিতামাতার সাথে সৎ ব্যবহার করার নির্দেশ প্রদান করেছে।
আল্লাহ বলেন:
অর্থাৎ,এবং তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সাথে সৎ ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে "উফ" শব্দটিও বলো না,তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারমূলক কথা বল। তাদের সামনে মাথা অবনমিত হও এবং বল- হে আমার পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর,যেমন তারা আমাকে শৈশব কালে লালন পালন করেছেন। (সূরা আল ইসরা ২৩-২৪)
এ ছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন অংশে মায়েদের সুউচ্চ মর্যাদার কথা আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেন:
আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তাদের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করতে। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরে হয়। আমি নির্দেশ প্রদান করেছি যে,আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে। (সূরা লোক্বমানঃ১৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ইসলামে মায়ের মর্যাদাকে তুলে ধরেছেন।
হাদীসে এসেছে-
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাল আচরণ পাওয়ার সর্বাপেক্ষা বেশী হকদার কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন তারপর কে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেনঃ তোমার মা। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন: তারপর কে? রাসূল সা, জবাব দিলেন: তোমার মা। আগন্তুক চতুর্থবার জিজ্ঞাসা করলেন: তারপর কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার পিতা। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলমানরা তাদের মায়েদের সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য সর্বদা উদগ্রীব থাকে। সব সময়ই মুসলমান ছেলে-মেয়ে ও মায়েদের মধ্যকার মধুর সম্পর্ক এবং পিতামাতার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা দেখে পশ্চিমারা রীতিমত অবাক হয়ে যায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেকে ইসলাম জেনে বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৯ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামকে মেনে চলার তাওফীক দান করুন । আমীন
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পিতা-মাতা দুজনেরই খেদমত করার তাওফীক দান করেন। আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন