ইসলাম ও অন্য ধর্মে তালাক (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ২৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:৩৩:১২ সকাল
এখন আমরা দেখব ইসলাম তালাককে কিভাবে গ্রহণ করে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বৈধকাজ হচ্ছে তালাক। (আবু দাউদ)
নিছক অপছন্দের কারণে স্বামীর অধিকার নেই স্ত্রীকে তালাক দেয়ার। অপছন্দ হলেও ইসলাম স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন:
স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর,তবে এমনও হতে পারে যে,তোমরা এমন জিনিসকে অপছন্দ করছ,যাতে আল্লাহ তায়ালা অনেক কল্যাণ রেখে দিয়েছেন। (সূরা নিসাঃ ১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে উপহাস না করে। যদি তার একটি আচরণ পছন্দ না হয়, তাহলে আরেকটি আচরণে হয়ত সে সন্তুষ্ট হবে। (মুসলিম)
রাসূল (সাঃ) তাগিদ দিয়ে বলেছেন: স্ত্রীর কাছে যার আচরণ উত্তম সেই পুর্ণ ঈমানদার। তিনি বলেন:
অর্থাৎ, ঐ ব্যক্তি পূর্ণাংগ ঈমানদার যার আচার ব্যবহার উত্তম। আর যার আচার আচরণ স্ত্রীদের কাছে উত্তম সেই উত্তম ব্যক্তি। (তিরমীজী)
ইসলাম প্রাক্টিক্যাল ধর্ম তাই সে খেয়াল রাখে যে,কিছু কিছু পরিস্থিতিতে স্বামী স্ত্রীর মাঝে মীমাংসা করা সম্ভব হয় না এবং স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করেও লাভ হয় না; বরং একে অপরের সাথে খারাপ ব্যবহার করে সে সময়ের জন্য স্বামীকে চারটি নসীহত পেশ করেছে। এ সময়কার করণীয় সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন:
অর্থাৎ, পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ তায়ালা একের উপর অন্যকে বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও,তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করতে যেওনা। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। যদি তোমরা তাদের মধ্যে সম্পর্কছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতির আশংকা কর, তবে তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত কর। আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ,সবকিছু অবহিত। (সূরা নিসাঃ ৩৪-৩৫)
পুরুষের উচিত উপরোক্ত তিনটি নসীহত মেনে চলা। যদি তাতে কোন কাজ না হয়, তখন এতে তার পরিবারকে জড়াবে। এ আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, স্ত্রী অবাধ্য না হলে স্বামীর জন্য কোনভাবে উচিত হবে না তাকে প্রহার করা। তবে,তাকে সংশোধন করতে গিয়ে জরুরী অবস্থায় প্রহার করা বৈধ। যদি এতে স্ত্রী সংশোধিত হয়ে যায়, তাহলে তাকে পুর্বেকার কাজের জন্য তিরস্কার করা উচিত নয় । আর যদি সংশোধন না হয় তাহলে, দ্বিতীয়বার তাকে প্রহার করবে না;বরং উভয়ের পরিবার থেকে সদস্য নিয়ে সালিস বসবে। (প্রহার করলে তা হবে মৃদু আকারে অমানুষিকভাবে যেন না হয় যাতে ব্যাথা হয় এবং তা চেহারাসহ স্পর্শকাতর স্থানে হতে পারবে না।)
বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম পুরুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন অত্যন্ত জরুরী অবস্থা (অশ্লীল কাজকর্ম বা কথায় জড়িত হওয়া ইত্যাদি) ছাড়া এ পর্যায়ে না আসে। এ অবস্থায়ও শাস্তিটা হবে খুবই সামান্য। নারী যদি এ কাজ থেকে বিরত হয় স্বামীর জন্য তার বিরুদ্ধে পুনরায় একশানে যাওয়া উচিত হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। কেননা,তারা তোমাদের কাছে বন্দী রয়েছে। এটা ব্যতিত তোমাদের আর কোন কিছু করার অধিকার নেই তবে, যদি তারা অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে তাহলে, ভিন্ন কথা। যদি তারা এরুপ করে তাহলে, তাদেরকে বিছানা ত্যাগ কর, আর তাদেরকে মৃদু প্রহার কর যেন তাদের শরীরে কোন ব্যথা (অমানুষিক) না হয়। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আর কোন পন্থা অবলম্বন করতে যেও না। (তিরমীজী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কারণ ছাড়া স্ত্রীকে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একদল মহিলা এসে অভিযোগ করলেন যে,তাদের স্বামীরা তাদেরকে প্রহার করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের কাছে অনেক নারী এসে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। ঐ সমস্ত পুরুষেরা উত্তম নহে (যারা তাদের স্ত্রীদেরকে প্রহার করে)। (আবু দাউদ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের নিকট উত্তম। (তিরমীজী)
রাসূল (সাঃ) ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) নাম্নী মহিলাকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন যে লোক স্ত্রীকে প্রহার করে বলে সমাজে পরিচিতি লাভ করেছে, তাদেরকে যেন বিবাহ না করে। উক্ত মহিলা নিজেই বর্ণনা করেন: মুয়াবিয়া ও আবু জাহাম আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আবু জাহাম! সে তো তার কাধ থেকে লাঠি নামায় না; আর মুয়াবিয়া দরিদ্র যার কোন সম্পদ নেই......(মুসলিম শরীফ)
তালমূদ স্ত্রীকে শিষ্টাচার শিক্ষাদান করতে প্রহার করার অনুমতি দিয়েছে।
বলা হয়েছে তাকে প্রহার করতে হলে পাপাচারী হওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং শুধুমাত্র গৃহাস্থলীর কাজকর্ম করতে অনীহা প্রকাশ করলেও তাকে প্রহার করা যাবে।তাকে মৃদু নয় বরং তাকে বেত্রাঘাত করা ও খানাপিনা থেকে বিরত রাখারও অনুমতি দিয়েছে।
কিন্তু, স্বামীর আচরণ খারাপ হওয়ার আশংকা দেখা দিলে কুরআনে বলা হয়েছে:
অর্থাৎ, কোন মহিলা যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ বা এড়িয়ে চলা নীতি অবলম্বনের আশংকা করে। তাহলে তাদের পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করে নেয়াতে কোন দোষ নেই। আর মীমাংসাই উত্তম কাজ। মানুষের আত্মার সামনে লোভ বিদ্যমান রয়েছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে জেনে রাখ আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সব কাজের খোজ খবর রাখেন। (সূরা নিসা: ১২৮)
এ অবস্থায় নারীকে উপদেশ দেয়া হয়েছে পরস্পরের মাঝে মীমাংসা করে নিতে। (উভয় পরিবারের মধ্যস্থতায় বা তাদের মধ্যস্থতা ব্যতিত) নারীকে স্বামীর বিছানা থেকে পৃথক থাকা বা স্বামীকে প্রহার করার উপদেশ দেয়নি, যাতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এড়ানো যায়। কেননা তা তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ককে আরো বেশী ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। কোন কোন আলেম মত প্রকাশ করেছেন যে, এ অবস্থায় স্ত্রীর পক্ষ থেকে মীমাংসার জন্য আদালত এগিয়ে আসবে। প্রথমে আদালত স্বামীকে সতর্ক করে দেবে অতঃপর স্বামী থেকে স্ত্রীকে দূরে রাখবে এবং সর্বশেষে আদালত স্বামীকে প্রহার করার হুকুম দেবে।
সংক্ষেপে এভাবে বলা যায় যে, বৈবাহিক সম্পর্ককে অটুট রাখতে স্বামী স্ত্রীকে বিভিন্ন উপদেশ প্রদান করবে। তাদের কোন একজন অপরের প্রতি খারাপ আচরণ করে থাকলে অন্যজন এ উপদেশগুলো কাজে লাগিয়ে তাদের এ পবিত্র বন্ধন অটুট রাখার চেষ্টা করে যাবে। এ চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হলে ইসলাম শেষ চিকিৎসা হিসেবে হৃদ্যতার সাথে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে অনুমতি দেয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলাম জেনে বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
বিষয়: বিবিধ
১২৪৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন