ইসলাম ও অন্য ধর্মে তালাক (দ্বিতীয় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ২৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:০৯:২৩ রাত
যে বন্ধ্যা স্ত্রীর দশ বছর যাবত কোন সন্তান হয় না তাকে বাধ্যতামুলক তালাক দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে তালমুদ। ইহুদী পন্ডিত বলেনঃ "কোন নারীর বিবাহের পর দশ বছর পর্যন্ত কোন সন্তান না হলে তাকে যেন স্বামী তালাক দিয়ে দেয়"।(Yeb 64 A)
কিন্তু,ইহুদী আইনে মহিলার কোন অধিকার নেই তালাক চাওয়ার। তবে,আদালতে শক্তিশালী কোন কারণ দেখাতে পারলেই (যা দ্বারা তালাক পাওয়ার দাবিদার সাব্যস্ত হয়) শুধুমাত্র ইহুদী নারীরা তালাক পেতে পারে। যে সমস্ত কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে-
১.স্বামী যদি শারিরীক কোন অংগ-প্রত্যংগের বা ত্বকের কোন রোগে ভুগতে থাকে।
২.স্বামী যদি পরিবারের খাদ্যের বন্দোবস্ত না করতে পারে ইত্যাদি।
এ সময় আদালত তার তালাকের আবেদন গ্রহণ করবে। মহিলা কখনও তালাকের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। বরং শুধুমাত্র স্বামীই তার স্ত্রীকে তালাকের কাগজপত্র দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। এ অবস্থায় আদালত স্বামীকে তালাকে বাধ্য করতে কিছু শাস্তি প্রয়োগ করতে পারে। যেমন-জরিমানা করা, জেলে আটক রাখা, গীর্জায় প্রবেশে বাধা দেয়া ইত্যাদি। যাতে সে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য হয়। এমতাবস্থায় স্বামী তাকে তালাক দিকে অস্বীকৃতি জানালে স্ত্রী সারাজীবন ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। স্ত্রীকে সারা জীবন না বিবাহিত না তালাকপ্রাপ্তা অবস্থায় থাকতে হতে পারে। তাদের নিয়ম অনুযায়ী এ অবস্থায় স্বামী অন্য কাউকে বিবাহ করে বা অন্য কোন মহিলার সাথে অবৈধভাবে ঘর সংসার করতে পারে। কেননা,এ অবস্থায় সন্তান হলে তাদের দেশীয় আইনানুযায়ী তা বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। স্ত্রী পড়ে থাকবে বিবাহবিহীন অবস্থায়। কারণ,সে এখনও পুর্ব স্বামীর সথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বসলে সে ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হবে এবং সন্তান হলে তাদের পরবর্তী দশম প্রজন্ম পর্যন্ত সমস্ত সন্তান অবৈধ ঘোষিত হবে। এ স্ত্রীকে বলা হবে মুকাইইয়াদাহ বা আবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে এরুপ ১০০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত ইহুদী মহিলা রয়েছে;যারা এভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। ইসরাইলে আছে এরকম ১৬০০০ মহিলা। স্বামীরা তাদেরকে তালাক দেয়ার নাম করে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নেয়।
ইসলাম উভয় ধর্মের সমস্যাগুলোর সমাপ্তি ঘোষণা করতে এগিয়ে আসল। ইসলামে বৈবাহিক বন্ধন একটি অত্যন্ত পবিত্র বন্ধন। শক্তিশালী কোন কারণ ছাড়া যা ছিন্ন হবার নয়। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেও ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে সুষ্ঠু ফয়সালায় বিশ্বাসী। সুষ্ঠু ফয়সালার সমস্ত পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে শুধুমাত্র তখনই ইসলাম সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে তালাকের বৈধতা দেয়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে ইসলাম তালাকের বৈধতা দেয়। কিন্তু তালাকের পথ রুদ্ধ করতে যা করা দরকার সবকিছু করে। ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কেই তালাকের ক্ষমতা দিয়েছে। যা ইহুদীদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর নারীদের তালাকের সে অধিকার হল-"খোলা" করা।
তালাক দেয়ার পর স্বামীর কোন অধিকার নেই স্ত্রীকে প্রদত্ত সম্পদ (উপহার ইত্যাদি) ফেরত নেয়ার। তালাকের পর নারীকে প্রদত্ত সম্পদ ফেরত নেয়া সম্বন্ধে আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ, আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থানে অন্য স্ত্রীকে পরিবর্তন করতে চাও,এবং তাদের একজনকে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ দিয়ে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গুনাহর মাধ্যমে গ্রহণ করতে চাও? (সূরা নিসাঃ ২০)
আর যদি স্ত্রী তার বিবাহকে ছিন্ন করতে চায়, তাহলে সে তার গৃহীত উপহার সামগ্রী স্বামীকে ফিরিয়ে দেবে। সম্পদ ফিরিয়ে দেয়াটা ন্যায় সংগত বিনিময় হিসেবে বিবেচিত হবে; কেননা স্বামী চায় তাদের বিবাহ বন্ধন টিকে থাকুক অপরদিকে স্ত্রী তা ছিন্ন করতে চায়। কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,স্ত্রী যদি বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে চায়; তখন ছাড়া অন্য কোন সময় স্বামীর জন্য বৈধ হবে না তাকে প্রদত্ত সম্পদ ফিরিয়ে নেয়া।
আল্লাহ বলেন:
অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে যা কিছু প্রদান করেছ তা থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। কিন্তু,যে ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়েই ভয় করে যে তারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা বজায় রাখতে পারবে না; সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নেয় তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এটা হল আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা। কাজেই এ সীমা অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করবে তারাই যালেম। (সূরা বাকারাঃ ২২৯)
রাসূল (সাঃ) এর নিকট একজন মহিলা আসলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন: আমি আমার বিবাহ বিচ্ছেদ চাই; কিন্তু, তিনি বর্ণনা করেননি, কি কারণে তিনি তার বিবাহ বিচ্ছেদ চান। তার সমস্যা একটাই যে, তিনি তার সাথে জীবনযাপন করতে ভালোবাসেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
অর্থাৎ, তুমি কি তাকে বাগান (বিবাহের সময় উপহার স্বরুপ প্রদত্ত) ফেরত দেবে? মহিলা বলল, হ্যা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বামীকে বললেন: বাগান নিয়ে নাও এবং তাকে একটি তালাক (শুধুমাত্র এক তালাক দিলে আবার ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না।) দিয়ে দাও। (বুখারী)
এছাড়াও কোন শক্তিশালী কারণে মহিলা তালাক দাবী করতে পারে। যেমন-স্বামীর কঠোরতা,বিনা কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করা বা পারিবারিক খরচ না চালানো ইত্যাদি। এ অবস্থায় ইসলামী আদালত মহিলাকে তালাকের ব্যাপারে ফয়সালা দেবে।
সংক্ষেপে: ইসলাম নারীকে যে অধিকার দিয়েছে তার কোন তুলনা হয় না। সে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে পারে "খোলা" বিধানের মাধ্যমে বা আদালতে অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে। মুসলিম মহিলাকে কখনো আটকিয়ে রাখা (তালাক না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা) যায় না। ইসলাম আসার পর এ সকল অধিকার বলে ইহুদী নারীরা ইসলামী আদালতে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তালাক দাবী করত। কিন্তু,ইহুদীরা তাদের তালাককে প্রত্যাখ্যান করে কিছু অধিকার দিয়ে কৌশলে ইসলামী আদালতে যাওয়া থেকে তাদেরকে বিরত রাখল। খৃষ্টান সমাজের ইহুদী মহিলারা এ অধিকারগুলো পেত না; কেননা ওখানকার রোমানীয় আইন ইহুদী আইন থেকে উত্তম ছিল না।
চলবে....।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৯ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ।
আমি বলবো হিল্লা বিয়ের কথা।ধর্মের নামে যত নোংরা আইন প্রচলিত আছে তার ভেতরে অন্যতম এই হিল্লা বিয়ে।এটা যদি আসমান থেকে কেউ দিয়ে থাকে তবে তার বিবেচনা নিয়ে আমার যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
হিল্লা বিয়ের মাধ্যমে নাকি নারীকে সম্মান দেওয়া হয়েছে!
হায়রে সম্মান!
স্বামী রাগের বশত যদি তালাক দেয়,এবং তারপর আবার স্ত্রীকে ফেরত নিতে চায়,তবে দোষ কার??
স্বামীর এইভুলের জন্য স্ত্রীকে তার সম্ভ্রম অন্য পুরুষের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে।একজনের ভুলের শাস্তি চরমভাবে দিতে হচ্ছে আরেকজনকে।এই জঘন্য আইন কতটা জঘন্য তা বলার ভাষা আমার নাই।
এর এই ধর্মেই নাকি নারীকে সম্মানীত করা হয়েছে!হায়রে সম্মান!
ধর্মের নামে অসংখ্য নারীকে ধর্ষিতা হতে হচ্ছে।
যে স্বামীর জন্য স্ত্রী,সন্তান শাস্তি পাচ্চে সেই স্বামীদেবতার গয়ে কোন টোকাও পড়ে না।এর নাম কি শান্তির ধর্ম?
আর যদি অমুসলিম হয়ে থাকেন, তাহলে এভাবে নির্লজ্জতায় হাবুডুবু খাবার অর্থ কি?
যার জন্য
হিল্লা বিয়ে আয়োজন
করা হবে, আল্লাহ
তাদেরকে লানত
বা অভিসম্পাত
করেছেন”।
(আবু দাউদ,
ইবনে মাজাহ,
তিরমিযী,
মুসনাদে আহমাদ।)
হিল্লা বিয়ে ইসলামের
শত্রুদের
মিথ্যা প্রচার-
প্রচারণা র অন্যতম
একটি মজবুত
অস্ত্র। এ
সম্পর্কে বিস্তারিত
জানার জন্য এই
লেকচার
ভিডিওটা দেখতে পারে
ইনশাল্লাহ এক
ঘন্টার মধ্যে আপনার
সারা জীবনের সংশয়
কেটে যাবে ও
ইসলামের শত্রুদের ও
বিদাতপন্থী আলেমদে
উপযুক্ত জবাব
দিতে পারবেন।
http://
http://www.youtube.com/
watch?v=5FnJ8lSf
wKc
Ovishopto Halala
youtube.com
বলেন তো, এটা কি ধরনের বিয়ে??
Sahih Bukhari Volume 007, Book 063, Hadith Number 186.
Narrated By 'Aisha : The wife of Rifa'a Al-Qurazi came to Allah's Apostle and said, "O Allah's Apostle! Rifa'a divorced me irrevocably. After him I married 'Abdur-Rahman bin Az-Zubair Al-Qurazi who proved to be impotent." Allah's Apostle said to her, "Perhaps you want to return to Rifa'a? Nay (you cannot return to Rifa'a) until you and 'Abdur-Rahman consummate sex."
জাহেল বা অজ্ঞদেরকে অবজ্ঞা করে চল।
তাই আমরা তার কথায় কান দিব না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
হাসসান বিন সাবেত (রাঃ) যাদের প্রতিবাদ করেছিলেনو তারা ছিল:
জ্ঞানী
শরম
জাত
আর এরা:
জ্ঞান মুক্ত
শরম মুক্ত
জাত মুক্ত অর্থাৎ এতে জাতভেদ নেই।
এরা তো সেই রকম:
একজন বলছে: তুমি জুতা পেটা করে আমাকে লজ্জা দিতে পারবে؟
গতকাল লঙ্গী উঠিয়ে লাঠি পেটা করেছেو তাতেই আমার লজ্জা করেনি।
তাই:
এদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
আরো মনে করিয়ে দেই:
পায়খানাকে লাথি দেয়া কি ঠিক হবে؟
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন