কন্যা সন্তান কি অপমান ডেকে আনে? ইসলাম কি বলে?
লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৫৪:২৯ সন্ধ্যা
আসলে কুরআন ও তাওরাতের মধ্যকার নারী জাতি সংক্রান্ত আলোচনায় মতানৈক্য রয়েছে তার জন্মলগ্ন থেকেই।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে, বাইবেলে রয়েছে নারীরা কন্যা সন্তান জন্ম দিলে সন্তান প্রসবের পরে অপবিত্র থাকে ২ সপ্তাহ। পক্ষান্তরে পুত্র সন্তান জন্ম দিলে অপবিত্র থাকে ৭ দিন বা এক সপ্তাহ।(লেভিটিকাস: ১২/২-৫)
আর ক্যাথলিক বাইবেলে পরিস্কারভাবে বলা আছে যে, "কন্যা সন্তান জন্ম হওয়া একটা ক্ষতি বা লোকসান"।(এক্সিলেসিয়াস্টিকাসঃ ২২/৩) অপরদিকে ঐ সমস্ত পুরুষদেরকে প্রশংসা করেছে " যে তার পুত্র সন্তানকে শিক্ষাদান করে এবং শত্রুরা তাতে ঈর্ষান্বিত হয়"।(এক্সিলেসিয়াস্টিকাসঃ ৩০/৩)
দেখুন! ইহুদী পন্ডিতের কার্যকলাপ। ইহুদী পন্ডিত ইহুদীদেরকে তাগিদ দিচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য, সাথে সাথে ছেলে সন্তানদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছে " তোমাদের জন্য পুত্র সন্তান জন্ম দেয়া হবে কল্যাণকর আর কন্যা সন্তান জন্ম দেয়া হবে অকল্যাণকর"। " সবাই পুত্র সন্তানের জন্মে খুশি হয় কিন্তু, কন্যা সন্তানের জন্ম হলে তারা চিন্তিত হয়"। " যখন পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে তখন তা দুনিয়ায় শান্তি আসার কারণ হয়, পক্ষান্তরে কন্যা সন্তানের জন্মে কিছুই হয় না"।
কন্যা সন্তান তার পিতামাতার জন্য বোঝা এবং অপমানের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়। " যদি তোমার কন্যা অবাধ্য হয় তাহলে সতর্ক থেক সে তোমার শত্রুদেরকে হাসাবে এবং সে এলাকাবাসীর গল্পের উপভোগ্য হয়ে তোমার জন্য অপমান ডেকে আনবে। (এক্সিলেসিয়াস্টিকাসঃ ৪২/১১)
অবাধ্য নারীর প্রতি তোমার কঠোর হওয়া আবশ্যক। অন্যথায় তোমার নির্দেশ অমান্য করবে এবং ভূলের ভিতর দিনাতিপাত করবে। যখন সে তোমার অপমানের কারণ হয়, তখন তুমি আশ্চর্য না হয়ে বরং বিচক্ষণতার পরিচয় দাও।(এক্সিলেসিয়াস্টিকাসঃ ২৬/১০-১১)
আর এমনটিই করেছিল জাহেলী যুগের কাফেররা। তারা কন্যা সন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দিত। কুরআন তাদের এ কুকর্মকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেছে। আল্লাহ বলেন:
আর যখন তাদেরকে কন্যা সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোযন্ত্রনায় ভুগতে থাকে।
তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের থেকে মুখমন্ডল গোপন করে থাকে। সে ভাবে, সে কি অপমান সহ্য করে তাকে দুনিয়ায় থাকতে দেবে নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ! তাদের কৃত ফয়সালা অত্যন্ত নিকৃষ্ট। (সূরা নাহলঃ ৫৮-৫৯)
যদি কুরআন শরীফে এটাকে নিষিদ্ধ না করা হত, তাহলে এ নিকৃষ্ট কাজটি আজও দুনিয়ায় অব্যাহত থাকত। কুরআন শুধুমাত্র এ কাজটিকে নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং কুরআন পুরুষ ও নারীর ভিতরে কোন পার্থক্যেরও সৃষ্টি করেনি। এটা বাইবেলের বিপরীত। কুরআন শরীফ কন্যা সন্তানের জন্মকে পুত্র সন্তানের মতই আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও বিশেষ দান হিসেবে গণ্য করেছে।
প্রথমতঃ কন্যা সন্তানের জন্মকে কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত বা অনুগ্রহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তায়ালারই। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। (সূরা আশ শুরাঃ ৪৯)
বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়ার প্রচলনকে চিরতরে উৎখাত করার জন্য কন্যা সন্তানের লালন-পালন ও শিষ্টাচার শিক্ষাদানকারীকে সুমহান পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
অর্থাৎ, যাকে কোন কন্যা সন্তান দিয়ে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে এবং সে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করেছে তারা তার জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা হয়ে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেনঃ
অর্থাৎ, যে দুইজন কন্যা সন্তানকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করেছে সে আর আমি কিয়ামতের দিন এভাবে আসব। অতঃপর তিনি তার আঙ্গুলি সমুহকে একত্রিত করলেন। (মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কন্যা সন্তানকে সম্মান দেয়ার তাওফীক দান করুন। আমনী
বিষয়: বিবিধ
২৪৮৫ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার ফেসবুকের লিঙ্ক। .
https://www.facebook.com/profile.php?id=100001767325225
অর্থাৎ লেখার মাধ্যমে আমাদেরকে অনেক কিছু শিখাবেন।
অনেক ধন্যবাদ।
ইচ্ছেমত, ধন্যবাদ ভালো লাগলো।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আর সু-সন্তান কিভাবে তৈরী হবে তারও একটি রোডম্যাপ বা দিকনির্দেশিকা বাতলে দিয়েছেন রাসুল (সা) এর একটি হাদিসে। যার সারমর্ম হচ্ছে-
প্রত্যেক নবজাতক শিশুই জন্মের সময় ফিতরতুল ইসলাম তথা ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। শিশুটির বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি তার ব্যক্তি জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি ইসলামাইজড না হয়ে যদি তা'গুতী শক্তির প্রভাবে প্রভাবাহ্নিত হয় তখন সেও ক্রমান্নয়ে তা'গুতী শক্তির পুজারী হয়ে তার প্রতিনিধিত্ব করে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়ায়।
আপনি সুন্দর আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন
আল্লাহঃ আমি তাকে প্রচুর বৃষ্টি দেই ।
মুসা (আঃ)ঃ আরও খুশি হলে ?
আল্লাহ ঃ তাকে কণ্যা সন্তান দান করি।
মুসা (আঃ)ঃ আরও খুশি হলে ?
আল্লাহ ঃ তাকে আমি বেশি বেশি মেহমান দেই ।
দিয়েছে নরসম অধিকার
মানুষের গড়া সব প্রাচীর ভেঙ্গে
করেছে একাকার
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন