রজমান বিদায়, আমাদের করণীয় (দ্বিতীয় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ০২:২২:১৩ দুপুর



রমজান মাসে যেমন বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করতেন, তেমনিভাবে তেলাওয়াত করতে থাকুন।

আবূ উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘‘তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ করো। কেননা, কেয়ামতের দিন কুরআন, তার পাঠকরে জন্য সুপারশিকারী হিসাবে আগমন করবে।’ (মুসলিমঃ ৮০৪)

নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কুরআন ও ইহজগতে তার উপর আমলকারীদেরকে (বিচারের দিন মহান আল্লাহর সামনে) পেশ করা হবে। সূরা বাক্কারাহ ও সূরা আলে ইমরান তার আগে আগে থাকবে এবং তাদের পাঠকারীদের সপক্ষে (প্রভুর সঙ্গে) বাদানুবাদে লিপ্ত হবে। (মুসলিমঃ ৮০৫)

উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে র্সবশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই; যে নিজে কুরআন শেখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়। (বুখারীঃ ৫০২৭)

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কুরআনের (শুদ্ধভাবে পাঠকারী ও পানির মত হিফযকারী পাকা) হাফেয মহাসম্মানিত পুণ্যবান লিপীকার (ফেরেশতার্বগের) সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি (পাকা হিফয না থাকার কারনে) কুরআন পাঠে ‘ওঁ-ওঁ’ করে এবং পড়তে কষ্টবোধ করে, তার জন্য রয়েছে দুটি সওয়াব।” (একটি তিলাওয়াত ও দ্বিতীয়টি কষ্টের দরুন)। (বুখারীঃ ৪৯৩৭, মুসলিমঃ ৭৯৮)

আবূ মূসা আশআরী (রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, কুরআন পাঠকারী মুমিন হচ্ছে ঠিক কমলা লেবুর মত; যার ঘ্রাণ উত্তম এবং স্বাদও উত্তম। আর যে মুমিন কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক খেজুরের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ তো নেই, তবে স্বাদ মিষ্টি। (অন্যদিকে) কুরআন পাঠকারী মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধীময় (তুলসী) গাছের মত; যার ঘ্রাণ উত্তম কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক মাকাল ফলের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ নেই, স্বাদও তিক্ত। (বুখারীঃ ৫০২০, মুসলিমঃ ৭৯৭)

উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মহান আল্লাহ এই গ্রন্থ (কুরআন মাজীদ) দ্বারা (তার উপর আমলকারী) জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটান এবং এরই দ্বারা (এর অবাধ্য) অন্য গোষ্ঠীর পতন সাধন করেন’’। (মুসলিমঃ ৮১৭)

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, দুজনের ক্ষেত্রে ঈর্ষা করা জায়েজ। (১) যাকে আল্লাহ কুরআন (মুখস্ত করার শক্তি) দান করেছেন, সুতরাং সে এর (আলোকে) দিবা-রাত্রি পড়ে ও আমল করে। (২) যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পত্তি দান করেছেন এবং সে (আল্লাহর পথে) দিন-রাত ব্যয় করে। (বুখারীঃ ৫০২৫)

বারা’ইবনে আযবে (রাঃ) হতে র্বণিত, তিনি বলেন, একদা একটি লোক সূরা কাহাফ পাঠ করছিল। তার পাশেই দু’টো রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ইতিমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিল। মেঘটি লোকটির নিকটর্বতী হতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চমকাতে আরম্ভ করল। অতঃপর যখন সকাল হল তখন লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে হাজির হয়ে উক্ত ঘটনা র্বণনা করল। তা (শুনে) তিনি (রাসুল) বললেন, ওটি প্রশান্তি ছিল, যা তোমার কুরআন পড়ার দরুন অবর্তীণ হয়েছে। (বুখারীঃ ৫০১১, মুসলিমঃ ৭৯৫)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রাঃ) হতে র্বণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব ( কুরআন মাজীদ) এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার একটি নেকি হবে। আর একটি নেকি দশটি নেকির সমান হয়। আমি বলছি না যে, ‘আলফি-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলফি একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ, মীম একটি বর্ণ।’’ (র্অথাৎ, তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলফি-লাম-মীম’, যার নেকির সংখ্যা হবে তিরিশ।) (তিরমিযীঃ ২৯১০, হাসান)

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, পবিত্র কুরআন পাঠক, হাফেজ ও তার উপর আমলকারীকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, তুমি কুরআন কারীম পড়তে থাকো ও চড়তে থাকো। আর ঠিক সেইভাবে স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে পড়তে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে পড়তে। কেননা, (জান্নাতের ভিতর) তোমার স্থান ঠিক সেখানে হবে, যেখানে তোমার শেষ আয়াতটি খতম হবে। ( আবূ দাউদঃ ১৮৬৮, (তিরমিযীঃ ২৯১৪ হাসান)

কুরআন মাজীদ সযত্নে নিয়মিত পড়া ও তা ভুলে যাওয়া থেকে সর্তক থাকার নির্দেশঃ

আবূ মুসা আশারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, এই কুরআনের প্রতি যত্ন নাও। (র্অথাৎ, নিয়মিত পড়তে থাকো ও তার চর্চা রাখো।) সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের (সাঃ) জীবন আছে, উট যেমন তার রশি থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে (বিস্মৃতি হয়ে) যায় (র্অথাৎ, অতি শীঘ্র ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।)( মুসলিমঃ ৭৯১)

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “কুরআন-ওয়ালা হল বাঁধা উট-ওয়ালার মত। সে যদি তা বাঁধার পর তার যথারীতি দেখাশুনা করে, তাহলে বাঁধাই থাকবে। নচৎে ঢিল দিলেই উট পালিয়ে যাবে। (সহীহুল বুখারি ৫০৩১)

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন

চলবে:.....

বিষয়: বিবিধ

১২৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File