মুখে নয়, বাস্তবে রাসূলকে ভালবাসুন

লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ২৬ জুন, ২০১৩, ০৯:১৮:২৪ রাত



আমরা কিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাস, আসুন জেনে নেই।

মু’মিন মাত্রই রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা রাখা ঈমানের এক অপরিহার্য অংগ। পরম শ্রদ্ধা আর বিপুল মায়া-মমতার এক চমৎকার সংমিশ্রণের সমন্বিত রূপ হচ্ছে এই ভালোবাসা। তাইতো যখনই প্রিয় নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাম উচ্চারিত হয়, সীরাত আলোচিত হয় কিংবা হাদীস পাঠ করা হয় তখন ঈমানের আলোকে আলোকিত প্রত্যেক মুমিনের হৃদয় আলোড়িত হয়, শিহরিত হয়, মনে আনন্দের লহরী খেলে যায়। সত্যের দীক্ষায় দীক্ষিত হৃদয় তাঁর আদর্শের শ্রেষ্ঠতায় ও সৌন্দর্যে মোহিত হয়, উম্মতের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসায় আপ্ল“ত হয়। তাঁর একনিষ্ঠ দিক নির্দেশনায় পথ খুঁজে পায় পথহারা বিভ্রান্ত মানব সন্তানেরা, আর দুর্বল চিত্তের লোকেরা ফিরে পায় মনোবল। সমগ্র বিশ্ব-মানবতার কল্যাণকামী বন্ধুরূপেই আল্লাহ তাঁকে প্রেরণ করেছেন। তিনিই সে মহান রাসূল, যিনি যুগের যমীনকে মুক্ত করেছেন অশান্তির দাবানল হতে, উদ্ধার করেছেন অজ্ঞানতা ও মুর্খতার নিকষ অন্ধকার হতে। আর তাইতো বিশ্বজাহানের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই তিনি এসেছেন মানবতার বন্ধুরূপে। আল্লাহ্ রাব্বুল ইয্যত ইরশাদ করেন- ‘হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি তো আপনাকে বিশ্ব জগতের প্রতি কেবল রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’(সূরা আম্বিয়া :১০৭)

আল্লাহ্ আরও ইরশাদ করেন- ‘আমিতো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’ (সূরা সাবা: ২৮)

এমন রাসূলের প্রতি একটু বেশী পরিমাণে ভালোবাসা পোষণ করা এবং তাঁর প্রতি পাহাড়সম প্রগাঢ় শ্রদ্ধা রাখা মুমিন জীবনে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এরপরও এই স্বাভাবিক ভালোবাসার ব্যাপারটিকেই ইসলামী শরীয়াহ্ ওয়াজিব ও অপরিহার্য বলে আখ্যায়িত করেছে। রাসূল মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ভালোবাসা ঈমানের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসা মানেই আল্লাহ্কে ভালোবাসা। ইরশাদ হচ্ছে-

‘হে রাসূল, আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো। তবেই আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। এবং তোমাদের সকল গুনাহ্ মাফ করে দিবেন।’ (আল ইমরান: ৩১)

অর্থাৎ রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানার নাম, ভালোবাসার নামই আল্লাহকে ভালোবাসা। আর রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসলে আল্লাহ্ও আমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং আমাদের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ্। তাহলে এক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ভালোবাসা বলতে কী বুঝানো হয়েছে? এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই বলেছেন-

‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ তার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা আমার আনীত শরীয়ত ও আহকামের অনুগত না হবে।’ (মিশকাত: ৩০১পৃ.)

হাদীসটিতে আমার আনীত শরীয়ত বলতে কুরআন ও হাদীস উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং বিনা প্রশ্নে, যুক্তি-তর্কে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ-অনুকরণের নামই তাঁর প্রতি ভালোবাসা, তাঁর প্রতি ঈমান। এখন কেউ হয়তো বলতে পারেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিলকৃত কুরআন হলো মহান আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তা’য়ালার বাণী আর হাদীসতো আল্লাহ্র বান্দাহ্ রাসূল মুহাম্মাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, কথা-কাজের সংকলিত দলিল মাত্র! অর্থাৎ হাদীসতো আর আল্লাহ্র বাণী নয় তাই ভালোবাসার খাতিরে সৃষ্টিকর্তার কথা আর বান্দার কথা উভয়কেই শরীয়ত বলে মানাটা কি যুক্তিসংগত হবে? হ্যাঁ, অবশ্যই যুক্তিসংগত হবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল কথা এবং সম্পাদিত, অনুমোদনকৃত ও নির্দেশিত সকল কর্মকান্ডের উৎস ছিলো ওহী। এ সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে-

‘রাসূল যা কিছু তোমাদেরকে নির্দেশ করেন তা মেনে নাও। আর যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।’ (সূরা হাশর, ৫৯: ৭ আয়াত)।

কেননা- ‘তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় (অর্থাৎ স্বীয় মনগড়া) কথা বলেন না, আর কুরআন হচ্ছে ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (সূরা নজম, ৫৩: ৩-৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোটা জীবন পরিচালিত হয়েছে মুলতঃ নির্ভুল জ্ঞান ওহীর মাধ্যমে। তাই এই নির্ভুল জ্ঞানে বেড়ে উঠা প্রজ্ঞা ও মেধার মাধ্যমে বৈষয়িক জীবন সম্পর্কিত বিষয়ের ব্যাপারে হাদীস নির্ভুল বুদ্ধি ও যুক্তির দাবী রাখে। অতএব সহজভাবে বলতে গেলে- যিনি নিজেকে মু’মিন দাবী করবেন তাকে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে রাসূলকে ভালোবাসতে হবে এবং সে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে তাঁর ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তথা যাপিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আন্তরিক বিশ্বাসের পাশাপাশি কর্ম ও আচরণ দ্বারাই উদ্ভাসিত হবে প্রকৃত ভালোবাসা। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে স্বীয় পরিবার-পরিজনের বিপরীত ইচ্ছা-আকাঙ্খা কোন মূল্যই রাখে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,

‘(হে মুহাম্মাদ) বল, তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র তোমাদের সে স¤পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার ক্ষতি হওয়ার আশংকা তোমরা করছ, এবং সে বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত।’ [আত-তাওবাহ: ২৪]

যাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক প্রিয় নয়, তাদেরকে আল্লাহ এ আয়াতটিতে ভীষণ আযাবের হুমকি দিয়েছেন। ওয়াজিব ও অপরিহার্য কাজ বর্জন না করলে এ ধরনের হুমকি দেয়া হয় না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘শপথ ঐ সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তান হতে অধিকতর প্রিয় হব।’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন-

‘তোমাদের মধ্যে কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান এমনকি সকল মানুষের তুলনায় অধিকতর প্রিয়তম হিসেবে বিবেচিত না হবো।’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে মজলিসে এ হাদীসখানা বলেছিলেন সে মজলিসে হযরত উমার বিন খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনাকে আমার পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্তুতি থেকে অধিক ভালোবাসি কিন্তু তা অবশ্যই আমার নিজ জীবনের প্রতি মায়া হতে অধিক নয়। নবীজী একথা শুনে বললেন, হে উমার! তোমার ঈমান এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। হযরত উমার (রাদিআল্লাহু আনহু) কিছুক্ষণ চুপ থেকে অতঃপর বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এই মুহূর্ত হতে আপনার প্রতি আমার নিজ জীবন-জিন্দেগী হতেও অধিক অনুভব করছি। নবীজী একথা শুনে বললেন, হে উমার! এখন তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে।

দয়ার নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ভালোবাসা ব্যতীত কেহই প্রকৃত ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারে না; সম্ভব নয়। যারা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বিধাহীন চিত্তে ভালোবেসেছে, সীরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলেছে তারাই পেয়েছে ঈমানের পূর্ণ স্বাদ। তারাই স্বীয় জীবনকে তুচ্ছ ভাবতে পেরেছে যারা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসায় দিওয়ানা হয়েছে।

আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে- মানুষ তাঁকে এবং তাঁর নবুওয়ত ও রিসালাতকে এই মর্মে সত্য ও অকাট্য বলে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে মাখলুকের প্রতি নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন সেই সঙ্গে তিনি যে শরীয়ত তথা ধর্মীয় বিধি-বিধান নিয়ে আগমন করেছেন সেসব সম্পর্কেও অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং এও বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি যে সকল আদেশ-নিষেধ বর্ণনা করেছেন সবই হক্ব ও সত্য। তবে শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে কিংবা অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করলেই তাকে ঈমান বলা যাবে না, এর গ্রহণযোগ্যতার জন্য আন্তরিক বিশ্বাসের পাশাপাশি এগুলো পালনের ব্যাপারে দৃঢ় ও অটল সংকল্প একান্ত জরুরী ও অপরিহার্য। কারণ কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে- ‘এইসব গ্রাম্য লোকেরা বলে যে, আমরা ঈমান এনেছি; (হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!) আপনি বলে দিন যে, তোমরা ঈমানতো আনোইনি বরং বলো যে, আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি এবং তোমাদের অন্তরে এখন পর্যন্ত ঈমান প্রবেশ করেনি। আর যদি তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর, তবে আল্লাহ্ তোমাদের আমলসমূহ থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করবেন না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ পরম দয়ালু, মহাক্ষমাশীল। পূর্ণ মু’মিন তারাই, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে; অতঃপর এত কোন সন্দেহ পোষণ করেনি। অধিকন্তু স্বীয় ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। মুলতঃ তারাই সত্যনিষ্ঠ্য।’ (সূরা আল হুজুরাত: ১৪-১৫)

অর্থাৎ রাসূলের প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রে যদি সামান্যতম শোবা-সন্দেহও অন্তরে বিদ্যমান থাকে, তবে ঈমান সহীহ্ হবে না। আর শুধুমাত্র মুখে স্বীকার বা সাক্ষ্য প্রদান করলেই ঈমান সহীহ্ হবে না বরং অন্তরের পূর্ণ বিশ্বাস ও দৃঢ়তা থাকতে হবে। কারণ শুধুমাত্র মুখে স্বীকার ও সাক্ষ্য প্রদানকে কুরআনে নিফাক তথা ঈমানের ছদ্মাবরণে কুফ্র বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ইয্যত বলেছেন- ‘যখন আপনার নিকট এই মুনাফিকরা আসে, তখন তারা বলে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। এ কথাতো আল্লাহ্ জানেন যে, আপনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এই মুনাফিকগণ মিথ্যুক।’ [সূরা মুনাফিকুন : ১]। অর্থাৎ ঐসকল লোক কসম খেয়ে রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে আল্লাহর রাসূল বলে মৌখিক স্বীকৃতি দিলেও অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস না থাকার দরুন তারা আল্লাহ্ পাক কর্তৃক মিথ্যাবাদী মুনাফিক সাব্যস্ত হয়েছে। আর আখিরাতে মুনাফিকগণের শাস্তি কাফিরদের চেয়েও জঘন্য ও ভয়াবহ হবে। আল্লাহ্ পাক এদের শাস্তি সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন-

‘নিঃসন্দেহে মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিুস্তরে নিক্ষিপ্ত হবে এবং আপনি কখনো তাদের কোন সাহায্যকারী পাবেন না।’ (সুরা আন নিসা : ১৪৫)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা পোষণ না করলে ঈমানদার বলে কেউ বিবেচিত হবে না। অতএব ঈমানের অনিবার্য দাবী হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা।

তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের সকল মুসলিম ভাই ও বোনেরা ব্যালেন্স রক্ষা করতে পারেন না। দেখা যায়, উম্মতের একদল তাঁর ভালোবাসায় পাগলপারা হয়ে তাঁকে অতিমানবীয় পর্যায়ে উন্নীত করে এবং তাঁকে আল্লাহর বহু গুণাবলীতে শরীক করে। যা সুস্পষ্ট হারাম। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন- ‘আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বা মর্যাদা বাড়াতে গিয়ে বাড়াবাড়ি কিংবা অতিরঞ্জিত করবে না, যেমনভাবে খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্বন্ধে করেছে। আমিতো এক বান্দা মাত্র! তাই বলো- [মুহাম্মদ] আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’ [ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু)হাদীসটি হযরত উমর (রাযিআল্লাহু আনহু)-কে মিম্বরে বসে বলতে শুনেছেন; বুখারী, মুসলিম]। অর্থাৎ, খৃষ্টানরা যেরূপ হযরত ঈসা সম্পর্কে সীমাহীন বাড়াবাড়ি আর ভুল ও ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করার কারণে আল্লাহ্ পাকের রোষানলে পতিত হয়েছে এবং আল্লাহ্ পাক কর্তৃক কাফির ও মুশরিক সাব্যস্ত হয়েছে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ব্যাপারে মুসলমানদেরকেও তদনরূপ অসত্য ও অতিরঞ্জিত প্রশংসার দ্বারা সীমালঙ্ঘন করা হতে বিরত থাকতে হবে। উম্মতের আরেকদল আবার তাঁকে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে ফেলে অন্য মানুষের মতই তাকে ভুল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয় বলে বিশ্বাস করে। এদের কেউ কেউ তাঁর মুখনিঃসৃত কোন কোন হাদীস ও আমলকে অস্বীকার করে। ফলে তাঁকে অনুসরণের প্রয়োজনীয়তাও এ প্রকার লোকেরা অনুভব করে না। সুতরাং এ উভয় শ্রেণীর লোকেরা প্রকৃতপক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্যিকার ভাবে মহব্বত করা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছে। কারণ তারা এমন সব কাজ করছে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাদের মহব্বতের দাবীর অসারতা প্রমাণ করছে। এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

১. প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ থেকে দূরে সরে থাকা: সুন্নাহ থেকে অপ্রকাশ্যে দূরে থাকার উদাহরণ হল: যেমন মৌলিক ইবাদতসমূহকে আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব প্রথা মনে করা এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা না করেই এগুলো পালন করা, অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা ও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা, তাঁর প্রতি হৃদয়ে মহব্বত পোষণ না করা, সুন্নাহ ভুলে যাওয়া ও তা না শেখা এবং এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করা। আর প্রকাশ্যে সুন্নাহ থেকে দূরে সরে থাকার উদাহরণ হল: ওয়াজিব ও মুস্তাহাব পর্যায়ের দৃশ্যমান সুন্নতী আমল ত্যাগ করা, যেমন, রাতের তথা সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নামের সালাতসমূহ, বিতর এর সালাত, খাওয়া ও পরার সুন্নাতসহ, হজ্জ ও সিয়ামের নানাবিধ সুন্নাত পরিত্যাগ করা। এমন কি কেউ কেউ এগুলোকে নিতান্ত ফুজুলী বা অতিরিক্ত কাজ বলে মনে করে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে বলেন, ‘অতঃপর যারা আমার সুন্নাত থেকে বিরাগভাজন হয়, তারা আমার দলভুক্ত নয়।’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩ , সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৬৯]

২. বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ প্রত্যাখ্যান করা : যুক্তির বিচারে উত্তীর্ণ নয় কিংবা বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ নয় অথবা এ হাদীস অনুযায়ী বর্তমানে আমল করা সম্ভব নয় ইত্যাদি নানা যুক্তিতে সহীহ ও বিশুদ্ধ হাদীস অস্বীকার করা কিংবা সেগুলোকে তার প্রকৃত অর্থ থেকে অপব্যাখ্যা করে মনগড়া অর্থে প্রণয়ন করা। অনেকে একজন রাবীর বর্ণনা হওয়ার কারণেও খবরে আহাদকে অস্বীকার করে। কেউ কেউ আবার শুধুমাত্র কুরআন দ্বারা আমালের অজুহাত দেখিয়ে সুন্নাহকে অস্বীকার করে। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।’ [সূরা আল হাশর: ৭]

৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত অনুসরণ থেকে সরে আসা: প্রগতি ও উন্নতির প্রভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত ও আদর্শ অনুসরণ হতে সরে এসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতি ঝুঁকে পড়তে দেখা যায় অনেককে। এর চেয়ে মারাত্মক হল- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজের সাথে অন্যদের কথা-কাজ তুলনা করে সাধারণের উদ্দেশ্যে পেশ করা। এতে সাধারণ মানুষ রাসূলের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজ ইসলামী শরীয়াাতেরই অংশ। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘এতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি প্রেরণ করা হয়।’ [আন নাজম: ৪]

৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে আলোচনার সময় মনসংযোগ না করা এবং আগ্রহের সাথে শ্রবণ না করা: অথচ আল্লাহ্ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেকরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না।’ [সূরা হুজুরাত: ২]

৫. সুন্নাহর যারা প্রকৃত অনুসারী তাদেরকে ত্যাগ করা, তাদেরকে অসহযোগীতা করা, তাদের গীবত করা ও তাদেরকে ধর্মান্ধ বলে উপহাস করা।

৬. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈশিষ্ট্য ও তাঁর মু’জিযাসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান না রাখা।

৭. দ্বীনের মধ্যে নানা প্রকার বিদ‘আত চালু করা: দেখা যায়, অনেক লোক ইবাদাতের নামে নানাবিধ বিদ‘আত চালু করেছে আমাদের সমাজে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদ‘আত থেকে উম্মতকে সাবধান করেছেন। এদেরকে যখন বিদ‘আত ছেড়ে দেয়ার আহবান জানানো হয়, তখন তারা বিদ‘আতকে আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে।

৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বাড়াবাড়ি: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বাড়াবাড়ির অর্থ হচ্ছে তাঁকে নবুওয়াত ও রিসালাতের উর্ধ্বে স্থান দেয়া এবং অনেকক্ষেত্রে আল্লাহর গুণাবলীতে তাঁকে শরীক করা যেমন, দুনিয়া ও আখিরাত নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রকৃত গায়েব জানেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সদা-সর্বদা সর্বত্র হাযির-নাযির ইত্যাদি; আবার কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী আকীদাহ্ পোষণ করা যেমন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মা’ছুম (নিষ্পাপ-নিষ্কলঙ্ক) অর্থাৎ মানবীয় ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলেন না, রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খাতামুন্নাবীয়্যীন কিন্তু আল্লাহ্ পাক কর্তৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল নন, রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষ ছিলেন না, রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মী ছিলেন না প্রভৃতি। অথচ সহীহ বুখারীর বর্ণনায় তিনি স্বয়ং বলেন, ‘তোমরা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জন করো না, যেমন নাসারাগণ অতিরঞ্জন করেছে ঈসা ইবনু মারইয়াম সম্পর্কে। আমি তো শুধূ আল্লাহর বান্দা। বরং তোমরা বলো- (আমি) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’

সুনান আবি দাউদে একটি হাদীসে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার কবরকে উৎসবস্থলে পরিণত করো না, আর আমার উপর সালাত পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের সালাত আমার কাছে পৌঁছে।’ [সহীহ সুনান আবি দাউদ, হাদীস নং ২০৪২]

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ্ লানত করুন ইহুদী ও নাসারাদেরকে, তারা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদরূপে গ্রহণ করেছে।’ [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৩০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১২]

৯. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও দরূদ পাঠ না করা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অথচ তার নাম উচ্চারণ করে অথবা শুনে অনেকেই দরূদ ও সালাম পাঠ করে না। তিরমিযীর একটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধুসরিত হোক যার কাছে আমার উল্লেখ করা হয় কিন্তু সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’

তিরমিযীর অন্য আরেকটি বর্ণনায় তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’

উপরোক্ত বিষয়ের সবগুলোই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বতের পরিপন্থি। সুতরাং আজ যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার শরয়ী দায়িত্ব পালন করে নিজেদের ঈমানের যথার্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়, তাদের উচিত উপরোক্ত দল দু’টির চিন্তা-চেতনা ও কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসা এবং শরী‘আত তাঁর জন্য ভালোবাসার যে উপায়, উপকরণ ও উপাদান নির্ধারণ করেছে তা সত্যিকারভাবে অনুসরণ করা। তাঁকে ভালবাসি, মুখে এ দাবী করে জীবনের নানা ক্ষেত্রে তাঁকে ও তাঁর আদর্শকে উপেক্ষা করা যেমন ভালোবাসার দাবীকে অসার প্রমাণিত করে, তেমনি অতিরিক্ত ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে তাঁকে স্রষ্টার সমপর্যায়ে উন্নীত করাও অত্যন্ত গর্হিত ও শরী‘আতের দৃষ্টিতে প্রত্যাখ্যাত।

ইসলামী শরীয়াহ্ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যেভাবে ভালোবাসার নির্দেশনা প্রদান করেছে তা এবার তুলে ধরছি:

১. সকল মানবের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া:

আল্লাহ তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টির আদি ও অন্তের সকলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী, নবীদের নেতা ও সর্দার। সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ ইসমাঈলের সন্তান থেকে কিনানাকে চয়ন করেছেন এবং কিনানা থেকে কুরাইশকে নির্বাচন করেছেন। আর কুরাইশ থেকে চয়ন করেছেন বনু হাশিমকে এবং আমাকে চয়ন করেছেন বনু হাশিম থেকে।’ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭৭]

সহীহ মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আদম সন্তানের নেতা এবং এতে কোন অহংকার নেই। আর আমি ঐ ব্যক্তি প্রথম যার কবর বিদীর্ণ হবে, প্রথম যিনি শাফা‘আতকারী হবে এবং প্রথম যার শাফা‘আত কবুল করা হবে।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠত্বের আকীদা, মনে-মগজে ধারণ করার অর্থই হল তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্ভ্রম পোষণ করা এবং তাকে যাবতীয় সম্মান ও মর্যাদা দেয়া।

২. সকল ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আদব ও শিষ্টাচার রক্ষা করা: নিু বর্ণিত উপায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচার রক্ষা করা যায়।

উপযুক্ত বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করা। এক্ষেত্রে আল্লাহ রাববুল আলামীন যেভাবে তার প্রশংসা করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং তাঁর নিজ সম্পর্কে বলার জন্য যা শিখিয়ে দিয়েছেন, তাই হলো তাঁর প্রশংসা করার জন্য সর্বোত্তম অভিব্যক্তি। সালাত ও সালাম পেশের মাধ্যমে এ কাজটি অতি উত্তমভাবে আদায় হয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর উপর সালাত পেশ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার উপর সালাত ও সালাম পেশ কর।’ [সূরা আহযাব: ৫৬]সালাত ও সালাম রাসূলের স্তুতি বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম বলেই তাশাহুদ, খুতবা, সালাতুল জানাযা, আযানের পর ও যে কোন দু‘আর সময়সহ আরো বহু ইবাদাতে তা পেশ করার নিয়ম করে দেয়া হয়েছে; বরং তার উপর সালাত ও সালাম পেশ আলাদাভাবেই একটি ইবাদাত হিসেবে স্বীকৃত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা, ফযীলত, বৈশিষ্ট্য, মু’জিযা ও সুন্নাহ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে বেশী বেশী স্মরণ করা। মানুষকে তাঁর সুন্নাহ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা, তাঁর সম্মান, মর্যাদা ও উম্মতের উপর তাঁর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, তাঁর সীরাতকে সদাপাঠ্য বিষয়বস্তুতে পরিণত করা। এর মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সদা জাগরুক থাকবে।

শুধু মুহাম্মদ নামে তাকে উল্লেখ না করা, বরং এর সাথে নবী বা রাসূল সংযোজন করে সালাত ও সালাম পাঠ করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে যেভাবে ডাক, রাসূলকে তোমাদের মধ্যে সেভাবে আহবান করো না।’ [সূরা নূরঃ ৬৩]

মসজিদে নববীতে কেউ এলে এ মসজিদের আদব রক্ষা করা, বিশেষ করে তাঁর কবরের পাশে এসে স্বর উচ্চ না করা। উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু একদল লোককে এজন্য খুব সতর্ক করেছিলেন। পাশাপাশি তাঁর শহর মদীনা মুনাওয়ারার সম্মান রক্ষা করাও অপরিহার্য।

তাঁর হাদীসের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, হাদীস শোনার সময় ধৈর্য ও আদবের পরিচয় দেয়া, হাদীস শেখার প্রতি অনুপ্রাণিত হওয়া। এক্ষেত্রে এ উম্মতের প্রথম প্রজন্মসমূহের আদর্শ অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।

৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে প্রতিপন্ন করা: এসব বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল- ঈমানের মৌলিক বিষয়সমূহ, দ্বীনের মৌল স্তম্ভসমূহ, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত স¤পর্কে তাঁর দেয়া যাবতীয় সংবাদ ইত্যাদি। তাঁর সত্যতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

‘শপথ তারকার, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভ্রষ্ট হননি এবং বিভ্রান্তও হননি। তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করেননি। এতো শুধুই ওহী, যা তাঁর কাছে প্রেরিত হয়।’ (সূরা নাজম: ১-৪)

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া সংবাদকে অসত্য বলা ও একে কোন অপবাদ দেয়া হল সম্পূর্ণ কুফুরী ও মারাত্মক অশিষ্টতা, যার কোন ক্ষমা আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহ বলেন,

‘আর এ কুরআন তো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো থেকে রচিত নয়, বরং এ হচ্ছে তার পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং সে গ্রন্থের বিশদ বিবরণ যা রাববুল আলামীনের পক্ষ থেকে সন্দেহাতীতভাবে অবতীর্ণ। তারা কি বলে যে, সে তা রচনা করেছে? বল, তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে এস এবং তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। বরং যে জ্ঞান তাদের আয়ত্বে নেই সে সম্পর্কে তারা মিথ্যাচার করছে।’ (সূরা ইউনুস: ৩৭-৩৯)

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শিষ্টাচারিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল- তাঁর সবকিছু পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া ও তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, তাঁর দেয়া সব সংবাদ সত্য বলে মেনে নেয়া এবং খেয়ালের বশবর্তী হয়ে যুক্তির খাতিরে তা প্রত্যাখ্যান না করা কিংবা কোন সংশয়ের কারণে তাতে সন্দেহ প্রকাশ না করা অথবা অন্য লোকদের মতামত ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্যাসকে তাঁর উপর প্রাধান্য না দেয়া।’ [মাদারিজুস সালেকীন ২/৩৮৭]

৪. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা হচ্ছে তাঁর ইত্তেবা তথা আনুগত্য ও অনুসরণ করা: এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসে প্রচুর উদ্ধৃতি বিদ্যমান। তাঁর ইত্তেবা করা, আনুগত্য পোষণ ও তাঁর হিদায়াতের আলোকে পরিচালিত হওয়া সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘নিশ্চয় রাসূলুল্লাহর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, বিশেষ করে ঐ ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে।’ [সূরা আহযাব: ২১]

ইমাম ইবনু কাসীর বলেন, ‘সকল কথা, কাজ ও অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে এ আয়াতটি একটি মৌলিক দলীল।’ [তাফসীরুল কুরআনিল আযীম: ৩/৪৭৫]

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল আমি তো তোমাকে তাদের হেফাযতকারী রূপে প্রেরণ করিনি।’ [সূরা নিসা: ৮০]

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহর এবং অনুসরণ কর রাসূলের; আর তোমাদের মধ্যে যারা উলুল আমর তাদের। আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতণ্ডায় লিপ্ত হও, তাহলে আল্লাহ ও রাসূলের (সমাধানের) দিকে ফিরে আস, যদি তোমরা ঈমান পোষণ করে থাক আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি। এটাই পরিণামের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও সুন্দরতম।’ [সূরা নিসাঃ ৫৯]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন- ‘রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা হাশর: ০৭)

কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আর যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা ঐ সকল লোকের সঙ্গে (অর্থাৎ নবী, সিদ্দিকীন, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে) থাকবে যাদেরকে আল্লাহ্্ পুরস্কৃত করেছেন তারা খুবই ভাল সঙ্গী।’ (সূরা আন্ নিসা : ৬৯)

তাহলে যারা আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা পরকালে আম্বিয়া, সিদ্দিকীন, শহীদ, সৎকর্মপরায়ণদের সাথে জান্নাতে অবস্থান করবে, তাদের সান্নিধ্যে জান্নাতে ভোগ-বিলাস উপভোগ করবে। একজন ঈমানদারের জন্য এর চেয়ে বড় নিয়ামত ও পুরস্কার আর কিইবা হতে পারে! মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ইয্যত তার প্রিয় হাবীবের আনুগত্যকারী বান্দাদের জন্য আরও পুরস্কার ঘোষণা করেছেন- ‘এবং তাঁর (মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর) ইত্তেবা কর, যাতে তোমরা হিদায়াত পেতে পার।’ [সূরা আল আ’রাফ : ১৫৮]।

আল্লাহ্ পাক আরও ইরশাদ করেন- ‘যদি তোমরা রাসূলের আনুগত্য কর, তাহলে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে।’ [সূরা আর নুর : ৫৪]।

মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আনুগত্য করার প্রতিদানে স্বীয় মহব্বত ও মাগফিরাতের ওয়াদা করেছেন। কুরআন পাকে এসেছে- ‘হে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি মহব্বত রাখ, তবে আমার ইত্তেবা কর। আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদেরকে মহব্বত করবেন, তোমাদের গুনাহ্সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সূরা আল ইমরান : ৩১)

৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ও তাঁর ইত্তেবা ‘ইবাদত কবুলের শর্ত: কোন ইবাদত কবুল হবে না যতক্ষণ না তাতে নবী আকরাম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পূর্ণ অনুসরণ পাওয়া যাবে এবং তাঁর আনীত শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। বরং রাসূলের অনুসরণ ব্যতীত কৃত ইবাদত দ্বারা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে দূরত্ব বাড়তেই থাকবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত তো তাঁর নির্দেশ অনুযায়ীই সম্পাদিত হতে হবে। নিজের খেয়াল খুশি মত নয়। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করে যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।’ (বুখারি, মুসলিম)

৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ও তাঁর ইত্তেবা জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম: সহীহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘অস্বীকারকারীগণ ব্যতীত আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! অস্বীকারকারী কারা? তিনি বললেন: যারা আমার অনুসরণ করে তারা জান্নাতে যাবে আর যারা আমার বিরোধিতা করে তারাই অস্বীকারকারী।’ উক্ত বাণী একথার প্রমাণ বহন করে যে, রাসূলের অনুসরণ ব্যতীত জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব।

৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ও তাঁর ইত্তেবা মুমিনের অন্যতম অপরিহার্য গুণ: আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘মু’মিনদের বক্তব্য এই যে, যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম এবং তারাই প্রকৃত সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকে বেঁচে থাকে, তারাই কৃতকার্য।’ (সুরা নূর: ৫১)

৮. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের বিধান দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়া: এ বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার অন্যতম একটি মানদন্ড। এর বাস্তবায়ন না হলে ভালোবাসা তো নয়ই বরং ঈমানের দাবীও কেউ করতে পারে না। সেটিই আল্লাহ বলেছেন এভাবে- ‘তোমার রবের শপথ! কক্ষণও নয়, তারা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তারা তোমাকে নিজেদের মধ্যকার বাদানুবাদের ক্ষেত্রে হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নেয়, অতঃপর তুমি যে মিমাংসা করে দাও তাতে তাদের মনে কোন দ্বিধা তারা রাখে না এবং পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়।’ [সূরা নিসা: ৬৫]

ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত থেকে বের হয়ে যায়, আল্লাহ নিজে তাঁর পবিত্র সত্ত্বার কসম করে বলেছেন যে, তারা ঈমানদার নয়।’ [মাজমু আল ফাতাওয়া ২৮/৪৭১]

৯. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়া: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করার একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও বড় উপায় হচ্ছে তাঁর পক্ষে অবস্থান নেয়া ও তাঁকে সাহায্য করা। আল্লাহ বলেন, ‘যে সকল দরিদ্র মুহাজিরকে তার বাসস্থান ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত করা হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে, তারাই হল সত্যবাদী।’ [সূরা হাশরঃ ৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়া ও তাঁকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে চমৎকার ও সত্যিকার সব উদাহরণ পেশ করেছেন তাঁরই প্রিয় সাহাবাগণ। আজকের প্রেক্ষাপটে যেখানে বিভিন্ন দেশের নামধারী মুসলিম ও অমুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অপমানজনক ও আক্রমণাতœক কথা বলছে, সেখানে আমাদের উচিত তার সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়া। অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশের সারবত্তা তুলে ধরা ও মানুষকে তা মেনে নেয়ার আহবান জানানোই হল মূলতঃ আজকের প্রেক্ষাপটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য করার অর্থ।

১০. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করার আরেকটি উপায় হল তাঁর প্রিয় সাহাবাদেরকে ভালোবাসা ও তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়া, তাদেরকে আমাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ ও তাদের সুন্নাতের অনুসরণ করা: আল কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সাহাবাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন এবং তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন ও তাদের প্রতি তিনি যে সন্তুষ্ট সে ঘোষণাও দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে সাহাবাগণের প্রতি ভালোবাসা পোষণের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা আরো দৃঢ় ও মজবুত হয়।

১১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের প্রচার ও প্রসার করা তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণের অন্যতম একটি উপায়: নিজের জীবনে সুন্নাতকে বাস্তবায়ন না করে এবং সুন্নাতের প্রচার প্রসারের জন্য কোনরূপ চেষ্টা না করে শুধু মৌখিকভাবে তাঁকে ভালোবাসার দাবী করলেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা হয় না- বিষয়টি সবার কাছেই স্পষ্ট। সবচেয়ে বড়কথা, বর্তমানে আমরা যে যামানায় বাস করছি, তা ফিৎনা-ফাসাদে পরিপূর্ণ। এই ফিৎনা-ফাসাদের যুগে যদি আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাতের উপর অটল থাকতে পারি, তবে আমাদের জন্য রয়েছে আরও বিশেষ কিছু নিয়ামত যা অন্য কোন নবী-রাসূলের উম্মতগণ পায়নি। হাদীস শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন- ‘ফিৎনা-ফাসাদের যামানায় আমার উম্মতের যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে (এবং তদনুযায়ী আমল করবে), তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব রয়েছে।’ [মিশকাত শরীফ]।

আজ আমাদের সমাজে যেখানে সুন্নাত ও বিদ‘আতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটেছে, অথবা যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত সুন্নাত থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিংবা তথাকথিত কতিপয় আধুনিক শিক্ষিতরা সুন্নাতের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করছে, সেখানে সত্যিকার সুন্নাতের বিপুল প্রচার ও প্রসার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসার দাবীদারদের উপর এক অপরিহার্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

২৯৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File