লাউ এর তরকারী খান এবং এর দ্বারা চিকিৎসা করুন

লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ১৪ জুন, ২০১৩, ০৮:৫৮:৪৬ রাত













উদ্ভিদের নাম : লাউ

স্থানীয় নাম : লাউ, নাউ, কদু, জাত লাউ

ব্যবহার্য অংশ : ঔষধার্থে ব্যবহার হয় মূল, পত্র, নাল, বীজ ও ফল।

রোপনের সময় : সাধারনতঃ বর্ষার শেষে রোপন করা হয়

উত্তোলনের সময় : রোপনের ৫০/৬০দিনের মধ্যে গাছে ফল ও ফুল আসে।

আবাদী/অনাবাদী/বনজ : সব্জী হিসাবে আবাদ করা হয়।

চাষের ধরণ : মাটিতে মুড়ো বেঁধে বীজ বপন করতে হয়

উদ্ভিদের ধরণ: লতানো গাছ

পরিচিতি: এই গাছটি বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের প্রায় সর্বত্রই নিত্য আহার্যের তরকারী হিসেবে ব্যবহারের জন্য চাষ হয়, ।

লাউ যে একটি পরিচিত খাবার তা আমাদের অজানা নয়। এটকে আমরা অনেকভাই খেয়ে থাকি। যেমন:

= শাক

= তারকারী

= বড়া

= খাটা বা টক করে রান্না করা হয়

= অনেক অঞ্চলে চাউল এর সাথে ঘির পাকায়

= অনেক অঞ্চলে এটিকে চাউলের সাথে জাউ পাকায়

= অনেক অঞ্চলে এটা খিচুরীতে দেয়

= আর কত রকমের তরকারী পাকানো হয় তা লিখে শেষ করা যাবে ন।

= চিংড়ি দিয়ে রান্না

= টাকি বা শোল মাছ দিয়ে রান্না

= ভাজি

= অঞ্চল ভেদে এর ব্যবহার একেক রকম হয়ে থাকে।

ঔষধি গুনাগুন :

১। পিত্তশ্লেষ্মাজনিত জ্বরেঃ- জ্বরের সঙ্গে গায়ে জ্বালা, বমনেচ্ছা বা বমন হতে থাকলে লাউটা ঝলসে নিয়ে নিঙড়ে রস করে (৩/৪ চামচ) তার সঙ্গে আধা চামচ আন্দাজ মধু মিশিয়ে খাওয়ালে গায়ের জ্বালা ও বমন বা বমনেচ্ছা চলে যাবে।

২। চোরা অম্বলঃ- ঢেকুর , তার সঙ্গে আবার কোষ্ঠকাঠিন্য, এক্ষেত্রে ঝলসা পোড়া লাউ এর রস ২/৩ চামচ একটু মধু মিশিয়ে খেলে এই অস্বস্তিকর অবস্থাথেকে রেহাই হয়।

৩। দাহেঃ- কি শীত কি গ্রীষ্ম (সব ঋতুতেই) গায়ে হাত দিলেই গরম বোধ হয়, এ ক্ষেত্রে ঐভাবে তৈরী করে ২/৩ চামচ রস কিছুদিন খেলে ওটা স্বাভাবিক হবে।

৪। অর্শোবিকারেঃ- দাস্ত পরিস্কার না হওয়ার মত, চট্চটে মল নিঃসারন, তার সঙ্গে ২/৪ফোঁটা রক্ত, তারপর অসহ্য টন্টনানি, এর উপর শৌচক্রিয়ার পরেও কিছুটা পিচ্ছিলতা থেকে যায় এ ক্ষেত্রে ঐ ঝলসাপোড়া লাউ এর রস ও চিনি অমোঘ ঔষধ।

৫। যাযাবর পিপাসাঃ এ রোগ আসে শ্রাবণে, যায় কার্তিকের শেষে, এ ক্ষেত্রে লাউ খাওয়ার বিধিনিষেধ না মেনে ঐ ঝলসা পোড়া লাউ এর রসে একটু চিনি মিশিয়ে ১ গ্লাস শরবৎ করে কিছুদিন খেলে এ পিপাসা আর থাকবে না।

৬। পিত্তশ্লেষ্মা বিকারেঃ- হলুদ না মেখেও গেঞ্জিতে বগলের নিচের অংশটাই হলুদের ছোপ পড়ে, গায়ের দুর্গন্ধের জন্য নিজেরই অস্বস্তি বোধ হয়। সে ক্ষেত্রে এই ঝলসা পোড়া লাউ এর রস একটু মধু মিশিয়ে খাওয়া আর শুধু ঐ রসটা স্নানের কিছুক্ষন পূর্বে গায়ে লাগানো। এর দ্বারাই ঐ দোষটা নষ্ট হয়।

৭। ন্যাবার লক্ষণ সবে দেখা দিয়েছেঃ- এ ক্ষেত্রে লাউ আর তার পাতা ঝলসানো রস ৫/৬দিন খাওয়ালেই ওটা রুখে দেবে।

৮। বিদগ্ধাজীর্নে;- এ রোগের লক্ষন সকালের দিকে মুখ তেতো (তিক্ত) হওয়া, দাঁত অপরিস্কার থাকা অর্থাৎ দাঁতে ছোপধরা এই ক্ষেত্রেও ঐ লাউ পোড়ার শরবত খাওয়া।

৯। গ্রন্থিক মলেতঃ- বৃহৎ অন্ত্রে বুলেটের মত শক্ত মল বেরুতে চায় না, এ ক্ষেত্রে লাউ এর ডাঁটা ছ্যাঁচা রস ৪/৫চামচ একটু জল মিশিয়ে কয়েকটিদন খেতে হয়, এর দ্বারা ঐ অসুবিধেটা দুর হয়।

বাহ্য প্রয়োগঃ-

১০। পায়োরিয়ায়ঃ- ঝলসা-পোড়া লাউ এর রস মুখে নিয়ে খানিকক্ষণ (১০-১৫ মিনিট) বসে থাকতে হয় (যাকে আয়ুর্বেদের পরিভাষায় বলা হয় কবল ধারন করা)। তাপর মুখ ধুয়ে ফেলা, এইভাবে কয়েকদিন করলে ওটা সেরে যাবে।

১১। দূষিত ক্ষতে- ঝলসা-পোড়া লাউ এর রস দিয়ে ধুলে ক্ষতের দোষ অংশটা নষ্ট হয়।

১২। মেচেতায়ঃ- মুখে প্রায় বদ্ধীপ সৃষ্টি হয়ে মুখের জন্য লোক সমাজে বেরুতে কুন্ঠা বোধ হয়, এইক্ষেত্রে এক টুকরো লাউ ঝলসে নিয়ে ঐ জায়গায় ঘষতে হয় রোজ একবার করে। এর দ্বারা কয়েকদিনের মধ্যে ঐ মেচেতার দাগটা আর থাকে না। এ ভিন্ন ছোট ছোট কাল দাগ থাকলেও সেটাও উঠে যায়।

১৩। মুখ লাবণ্যেঃ- সব বয়সেই কার না এটাকে রাখতে ইচ্ছে করে। এর জন্যে এক টুকরো লাউকে নিয়ে রোজ মুখে ঘষতে হয় ঐ সাদা থল্ থলে দিকটা। এর দ্বারা মুখের লাবণ্য ফিরে আসবে।

১৪। সিদ্ধ রোগে (ছূলিতে) ;- এ রোগ নির্মূল হয়ে সারে না সত্যি, তবে অদৃশ্য হয় এই জন্যেই ঝলসা পোড়া লাউ এক টুকরো নিয়ে সেইখানটায় কয়েকদিন ঘষলেই ওটা মোটামুটি তখনকার মত অদৃশ্য হবে। এটাতে অনেকদিন ভাল থাকতেও দেখা যায়।

১৫। ছানিতেঃ চোখে ছানিপড়া সবে শুরু হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে লাউ ফুলের সাদা পাপড়ি অংশটা নিয়ে র’গড়ে এক ফোঁটা রস যে চোখে ছানি পড়া আরম্ভ হয়েছে, সেই চোখে ১দিন অন্তর অ্ন্তর দিলে ছানি পড়া বন্ধ হয়। এটা একটু বেশীদিন প্রয়োগ করতে হয়। তবে লাউ ফুলটাকে অল্প গরম জলে ধুয়ে নেওয়াই উচিত আর প্রথম প্রথম ২ দিন অন্তর অ্ন্তর একদিন ব্যবহার করাটাই ভাল, তারপর ১দিন অন্তর দিতে হবে।

১৬। শ্বেতী রোগেঃ- সবে শুরু ছোট ছোট সাদা দাগ দেখা যাচ্ছে, দেরী না করে রোজ একবার করে ঐ জায়গায় লাউ ফুল র’গড়ে দিতে হয়। এর দ্বারা রেহাই পাওয়া যায়।

সাধারণভাবে শরীরকে কষা থেকে রক্ষার জন্য এবং ঠিকভাবে পায়খান না হলে এর এটা খেলে অত্যন্ত উপকার পাওয়া যায়।

অনুরুপভাবে ঠিকভাবে পেশাব না হলেও এটা খেলে ফল পাওয়া যায়।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুস্থ্য রাখুন। আমীন

বিষয়: বিবিধ

৩৯০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File