আম ও এর মাধ্যমে চিকিৎসা

লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ১০ জুন, ২০১৩, ১২:৪০:৫০ দুপুর













উদ্ভিদের নাম : আম

স্থানীয় নাম : আম

ব্যবহার্য অংশ : মূল, কান্ড, পাতা, ফল, ফূল, আঠা ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

রোপনের সময় : বর্ষাকাল

উত্তোলনের সময় : শীতের শেষে গাছে মঞ্জুরি আসে । গ্রীষ্মে ফল পাকে।

আবাদী/অনাবাদী/বনজ : আবাদী, অনাবাদী বনজ সব ধরনের হয়ে থাকে।

চাষের ধরণ : বীজ ও কলম থেকে গাছ উৎপন্ন হয়

উদ্ভিদের ধরণ: বড় বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ।

পরিচিতিঃ এই গাছটির পরিচিতি নিষ্প্রয়োজন। গার্হস্থজীবনে এর উপযোগীতা উপলব্ধি করেই একে কৃষি-লক্ষীর পূজায় বা অন্য কোন মাঙ্গলিক কর্মেরও উপচার হিসাবে চিহ্নিত করা আছে। প্রাচীন বোটানীতে তার বহু পর্যায়েও নামকরণ করা হয়েছে

আম যে সুস্বাদু একটি ফল এটি কারো অজানা নয়। আমের মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত একটি করে আম না খেলেই নয়।

কাচা আম কুচি কুচি করে কেটে শুকনা মরিচ দিয়ে মেখে দুপুর বেলায় গাছের নিজে বসে বন্ধুদের সাথে মুখ টক করাটা যে কত আনন্দ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পাকা আমের জোসের মজা কেমন তা তো বলার দরকার নেই, তবে কাচা আমের জোসও যে মজার তা সকলেই জানে।

আমের আচার খাননি এমন লোক পাওয়া যাবে না, একথা বলা যাবে না।

তবে এবার আসা যাক আম দ্বারা আমরা কি কি রোগের উপকার পেতে পারি।

রোগ প্রতিকারে

১। আমাশয়ঃ- কচি আমপাতা ও জামপাতার রস (২/৩ চা চামচ) একটু গরম করে খেলে আমাশা সারে।

২। দাহ ও বমি ভাবে: যাঁদের শরীরে দাহ বেশী এবং বমি বমি ভাব প্রায়ই ঘটে, তাঁরা আমমপাতা (৩। ৪টি) জলে সিদ্ধ করে সেই জলটাকে সমস্ত দিনে একটু একটু করে খেলে দাহ ও বমির ভাবটা চলে যাবে।

৩। অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ায়ঃ- আমরমপাতা (কচি হলে ভাল হয়) চিবিয়ে তা দিয়ে দাঁত মাজলে অকালে দাঁত নড়েও না, পড়েও না। (ওড়িশায় এখনো বাসি বিয়ের দিনে আমপাতা দিয়ে বরের দাঁত মাজাটা রীতি ঐতিহ্য।

৪। পোড়া ঘায়ে (দগ্ধ ব্রণে)ঃ আগুনে পুড়ে গিযে ঘা হলে আমপাতার পোড়া ছাই (মুষাবদ্ধাবস্তায় পোড়াতে হবে), অর্থাৎ পাত্রের মুখ লেপে শুকিয়ে পোড়াতে হবে, সেটা কালো হবে) ঘিয়ে মিশিয়ে লাগালে পোড়া ঘা শুকিয়ে যায়।

৫। পা ফাটায়ঃ- যাঁদের পা (গোড়ালির অংশ) ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তাঁদের ফাটা আরম্ভ হলে প্রথম থেকেই ঐ ফাটায় আমগাছের আঠা লাগালে আর বাড়েনা; তবে আমেরআঠার সঙ্গে কিছু ধুনোর গুঁড়ো মিশিয়ে দিলে আরও ভাল হয়।

৬। নখকুনিতেঃ- যাঁরা নখকুনিতে কষ্ট পান, তাঁরাও আম গাছের নরম আঠার সঙ্গে একটু ধুনোর গুড়া মিশিয়ে নখের কোণে টিপে দিলে এ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৭। কেশপতনেঃ- আমের কুশি (কচি আমের আঁঠির শাঁস) থেঁতো জলে ভিজিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই জল শুষ্ক চুলের গোড়ায় লাগালে কেশপতন (চুল উঠে যাওয়া) উল্যেখযোগ্যভাবে কমে যায় ও ঐ সময় মাথায় তৈল ব্যবহার না করাই ভাল।

৮। অকালপক্কতাঃ- থেঁতো করা আমের কুশি ৫/৬ গ্রাম ও শুকনো আমলকী ২/৩ টুকরো একসঙ্গে ১০/১২ চা চামচ নিয়ে লোহার পাত্রে জলে ভিজিয়ে সেটা ছেঁকে নিয়ে চুলে লাগালে অকালপক্কতা রোধ করে।

৯। খুস্কিতে- আমের কুশি ও হরীতকী একসঙ্গে দুধে বেটে মাথায় লাগালে খুস্কি কমে যাবেই; তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে উচিত ওটাকে ছেঁকে নিয়ে মাথায় লগানো।

১০। রক্ত পড়াতেঃ- আঁঠির শাঁসের রসের বা গুড়োর নস্যি নিলে নাক দিয়ে রক্তপড়া বন্ধ হয়। তবে ব্লাডপ্রেসারের রক্তপড়া বন্ধ করা সমীচীন নয়।

১১। প্রদরেঃ- বীজের শাঁসের গুঁড়ো ১০/১২ গ্রেণ মাত্রায় জল দিয়ে খেল শ্বেতপ্রদর কমে যায়। আমের ফুল(মুকুল) চায়ের মত করে পান করলে প্রদর সারে।

১২। রক্ত আমাশয়-আমগাছের ছালের রস ১/২ চা চামচ মাত্রায় আধ পোয়া দুধে (ছাগলের দুধ হলে ভাল হয়) মিশিয়ে খেলে রক্ত-আমাশা সেরে যায়। তবে এর সঙ্গে একটু চিনি, না হয় মধু মিশিয়ে খেলে ভালো হয়।

১৩। অতিসারেঃ- আমগাছের ছালের উপরের স্তরটা চেঁছে ফেলে দিয়ে সেই ছাল গো-দধিতে বেটে খেলে পেট গুড়্ গুড়্ শব্দ ও পাতলা দাস- বন্ধ হয় এবং সেজন্য চালধোয়া জলের সঙ্গে খেলে পক্কাতিসারের উপশম হয়।

১৪। রক্তপিত্তে (হেমোপ্টোসিসে)- এ রোগীর পক্ষে খুব মিষ্টি পাকা আম ঔষধি ও পথ্যরূপে ব্যবহার করতে হয়।

১৫। প্লীহাবৃদ্ধিতেঃ- পাকা আমের (মিষ্টি) রস ৭/৮ চা চামচ মাত্রায় ২-১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে প্লীহাবৃদ্ধি ও তজ্জনিত উপসর্গের উপশম হয়। তবে বায়ুপ্রধান প্লীহা রোগেই ব্যবহার্য।

১৬। অজীর্ণেঃ- অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার জন্য অজীর্ণ হলে সেজন্য কাঁচা আম সেব্য। অতিরিক্ত মাংস ভোজনে অজীর্ণ হলে আমের আঁঠির শ্বাস সেব্য।

১৭। পাঁচড়ায়ঃ- আমের আঠা লেবুর রস অথবা তৈলে মিশিয়ে পাঁচড়ায় ব্যবহার্য।

১৮। উদারময়েঃ- আমবীজের শাঁসের ক্বাথ আদার রস সহ সেব্য।

১৯। বহুমুত্রেঃ- আমের নতুন পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে ব্যবহার করলে বহুমুত্র প্রশমিত হয়।

২০। গল্যব্যথায়ঃ- আমপাতার ধোঁয়া গলা-বেদনা নিবারিত করে।  

আরো জানুন, আপনার পরিচিত প্রবিন লোকদের নিকট থেকে বিশেষ করে দাদীদের নিকট থেকে। কেননা তারা এর সাথে পরিচিত এবং এর দ্বারা তারা অনেক চিকিৎসা করেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন।

আল্লাহ আপনাদের এবং আমাদের সবাইকে সুস্থ্য জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন। আমীন

বিষয়: বিবিধ

৮৯৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File