বাঁধাকপি আপনার সাস্থ্যে পরম বন্ধু

লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ০৭ জুন, ২০১৩, ১২:১০:২২ রাত



বাঁধাকপি শীতের সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ভিটামিন সি ও কে-সমৃদ্ধ। বাঁধাকপির ভেতরের আবরণের তুলনায় বাইরের সবুজ আবরণে প্রচুর মিনারেলস রয়েছে। এই সবজি রান্না করে এবং কাঁচা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়।

পুষ্টিতথ্য

বাঁধাকপি কম খাদ্যশক্তিসম্পন্ন সবজি। ১ কাপ (৭০ গ্রাম) বাঁধাকপি থেকে ১৭.৫০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে মলিবডেনাম, ভিটামিন কে, ফলেট, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং খাদ্যআঁশ রয়েছে।

স্বাস্থ্যতথ্য

* বাঁধাকপিতে সালফোরাফেন নামক এক প্রকার উপাদান রয়েছে, যা শরীরে আন্টিঅঙ্েিডন্টের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।

* এই সবজির ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট শরীরের কোষ ধ্বংসকারী উপাদান তৈরিতে বাধা দেয়।

* গবেষণায় দেখা গেছে, এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

* এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।

* বাঁধাকপি পুড়ে যাওয়াসহ শরীরের অন্যান্য ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।

* গবেষণায় পাওয়া গেছে, বাঁধাকপিতে বিদ্যমান সিনিগ্রিন নামক উপাদান আইসোথিওকাইনাতে রূপান্তরিত হয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

* অ্যালার্জিজনিত রোগের চিকিৎসায় বাঁধাকপি ব্যবহৃত হয়। এতে হিস্টিডিন নামক উপাদান রয়েছে, যা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে।

* শরীরের ওজন কমাতে বাঁধাকপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঔষধি গুণ

*

বাঁধাকপির রস মাথাব্যথা, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

* এর ভিটামিন সি ত্বককে সুরক্ষা করে।

* বাঁধাকপির রস ত্বকের শুষ্কভাব দূর করে ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল।

সতর্কতা

* বাঁধাকপিতে এমন উপাদান আছে, যা থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বাধা দেয়। তাই যাদের থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা রয়েছে তাদের এই সবজি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

* যাদের বাঁধাকপি খেলে হজমে সমস্যা হয় তাদের এই সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

বাঁধাকপি: পুষ্টির শক্তিঘর

পুষ্টিগুণে এর জুড়ি মেলা ভার। কতভাবেই না খাওয়া যায় একে। কাঁচাও খাওয়া যায়। টাটকা সবজিকে ভাপে সেদ্ধ করে জিরার ফোড়ন ও আলু দিয়ে খেলে ওম! মজা! বাঁধাকপি যে সবজি-পরিবারের সদস্য, এর নাম হলো ক্রুসিফেবা পরিবার বা ব্রাসিকা পরিবার। ব্রাসেলস ও ব্রকোলিও এ পরিবারের। নামকরা একজন পুষ্টিবিদ জনি বাওডেন বাঁধাকপি সম্পর্কে বলেন, পুষ্টি হিতকরী ও ক্যানসাররোধী ক্ষমতার বিচারে বাঁধাকপি হলো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবজি। বাঁধাকপিতে রয়েছে সালফোরাফেনসহ অন্য অনেক ফাইটোকেমিক্যালস। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফাইটোকেমিক্যালগুলো শরীরকে ক্যানসারের জনক ফ্রি রেডিকেলের বিধ্বংসী প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এতে রয়েছে ইনডোল, যা স্ত্রী হরমোন ইস্ট্রোজেনের বিপাকে সহায়ক। বাঁধাকপি হলো ভিটামিন কে ও সির ভালো উত্স। এতে আছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন বিড, ফলেট, ম্যাঙ্গানিজ ও ওমেগা-৩ মেদ-অম্ল। ক্রুসিফেরাস সবজির গন্ধকদ্রব্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, তবে এ সবজিকে বেশি রান্না করলে দুর্গন্ধ হয়। তবে ঠিকভাবে রান্না করলে বাঁধাকপির তরকারির সুবাস মনকে মোহিত করে। বাঁধাকপি রান্নার একটি রেসিপি দিচ্ছি ভয়ে ভয়ে। আমি রাঁধতে জানি না, তবে ভালো খাবার খেতে ভালোবাসি। রেসিপিটা ধার করা বিদেশি বই থেকে, তবে ভালো লাগল, তাই দিলাম।

স্টু করা ডাল ও বাঁধাকপি

এই নম্র ও হূদয়হরা সম্মিলন আপনাদের কাছে একটি তৃপ্তিকর, স্বাদু, প্রধান ডিশ হিসেবে পরিবেশিত হওয়ার যোগ্য। ডালজাতীয় শস্যে রয়েছে প্রচুর ফলেট ও খনিজ মলিবডেনাম; আছে আঁশ, প্রোটিন ও ম্যাঙ্গানিজ। মসুর ডাল হলে ভালো, তবে যেকোনো ডাল হলেও চলবে।

দুই টেবিল-চামচ ভার্জিন জলপাই তেল। একটি মাঝারি পেঁয়াজ, অর্ধেকটি কুচি কুচি করে কাটা, অর্ধেকটি ফালি ফালি করা। তিনটি রসুনের কোয়া পিষে নেবেন।

আধা পাউন্ড ডাল। সাড়ে তিন কাপ পানি। একটি শুকনো মরিচ। ধনেপাতা। লবণ স্বাদমতো।

ছয় আউন্স ছোট আলু, ফালি করা অর্ধ ইঞ্চি পুরু।

এক টেবিল-চামচ জলপাই তেল (সয়াবিন তেলেও করতে পারেন, তবে জলপাই তেল হলে ভালো) সসপ্যানে গরম করবেন, মাঝারি আঁচে। টুকরো করা পেঁয়াজ দেবেন, নাড়বেন, পাঁচ মিনিট মাত্র, সামান্য লাল হবে। এতে দেবেন মসুর ডাল, পানি, মরিচ ও ধনেপাতা। অল্প আঁচে রান্না করুন। এর আগে দুটি রসুনের কোয়া, রসুনবাটা দিয়ে নাড়বেন মিনিটখানেক, গন্ধ বের হবে। এরপর ডাল, পানি, ধনেপাতা দেবেন। আঁচ এবার খুব কমিয়ে দিন, পাত্রটি ঢেকে অল্প আঁচে ভাপে সেদ্ধ করুন ১৫ মিনিট। এক চা-চামচ লবণ ও আলু দিন। এরপর অল্প আঁচে রাখুন আধঘণ্টা, ডাল ও আলু নরম হবে এরই মধ্যে। এরপর গোলমরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতে পারেন।

শীতকালের আবহাওয়া যেমনই হোক, সবজির বাজারের আবহাওয়া কিন্তু একেবারেই আলাদা! কারণ এতসব টাটকা সবজির সমাহার অন্য কোনো ঋতুতে চোখে পড়ে না। এই টাটকা সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। শীতের এই সবজিটি বেশ উচ্চপুষ্টিমানসম্পন্ন। খেতেও সুস্বাদু। খুব সহজেই তা রান্না করা যায়। পরিপাক হতেও সময় লাগে না। বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। ‘ই’-ও আছে প্রচুর পরিমাণে। এ ছাড়া আছে সালফারের মতো খনিজ উপাদান। প্রতি ৩ দশমিক ৫ আউন্স বাঁধাকপিতে থাকে ২৪ ক্যালোরি পুষ্টি। এক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, লেবুর জুস থেকে কাঁচা বাঁধাকপিতে ভিটামিন ‘সি’-এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। কাঁচা বাঁধাকপি পাকস্থলির বর্জ্য পরিষ্কার করে। এ ছাড়া রান্না করা বাঁধাকপি খাদ্যদ্রব্য হজমে বেশ সহায়ক। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য কমাতেও এই সবজি দারুণ কার্যকর। বাঁধাকপি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে এই শীতকালীন সবজি বেশ ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপি মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বাঁধাকপি মানবদেহের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, আলসার নিরাময় এবং দেহের রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি সাধন করে। তাই এই শীতে অন্যান্য সবজির সঙ্গে বাঁধাকপি খেতে পারেন নিয়মিত।

বিষয়: বিবিধ

২৫৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File