বেগুন না, বাগুন বা বহুগুণ বলুন:-

লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ০২ জুন, ২০১৩, ০৮:৫১:২৩ রাত

বাংলাদেশের নিভৃত পল্লী, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর সর্বত্র। এসকল শাক-সবজীর মধ্য থেকে বেগুন অতি সুপরিচিত এবং সহজ লভ্য একটি সব্জি। বাঙ্গালী বেগুনের ভর্তা থেকে শুরু করে কত ভাবে যে বেগুনের ব্যবাহার করে থাকে তা বলা মুশকিল। কিন্তু অনেকেই জানি না এই বেগুনের গুণাগুণ সম্পর্কে। যার কারণে, অনেকে বলেন: যার নেই কোন গুণ তার নাম বেগুন। কিন্তু গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন, এটি শুধু একটি তরকারীই নয় বরং এতে রয়েছে রোগমুক্তিসহ বহু উপকারিতা। তবে আসুন: জলদি এই বেগুনের গুণাগুণগুলো জেনে নেই।

বেগুন বাজারে দু;প্রকার দু রঙের পাওয়া যায়। সাদা ও বেগুনী। বেগুনি বা কালো বেগুনের গুণ অনেক বেশী। বেগুন যত কচি হবে তাতে গুণ তত বেশী থাকবে। এ রকম কচি বেগুন খেলে শরীরের বল বৃদ্ধি পাবে। অত্যধিক বীজ যুক্ত বেগুন বিষের মত ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়।

সংস্কৃত শ্লোকেই আছে:

‘বৃন্তাকং বহু বীজাণাং বিষম্ বৃন্তাক’

অর্থাৎ বেগুন বেশী বীজ যুক্ত হলে বিষ।

বৈজ্ঞানিকদের মতেঃ বেগুনে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন এবং কিছু কিছু লবণ কম বা বেশীমাত্রায় আছে। এতে ভিটামিন এ, বি, সি, ও লোহাও আছে। খাদ্যগুণ ও ভিটামিন বেশী থাকায় এবং দামেও সস্তা হওয়ায় বেগুন নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, নাম বেগুন হলে কি হবে? তাতে কিন্তু অনেক গুণ আছে। বেগুনের এই সব গুণ দেখে এবং বেগুনের তরকারি ও বেগুন পোড়া খেয়ে মুগ্ধ হয়ে একজন বৈদ্য কবি তার ‘ক্ষেম-কুতূহল’ নামক গ্রন্থে বেগুনকে

‘শাক নায়ক’ অর্থাৎ তরকারির মধ্যে প্রধান ভূমিকা, এই উপাধি দিয়েছেন।

বেগুন গুণের আরও অনেক ব্যাখ্যা আছে। সংস্কৃতে আছে: বেগুনের আরও নাম আছে। সংস্কৃতে গোল বেগুনকে বলা হয় বৃত্তফলা। যে বেগুনে শাস বেশী থাকে অর্থাৎ পুরুষ্টু বেগুনকে বলা হয় মাংসফলা। বেগুন অনেক দিন ধরে গাছে থাকে বলে বলা হয় সদাফলা। রাত রোগের পক্ষে উপকারী বলে বেগুনের আর একটি নাম বাতিঙ্গা। বেগুন অনিদ্রা রোগ দূর করে এবং বেগুন খেলে ভালো ঘুম হয় বলে এর আর একটি নাম হল নিদ্রালু।

বৈদ্যরাজ চরকঃ বলেছেন: বেগুনের রসে মধু মিশিয়ে খেলে কফজনিত রোগ দূর হয়।

বিখ্যাত বৈদ্য চক্রদত্ত বলেছেনঃ বেগুন জ্বরঘ্ন সেজন্যে কচি ও শাসালো বেগুন খেলে জ্বর সারে।

বৈদ্য বঙ্গসেন বলেছেনঃ আগের দিন সন্ধ্যাবেলা বেগুন ভালোভাবে সিদ্ধ করে পরের দিন তার শাঁস মধু দিয়ে মেখে খেলে অনিদ্রা দূর হয়। বেগুন একেবারে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই বা ভস্ম গায়ে মাখলে চুলকানি ও চর্মরোগ সারে।

[b]সুস্থ্য থাকতে বেগুন। ১০টি গুণের সমাহার:[/b]

১) কচি বেগুন পুড়িয়ে রোজ সকালে খালি পেটে একটু গুড় মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ার দরুন লিভার বেড়ে যাওয়া কমে যায়।

২) লিভারের দোষের জন্যে যদি চেহারায় হলদেটে ভাব আসে সেটাও ক্রমশ কমে যায়।

৩) যাদের ঘুম ভালো হয় না তারা যদি একটু বেগুন পুড়িয়ে মধু মিশিয়ে সন্ধ্যাবেলা চেটে খান তাহলে তাদের রাত্রে ভালো ঘুম হবে।

৪) বেগুনের তরাকারি, বেগুন পোড়া, বেগুনের স্যুপে, রোজ যদি একটু হিং ও রসুন মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে রায়ুর প্রকোপ কমে।

যদি কারো পেটে বায়ুগোলকের সৃষ্টি হয়ে থাকে সেটাও কমে যায় বা সেরে যায়।

৫) মহিলাদের ঋতু ঠিক মতো না হলে বা কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে তারা যদি শীতকালে নিয়ম করে বেগুনের তরকারি বাজরার রুটি এবং গুড় খান তাহলে উপকার পাবেন। অবশ্য যাদের শরীরে গরমের ধাত বেশী তাদের পক্ষে এটা না খাওয়াই ভালো।

৬) নিয়মিত বেগুন খেলে মূত্রকৃচ্ছ্রতা সারে।

৭) প্রস্রাব পরিস্কার হওয়ায় প্রারম্ভিকা অবস্থার কিডনির ছোট পাথরও গলে গিয়ে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।

৮) মুরগীর ডিমের সাইজের ছোট গোল সাদা বেগুন অশ্বরোগের পক্ষে উপকারী ভূমিকা রাখে।

৯) বেগুনের পুলটিস বাঁধলে ফোঁড়া তারাতাড়ি পেকে যায়।

১০) বেগুনের রস খেলে ধুতুরোর বিষ নেমে যায়।

আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সুস্থ রাখুন। আমীন

বিষয়: বিবিধ

১৮৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File