সোনলী জীবন!!!
লিখেছেন লিখেছেন প্রিন্সিপাল ২৮ মে, ২০১৩, ১২:৩৩:১৩ রাত
আমার পরিচিত এক ব্যক্তির জীবন চিত্র বর্ণনা করছি, যাতে রয়েছে:
জীবন চলার পথের উৎসাহ
তাতে রয়েছে, না পারার কিছুই নেই
প্রতিকুল পরিবেশ বলতে কিছু নেই
অন্ধকারের পর আলো উদ্ভাসিত হয়ই
প্রথম দুই বছর তার ছিল না কোন সার্ট, শুধু গেঞ্জি পরিধান করেই দুই ক্লাস পাস করেছেন।
সর্ব প্রথম তার দুর সম্পর্কীয় এক চাচা তাকে 12 টাকা দিয়ে একটি সার্ট ক্রয় করে দেন।
ক্লাস থ্রিতে উঠার পর বই ক্রয় করার টাকা না থাকায়, ছয় মাস অবধী অন্য ছাত্রে বই থেকে পড়েছে এবং রাতে মাছ মেরে বিক্রি করে বই ক্রয় করে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন।
অন্যের বাড়ীতেও কাজ করেছেন।
অভাবী সংসারে স্কুল থেকে একে প্রায়ই খাবার পেত না। অনেক সময় পানী থেকে শাপলা খেয়েও সময় পাড়ি দিয়েছেন।
সর্ব প্রথম চপ্পল ক্রয় করে ক্লাস ফোরে উঠার পর।
ছেরা লুঙ্গিতে কত সেলাই ছিল তা এখন তার মনে নেই।
সকাল 10টা অবধী খেতে কাজ করে অনেক দিন না খেয়েই স্কুলে গেছেন।
খাতা কিনতে না পারায় হাতের লেখা দেয়া হয়নি, যার কারণে শিক্ষকের হাতের কত মার খেয়েছেন তা তার মনে নেই।
স্কুলে গিয়ে কত ছাত্রের মুখেই না অপমান হয়েছেন।
কেউ বলত: অন্যের বাড়ীর চাকর।
কেউ বলত: মাছ বিক্রেতা।
কেউ বলত: পেটে ভাত জোটেনা আবার লেখা-পড়া।
কেউ বলত: দলদের লেখা-পড়া হতে পারে, তবে তোমার না।
কেউ বলত: বই কিনতে পারে না, কি লেখা-পড়া করবে।
আবার ধনীর দোলালরা অকারনেই তাকে মারত।
এস এস সি পরীক্ষার বই ও গাইড ক্রয় করতে না পেরে, তার বন্ধুর বই পড়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
কলেজে পড়ার দিনগুলি ছিল তার জন্য আরো বেহাল দশা।
শহরে প্রায় পাচ কিলোমিটার দূরে হেটে গিয়ে ক্লাস করতেন।
টিউশনী করে জীবন যাপন করতেন এবং তার উপর নির্ভর করত তার লেখা-পড়ার খরচ।
কত ঈদ অতিবাহিত হয়েছে, যাতে বাড়ীতে যাওয়া হয়নি, গাড়ী ভাড়া না থাকার কারনে।
কত দিন অতিবাহিত হয়েছে, শুধু এক টাকার একটি শশা, বা এক টাকার একটি গাজর খেয়ে।
কত রাত অতিবাহিত হয়েছে না খেয়ে।
কত শীলকাল অতিবাহিত হয়েছে শুধু একটি চাদর দ্বারা যা লেপ বা কম্বল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ডাষ্টবিন থেকে সেন্ডেল কুড়িয়ে নিয়ে তার দ্বারা মেরামত করে পায়ে পড়েছেন।
ফাইনাল পরীক্ষার সময় হাতে একটি টাকাও নেই, যার দ্বারা কলম কিনবেন বা পেট জামিন দিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবেন। তবে আল্লাহ চালিয়ে নিয়েছেন।
বর্তমান তার অবস্থা:
বর্তমানে তিনি ভাল বেতনে চাকুরী করেন।
অতি সম্মানি চাকুরী।
বিদেশে গেছেন চাকুরীর কাজে কয়েকবার।
অতি বিনয়ী, নামাযী ও নম্রতার জন্য সবার প্রিয়পাত্র।
তার ভাইদের যে কোন অসুবিধায় সহযোগিতা করেন। যেমন তাদের জন্য ডাক্তার ঠিক করে দিয়েছেন, যার নিকট তার ভাইদের সকল সদস্যই চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এমনকি তাদের কারো চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও তার খরচেই হয়ে থাকে।
ভাইদের বিবাহের খরচ এমনকি ভাইদের শশুর বাড়ীতে যাওয়ার খরচও দিয়ে থাকেন।
পিতা-মাতার চাওয়া পাওয়ার কোন কিছুই অপুরনীয় রাখেনি। তাদের উভয়কেই হজ্জ করিয়েছেন।
আরো চার ভাইকে হজ্জ করাবেন বলে ওয়াদা করেছেন।
ভাইদের বাচ্চাদের লেখা-পড়ায় সহযোগিতা এবং তাদের বিবাহের খরচ এমনকি প্রায় সকল ভাতজার আকীকার খরচও বহন করেছেন।
আত্মীয়দের মাঝে গরীবদের কাউকেই সহযোগিতা করা বাদ দেননি।
আদরের দোলাল বন্ধুদেরকেও সহযোগিতা করাও বাদ দেননি। এমনকি একজনকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ব্যবসায় নামিয়েছেন।
তার সাথে পড়ত এমন একজন যে নাকি পঙ্গু হয়েছে, তার চলাফেরার জন্য কৃতিম পা ও চলার মত অর্থও দিয়েছেন।
তার নিকট সাহায্যের আবেদন করে কেউ খালি হাতে ফিরেছে বলে আমার জানা নেই।
আল্লাহ তায়ালা তাকে তার দ্বীনের উপর অটুট রাখুন এবং তার সম্মানকে দুনিয়া ও আখেরাতে বাড়িয়ে দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন