রমজানের পর করণীয়

লিখেছেন লিখেছেন কবিতা ১৪ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১৯:১৬ রাত

কুরআনের মাস, তাকওয়ার মাস, ধৈর্যের মাস, জিহাদ, রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস রমজান আমাদের থেকে বিদায় হয়েছে।

কিন্তু আমাদের একটি বিষয় খুব ভাল করে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, এগুলো শুধু রমজানের সঙ্গে খাস নয়, বরং প্রত্যেক দিন, প্রতিটি সময়ই আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত পাওয়া যেতে পারে। প্রতিটি মুহূর্তেই তাকওয়া অর্জন ও কুরআনের আদর্শে আদর্শবান হওয়া প্রয়োজন। তবে রমজান মাসে নেকির পরিমাণ খুব বৃদ্ধি করা হয়, নেকি ও এবাদতের সংখ্যা এতে বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

তোমার রব যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন এবং যা ইচ্ছা নিজের জন্য তিনি মনোনিত করেন। (কাসাস : ৬৭)

আমরা কি রমজানে সব ধরণের জিহাদের উপর নিজেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি?! আমরা কি আমাদের নফস ও প্রবৃত্তির সঙ্গে জিহাদ করে তাদের উপর জয়ী হতে পেরেছি, না পূর্বের বদঅভ্যাস এখনো আমাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে? আমরা কি রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস পেয়ে আমলের দিকে অগ্রগামী হতে পেরেছি?

আমরা কি পেরেছি? পেরেছি আমরা?

এ রকম অনেক অনেক প্রশ্ন ও ভাবনা প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে উকিঁ দেয় এবং সে দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বলে :

আমি রমজান থেকে কি উপকৃত হলাম ?!

নিশ্চয় রমজান একটি রূহানী মাদরাসা। পরবর্তী বছরের জন্য সম্বল অর্জন করার মাদরাসা, অবশিষ্ট্য জীবনের জন্য প্রেরণা সঞ্চয় করার মাদরাসা। যখন সে এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করবে, ভাববে তখন সে উপকৃত হবে, নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।

নিশ্চয় রমজান পরিবর্তন হওয়ার মাদরাসা। আমরা এতে আমাদের আমল, চরিত্র, অভ্যাস ও আল্লাহর বিধান বিরোধী আখলাক বদলে দেব। আল্লাহ তাআলা বলেন,

আল্লাহ কোন জাতির পরিবর্তণ ঘটান না, যতক্ষণ না তারা তাদের নিজের পরিবর্তন ঘটায়। (রাদ : ১১)

আপনি যদি রমজানে তাকওয়া অর্জন করে থাকেন এবং যথাযথ রমজানের হক আদায়কারী একজন ভাগ্যবান হয়ে থাকেন, তবে আপনি সে নারীর মত হবেন না, যে সূতো মজবুত করে পাকানোর পর তা টুকরো টুকরো করে ফেলে। আপনি আপনার এ অর্জন ভূলিণ্ঠিত করবেন না। যে রমজানের পর গুনায় ফিরে গেল সে ঐ নারীর মত, যে কাপড় বুনে তা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। খুবই খারাপ জাতি তারা, যারা রমজান ছাড়া আল্লাহকে চিনে না।

রমজানের ওয়াদা ভঙ্গের অনেক আলামত রয়েছে : উদাহরণত :

১. রমজানের পর প্রথম দিনেই জামাতের সঙ্গে সালাত ত্যাগ করা। রমজানে তারাবির সালাতে মসজিদ ভরে যেত, অথচ তা ছিল সুন্নত। এখন ফরজ সালাতের সময় লক্ষ্য করছি লোকজন মসজিদে আসা ত্যাগ করে দিয়েছে, অথচ তা ফরজ, এর ত্যাগকারী কাফের।

২. গান-বাদ্য, অশ্লীল ছবি ও নগ্ন দেহে ঘর থেকে বের হওয়া এবং নারী-পুরুষ এক সঙ্গে বিনোদন ও অশ্লীল স্পটে জমায়েত হওয়া ইত্যাদি।

৩. অনেকে আবার শুধু গুনা করার জন্য টুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করে। বিভিন্ন অমুসলিম দেশে সফর করে। এভাবেই কি আমরা আল্লাহর নিআমতের শুকরিয়া আদায় করব?! এটা কি আল্লাহর নিআমতের সঙ্গে না শুকরি নয়? এটা কি আমল কবুল হওয়ার আলামত?

না, এটা আমল কবুল হওয়ার আলামত নয়। আমল কবুল হওয়ার আলামত হল, বান্দার অবস্থা আগের চেয়ে ভাল হয়ে যাবে। সে আগের তুলনায় আরো বেশি কল্যাণ মূলক কাজে আগ্রহী হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

তোমার রব ঘোষণা দিয়েছেন যে, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, আমি তোমাদের বৃদ্ধি করে দেব। (ইবরাহিম : ৭)

বান্দার উপর ওয়াজিব সব সময় ও সব জায়গায় আল্লাহর এবাদতে নিমগ্ন থাকা। কী রমজান কী গায়রে রমজান সব সময় তার এবাদত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

তোমাকে যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তুমি সেভাবে অটল থাক এবং তোমার সঙ্গে যারা তওবা করেছে। (হুদ : ১১২)

অন্যত্র বলেন,তার নিকট অবিচল থাক এবং তার নিকট ইস্তেগফার কর। (ফুসসিলাত : ৬)

রাসূল সা. বলেন,

বল, আমি আল্লাহ উপর ঈমান এনেছি। অতঃপর তুমি অটল থাক। (মুসলিম)

যদি আমাদের থেকে রমজানের রোজা বিদায় নেয়, তবুও আমাদের সামনে অন্যান্য রোজা বিদ্যমান রয়েছে। যেমন শাওয়ালের রোজা, সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা এবং প্রতি মাসের ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখের রোজা, আশুরা ও আরাফা ইত্যাদির রোজা।

আরো অনেক কল্যাণমূলক কাজ রয়েছে, যা রমজানের সঙ্গে খাস নয়, যেমন ফরজ জাকাত, নফল সদকা, জিহাদ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি।

এভাবে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর এবাদতে অটল থাকা। আর এভাবেই আল্লাহর সাক্ষাত প্রত্যাশা করা। আমরা বলতে পারি না, কখন আমাদের মৃত্যু চলে আসে।

আমাদের কর্তব্য নেক ও কল্যাণ মূলক আমল করা। আমল কবুল না হওয়ার ভয় ও আমল কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আগামী দিন গুলো অতিবাহিত করা। আমরা আমাদের আমল কবুল হওয়ার আশা পোষণ করব এবং আগামী দিনকে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মানের দিন জ্ঞান করব। জনৈক বুযর্গ কতক লোকদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন : যারা খেলতামাশায় মত্ত ছিল, তিনি তাদের দেখে বলেন : আল্লাহ তোমাদের আমল কবুল করে থাকলে এটা কোন শুকরিয়া আদায়কারীর কাজ হতে পারে না! আর যদি তোমাদের আমল কবুল না করে থাকেন, তবে এটা কোন আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের আমল হতে পারে না।

আফসোস!যদি আমাদেরকে দেখতেন, কি বলতেন তিনি?

বিষয়: বিবিধ

২২৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File