‘বের হলে কাউকে ছাড়বো না’

লিখেছেন লিখেছেন কবিতা ০১ মে, ২০১৩, ০১:৫৭:২৩ দুপুর

লেখাটি হুবুহু মানবজমিন অনলাইন সংখ্যা থেকে নেওয়া- সিরাজুল ইসলাম: পুলিশ সদস্যদেরকেও হুমকি দিচ্ছেন রিমান্ডের আসামি রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। বলছেন, একদিন না একদিন জেল থেকে বের হবো। সেদিন কাউকে ছাড়বো না। যাদের কারণে মায়ের লাশ দেখতে পারলাম না তাদেরকে দেখে নেবো। পুলিশের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, রানা বলেছে- পলাতক থাকা অবস্থায় মা মারা গেছেন। তাকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ভয়ে যেতে পারিনি। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়েও গতকাল সে এসব কথা উচ্চারণ করেছে বলে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন। আদালত রানা এবং আটক পাঁচ গার্মেন্ট মালিকের মূল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশ দিয়েছেন। ওদিকে ১৫ দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে পুলিশকে রানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানায়, এক বন্ধুকে পৌরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সামনে তার মতামত নেয়া হয়। আর প্রকৌশলীবেশী ওই বন্ধুর কারণেই ঘটে ইতিহাসের নৃশংসতম ট্র্যাজেডি। পুলিশ জানায়, রানার বিষয়ে গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আজ-কালের মধ্যে রানা ও গার্মেন্ট মালিকদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূত্র জানায়, কেবল রানা প্লাজার গার্মেন্ট কারখানাগুলোই নয়- সাভারের অন্য গার্মেন্ট কারখানাগুলোর ওপরও নিয়ন্ত্রণ ছিল রানার। জোর করে টাকা না দিয়েই কারখানার ঝুট নিয়ে যেতেন। নানা ধরনের হয়রানি করতেন কারখানা মালিকদের। নাম মাত্র মূল্য দিয়ে কাটা কাপড় নিয়ে যেতেন। ১ লাখ টাকার কাপড়ের দাম দিতেন ২০ হাজার টাকা। ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে বিনামূল্যে তৈরী পোশাক নিয়ে যেতেন। হঠাৎ ফোন করেই বলতেন- আমার ১০০ পিস টি-শার্ট বা ১৫শ’ পিস গেঞ্জি লাগবে। তার ভয়ে পোশাক শিল্পের মালিকরা তটস্থ থাকতেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রানা স্বীকার করেন- ভবনে ফাটল দেখা দেয়ার পর রাজ্জাক নামের এক বন্ধুকে ভবনে ডেকে আনি। তারপর রাজ্জাককে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে পৌরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিই। রাজ্জাক আমার শিখিয়ে দেয়া কথাগুলো গার্মেন্ট মালিকদের বলে। গার্মেন্ট মালিকদের রাজ্জাক জানায়, আমি ভালভাবে ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। কেবল পিলারে সামান্য ফাটল ধরেছে। দেয়ালে আংশিক প্লাস্টার খুলে গেছে। রাজমিস্ত্রি দিয়ে আস্তর করিয়ে নিলে ১০০ বছরে ভবনের কিছু হবে না। রাজ্জাকের ওই আশ্বাসেই গার্মেন্ট মালিকরা কর্মীদেরকে কাজ করাতে বাধ্য করেন। পুলিশের ঢাকা জেলার অতিরিক্ত সুপার বলেন, গার্মেন্ট মালিক ও রানার বক্তব্যের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে পরস্পর বিরোধিতা পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয় যাচাই করতেই তাদের মুখোমুখি করা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই অনেক বিষয় পরিষ্কার হওয়া যাবে। এদিকে রানাকে ফরিদপুরে আশ্রয় দেয়া এবং পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগে আবুল হাসান (৪৩) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব ১-এর সদস্যরা গতকাল সকাল ১১টার দিকে মালিবাগের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে রানার পিতা আবদুল খালেককে ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে মগবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে ২ মামলায় ২০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে এক মামলায় ৭ দিন এবং অন্য মামলায় ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আদালতে তার পক্ষে কোন আইনজীবী না লড়ায় খালেক নিজেই কথা বলেন। এর আগে গত কয়েকদিনে ভবন ধসের ঘটনায় রানা ছাড়াও গার্মেন্ট মালিক, পৌরসভার প্রকৌশলী, রানার পিতা এবং রানার সহকারীসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এদের বেশির ভাগই বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে আছেন। মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে জেলা ডিবি পুলিশের হেফাজতে রিমান্ড চলছে।

বিষয়: বিবিধ

১২২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File