একজন আসল এবং একজন নকল ডাকাত

লিখেছেন লিখেছেন সুমন আখন্দ ০৭ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:১২:০৯ সকাল

খোদ ডাকাতের বাড়িতেই ডাকাতি। ডাকাতি না করলে কি আর সরকারী ব্যাংকে ছোটখাটো চাকরি করে পাঁচ বছরেই পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দালান বানানো যায়! ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার উত্তরখান থানার চাঁনপাড়ায়। দুপুর বারোটা নাগাদ হামলা চালায় সশস্ত্র ডাকাতের একটি দল। বাড়ির কর্তা তখন বাড়িতে ছিলেন না, তিনি ছিলেন মতিঝিলে, তার অফিসে। দিন-দুপুরেই স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যাকে মারধর করে ডাকাতরা, গয়না ও নগদ মিলিয়ে প্রায় দশ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে ছুটা-বুয়ার যোগসাজসেই ডাকাতি হয়েছে। ঘটনার পর হতে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

০২

টাকাগুলো আবার গোনে ইমরান; দশ লাখ হতে আরও হাজার-পঞ্চাশেক লাগবে। পুরোটাই যোগার হয়েছিলো, কিন্তু ‘যন্ত্র’ (রিভলবার) এবং মাইক্রোবাসের ভাড়া এবং বুয়ার কমিশন দিতে গিয়ে এই ঘাটতি পড়ে গেল। হাতে সময় আছে দুই দিন, এর মধ্যেই ব্যবস্থা করতে হবে। শালা বদের বদ, এক নম্বরের খট্টাশ! দশ লাখ বলেছে দশই লাগবে, দশ টাকাও কম নিবে না; তবে চাকরি কনফার্ম। বেকার ইমরান হয়ে যাবে নামকরা একটি ব্যাংকের সিনিয়ার-অফিসার। প্রবেশনারি পিরিয়ডে পঁচিশ, এক বছর পরেই চল্লিশ হাজার টাকা বেতন। আহ, সোনার হরিণ! গার্ল-ফ্রেন্ডের নামটা বসিয়ে বেসুরো গলায় গেয়ে ওঠে—“চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি রুপা শুনছো, এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না—”।

০৩

ফরহাদ (মনে হয় নামটা ভুয়া; একেকবার একেক নাম্বার থেকে কল করে সে, পরিচয়ও ঠিক করে বলে না) সাহেবের প্রথম ফোনটা পায় ইমরান বাছাই পরীক্ষায় টেকার পর। লিখিত এবং মৌখিকে তাকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে এবং নিয়োগপত্র পর্যন্ত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আর এসবের সার্ভিস-চার্জ বাবদ লাগবে বারো লাখ টাকা। তিন কিস্তিতে টাকা দিতে হবে; রিটেনে টেকার পর এক লাখ, ভাইভাতে টেকার পর এক লাখ, এবং জয়েন করার পর দশ লাখ। ফরহাদ নামটা ভুয়া হলেও কাজে ফালতু নয়; এ যাবত কথায় কাজে মিল পেয়েছে ইমরান। রিটেনের আগে তাকে যেসব প্রশ্ন দেয়া হয়েছে তা হুবহু কমন পেয়েছে, ভাইভাতেও পজিটিভ প্রশ্ন করা হয়েছে, কোন আটকাআটকির ব্যাপার ছিলো না। প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছে দুলাভাই, দ্বিতীয় কিস্তির জন্য ধানের জমি বন্দক রেখে মা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পরিবারের সবাই জানে দুই লাখ টাকাতেই চাকরিটা হচ্ছে, বারো লাখের কথা শুনলে তো কেউ তাকে সাহায্য করতো না। সে নিজেও সাহস করতো না, ইমরানকে সাহস যুগিয়েছে আরেক ইমরান। গোপালগঞ্জের ছেলে, কলেজে পড়ার সময় ওর সাথে পরিচয়। ও ছিলো ভয়ংকর ক্যাডার, পলিটিক্স করতো; নামে নামে মিল হওয়াতে মিতা বলে ডাকতো, পরীক্ষার আগের রাতে এসে নোট ফটোকপি করে নিয়ে যেতো। এই ইমরানই সাহস দিলো, ‘শুরু কর, বাকিটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে! তোর তো কপাল ভালো ফোন পেয়েছিস। কতো ফালতু পোলাপান টাকার বোংগা লইয়া বইয়া রইছে মাগার ফোন পায় না’। ভাইভা শেষ হবার পরপরই ইমরান খবর নিতে এলো এবং প্লান করলো, ডাকাতির প্লান!

০৪

মাস্টার্স পাশ করার পর দেড়-বছর ফ্যা-ফ্যা করে এখানে সেখানে কাটিয়েছে। টিউশনীর ফাকে ফাকে প্রজেক্ট বা রিসার্চের ফুট-ফরমায়েশ খেটেছে, একটা পারমানেন্ট জবের জন্য যে যা বলেছে তাই শুনেছে। কিন্তু ব্যাটে-বলে হচ্ছিলো না; মাকে নিয়ে চিন্তা, রুপাকে নিয়ে টেনশন, বয়সও বেড়ে যাচ্ছিল— আজ সব দুশ্চিন্তার চিতা জ্বালানো হলো। আজ দিনটা অন্যরকম।

মিতা-ইমরান পঞ্চাশ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দিয়েছে। শর্ত হচ্ছে ওর বিয়ের সময় ডাবল-টাকার উপহার দিতে হবে। ইমরানও এক কথায় রাজি, এমন বন্ধুর জন্য সবকিছু করা যায়। ক্লিন শেভ, চকচকে জুতো, কালোপ্যান্ট, শাদা ফুলহাতা শার্ট পরার পর ইমরানকে পারফেক্ট সিনিয়ার-অফিসার লাগছে। আজ আর লোকাল বাসে নয়, একটা সিএনজি ভাড়া করে মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায় পৌছায় ইমরান। ফরহাদ সাহেবের সাথে অফিসেই দেখা হলো। বেশ বিমর্ষ মনে হলো, খুব অল্প কথা হলো,

– ইমরানসাহেব আপনার জয়েনিং-লেটার রেডি। হাতে-হাতে নিবেন না আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবো?

– হাতে-হাতেই।

– সার্ভিস-চার্জ রেডি তো?

– জ্বী-জ্বী!

– ওকে, ওয়েটিং-রুমে বসুন!

একটু পরেই এক কাপ কফি এবং বিস্কিট নিয়ে ওয়েটিং-রুমে এলো একজন। ইমরান তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা, স্যারের কি আজকে মুড খারাপ?’ সে বললো, ‘হ! স্যারের বাসায় ডাকাতি হইছে’।

বিষয়: সাহিত্য

৯৯৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

313426
০৭ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:১১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৭ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:১০
254436
সুমন আখন্দ লিখেছেন : ধন্যবাদ
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৫১
254788
সুমন আখন্দ লিখেছেন : লেখকই হবে! Don't Tell Anyone
313448
০৭ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৩
আফরা লিখেছেন : আসল আর নকল ডাকাতে ভরে গিয়েছে দেশ ।
০৭ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:০৮
254434
সুমন আখন্দ লিখেছেন : সুস্থ হয়ে উঠুক সবাই, আমিও যেন সুস্থে থাকি!
313574
০৮ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কে বড় ডাকাত????
০৯ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৫১
254789
সুমন আখন্দ লিখেছেন : লেখকই হবে! Don't Tell Anyone

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File