পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের অভিযোগ অথবা প্রার্থণা

লিখেছেন লিখেছেন সুমন আখন্দ ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ১১:৪২:৩৯ সকাল



হে বিশ্বজগতের স্রষ্টা, প্রভু, প্রতিপালক, দয়াময়, কৃপাময়, অন্তর্যামী, বিচার দিনের স্বামী, সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, অসহায়ের সহায় পরম করুণাময়! আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক অভাগা ছাত্রের অভিভাবক, সাহায্য কামনার জন্য তোমার শাহী দরবারে হাত পেতেছি। আমার দুঃখ-দুর্দশা দেখার কেউ নেই; আমার বঞ্চণার ব্যথা বুঝবার কেউ নেই; অনেককে বলে দেখেছি, কেউ আমার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে না- তাই তোমারই কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি।

হে নিরাশ্রয়ের আশ্রয়! তুমি তো জান- কত কষাঘাত সহ্য করে আমার বেঁচে থাকতে হয়। পেটে ভাত নেই, ঘরে চাল নেই, রোগব্যাধিতে চিকিৎসা নেই, পরণে তালিমারা ছেঁড়া বস্ত্র; তারপরও বড় স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছি। মনের খবর তুমি জান হে অন্তর্যামী! ছেলের কাছ থেকে কিছু পাব, এই আশা করি না। বরং তাকে যেন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আমার মত কষ্ট করতে না হয় এজন্যই লেখাপড়ার লাইন ধরিয়ে দিলাম।

হে জগতপিতা! তোমার অজানা নেই কিছু। কত কায়ক্লেশে ক্ষেত-খামারী করে আমার দিন চলে। ছেলেটা আর দশজনের মত নয়, ওর মাথা ভাল, ও জীবনে অনেক উন্নতি করবে- এই শুনতে শুনতে আমার ভাঙা বুকে আশার নিঃশ্বাস নিতাম। আবার ভয় হত, কারন আমি জানি উর্বর জমিতে আগাছা হয় বেশি। পারতেসাধ্যে ওকে তাই কখনো রোজগারের ধান্দায় পড়তে দেই নি। তোমার অশেষ কৃপায় ছেলেটাও সংসারের দুঃখ-কষ্ট বুঝে, বৃত্তি আর টিউশনির টাকায় নিজের খরচ চালায়, কেবল সেমিষ্টারে ভর্তির সময় টাকা পাঠান লাগে। এতটুকু যোগাতেই আমার যে কি অবস্থা তা তুমি ছাড়া আর কে জানে!

হে ভাগ্যবিধাতা! শিক্ষা শেষ করতে করতে আমার ছেলেও শেষ হয়ে যাচ্ছে! সময় মত ক্লাস, পরীক্ষা, ফল প্রকাশ না হওয়াতে ওর মাঝে এখন হতাশা কাজ করছে। ভার্সিটির মাস্টারেরা ক্লাশের চেয়ে বাইরের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম নিয়া ব্যস্ত থাকেন বেশি, ‘এত কম বেতনে পোষায় না’ বলে ওনারা কনসালটেন্সি অথবা প্রাইভেটে পার্টটাইম লেকচার দেন, এছাড়া রাজনীতির ব্যাপার তো আছেই- রাজনীতি নিয়া প্রায়ই প্যাঁচ লাগে, ছাত্র হলে থাকতে হলে সরকারী দলের সমর্থন করতে হবে, মিছিলে-র‌্যালীতে যেতে হবে, ক্যাডারদের চাপে আন্দোলন করে পরীক্ষা পেছাতে হবে। এতকিছু দেখে ছেলেটা ভাবছে, ওর সাথের প্রাইভেট ভার্সিটির বন্ধুরা পাস করে চাকরী করবে- কিন্তু ওকে সেশনজটের কারনে আটকে থাকতে হবে। ছেলের এ অবস্থার কথা শুনে তোমার চিরদুঃখী গোলাম কেমনে ভাল থাকে বল! ও দয়াল! আমারে তুমি আর পরীক্ষায় ফেলো না, ফেল করার যোগ্যতাও এ অধমের নেই! যারা শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞান নিয়ে রাজনীতি করছেন, ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে এদের অনেকে গ্রামেরই সন্তান, অনেকেরই বাপ-দাদা কৃষক ছিলেন। শিক্ষিত হয়ে, শহরবাসী হয়ে এরা ভাব ধরেন যেন এরা গ্রামের সন্তান নয়, এরা শহরের ঘরজামাই হয়ে থাকতেই পছন্দ করছেন বেশি। ছেলের কাছে শুনেছি, এদের কেউ কেউ বিদেশে ডিগ্রি, ডাবল ডিগ্রির খেপ মেরে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। জামাই-বউ দুইজনের কামাই, খাওনের লোক নাই; কতটাকা আছে তারও হিসাব নাই। বুঝবান এসব লোকেরে তোমার গায়েবী শক্তি দ্বারা হেদায়েত কর!

হে দুর্দিনের কান্ডারী! ছেলেটা বেকার, সোমত্ত মেয়ে দুজনকে নিয়া সমাজে কানাঘুষা(ওদের বিয়ে দিতে হবে!), অসুস্থ বউয়ের চিকিৎসা বন্ধ, অকাল বন্যায় বা অনাবৃষ্টিতে প্রতি বছরই ফসলের ফলন কম, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, ছেলের সেমিষ্টারে ভর্তির ফি বাড়ে- সবই তুমি নীরবে দেখছ। তোমার করুণা ব্যতীত এ চতুর্মূখী অসহায়ত্ব হতে আমার মুক্তি নেই। হে সর্বশক্তিমান! আমার সহ্যশক্তি বাড়িয়ে দাও, মনে সাহস দাও, নিজের মঙ্গল নিজে করার ক্ষমতা দাও! আমার পরিবারটি অকুল অন্ধকারে ডুবতে বসেছে, তোমার নূরের আলো দাও! আমার দিশাহারা, পথহারা ছেলেটাকে সঠিক পথ দেখাও! ও যেন পাস করে নিজের যোগ্যতামত একটা চাকরি পায়, রুটিরুজির এ ব্যবস্থাটুকু তুমি করে দিও হে রিজিকদাতা! আমাদের পাবলিক ভার্সিটিগুলোকে কোমার রহমত দ্বারা হেফাজত কর এবং যথাযথ নিয়ম মেনে চলার তওফিক দান কর; এ প্রতিষ্ঠানগুলোর আসমানী বালা আসমানে উঠায়ে নেও, জমিনী বালা জমিনে দাফন কর! পবিত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা অপবিত্র কাজ করার পায়তারা করছে, নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করছে তাদেরকে তুমি ঈমান দাও! এদের জুলুম, নির্যাতন, ও প্রতারণার হাত হতে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখ!

হে সর্বজ্ঞ, তুমি নিশ্চয়ই অবগত আছ- কত আশ্বাসের কথা শুনিয়ে, ওয়াদা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীরা আমাদের ভোট নিয়ে মসনদে বসেন, এরপর ওনারা সব ভুলে যাবার প্রতিজ্ঞা করেন- আর আমাদের দূর্ভোগ বাড়ান। ওনাদের ছেলেমেয়েরা কেউ এদেশে পড়ে না, আর যদি কেউ ভুলক্রমে পড়েও লাখ লাখ টাকা দিয়ে প্রাইভেট ভার্সিটির সুযোগ নিয়ে ঠিক সময়ে পাস করে বড় বড় চাকরি পেয়ে যায়, তাদের সেশনজটে পড়তে হয় না।

হে খোদা! এই সংসদ ভবন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তর, এনজিও, বাইরের বিশ্ব থেকে আসা কোটি কোটি টাকা কিসের জন্য? কার স্বার্থে? কোন উন্নয়নে? যদি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়ন না হয়, কৃষককূল রক্ষা না পায় তাহলে এসবের কি দরকার? শিক্ষাঙ্গনে নেশা-নৈরাজ্য, দূর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি চলছে হরদম। এ দুরাবস্থার জন্য কারা দায়ী তোমার জানা আছে নিশ্চয়ই। হে বিচারদিনের প্রভু! এ ভন্ড লোকগুলোর বিচারের ভার তোমার উপর! তুমি এসব জ্ঞানপাপীদেরকে কিভাবে শায়েস্তা করবা তুমিই ভাল জান মাবুদ! সরকারকে আমরা ট্যাক্স দেই, আমাদের ট্যাঁক খালি করে মাথায় টাক দিচ্ছে সরকারী প্রশাসন। আর বুকে ছুরি বসাচ্ছে তথাকথিত বুদ্ধিজীবিগণ; এরা শিক্ষক, গবেষক, কলামলেখক, নীতিনির্ধারক বিভিন্ন নাম নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা দেশকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছে। ও মাবুদ, আমরা কি তোমার কাছে এই দুনিয়াদারি চেয়েছিলাম? তোমার অলৌকিক ক্ষমতাবলে সকল মুনাফেকি ও পাপাচার হতে আমাদের সকলকে নিরাপদে রাখ! সকল মুশকিল আসান করে দাও!

হে পরম অভিভাবক! বড় আশা করে তোমার নিকট হাত পেতেছি, খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না! আমার প্রার্থনা তুমি কবুল কর! হে দয়াময় খোদা! তোমার সাহায্য ছাড়া গতি নেই। হে বিশ্বপালক, এ অভাগা অভিভাবকের প্রতি করুনা বর্ষন কর। আমাদের দেশে সৎ, পরোপকারী, নিঃস্বার্থ এবং দয়ালু নেতৃত্ব সৃষ্টি কর, যারা প্রকৃতঅর্থে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে!

হে সর্বশক্তিমান, রক্ষা কর!

বিষয়: বিবিধ

১২৭৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250694
০৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নিজের ভাগ্য নিজের পরিবর্তন না করলে আল্লাহ ও করবেননা। এই শিক্ষক ,কর্মকর্তা আর রাজনিতিবিদদের আমরাই তো সন্মান এর আসনে বসাই। তাদ্রে কাছ থেকে কিইবা আমরা আশা করতে পারি।
০৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
194915
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সহমত

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File