পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের অভিযোগ অথবা প্রার্থণা

লিখেছেন লিখেছেন সুমন আখন্দ ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:০৮:১৮ সকাল



হে আল্লাহ! হে প্রভু, প্রতিপালক, দয়াময়, কৃপাময়, অন্তর্যামী, বিচার দিনের স্বামী, সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা, বিশ্বজগতের স্রষ্টা, অসহায়ের সহায় পরম করুণাময়! আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়রে একজন শিক্ষক, সাহায্য কামনার জন্য তোমার শাহী দরবারে হাত পেতেছি। আমার দুঃখ-দুর্দশা দেখার কেউ নেই; আমার বঞ্চণার ব্যথা বুঝবার কেউ নেই; অনেককে বলে দেখেছি, কেউ আমার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে না- তাই তোমারই কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছি।

হে নিরাশ্রয়ের আশ্রয়! তুমি তো জান--- কত কূট-কৌশল করে আমাকে বেঁচে থাকতে হয়। পকেটে খরচার জল নেই অথচ ছেলেমেয়েদেরকে দেখাতে হয় স্বপ্নের সমুদ্র!

নীতিকথার চাপা

অসুখ হলে নাপা --এইভাবেই চলছে জীবন!

মনের খবর তুমি জান হে অন্তর্যামী! সম্মানের সুতো ধরে পড়ে্ আছি---অথচ আশেপাশের অনেকেই সাইসুই করে উড়ে যাচ্ছে। বৃটিশ-বাংলা হতে বাংলাদেশ হয়েছে ঠিকই কিন্তু মাস্টারদের অবস্থা বদলায় নি-- পন্ডিতমশাইরা কুকুরের এক-ঠ্যাংয়ের খরচের মতো মায়না পেয়ে যাচ্ছে্ এরা যুগ যুগ ধরে। অবস্থা এমন যেন, সব জমিদারশ্রেনীর লোকদেরই এ পেশায় আশা উচিত-- যারা সবেতনে চলতে চায়--- তাদের এ পেশায় আসার দরকার নেই।

হে জগতপিতা! তোমার অজানা নেই কিছু। ভার্সিটির মাস্টারদের ফিটফাট থাকতে হয়, টিপটপ চলতে হয়। ভালো পোশাক পরার, ভালো থাকার, গুছিয়ে চলার চাপ আছে। কিন্তু এগুলো মেটাতে যে অর্থের যোগান দরকার তা নেই। হে আল্লাহ তুমি তো দেখো--- কত কায়ক্লেশে পড়ে আর ক্লাশে পড়িয়ে করে আমার দিন চলে। এক মেয়ে আর বউ নিয়ে আমার ছোট্ট সংসার-- মাঝে মাঝে অসুস্থ মাকে কিছু ওষুধপত্র কিনে দিতে হয়-- কিন্তু এতটুকু যোগাতেই আমার যে কি অবস্থা তা তুমি ছাড়া আর কে জানে!

হে ভাগ্যবিধাতা! ভার্সিটির মাস্টারেরা ক্লাশের চেয়ে বাইরের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম নিয়া ব্যস্ত থাকেন বেশি, ওনারা বাড়তি ইনকামের জন্য কনসালটেন্সি অথবা প্রাইভেটে পার্টটাইম লেকচার দেন--- এমন অভিযোগ আছে, এর সত্যতাও আছে; কিন্তু এছাড়া তো উপায়ও নাই! বাড়িভাড়া বাড়ে, বিদ্যুত বিল বাড়ে, নিত্যপন্যের দাম বাড়ে মাগার মাস্টারদের বেতন বাড়ে না। তাহলে, এরা কিভাবে বাঁচবে!

ও দয়াল! পরীক্ষা দিতে দিতে এর এখন নিতে নিতে টায়ার্ড---আমারে তুমি আর পরীক্ষায় ফেলো না, ফেল করার যোগ্যতাও এ অধমের নেই! যারা শিক্ষাঙ্গন নিয়ে রাজনীতি করছেন, পারিবারিক ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে এদের অনেকেই শিক্ষকের সন্তান, অনেকেরই শিক্ষকভক্তি বেশ। শিক্ষিত হয়ে, শহরবাসী হয়ে এরা ভাব ধরে যেন এরা ওদের সন্তান নয়, এরা কারও ছাত্র ছিলো না কোনকাল। এরা বুঝবান লোক, এসব লোকেরে তোমার গায়েবী শক্তি দ্বারা হেদায়েত কর!

হে সর্বশক্তিমান! শিক্ষককে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষককে বিবেক, কিন্তু ক্ষয় আর অবক্ষয়ের এই যুগে দুটোরই অবস্থা কাহিল! শিক্ষার হার বাড়ছে, মান বাড়ছে না! শিক্ষকসংখ্যা বাড়ছে, শিক্ষকদের গুন বাড়ছে না! কিভাবে বাড়বে বলো? এখন ভার্সিটির ভিসি হয় দলীয় বিবেচনায়। দলীয় ভিসির আনুগত্যে থেকে মাস্টারেরা বরং রাজনৈতিক মাস্টারবেশন করবেন কিন্তু নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একমত হবেন না-- এমনই চলছে অনেকদিন ধরে--- আর এটাকে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে উপরমহলের ইশারায়।

হে দুর্দিনের কান্ডারী! আমার সহ্যশক্তি বাড়িয়ে দাও, মনে সাহস দাও, নিজের মঙ্গল নিজে করার ক্ষমতা দাও! আমার আলোকিত-চিন্তাগুলো অকুল অন্ধকারে ডুবতে বসেছে, তোমার নূরের আলো দাও! আমার দিশাহারা মনটাকে সঠিক পথ দেখাও! আমাদের শিক্ষক সমিতি যেন লেজুরবৃত্তি না করে শিক্ষকদের স্বার্থে কাজ করতে পারে---এ তওফিক তুমি দান কর! শিক্ষকদের রুটিরুজির ব্যবস্থাটুকু তুমি করে দিও হে রিজিকদাতা! আমাদের পাবলিক ভার্সিটিগুলোকে তোমার রহমত দ্বারা হেফাজত কর এবং যথাযথ নিয়ম মেনে চলার তওফিক দান কর; এ প্রতিষ্ঠানগুলোর আসমানী বালা আসমানে উঠায়ে নেও, জমিনী বালা জমিনে দাফন কর! পবিত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা অপবিত্র কাজ করার পায়তারা করছে, নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করছে তাদেরকে তুমি ঈমান দাও! এদের জুলুম, নির্যাতন, ও প্রতারণার হাত হতে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখ!

হে সর্বজ্ঞ, তুমি নিশ্চয়ই অবগত আছ- কত আশ্বাসের কথা শুনিয়ে, ওয়াদা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীরা আমাদের ভোট নিয়ে মসনদে বসেন, এরপর ওনারা সব ভুলে যাবার প্রতিজ্ঞা করেন- আর আমাদের দূর্ভোগ বাড়ান। প্রতিবার প্রাক-বাজেট আলোচনায় শুনি শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হবে---কিন্তু তা আর হয় না! কেন হয় না তুমিই ভালো জানো--- হে খোদা! এই সংসদ ভবন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তর, এনজিও, বাইরের বিশ্ব থেকে আসা কোটি কোটি টাকা কিসের জন্য? কার স্বার্থে? কোন উন্নয়নে? যদি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়ন না হয়, শিক্ষককূল রক্ষা না পায় তাহলে এসবের কি দরকার? শিক্ষাঙ্গনে নেশা-নৈরাজ্য, দূর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি চলছে হরদম। এ দুরাবস্থার জন্য কারা দায়ী তোমার জানা আছে নিশ্চয়ই। হে বিচারদিনের প্রভু! এ ভন্ড লোকগুলোর বিচারের ভার তোমার উপর! তুমি এসব জ্ঞানপাপীদেরকে কিভাবে শায়েস্তা করবা তুমিই ভাল জানো মাবুদ! তোমার অলৌকিক ক্ষমতাবলে সকল মুনাফেকি ও পাপাচার হতে আমাদের সকলকে নিরাপদে রাখ! সকল মুশকিল আসান করে দাও!

হে পরম অভিভাবক! বড় আশা করে তোমার নিকট হাত পেতেছি, খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না! আমার প্রার্থনা তুমি কবুল কর! হে দয়াময় খোদা! তোমার সাহায্য ছাড়া গতি নেই। হে বিশ্বপালক, এ অধমের প্রতি করুনা বর্ষন কর! আমাদের দেশে সৎ, পরোপকারী, নিঃস্বার্থ এবং দয়ালু নেতৃত্ব সৃষ্টি কর! যারা বাবা বা স্বামীর ইমেজ নিয়ে তেজ দেখাবে না-- প্রকৃতঅর্থে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে!

হে সর্বশক্তিমান, রক্ষা কর!

বিষয়: বিবিধ

১০১৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250664
০৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:১১
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : মনের মাধুরী মিশিয়ে চাপা ক্ষোভ যন্ত্রণাগুলি ব্যক্ত করেছেন। প্রকাশ করলে দুঃখ হাল্কা হয়। আপনার মত সকল শিক্ষক যদি এভাবে ভাবত!
250678
০৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:১২
বুড়া মিয়া লিখেছেন : প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থা-তো সত্যিকার শিক্ষিত গড়ার কোন পথ নয়, গড়ে তোলে শ্রেণীবদ্ধ গোলাম! ব্যাপারটা এ যুগে অত্যন্ত স্পষ্ট; কিন্তু এর পরেও কিসের মোহে যেন আমরা গোলামীর পথে-ই দৌড়িয়ে – আশা করি মুক্তি!

আল্লাহ আপনার সহায় হোন, এ দোয়া রইলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File