চলে গেলেন একজন সাস্টিয়ান
লিখেছেন লিখেছেন সুমন আখন্দ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৪:০২ সকাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিষ্ট্রার আব্দুর রশিদ (জন্ম: ০৫ আগস্ট ১৯৭২, মৃত্যু ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৪) আর আমাদের মাঝে নেই। তার জন্য কিছু করার সুযোগ কাউকে না দিয়ে মধ্যদুপুরে অস্তমিত হয়ে গেলেন যেন! বাদাঘাট রোডে একটা জমি ছিল তার, সেটা বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকার জন্য ভার্সিটি গেটে একখন্ড জমি কিনেছিলেন; সেখানেই কাজ করাচ্ছিলেন রাজমিস্ত্রিদের দিয়ে। দিনের কাজ শেষ হয়ে গেছিল বলে মিস্ত্রিরা সব গোছগাছ করে রাখছিলেন, একজন দেখলেন হঠাৎ দাঁড়ান অবস্থা হতে তিনি পরে গেলেন বালুর মধ্যে; সিএনজি ডেকে ধরাধরি করে মিস্ত্রিরাই তাকে রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ্যাম্বুলেন্সে করে ভাবিকে নিয়ে আমি পৌছলাম মিনিট পনের পরে, দুই-আড়াই কিলো রাস্তা মনে হচ্ছিল অনেক দূর। এমার্জেন্সীতে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করলে আমি মনে মনে হোচট খাই, এবং ইসিজি পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার নিশ্চিত করেন, তিনি আর নেই। আর কিছুই কি করার নেই? -এমন প্রশ্ন করলে তিনি সিসিইউ-তে নিয়ে শেষ চেষ্টা করতে বলেন; একজন ওয়ার্ড-বয়কে সাথে নিয়ে ট্রলি ঠেলে ছুটলাম সেখানে, কিন্তু লাভ হল না। ভাবিকে কিছুই বলা যাচ্ছিল না, নিজের শরীরটাকেই খুব ভারি মনে হচ্ছিল। একটু পরে সায়েম এসে আমার সাথে যোগ দেয়, আমি ওকে ফোন করে সবাইকে জানাতে বলি। এ্যাম্বুলেন্স-চালক মনিরকে ফোন করে বলি আমাদের নিয়ে যেতে। ইন্জিনিয়ার জয়নাল ভাইকে পেয়ে যাই, তারপর একে একে আরও সবাই আসেন। আমাদের চুপচাপ-বাড়িটি গমগম করে লোকে, রশিদ ভাইর খুব প্রিয় সব্জি খেত সাফ করে সেখানেই তাকে শেষ-গোছল করানো হয়। এরপর প্রিয় ক্যাম্পাসের হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে জানাজা, এরপর আত্মীয়-পরিজন বেষ্টিত হয়ে রওনা দিলেন নিজের বাড়ি, আর আসবেন না আমাদের মাঝে---
২০০৪ সাল হতে ক্যাম্পাসে তার সাথে পরিচয়। সা্ইফুন থেকে তাওকির ভিলা পর্যন্ত দীর্ঘদিন আমরা পাশাপাশি থেকেছি, মাঝে বছরখানেক আমি সুরমা আ/এ-তে ছিলাম, সে সময়টুকু বাদ দিলে প্রায় নয় বছরের প্রতিবেশী জীবন-যাপনে তিনি একবারও আমার মনোপীড়ার কারন হননি। সদাহাস্য এবং স্বল্পভাষী রশীদ ভাই বেশ পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। নিজের কাজ নিজে করার প্রেরণাটুকু আমি ধরে রেখেছি তাকে দেখে-দেখেই।
ভাল মানুষ নাকি আগে চলে যায়, আঁৎকা চলে যায়। তাই যেন হয়, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করে!
০২।
আউশকান্দি কান্দে
বাসা থেকে আগরবাতি আর কর্পূরের গন্ধ যাচ্ছে না সহজে। বাইরে বের হয়ে দেখি- রশীদ ভাইকে যেখানে গোছল করান হয়েছিল সেখানে একটা চাদর, প্যান্ট, শার্ট পড়ে আছে মাটিতে- এগুলোই তার শেষ পরা কাপড়। যত্ন করে ধুয়ে দিলাম ওগুলো, ধুতে ধুতে চোখ ছলছল করছিল- সবই আছে, ভেতরের মানুষটি নেই! বাসা-বারান্দা-সিঁড়িঘর-সব্জিক্ষেত পুরো বাড়িটি জুড়ে শূন্যতা।
সকাল এগারোটায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন হবার কথা। প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আউশকান্দি যাব। তানিয়া এবং সহজাকেও সাথে নিলাম। ভার্সিটির বাসে করে আমরা সকাল সাড়ে নয়টায় হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। পঞ্চাশ সিটের বাস পুরো ভর্তি- শাবির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই। যাত্রাপথে শুনছিলাম নানা স্মৃতিকথা- রশীদ কিভাবে হাসত- কথা বলত, বাদ গেল না কিছুই।
সময়মতই আমরা পৌছলাম আউশকান্দি; জানাজার জন্য বিশাল জমায়েত, তাতে এলাকার মুরুব্বী, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে মাদ্রাসার ছাত্ররাও যোগ দিয়েছে। শেষবারের মত রশীদভাইয়ের মুখটি দেখলাম, মুখটি যেন একটু নীলচে হয়ে গেছে। গোরখোদকেরা পরমযত্নে যে কবরটি বানিয়েছে তাতে মনে হল আমিই শুয়ে পড়ি, শোয়ানো হল রশীদ ভাইকে- বৃদ্ধ বাবা, বড়ভাই, আত্মীয়-স্বজনের আর্তি শোনা যাচ্ছিল চারপাশে। আমরা মাটি দিলাম- "মিনহা খলাকনাকুম---"
বিষয়: বিবিধ
৯৮৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লিখাটি ভাল লাগলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন