তোমার আকাশটাকে উঁচিয়ে ধরো আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই
লিখেছেন লিখেছেন সুমন আখন্দ ২১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:১৬:২১ সকাল
২০০১ সালের মাঝামাঝি, আমার এক ঢাবিতো (পাড়ায় থাকলে যেহেতু পাড়াতো, ওই হিসেবে!) ছোট বোন রক্তদানের মহৎ-কাজ করবে বলে ইচ্ছে পোষণ করল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বন্ধন' (নাম মনে রাখার ব্যাপারে আমার মেমোরি প্রায়ই বিশ্বাসঘাতকতা করে, এক্ষেত্রেও তেমনটি হলে মাফ করবেন!) নামে একটি স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংগঠন ছিল। প্রথমবার বলে ছোট-বোনটি ভয় পাচ্ছিল, লেখালেখিসূত্র ধরে সে আমার স্বল্পপরিচিত, আমাকে বলল- ভাইয়া আপনার একটু সময় হবে? মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরি-বাকরি খুঁজছি, তখন আমার অনেক সময়; আমি বললাম চলো! সূর্যসেন হলের সংগঠনটি হতে ফোন করা হয়েছিল, সেখান গিয়ে জানলাম, একজন রিক্সাচালক এসেছেন রক্ত খুঁজতে, ওনার স্ত্রীর বাচ্চা হয়েছে এবং অনেক ব্লিডিং হচ্ছে, এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছে, রক্ত দরকার! আমরা দুজন রিক্সাঅলার রিক্সাতে করেই গেলাম, একজন ডোনারের সঙ্গী হতে পেরে গর্বে আমার বুক ফুলে উঠছিল, ছোট-বোনটিরও নিশ্চয়ই একই কন্ডিশন- তাই রিক্সায় ঠাসাঠাসি অবস্থা! যাহোক, কর্তব্যরত ডাক্তার ফর্মালিটি সেরে রক্ত নেয়া শুরু করলেন, হাফ -ব্যাগ ভর্তি হবার পর বেচারীর বমি শুরু হল, চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল, ডাক্তার তাড়াতাড়ি সূঁচ খুলে নিলেন এবং দুঃখের খবরটি জানালেন, এ রক্তে কাজ হবে না- এবং ডোনারের কাছ থেকে আর রক্ত নেয়া যাবে না। আমি সাহসী হবার ভান করে বললাম, তাহলে আমি দেই! ডাক্তার বললেন, আগে গ্রুপ-ম্যাচিং করে দেখতে হবে, দেখা হল, মিলে গেল এবং রক্ত দেয়া গেল। সেটাই আমার প্রথম, এরপর কোয়ান্টাম, রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানীর বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমি ডোনেট করেছি, এছাড়া প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর বিভিন্ন সময়ে আমার বন্ধুর মাকে, সহকর্মীর আত্মীয়াকে, একদমই অপরিচিত রোগীকে আমি ডোনেট করেছি। হিসেবটা পুরোপুরি রাখিনি, তবুও বলি- ত্রিশবারের বেশি হবে আমি রক্তত্যাগের আনন্দ লাভ করেছি। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য আত্মপ্রচার নয়! যারা আমাকে একটু-আধটু চেনেন তারা নিশ্চয়ই এতটুকু জানেন, আমার প্রচার-প্রসার নিয়ে আমি মোটেও উদ্বিগ্ন নই! আসলে রক্ত দেয়ার নেশাতে অন্যরকম মজা, যারা এখনও পড়েন নি তারা বুঝবেন না- আর যেহেতু সায়েন্স এখনও এর বিকল্প আবিস্কার করতে পারে নি, মানুষের রক্ত দিয়েই মানুষের প্রয়োজন মিটাতে হচ্ছে, তাই আনন্দটা অন্যরকম। আজকে আমার আনন্দ অসীমে পৌছাচ্ছে- কারন এই প্রথমবার আমি আমার মাকে রক্ত ডোনেট করতে যাচ্ছি। আমার কেমন একটা অনুভূতি, ঠিক বুঝাতে পারব না- আম্মার বাম-পায়ে কৃত্রিম-হাঁটু স্থাপনের পর হতে প্রচন্ড ব্যথা। গ্লুকোজ বেড়ে গেছে, হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেছে- আমার কেবলই মনে হচ্ছে আমার রক্ত আম্মার শরীরে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। শিকড়ে ফেরার এমন পরম আনন্দ কজনের কপালে জোটে। গর্বে আমার বুক আজ সত্যি সত্যি ফুলে উঠছে!
কে আছো? তোমার আকাশটাকে উঁচিয়ে ধরো
আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই! সবাইকে ধন্যবাদ! কবি হেলাল হাফিজকেও!
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কে আছো? তোমার আকাশটাকে উঁচিয়ে ধরো
আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই!
মন্তব্য করতে লগইন করুন