টোনা-টুনির গল্প শোন-৪
লিখেছেন লিখেছেন সুমন আখন্দ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:৪০:০১ সকাল
টোনা-টুনির গল্প শোন-৪
এক ছিল টোনা আর এক ছিল টুনি। গল্পগুলো সবারই জানা তবু নতুন করে শুনি।
জীবনে প্রথম 'সমাবর্তন-বক্তা' হওয়ার আবেগে থরথর হয়ে টোনা চৌঠা-আসমানে গেলেন, অনেক ভীড়-অনেক গরম তিনি দরদর করে ঘামছিলেন, ভক্তরা 'সর-সর' বলে বাতাস আসার জায়গা করে দিল। এরপর তিনি তরতর করে মঞ্চে উঠলেন, ফুরফুরা মেজাজে বললেন সায়েন্সের কথা, সায়েন্স নিয়ে স্বপ্নের কথা, এ সময় টুনিকে তার আশেপাশে দেখা যায় নি। যাহোক, চৌঠা-আসমান থেকে মাটিতে নামার আগে টোনা নতুন আইডিয়া নিয়ে এলেন! তিনি সৃজনশীল পঙ্খী, তাই সবসময় মাথায় নতুন নতুন আইডিয়া গিজগিজ করে। নিজনিজ আলোচনা সেরে টোনাটুনি মাঠে নামলেন এবং অনুসারীদের বুঝিয়ে দিলেন- 'দিস এ্যন্ড দিস!' অন্ধ-অনুসারীরা শিস দিয়ে উঠল, আর যারা চোখ খুলতে জানত তারা ফিসফিস করল। পুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার কথা শুনে বিচিছাড়া ভিসিসাহেবও চৌঠা-আসমানে উড়তে শুরু করলেন, শুরু হল চিঠির উড়াউড়ি, গুঁবরেপোকাদের দৌড়াদৌড়ি। অবশেষে পুচ্ছ-পদ্ধতি পাস! কেমনে? এমনে এমনে! সজাগ যারা সবাই তারা বাঁশ হাতে দাঁড়িয়ে আছে, পুচ্ছ-পদ্ধতিকে তুচ্ছ করার জন্য এবং পুচ্ছ খসানোর জন্য ঠাসঠাস করে মারতে হবে।
স্থাপত্যবিদ্যায় পৃথিবীর সবচেয়ে অপচয়কারী উদাহরণ হতে পারে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। হোক না রুগ্ন তবু এটিকে নিয়ে টোনাটুনির অনেক স্বপ্ন; যত্ন করে এখানে একটি মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার খোলা হয়েছে- সে আইডিয়া পুরানো হয়ে গেছে। একদিন সকালে টোনার মনে হল গ্রন্থাগারটি ভাল চলছে না- এটার শরীর আছে, প্রাণ নেই- এটি ঠিক কথা বলছে না। কি করা যায়? কি করা যায়? টুনিও চিন্তায় পড়ে হায় হায়! কি উপায়? 'ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়'- নতুন আইডিয়া মাথায় এল, সব বিভাগীয় সেমিনার বন্ধ করে দিলে এবং বইগুলো কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পাঠিয়ে দিলে, ছেলে-মেয়েরা বাধ্য হয়ে ওখানে যাবে- এবং অবশ্যই তেপায়া গ্রন্থাগারটি প্রাণ ফিরে পাবে। 'যেমন ভাবা তেমন কাজ'- প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য টোনা নিজের বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরী বন্ধ করে দিলেন, সব বই কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিলেন। সেইসময়ের ডোন্টমাইন্ড ফ্যামিলির ভিসিসাহেবও টোনাকে রোল-মডেল মানতেন এবং বলতেন, 'আপনারা ওনাকে ফলো করেন!' কিন্তু লাভ হয় নি তেপায়া গ্রন্থাগারটি এখন আগের চেয়েও নিস্প্রাণ! শুধু ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে-মেয়েরা আসলে কিছুদিন এটি প্রাণ পায়, বাকি সময় মরে থাকে!
টোনা-টুনি ফেল মেরেছেন অনেক বিষয়ে- নামকরণ আন্দোলন, মাদ্রাসাছাত্র ভর্তি রহিতকরণ, ভাস্কর্য নামে মূর্তি স্থাপন ইত্যাদি ইত্যাদি। পুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষাও এই লিস্টে যোগ হবে মনে হয়। 'মুখস্থ-কে না বলুন' -এই স্লোগান নিয়ে চলছে টোনাটুনির নতুন প্রজেক্ট! নিজেরা নিজের বিরুদ্ধে কিভাবে দাঁড়ান- সেটাই এখন দেখার বিষয়! এতদিন টোনাটুনিকে যারা সাপোর্ট দিত, তারা এখন পোর্ট বদলে ফেলেছে। তাই টোনা সাদাসিধে কথা বাদ দিয়ে এখন খোলা চিঠি লেখেন। প্রথম আলুর সাথে ছাড়াছাড়ি, বাড়াবাড়ি নতুন আইডিয়ার - তবু অনেকের কাছে তিনি মাই ডিয়ার! তা থাকুন, সুরমাপারে দাড়িয়ে, কিন ব্রীজের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, সাপের বাচ্চা সাপ হয়- কিন্তু সাপের ছবি সাপ হয় না। সো কিসের ভয়?
টোনা-টুনি উড়াল দিল
আমার গল্প ফুরিয়ে গেল--
বিষয়: বিবিধ
১৪১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন