থেকে যাওয়াই সত্য, আসা-যাওয়া সত্য নয়

লিখেছেন লিখেছেন সুমন আখন্দ ১৭ জুলাই, ২০১৩, ১১:০৭:০৯ সকাল



নরোম ঘাসে শুলে শরীরে আরাম বোধ হয়, কিন্তু যদি তাতে জোঁকের ভয় থাকে তাহলে আরাম মুহূর্তেই ব্যারামে রূপান্তরিত হয়। তেমনি করে জ্ঞানচর্চার যে স্নিগ্ধশিক্ষাঙ্গনে আমরা অভিন্ন উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছি সেখানে রাজনীতি হলে, রাজনীতির নামে স্বার্থচর্চা হলে ভয় বাড়বে- আর ভয়জাগানিয়া কোন জায়গা নিশ্চয়ই কারো জন্য নিরাপদ নয়। এজন্যই আমরা চাই স্বর্গনিকেতন। আমরা শাবিপ্রবির সবুজ ক্যাম্পাসে নাগকেশর হয়ে, কদম হয়ে, জারুল বা সোনালু হয়ে, দেবদারুর মতো সটান, অর্জুনের মত উপশমকারী অথবা ঝাউগাছের মতো নিবিড় হয়ে থেকে যেতে চাই!

এই আসা

কচি ধানের শীষ দেখলে কৃষকের চোখ যেমন আনন্দে চঞ্চল হয়ে ওঠে বিভাগে নবীন শিক্ষার্থীদের দেখেও আমি আবেগমথিত হই। আসলে এই আবেগই আমাদের বেগ দিবে, পৌছে দিবে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের স্বর্ণদ্বীপে। যাদের চোখেমুখে নরোম রোদের মতো বুদ্ধির ঝিলিক সেইসব নবীনযাত্রীদের বলি, ‘আমি শিখেছি/আমি পেরেছি’- এই ভেবে গরিমা করা ভুল; বরং এই ভেবে লজ্জিত হওয়া ভালো যে, ‘ইশ! আমি এতদিন জানতাম না/এতদিন পারি নি, আরও কত অজানা রয়ে গেছে’। খেয়াল রাখতে হবে, জ্ঞানলাভের লোভে যেন জ্ঞানপাপী না হই; জ্ঞানশিক্ষা যেন আমাদের নম্র করে, ভদ্র হিসেবে গড়ে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত এই ধারণা ধারণ করতে পারলে সাফল্য আসবেই। শিক্ষার্থীরা সবসময় শিক্ষকদের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। মূলতঃ এদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটাবার জন্যই তিনি গবেষণা করার অথবা নতুন কিছু পড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কার লেখায় যেন পড়েছিলাম, জ্ঞানীমাত্রই স্বশিক্ষিত। আমিও বিশ্বাস করি, কেউ কাউকে কিছু শেখাতে পারে না। যদি কেউ নিজে সাধনা না করে- জ্ঞানের আলো তার ভেতরে জ্বলবে না, জোর করে হয়তো জ্বালান যেতে পারে কিন্তু তা স্থায়ী হবে না। আমি এটাও বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর ভেতরে পৌছুতে পারেন সামান্যই। উদাহরণ দিয়ে বললে বলা যেতে পারে- ঝিনুকের ভেতরে বালুকণার মতো এ প্রবেশ; এরপর মুক্তো বানানোর পুরো পরিশ্রমটি করতে হয় শিক্ষার্থীকেই। তাই, যদি কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো ফল করে তার সুনাম শুধু নিজেরই প্রাপ্য- এখানে আর কারও ভাগ নেই।

এবং এই যাওয়া

আমেরিকা আবিস্কারের প্রাক্কালে তীর থেকে ভেসে আসা একটি ডাল দেখে কলম্বাসের যে আনন্দ হয়েছিল; বিদায়ী ব্যাচের পাশে বসে আমার আনন্দটাও সেরকম হয়, ‘আমরা পৌছেছি অবশেষে’। অবশ্যই অনেক অপাওয়া-অপ্রাপ্তি ছিল তা মনে রেখে বিদায়বেলায় মনে দুঃখ পুষে লাভ নেই। ভোর পেরিয়ে, সকাল গড়িয়ে যাদের চোখেমুখে আজ দারুন-দুপুর সেইসব বিদায়ীদেরকে বলি, ফল পাকলে গাছ আপনাআপনি ডাল নুইয়ে দেয়, যেন তা মানুষের নাগালে আসে। বাঁশের কোরল সব ছেড়েফুঁড়ে আকাশ ছুঁতে চাইলেও পরিপক্ক হয়ে আবার এটি মাটিবর্তী হয়। গরীব দেশ/রাষ্ট্র খরচের মুষ্টিচাল বাঁচিয়ে যা পেরেছে তা দিয়েছে- এখন তোমার দিবার পালা, শোধ করার মানসিকতায় নয় বরং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাধ্যানুযায়ী অবদান রাখতে হবে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ শুনে লাভ নেই। আমরা সেই এক ঘোড়ার মালিক এবং তার পরিবারের গল্পটি জানি। স্ত্রী-বাচ্চাসহ যখন সে সওয়ারী হয়েছে লোকে বলেছে, বোবা প্রাণীর ওপর জুলুম করা হচ্ছে। যখন সে স্ত্রী ও বাচ্চাকে সওয়ারী করে হেঁটেছে লোকে হেসেছে, হেসে হেসে বলেছে- ‘ঐ স্ত্রৈণ যায়’। এমনিভাবে যখন স্ত্রী হেঁটেছে, লোকে বলেছে- ‘ব্যাটা নারীবিদ্বেষী’। যখন বাচ্চা হেঁটেছে লোকে বলেছে, ‘হায় কলিকাল! কালে কালে কত কী যে দেখতে হবে’। সুতরাং কে কি মনে করলো তা ভেবে সময় নষ্ট না করে, নিজের বুদ্ধি-বিবেচনায় এগিয়ে যাও! কে জানে, হয়তো তুমিই হবে নতুন কোন মিছিলের মুখ। আমরা সেখানে স্লোগান দেবার জন্য মুখিয়ে থাকলাম। সহোদরের সাফল্য ঈর্ষাবোধ তৈরি করতে পারে, সহকর্মীর কাছ থেকে পিছিয়ে পড়তে খারাপ লাগে- কিন্তু শিক্ষার্থীর কাছে হারতেও সুখ। সারাক্ষণ মনে হবে, তুমি যা করছো- সেটা তো আমারই করা। তোমাদের ভালো কিছু শোনার জন্য কান পেতে থাকলাম।

বিষয়: বিবিধ

১০২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File