আলোর মাঝে না দেখা অন্ধকার

লিখেছেন লিখেছেন দিন যায় ১২ মার্চ, ২০১৩, ০২:৫৩:০৯ দুপুর

গুলশান যাওয়া দরকার। গতকাল সকাল এগারটার দিকে আদাবর দাঁড়িয়ে আছি সিএনসি-র জন্য। অনেকগুলো সিএনসি, কিন্তু কেউই যাবে না, অথবা গেলেও ভাড়া দু'শর কম না। অথচ মিটারে সর্বোচ্চ একশ' থেকে একশ' দশ । অগত্যা উঠে বসলাম একটাতে - মনে ক্ষোভ নিয়ে। সাধারণত বাইরে বেরুলে পত্রিকা হাতে রাখি, ‌'বাংলাদেশ প্রতিদিন'। গাড়িটি শিশুমেলা মোড় ঘুরতেই ট্রাফিক পুলিশ আমাদেরকে থামাল। পত্রিকা পড়ছি। জানি চালকের কাগজ-পত্র দেখবে, আর হাবাগোবা চেহারায় জিজ্ঞেস করবে - স্যার, কোথায় যাবেন? ভাড়া কত? আমিও রাজাকারের মত বলব - গুলশান, মিটারে। কিন্তু একটু আগের জমাকৃত ক্ষোভ এখনো স্তিমিত না হওয়ায় আমিই বরং জবাবে ইতস্তত করতে লাগলাম। একটি কথা বলা দরকার গাড়িটি যখন থামানো হয়, তখন চালক আমাকে অনুরোধের সুরে বলে - 'স্যার, বলবেন মিটারে যাচ্ছেন'। পত্রিকার দিকে চোখ রেখেই আমার তাৎক্ষনিক জবাব - 'ভাড়াও বেশী দেব, আবার মিথ্যাও বলতে হবে!' - কথাটা

ট্রাফিক পুলিশের কান পর্যন্ত গিয়েছে। তবুও ভদ্রতা এবং স্বচ্ছতার জন্য সে আমাকে জিজ্ঞেস করল কথাগুলো এবং বলল 'স্যার, আপনারা সহযোগীতা না করলে আমরা আপনাদের সেবায় আসব কিভাবে?' তখন আমি বললাম - চুক্তিতে, দু'শ টাকা। ইতিমধ্যে চালক তার গাড়ির কাগজ-পত্র নিয়ে পেছনে দাঁড়ানো সার্জেন্টের কাছে চলে গেছে - আমার আড়ালে। ট্রাফিক পুলিশও সেদিকে। মিনিট খানেক পর মধ্যবয়সী পুলিশ ও অভিজাত অবয়বের যুবক সার্জেন্ট - দু'জনেই সিএনজি'র পাশে এসে আমাকে বললো - স্যার, গাড়ির কাগজ ঠিক নাই, ভাড়াও কন্ট্রাক্টে, আমি আপনাকে অন্য একটা সিএনজি ঠিক করে দিচ্ছি, আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি নিতান্তই আবিভূত হলাম। বললাম, 'প্লিজ, ...... থ্যাংক ইউ'। ড্রাইভার পাশথেকে তাৎক্ষনিক বলল - 'স্যার আমার কাগজ-পত্র ঠিক আছে, খালি কন্ট্রাকে আসাটা ভুল হইছে, আর করমু না স্যার

(ট্রাফিক সার্জেন্টের দিকে তাকিয়ে)'। আমি ড্রাইভারের দিকে পলকের জন্যও না তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। যাক, সার্জেন্টের সহায়তায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি অন্য একটি সিএনজিতে খুব আয়েশের সাথে দেশ-প্রেমীক বুদ্ধিজীবির ভাব নিয়ে সত্যবাদী যুধিষ্টির হয়ে উঠে বসলাম, কিন্তু পত্রিকা পড়ায় মনোনিবেশিত হতে পারলামনা। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে - কাজটা কি ঠিক করলাম! নাহ্ - ঠিকই করেছি, আমরা সবাই-ই যদি এভাবে সচেতন হই, তবে তারা অন্যায়ভাবে বেশী ভাড়া নিতে পারবে না।

শান্তি! শান্তি!! শান্তি!!!

কিন্তু তবুও কোথায় যেন ভুল হয়েছে, মনটা খুত্ খুত্ করছে! ঠিক মহাখালী রেলক্রসিং পার হচ্ছি, এ সময় নিজের ভুলটা ধরতে পারলাম। ট্রাফিক সার্জেন্ট তো অপরাধের জন্য তাকে জরিমানা তথা মামলা একটা দিয়েই ছেড়ে দিতে পারত এবং তা-ই আইন! তা না করে তাকে আটকালো কেন! উপরি আয়ের আশায়! এ-তো রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ চুরি, যাতে আমিও

সহযোগীতাকারী! ধ্যাৎ! তার চেয়ে বরং মিথ্যা বলে গরীব ড্রাইভারকে রক্ষা করাই ভালো ছিলো। অভাবী সংসারে ঐ অর্থ তার জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে গেঁথে থাকা বিষন্নতা আর হতাশার মাঝে একবিন্দু শান্তির আলো হলেও জ্বালাতে পারত!

হতাশ অভাবী ড্রাইভার! হতাশ আমি স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবি যুধিষ্ঠির! ক্ষতি হলে আমারই হতো, দেশের বা অভাবীর নয়!

হায়রে হতাশা!

বিষয়: বিবিধ

১২৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File