স্বাধীনতা
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ২০ মার্চ, ২০১৩, ০১:১৮:১৩ দুপুর
স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের পরম আকাঙ্খিত আজন্ম অধিকার । পরাধীনতাকে কে চায় ? মানব মাত্রই স্বাধীনতা প্রিয় । স্বাধীনতাকে সে ভালবাসে । ব্যক্তি থেকে জাতীয় জীবনের সকল পর্যায়ে স্বাধীনতার মর্যাদা সব কিছুর উর্দ্ধে । স্বাধীনতা একটি স্বপ্নের নাম । আর এ স্বপ্নের চির সবুজ ডাল-পালা বিকশিত হয় ব্যক্তির সীমানাকে অতিক্রম করে জাতীয় জীবনের সকল স্তরে । শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়ণ রুপী অক্টোপাস যখন জাতিকে চারপাশ থেকে করে শৃংখলিত, যখন জাতির ভবিষ্যত ঢাকা পড়তে থাকে নিকষ কালো আঁধারে তখনি সে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্খায় ব্যাকুল হয়ে উঠে । শোষণ, নিপীড়ণ ও বঞ্চনার শৃংখল থেকে মুক্তিকামী জাতির চির আরাধণার নাম স্বাধীনতা । স্বাধীনতা শব্দটি শ্রুতিমধুর হলেও তা অর্জনের পথটি বহু বন্ধুর । স্বাধীনতা কোন দান বা ভিক্ষে নয় এটি ন্যায্য অধিকার যা ছিনিয়ে আনতে হয় । জুলুমের কালো হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জাতি যখন পা বাড়ায় তখন তাকে দিতে হয় বহু ত্যাগ-তিতীক্ষা হতে হয় অনেক অগ্নী পরিক্ষার মুখোমুখি । সকল বাঁধা বিপত্তির সফল উত্তরণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় পরম সাধনার ধণ স্বাধীনতা । বহু জাতির স্বাধীনতা অনেক ত্যাগ ও কুরবাণীর ফসল । তেমনিভাবে স্বাধীনতা অর্জনের পথে যুগে যুগে আমাদেরকেও পাঁড়ি দিতে হয়েছে অনেক পিচ্ছিল পথ ও লাল খুনের দড়িয়া । সকল ত্যাগ ও কুরবাণীর চুরান্ত পরিণতি উনিশ'শ একাত্তর সালে স্শস্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা । উনিশ'শ একাত্তর শুধু মাত্র স্বাধীনতা অর্জনের বছর নয় । এটি জাতির ত্যাগ, কুরবাণী ও পরীক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের বছর । মহাকালের বুকে ধারণ করা রক্তঝরা একটি সময়ের নাম । আমাদের ইতিহাসে রক্তিম হরফে লিখা বহু বছরের শোষণ, নিপীড়ণ ও বঞ্চণার নাগপাশ থেকে মুক্তি পাগল লাখো কোটি জনতার স্শস্র মুক্তি সংগ্রামের স্বর্ণালী অধ্যায় উনিশ'শ একাত্তর । স্বাধীনতা অর্জনের পথে বহু বছরের আন্দোলন ও সংগ্রাম ইতিহাসের পাতায় এ জাতির এক একটি গৌরব উজ্জ্বল সৃষ্টি । সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় বৃটিশ শোষণের শৃংখল হতে মুক্তির আন্দোলনে অংশ নিয়ে এ জাতি সৃষ্টি করেছিল পাকিস্থান, কিন্তু তাদের সে প্রত্যাশা বেশি দিন স্থায়ী হয় নি, পাকিস্থান সৃষ্টির দিন থেকে পশ্চিম পাকিস্থানী শাসক শ্রেণীর শোষণ, বঞ্চণা ও নির্যাতনের ফলে তা দূরাশায় পরিণত হয় । আর তাই পাকিস্থানী শোষণের বিভিষীকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে লক্ষ প্রানের বিনিময়ে দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ । তাই উনিশ'শ একাত্তর আমাদের জাতীয় জীবনে স্বমহিমায় মহিমান্বিত, সকল সময়ের চাইতে স্বতন্ত্র এবং শ্রদ্ধার আসনে সর্বোচ্ছ স্থানে অধিষ্ঠিত । জাতীয় জীবনে এ সময়ের সাথে আর কোন সময়রে তুলনা চলেনা, চলতে পারেনা । স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ইতিহাস আমাদের অহংকার । যুগে যুগে মুক্তির মিছিলে অংশগ্রহনকারী মুক্তিযুদ্ধারা, সম্ভ্রম হরানো মা ও বোনেরা আমাদের গৌরব । লাখো শহীদের আত্ম-ত্যাগ স্বাধীনতা রক্ষার পথে আমাদের পাথেয়, আমাদের প্রেরণা । আমাদের ইতিহাসের সর্বোচ্ছ আসনে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। লক্ষ প্রাণ আর সাগর সম রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতাকে টেকসই করা এ মূহুর্তে আমাদের পবিত্র দায়ত্বি । স্বাধীনতা অর্জেনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন । তাই স্বাধীনতা রক্ষার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে আমাদেরকে এখনি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে । পৃথিবীর বুকে সমৃদ্ধ জাতিরুপে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে নিজেদের । যার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের পূর্বসূরীরা । শকুনের কুদৃষ্টি আর হায়নার হিংস্র থাবা থেকে মুক্ত রাখতে হবে প্রিয় মাতৃভূমি ও স্বাধীনতাকে । আর এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গড়ে তুলতে হবে ইস্পাত কঠিন জাতীয় একতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা । প্রত্যেকের মধ্যে জাগাতে হবে সততা, দায়িত্ববোধ ও দেশ প্রেম । বিশেষ করে তরুণ ও ছাত্রেদের মধ্যে এজাতীয় সুকুমার বৃত্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে প্রবলভাবে ।কেননা জাতির ভবিষ্যত দিক পাল এরাই । দেশ পরিচালনায় এবং মাতৃভূমিকে সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারদরকে সৎ, দক্ষ্য, যোগ্য ও দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা আবশ্যক । তরুণ ও ছাত্রদেরকে হতে হবে সত্যিকারে দেশ প্রেমিক, স্বদেশের সেবায় সদা আন্তরিক, স্বাধীনতা রক্ষায় নির্ভীক । বহু ত্যাগ তিতীক্ষা আর কুরবাণীর বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীণতাকে আমরা কখনই ব্যর্থ হতে দিতে পারিনা । স্বাধীনতার সুফলকে পৌছে দিতে হবে এ দেশের ঘরে ঘরে । গড়ে তুলতে হবে শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ণ ও জুলুম বিহীন সমাজ ব্যবস্থা । বিনির্মাণ করতে হবে একটি ইনসাফ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র । যে দিন এসব অর্জিত হবে সেদিনই আমাদের স্বাধীনতা হবে সফল ও দীপ্তিময় । সার্থক হবে শহীদদের আত্মত্যাগ, পূর্ণ হবে মুক্তিসেনাদের স্বপ্ন, বাস্তব হবে জাতির আজন্ম আকাংখা ।
বিষয়: বিবিধ
১০৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন