বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রবণতা ও পর্দার আড়ালের কুশীলবরা
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ১৪ মার্চ, ২০১৩, ০১:৩৪:২২ রাত
দেশব্যাপী যে নৈরাজ্য, অরাজকতা, অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে এজন্য আওয়ামিলীগ, জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপিকে দায়ী মনে করার কোন কারন নেই বরং এর পেছনে মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালনকারী হচ্ছে আওয়ামিলীগে, বিএনপিতে এবং অন্যত্র প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে অবস্থানকারী কমিউনিস্টরা । বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রবণতার দিকে একটু গভীরভাবে খেয়াল করলেই লক্ষ্য করা যাবে আজ দেশে যে নৈরাজ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এর পেছনেও মূলত এই কমিউনিস্টরাই দায়ী এবং এরাই পর্দার আড়ালে অবস্থান করে উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে । উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে পর্যায়ক্রমে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে রুপান্তরিত করা । তাদের ভাষায় অসমাপ্ত বিপ্লবকে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে দেশের জনগণ ও জনগণের চিন্তা-চেতনা এবং বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন এই কমিউনিস্টরা অনুপ্রবেশ তত্ত্বের ভিত্তিতে সরকারের প্রতিটি শীর্ষপদ দখল করেছে । গণমাধ্যমে শক্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে এবং সরকারী ও বিরুধী দলের প্রতিটি শীর্ষ পদে এই বিকৃত রুচিধারীরা নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী ও সুনিশ্চিত করেছে । আর যেহেতু সরকার, রাজনৈতিক দল ও মিডিয়ায় এরা একছত্র আধিপত্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে তাই এরা দেশকে দেশের মানুষকে যা ইচ্ছা তাই গেলাচ্ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে সমাজতন্ত্র নামের একটি বিকৃত ও ধর্মহীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে যা এদেশের মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আশা-আকাংখা ও চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত । একসময় যে কমিউনিস্টরা আওয়ামীলীগকে বর্জুয়াদের দল বলে হরদম গালমন্দ করত এবং দলের প্রধান স্তম্ভ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর স্বপ্ন দেখত সেই কমিউনিষ্ট মতিয়া চৌধুরী, দীলীপ বড়ুয়া আর নাহিদরা আজ আওয়ামীলীগ সরকারের বড় বড় মন্ত্রী ও দলে বড় বড় পদাধিকারী ! যে কমিউনিষ্টরা ৭২-৭৫ সময়ে গণবাহিনী নামে এক ঘাতক বাহিনী সৃষ্টি করে অগণিত সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাশাপাশি হাজার হাজার আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হত্যা ও যখম করেছে আজ সেই গণবাহিনীর সেই সময়ের কমান্ডার ইন চিফ হাসানুল হক ইনু আওয়ামিলীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও রাজনৈতিক মিত্র ! অথচ যারা সাচ্ছা আওয়ামিলীগার তারা আজ অবহেলিত, লাঞ্চিত ও অপমানিত ! সেলুকাস ! পৃথীবীব্যাপী কমিউনিষ্টদের ইতিহাস একই তা হল রক্তপাত ও অরাজকতার ইতিহাস । তাদের বিকৃত চিন্তা -চেতনা জনমানুষের বিশ্বাস ও চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারনে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আজ তারা আস্তকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত । একসময় মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার যে অলীক স্বপ্ন তারা মানুষকে দেখিয়েছিল তা বাস্তবানের পথে পৃথিবীর বুকে যে ইতিহাস এই নিকৃষ্ট ও বিকৃত চিন্তা চেতনাধারীরা রচনা করেছে তাহল রক্তপাতের ইতিহাস, বিশৃংখলা সৃষ্টির ইতিহাস, অরাজকতা ও খুনাখুনির ইতিহাস । আর তাই বর্তমানে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র ভ্রান্ত ও ভ্রষ্ট একটি মতবাদ হিসেবে পরিচিত । পৃথিবীর এমন কোন রাষ্ট্র নেই যেখানে কমিউনিষ্টরা শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ক্ষমতায় এসেছে বা ক্ষমতা দখল করেছে অথবা ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছে । পৃথিবীতে আরো অনেক মতবাদ এসেছে ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কারো মূলমন্ত্র 'খতম কর’’ জাতীয় ছিলনা, কিন্তু সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র হল “খতম কর” । শ্রেণীশত্রু হত্যার নামে লক্ষ-কোটি আদম সন্তানকে কোনরুপ বিচার আচার ছাড়াই পৈশাচিক ও বর্বর পন্থায় এই সমাজতন্ত্রীরা হত্যা করেছে । সহজ সরল প্রান্তিক মানুষগুলোকে সর্বহারার রাজ প্রতিষ্ঠার নাম করে খুনি ও লোটেরায় রুপান্তরিত করেছে, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে অগণিত মানব সন্তানকে । এরা যখনি ক্ষমতায় এসেছে রক্তের গঙ্গা পাড়ি দিয়ে, লাশের সিঁড়ি বেয়ে তারপর এসেছে । রাশিয়া থেকে চায়না, কোরিয়া থেকে কিউবা সর্বত্র এদের ক্ষমতা দখলের পথ ও পদ্ধতি একই আর তা হল খুন, জখম ও লুটতরাজ । এরা মূলত ফেতনা ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী এবং যাবতীয় অপকর্মের ইন্দনদানকারী । কমিউনিষ্টরা বলে পৃথিবীর ইতিহাস শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস । অথচ বাস্তবতা হল কমিউনিষ্টদের ইতিহাস গণহত্যার ইতিহাস, রক্তারক্তি-খুন-যখম আর লুটতরাজের ইতিহাস । বিগত শতকে পৃথিবী জুড়ে যে কয়টা বড় বড় গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তার সিংহভাগের সাথে কমিউনিষ্টরা হয় সরাসরি জড়িত না হয় পেছন থেকে কলকাটি পরিচালনাকারী । সোভিয়েট রাশিয়া, চায়না, ভারত, নেপাল, কিউবা, কোরিয়াসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে কমিউনিষ্টদের গণহত্যার ভূড়ি ভূড়ি উপমা ও উদাহরণ বিদ্যমান । কমিউনিষ্টরা মনে করে ধর্ম হচ্ছে আফিম সদৃশ আর তাই তাদের আরও একটি ইতিহাস হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে ধর্মবিমুখ করার ইতিহাস । এরা সুন্দর ও মধুর কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে । গরীব দুঃখী মানুষের সমব্যাথী সেজে তাদেরকে প্রতারিত করে । হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে উঠা পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষকে বিদ্রোহ করতে উস্কানী প্রদান করে সহজ সরল মানুষগুলোকে যুগে যুগে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে । একসময় বাংলাদেশের যে কমিউনিষ্টরা সাম্যবাদ সাম্যবাদ বলে গলা ফাটাত আজ সেই কমিউনিষ্টরাই আওয়ামীলীগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে গলা ফাটাচ্ছে এবং জাতিকে এই তথাকথিত চেতনার নাম করে দুইভাগে বিভক্ত করেছে এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে । অথচ সত্য হচ্ছে কমিউনিষ্টরা রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিশ্বাস করেনা এবং মনে করে রাষ্ট্র হচ্ছে শোষণের হাতিয়ার যা একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে । যে স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা তারা বলছে এবং প্রচার চালাচ্ছে সেই মুক্তিযুদ্ধকে তারা “দুই কুকুরের লড়াই” বলে সেই সময় অভিহিত করেছে । যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কমিউনিস্টদের এক পক্ষ সরাসরি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির পক্ষাবলম্বন করেছে এবং অপরপক্ষ স্বধীনতা যুদ্ধের শেষ সময়ে যখন বিজয় সুনিশ্চিত ঠিক তখনি যুদ্ধে যোগ দিয়েছে । আর আজ তারাই জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জ্ঞান দিচ্ছে ! ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি-বিপক্ষ শক্তি ইত্যাদি ধারণাগুলো এ দেশের রাজনীতিতে কমিউনিস্টরাই উদ্ভাবন করেছে যা নাস্তিক কমিউনিস্ট জাহানারা ইমামের নেতৃত্বাধীন “ঘাদানিক” আন্দোলনে সর্বপ্রথম লক্ষ্য করা যায় অথচ স্বাধীনতা পরবর্তী ২০ বছরকাল পর্যন্ত এজাতীয় মতবাদের উপস্থিতি কোথাও লক্ষ্য করা যায়নি । এমনকি জাতি বিনাশী এই কুখ্যাত মতবাদ প্রথমে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতত্ব দানকারি দল আওয়ামীলীগও গ্রহন করেনি যার প্রমান হল ৯১ থেকে ৯৬ সময়কালীন তাদের আন্দোলন এবং ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত সরকার গঠন ও তৎপরবর্তী কার্য্যক্রম । কিন্তু আওয়ামিলীগ ২০০১ এর নির্বাচনে পরজিত হলে চারদলীয় জোট সরকারের মাঝামাঝি সময় থেকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি-বিপক্ষ শক্তি ইত্যাদি ধারণাগুলো গ্রহন করে রাজনীতিতে এর ব্যপক ব্যবহার করতে থাকে । অন্যদিকে আওয়ামিলীগে শক্তপোক্তভাবে অবস্থনকারী কমিউনিস্ট ও কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন মিডিয়া একে তাদের স্বার্থ হাসিলের অন্যতম সুযোগ হিসেবে গ্রহন করে জাতীয় বিভক্তি সৃষ্টিকারি মতবাদগুলোকে ব্যপক প্রসার ও প্রচার করতে থাকে যা অদ্যবধি অব্যাহত রয়েছে । বর্তমানেও কমিউনিস্টদের ব্রেনচাইল্ড এই কুখ্যাত মতবাদকে জনগণের চিন্তা ও চেতনা বলে চালিয়ে দিচ্ছে এবং একে বিশ্বাস করতেও জনগণকে বাধ্য করছে । কুখ্যাত মতবাদের জিকির তুলে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বুনিয়াদগুলোকে । সৃষ্টি করেছে একশ্রেণীর ধর্মদ্রোহী, বিকৃত রুচীধারী, উশৃংখল ও লাগামহীন জনগোষ্ঠী যারা কোনরুপ সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতি, আইন-আদালতের ঘোর বিরুধী । ইতিপূর্বে উল্লেখিত কমিউনিস্টদের ইতিহাস রক্তগঙ্গা পাড়ি দিয়ে ক্ষমতায় আরোহনের ইতিহাস যার চাক্ষুষ প্রমাণ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের গণহত্যা যা বাপ্পাদিত্য বসু নামে এক কমিউনিস্ট নাস্তিকের নেতৃত্বে সংঘঠিত হয় যে গণহত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে আজ আওয়ামিলীগের ছদ্মাবরণে পাপীষ্ঠ নাস্তিক কমিউনিষ্টরাই যে ক্ষমতায় আরোহন করেছে তা বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভার দিকে লক্ষ্য করলেই কারো বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় । এরা দেশের রাজনীতিকে পয়েন্ট অব নো রিটার্ণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের অভিষ্ট লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে । কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী বাংলার মাটিতে তারা ইতোঃপুর্বেও ব্যর্থ হয়েছে বরতমানেও ব্যর্থ হবে । কেননা জনগনের চিন্তা-চেতনা , সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের বিপরীত কোন চিন্তা-চেতনা , সংস্কৃতি ও বিশ্বাস কোন সমাজ ও রাষ্ট্রে কখনই স্থায়ী হয়না । এ জন্য জনগণের সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার প্রয়োজণীয়তা অপরিসীম এবং নাস্তিক কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দড়াবার পাশাপাশি শক্ত হাতে তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যকে প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত থাকার কোনও বিকল্প নেই । তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে যদি কখনো বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা হয় তবে এর দায়ভার কিন্তু আওয়ামিলীগের ঘাড়ে সাওয়ার কমিউনিস্টরা কখনোই নিবে না বরং আওয়ামীলীগকেই নিতে হবে ।
বিষয়: Contest_mother
১৪২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন