পুলিশ কেন লীগ সাপোর্টার : বিএনপির ব্যর্থতা

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৪২:০৫ রাত

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মকর্তার সাথে পুলিশের সুখ দুঃখ নিয়ে আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বললেন বাবা আওয়ামীলীগকে সমগ্র পৃথিবীও যদি সমর্থন না করে আমি সমর্থন করব । যদিও ছাত্র জীবনে আমি ছিলাম জাতীয়তাবাদি এমনকি আমার কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতিও ছিলাম । কিন্তু চাকরি জীবনে আমি লক্ষ্য করে দেখলাম অন্য যেকোন সরকারের তুলনায় আওয়ামীলীগের সরকার পুলিশসহ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রতি অধিক মনোযোগী । অপরদিকে বিএনপিকে দেখলাম বরাবরই সেনাতোষী একটা দল হিসেবে ।

বর্তমান সরকারের আমলে আওয়ামীলীগ পুলিশের জন্য যা করেছে গত বিয়াল্লিশ বছরেও কোন সরকার তার বিন্দুমাত্র করেনি উল্টো বিগত জিয়া, এরশাদ ও খালেদা আমলে পুলিশকে ন্যায্য বহু সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে ।

তিনি বললেন জিয়াউর রহমান পুলিশ প্রধানের রেংক ডাউন করে সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেলের সমান করে দিয়েছিল যা ছিল অপমান জনক । তিনি সিভিল প্রশাসনে মিলিটারীকে প্রবেশ করিয়েছেন । এসময়ে সেনাবাহিনীর ব্যাপক উন্নয়ন করা হলেও পুলিশের জন্য জিয়া কিছুই করেননি । অথচ এই জিয়া যখন মারা যায় তার সাথে আততায়ীর গুলিতে চারজন পুলিশ সদস্যও মৃত্যু বরণ করেন ।

এরশাদ আমলে মিলিটারিদের ছিল জয় জয়কার তখন বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টের সিওরা পুলিশকে নিজের চাকর বাকর মনে করত । সে সময়ে সেনা অফিসাররা পুলিশ অফিসারদের মানুষই মনে করতনা ।

৯১ এর খালেদা সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড ভংগ করে অন্যদিকে এসময়েও পুলিশের কোন উন্নয়ন হয়নি ।

এই জিয়া এরশাদ ও খালেদা আমলে পুলিশের প্রতি তাদের আচরণে মনে হত পুলিশ যেন ভিনগ্রহের একটা বাহিনী ।

৯৬ এ যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসল তখন তারা পুলিশেকে টাইমস্কেল প্রদান করেছে, পুলিশের জন্য পুরানো অস্ত্রের স্থলে নতুন অস্ত্র প্রদান করেছে, প্রতিটি থানাতে নতুন যানবাহন প্রদান করেছে, পুলিশের জন্য বিদেশে মিশনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, সদস্যদের থাকার জন্য নতুন নতুন বেরাক তৈরী করেছে, পুলিশের পরিবারের জন্য অনেক আবাসন তৈরী করেছে ।

২০০১ এ যখন বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসল তখন তারা প্রথমেই পুলিশের টাইমস্কেল কেটে নেয়, উর্দ্ধতন অফিসারদের সন্তুষ্ঠ রাখার অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতিটি জেলার এসপির জন্য কোটি টাকার গাড়ি বরাদ্ধ করে, অথচ প্রতি কোটি টাকা দিয়ে দশ লাখ টাকা দরের দশটি থানায় দশটি গড়ি দেয়া যেত যা জনসেবাকে তরান্বিত করতে পারত, সে সময়ে পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের নামে তারেক জিয়া ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দীন মামুন শতকোটি টাকার দুর্নীতি ও বাণিজ্য করেছে, পুলিশের উপর আস্থা রাখতে না পেরে অপরাধ দমনের নামে সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর সাথে পুলিশের সমন্বয়ে এক জগাখিচুরি বাহিনী র্যাব তৈরী করেছে, এই বাহিনীতে প্রেষণে আসা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সাথে পুলিশ সদস্যদের সাপে নেউলে সম্পর্ক, ওখানে মিলিটারী অফিসাররা আইন বুঝেনা কিন্তু দাদাগিরিতে উস্তাদ, ইতিমধ্যে দুর্নীতি ও মানুষ হত্যায় র্যাবের মিলিটারী অফিসাররা সকল রেকর্ড ভংগ করেছে ।

জোট আমলে শত শত পুলিশ সদস্য ও অফিসার চাকুরীচ্যুত হয়েছে । তখন পুলিশ সদস্যদের মিশনে যেতে তারেক জিয়াকে নিম্নে পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হত ।

বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার পুলিশের জন্য কি করেনি ! আইজির রেংক বৃদ্ধি করে জেনারেলের মান দেয়া হয়েছে, আইজি থেকে সচিব হওয়ার সুযোগ তৈরী করা হয়েছে, আগে বিসিএস পুলিশ অফিসারদের রেশনের মান আর নন বিসিএস অফিসার ও কন্সটেবলদের রেশনের মান ও পরিমানের পার্থক্য ছিল বিস্তর কিন্তু এখন আইজি থেকে কন্সটেবলের রেশন একই মানের, এস আইদের দ্বিতীয় শ্রেণী ও ইন্সপেক্টরদের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মান প্রদান করা হয়েছে, পুলিশকে উন্নত ও আধুনিক নিরাপত্তা গিয়ার দেয়া হয়েছে, পর্যায়ক্রমিক ভাবে সকল পুলিশ সদস্যের জন্য বিদেশ মিশনের সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে, পুলিশের জন্য টি এ ডি এর পরিমান বৃদ্ধি করা হয়েছে, মেডিকেল ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, ঝুঁকি ভাতা দেয়া হয়েছে, মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া হয়েছে, নভেম্বরে নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করা হবে, একাধিক পুলিশ ইউনিট তৈরী করা হয়েছে, পাঁচ বছরে ৩৩ হাজার লোক নিয়োগ করে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে, এ আমলে পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক হারে প্রমোশন দেয়া হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আমি বললাম এগুলাত চাহিদা ও সময়ের প্রয়োজনে ধারাবাহিকতা মাত্র ।

তিনি বললেন এইটা কোন কথা না যে আর্মির জন্য জিয়া এবং বেগম জিয়া এতকিছু করলেন সেই আর্মিই কিন্তু জিয়াকে হত্যা করেছে, তার ছেলদের নির্যাতন করে পঙ্গু করে দিয়েছে, দলের উপর চালিয়েছে নির্যাতনের স্টীম রোলার, চেষ্টা চালিয়েছে দল ভাংগার, উনাকে আর উনার পুত্রদের জেলের ভাত খাইছে । এসব কিন্তু কোন পুলিশ করেনি ।

আমি বললাম উনারা আর্মিকে সর্বেসর্বা করেছিল তার ফলও তারা পাইছে । তিনি বললেন আমি সেনা বিদ্ধেষী নই কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি সবত্র সেনাবাহিনীকে নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়ে জিয়া এরশাদ এবং খালেদা একে দানবে পরিণত করেছে এখন এরা তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করছে মাত্র ।

আমি বললাম আওয়ামীলীগ এই টার্মে সেনাবাহিনীর জন্য রাশিয়ার সাথে প্রায় আটহাজার কোটি টাকার অস্ত্র চুক্তি করেছে গত টার্মে ফ্রিগেট ও মিগ যুদ্ধ বিমান কিনেছে । অনেকে বলে বিডিআরের সেনা অফিসারদের হত্যার পেছনেও আওয়ামীলীগ আছে ।

তিনি বললেন জিয়া কি কম মারছে ? আর আওয়ামীলীগ যে এর পেছনে জড়িত তার কোন প্রমাণ নাই এটা একটা রাজনৈতিক প্রচারণা । আওয়ামীলীগ আর্মির জন্য কিছুই করেনি এটা ত আমি বলিনি তবে ওরা বিএপির মত একচোখা ভাবে কিছু করেনি তা স্বীকার করতে হবে । বিএনপি সবসময় পুলিশের সাথে বিমাতা সুলভ আচরণ করেছে এবার পুলিশও তাদের পাশে দাঁড়াবে না তোমাকে বলে দিলাম ।

আমি বললাম আপনাদের এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও ত আইন শৃংখলার অবণতি হচ্ছে ।

তার সাফ জবাব এগুলা অপপ্রচার বিশ কোটি মানুষের দেশে দিনে দুই একটা খুন, ডাকাতি, রেপ হইতেই পারে ! এসব বন্ধে আমাদের আরো লোকবল আরো সুযোগ সুবিধা দরকার ।

এবার আমি মনে মনে ভাবলাম মানুষের চাহিদার শেষ নাই আর খুব কম লোকই ব্যর্থতা স্বীকার করে । এপর্যায়ে আর কথা না বাড়িয়ে উনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম ।

বিষয়: বিবিধ

১৭৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File