সোসাল মিডিয়া ও রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৩৭:২৩ সকাল
ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগ এসময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে করেছে সুসংহত । যোগাযোগের এই মাধ্যমগুলোর প্রতি কিশোর, তরুন ও যুবকদের আশক্তি এবং অংশগ্রহনের মাত্রা সুপারসনিক গতিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে । দেশে দেশে ইন্টারনেটের ব্যাপ্তি ও সহজ লভ্যতা এবং সেল ফোন দিয়ে অতি সহজে ব্যবহার উপযোগীতা এইসব যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তাকে নিয়ে গেছে অন্যরকম এক উচ্চতায় যা দিন দিন ক্রমবর্ধমান গতিতে উর্ধ্বমুখে ছুটে চলছে ।
দেশে দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে জনগণের অংশগ্রহন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে । উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনুন্নত দেশ সমুহে এইসব মাধ্যমের জনপ্রিয়তা অনেক অনেক গুন বেশি । তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিরাজমান স্বৈরতান্ত্রিক ও নিষ্পেশন মূলক সরকার ব্যবস্থা, প্রচলিত গণমাধ্যমের উপর সরকার কর্তৃক কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রনের কারনে মুক্তমত প্রকাশে উপযুক্ত প্লাটফর্মের অভাব, প্রকাশ্যে মতামত ব্যক্তকারীর নিরাপত্তাহীনতাসহ নানাবিদ কারনে স্বাধীন মত প্রকাশের সহজ ও নিরাপদ প্লাটফর্ম হিসেবে, সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতাকে জন সম্মুখে তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে এবং সর্বোপরি পারস্পরিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এখানে জনগনের অংশগ্রহন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা এসব গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তার পারদকে উর্ধ্বমুখী করছে ।
জনমত সৃষ্টিতে এইসব গণমাধ্যম এখন অপ্রতিদ্ধন্দী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে । চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতি । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আবির্ভাবের ফলে সময় বদলে গেছে আগে যেখানে প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো জনমতকে নিয়ন্ত্রণ করত এখন সেখানে জনমতই প্রচলিত গণমাধ্যমের লাগামকে নিয়ন্ত্রণ করছে ।
দুনিয়া কাঁপানো “আরব বসন্ত” সংগঠনে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা কারো অজানা নয় । মিশরের এপ্রিল সিক্স মুভমেণ্ট আজ বিশ্ব ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছে যা মূলত ফেসবুক ভিত্তিক একটি গ্রুপ । মিশর বিপ্লব আরবের অন্যান্য দেশে বিদ্যমান স্বৈরাচারী সরকারগুলির উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে যার পেছনে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর শক্তিশালী ভূমিকা ।
বাংলাদেশের সরকার ও সেকুলার শ্রেণীর সমর্থন পুষ্ট বিতর্কিত শাহবাগ আন্দোলন ও এর বিপরীতে আপামর জনগুষ্ঠির অংশগ্রহনে গড়ে উঠা হেফাজত আন্দোলনের পেছনেও রয়েছে সামজিক মাধ্যমগুলির অসামান্য অবদান । এই দুই আন্দোলন বাংলাদেশের জনগুষ্ঠিকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে । পরিস্থিতির বাধ্যবাদকতায় বর্তমানে আগ্নীয়গিরির তীব্রতা স্থিমিত মনে হলেও ছাইয়ের নীচে উদ্দত লাভা এখনো প্রবাহমান । বড় নদীর স্রোতের তীব্রতা থাকে তার গভীরে ঠিক তেমনিভাবে হেফাযত আন্দোলনের প্রভাব এদেশের তৃণমূলে বিপুল শক্তি নিয়ে প্রবাহমান বিপরীতে শাহবাগ আন্দোলন তার বিতর্কিত নেতৃত্বের কারনে গণমানুষের কাছে ধিকৃত ও বিতর্কিত হয়ে আজ মৃতপ্রায় । নাস্তিকতার চর্চা ও প্রচার প্রসারের অভিযোগের পাশাপাশি আল্লাহ, মহানবী, উম্মুল মুমীনীন, কুরআন-হাদীস ও ইসলামি শরীয়ার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরচারের অভিযোগে শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্ব অভিযুক্ত হয়েছে ।
বাংলাদেশের ভবিষ্যত গতিপথ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই দুই আন্দোলন ও এর সাথে জড়িত পক্ষগুলো এখনো সক্রিয় ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে যদিও একটি পক্ষ ইতিমধ্যে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে । এ থেকেই স্পষ্ট এই দুই পক্ষের কোন একটির বিজয়ের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত গন্তব্য । তাই বলা যায় আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি বরং এখন এটি স্নায়ু যুদ্ধের স্তর অতিক্রম করছে মাত্র । কোন একটি পক্ষের চূড়ান্ত পরাজয় ও ধ্বংসের মধ্য দিয়েই কেবল এর সমাপ্তি প্রত্যাশা করা যায় ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন