ইসলামী আন্দোলনে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ১১ মে, ২০১৩, ১২:৪৪:০৯ দুপুর
গ্রাম প্রধান দেশ হিসেবে এদেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বসবাস গ্রামে যাদের প্রায় ৯০ শতাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী গতানুগতিক মুসলিম । এসব সহজ সরল মানুষের ধর্মীয় জীবনাচার নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, মিলাদ ও ধর্মীয় মাহফিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ । এটিই তাদের দৃষ্টিতে পরিপূর্ণ ইসলাম । কিন্তু ইসলামের এসব অবশ্য পালনীয় বিষয়াবলী ছাড়াও যে এর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে এব্যাপারে তাদের জ্ঞান তমশায় আচ্ছন্ন । ইসলামে ফরয পাঁচটি স্তম্ভের আমলের পাশাপাশি একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন ও সমর্থন (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) হচ্ছে ইসলামের সেই অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ দিক । বলতে হয় এ দিকটি সম্পর্কে তারা মারাত্মকভাবে অন্ধকারচ্ছন্ন, বিভ্রান্ত এবং স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক ভূল ব্যখ্যা দ্বারা আক্রান্ত । বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন ও একে সমর্থনের আবশ্যকীয়তা সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অপূর্ণতার দু’একটি উদাহরণ না দিলেই নয় । আশা করি এরপর পাঠক ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে এদেশের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর মনোভাবের একটি স্পষ্ট ধারণা লাভে সক্ষম হবেন ।
উপযুক্ত শিক্ষার অভাব এবং বিকৃত ব্যাখ্যার প্রভাবে গ্রামীন মানুষের কাছে “ইসলামী আন্দোলন বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর’’ ধারণাটি অস্পষ্ট । ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কৌশলে তাদের মনে এ ধারণাটি বদ্ধমূল করা হয়েছে যে ইসলামে রাজনীতি হারাম বা ইসলাম এ সম্পর্কে কিছু বলেনি । বিভিন্ন যুক্তি ও উদাহরণ দিয়ে যখন তাদের এ ভূল ধারণা ভেঙ্গে দেয়া হয় তখন তারা দা’য়ীর উদ্দেশ্যে কিছু পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় । যেমনঃ আল্লাহ এক, আখেরী রাসূলও একজন, একটাই দ্বীন ও কোরআন তথা ইসলামের সংবিধান যেখানে একটা সেখানে বাংলাদেশে ইসলামী দল এতটা কেন ? অনেক ইসলাম্পন্থী এ জাতীয় প্রশ্নের যথার্ত কোন উত্তর দিতে পারেন না । ফলে মানুষও এব্যাপারে আর আগ্রহী হয় না । কেউ যদি উত্তর দিতে সক্ষম হন তখন এক্ষেত্রেও মানুষজন নিমরাজী প্রদর্শণ করে । আবার যখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় আপনি কি চান দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হোক ? তখন এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সবার জবাব থাকে হ্যা । এখন কথা হচ্ছে সবাই যখন চায় দেশে ইসলামী শাসন চালু হোক তখন একই দাবীতে মাঠে কাজ করতে কেন আগ্রহী হচ্ছে না ? এ ব্যাপারে আমার নিজের বিশ্লেষণগুলো নিচে তোলে ধরলাম ।
প্রথম যে কারনটি উঠে আসে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত ইসলামী সংগঠনগুলোর শহর কেন্দ্রীক তৎপরতার প্রাধান্য । যেখানে গ্রামাঞ্চল নিদারুণ অবহেলার স্বীকার । অথচ দেশের সিংহভাগ মানুষের বাস গ্রামে ।
যুগ যুগ ধরে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের অন্তরে প্রোথিত “ইসলামে রাজনীতি হারাম” বদ্ধমূল ধারণাটির প্রভাবে গড়ে উঠা কুসংস্কার ও অজ্ঞতা একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহনের আবশ্যকতার ব্যাপারে তাদেরকে অনুৎসাহিত ও নির্লীপ্ত করে রেখেছে ।
গ্রামীন মানুষজন সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত যারা মনে করে ইসলামী আন্দোলনও গতানুগতিক রাজনীতির মতই । যেহেতু অধিকাংশ মানুষ নির্জঞ্জাট জীবন কাটাতে পছন্দ করে তাই তারা এ ব্যাপারে খুব কমই আগ্রহ প্রদর্শণ করে ।
গ্রামীন মানুষের ধর্মীয় জ্ঞান ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আবশ্য পালনীয় কালিমা, নামায, রোযা ও সহিহ কোরআন তেলাওয়াত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং তারা এ নিয়ে সন্তুষ্ট । এইসব ছাড়াও যে ধর্মে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম বলে কিছু আছে তারা তা চিন্তাও করেনা ।
মানুষজন মনে করে মুসলমানের দেশে যেখানে মুসলিম শাসকরা দেশ চালাচ্ছে সেখানে আবার ইসলামী আন্দোলন কিসের ? কিন্তু মোনাফিকে যে দেশ ভরে গেছে এই ব্যাপারটি তাদের সামনে তুলে ধরার লোকের প্রভন্ড অভাব স্পষ্ট ।
চলমান দেশীয় ও বিশ্বরাজনীতি সম্পর্কে তারা পুরুপুরিভাবে অজ্ঞ ফলে কোথায় কি হচ্ছে এ সম্পর্কে তারা কোন ধারণা রাখেনা ।
যারা তাদের কাছে ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারতেন অর্থাৎ স্থানীয় মসজিদের ইমামগণ, কিন্তু ইমামরাও এ ব্যাপারে সাধারণ মানেষের ন্যায় অন্ধকারের বাসিন্দা ।
অপপ্রচারের প্রভাবে অনেকেই চায়না ধর্মের সাথে রাজনীতিকে টেনে আনতে । অথচ ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা আর মানুষ যেহেতু রাজনীতি বিমুক্ত নয় তাই রাজনীতিও ধর্মের একটা অংশ এই ব্যাপারটি অনেকেই মেনে নিতে চায় না ।
সব চেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনে লিপ্ত সংগঠনগুলোর । তারা দেশের প্রতিটা মসজিদে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত লোকদের ইমাম হিসেবে সর্বরাহ করতে পারত যারা মানুষের কাছে ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনীতা তোলে ধরত । অন্তত নিয়মিতভাবে মেধাবীদের গ্রামীন এলাকায় প্রেরণ করে মানুষের কাছে ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন ও সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তোলে ধরত ।
শেষ করব নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে । ২০০৮ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে জনৈক আত্মীয়কে অনুরুধ করি স্বপরিবারে তাদের আসনের ইসলামপন্থী প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য । উত্তরে তিনি বলেন এতগুলা ইসলামী দলের মধ্যে কোনটাকে দিব তার চেয়ে বিএনপি বা আওয়ামীলীগই ভাল । উত্তরে আমি তাকে পালটা প্রশ্ন করি শয়তান কয়টা । তিনি বললেন একটা । তখন উনাকে বললাম আপনাকে শাসন করার জন্য শয়তানের এতগুলা দলের মধ্যে যেকোন একটাকে আপনি বেছে নিতে পারেন অথচ আল্লাহর দল থেকে একটাকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে নানান অযুহাত দেখাচ্ছেন ?
যাই হোক পরিস্থিতির দিনদিন উন্নতি হচ্ছে মানুষ এখন পুর্বের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে । তারপর ইসলামপন্থিদের আর অনেক কিছু করার আছে । আশা করি এ দিকটাতে তারা দৃষ্টি দিবেন । কেননা দেশের সিংহভাগ মানুষকে অবহেলা করে মঞ্জিলে মাকছুদে পৌছা অসম্ভব ।
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন