যেসব ভূল করেছে হেফাজতে ইসলাম

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ০৮ মে, ২০১৩, ১০:৩৩:৪২ সকাল



যা হবার তা হয়ে গেছে তাই অতীত নিয়ে মাতম না করে লক্ষ্য হাসিলের জন্য এখন অতীত ইতিহাস ও শোককে শক্তিতে রুপান্তর করা উচিত । সময় হয়েছে অতীতের ভূল-ভ্রান্তিগুলোকে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে পুঙ্খানু-পুঙ্খরুপে বিচার বিশ্লেষণ করার এবং তা থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ।

হেফাজতে ইসলামী তার আন্দোলন পরিচালনায় ছোট ছোট কিছু ভূলের পাশাপাশি কিছু মারাত্মক ভূল করেছে যার খেসারত তকে দিতে হয়েছে হাজারো আলেম, তালেবে এলেম ও তৌহিদী জনতার রক্ত এবং জীবনের বিনিময়ে । নিচে আমার দৃষ্টিতে হেফাজতে ইসলামের ছোট-বড় ভূলগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ।

 হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব ও কর্মীবাহিনী মূলত দেশের কাওমী মাদ্রাসা থেকে আসা আলেম ও ছাত্র । যাদের অধিকাংশই চলমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখেনা ফলে তারা বুঝতেই পারেনি সামনে কি হতে যচ্ছে ।

 হেফাজত ইসলামের নেতৃত্ব কর্তৃক প্রতিপক্ষের চরিত্র ও ইতিহাস বিশ্লেষণ না করেই তাদের উপর আস্থা স্থাপন ও আন্দোলন পরিচালনা করা অথচ উচিত ছিল প্রথমেই প্রতিপক্ষের চরিত্র ও ইতিহাস পুঙ্খানু-পুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা ।

 হেফাজত ইসলাম তার প্রতিপক্ষকে প্রতিপক্ষ বিবেচনা করেনি বরং তাদেরকেও আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কিন্তু প্রতিপক্ষ তাকে কখনই বন্ধু মনে করেনি বরং শুরু থেকেই শত্রু জ্ঞান করেছে । আর তাই হেফাজতে ইসলামকে দমনে তারা সকল পন্থাই অবলম্বন করেছে ।

 হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব অত্যন্ত সহজ সরল হওয়ায় কুটকৌশলী প্রতিপক্ষ থেকে এতটা কঠিন আঘাত আশা করেনি । ফলে নিশ্চিন্তে সরল বিশ্বাসে কোনরুপ বেকআপ ছাড়াই সমস্থ শক্তিকে ময়দানে জড়ো করে ফেলে । হেফাজতে ইসলামের উচিত ছিল সমগ্র শক্তিকে এক সাথে ঢাকায় সমবেত না করে বেকআপ দেয়ার মত পেছনে একটি রিজার্ভ শক্তি রাখা ।

 প্রথমেই রাজধানী দখলের চেষ্টা করাটা ছিল অন্যতম একটি ভূল । তা না করে উচিত ছিল আগে ছোট বড় শহরগুলোকে দখলে আনা অথবা শক্তির ৫০ শতাংশকে রাজধানী দখলে প্রেরণ করে বাকি অংশকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো দখলে নিয়োযিত করা । হেফাজতে ইসলামের বহু সমর্থক নানা কারনে ঢাকায় যেতে না পেরে নিজ নিজ এলাকায় থেকে যায় যারা সঠিক দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বের অভাবে স্থানীয় পর্যায়ে ইচ্ছা থাকা সত্বেও আন্দোলনে যোগ দিতে পারেনি বা কোন আন্দোলন সংঘঠন করতে সক্ষম হয়নি অথচ এমনটি হলে প্রতিপক্ষ তার মনযোগ ও শক্তিকে কেবল মাত্র রাজধানীতে সীমাবদ্ধ না করে সারা দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বাধ্য হত । এতে করে একেকটি শহরের পতন প্রতিপক্ষের মনোবলকে ধীরে ধীরে ভেঙ্গে দিত ফলে রাজধানীর দখল দরে রাখা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ত ।

 হেফাজতে ইসলামের অধিকাংশ নেতৃত্ব সরসরি বা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকা এবং যারা রাজনীতির সাথে জড়িত (ক্ষুদ্র অংশ) প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার তুলনায় তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার গুরুতর অভাব হেতু প্রতিপক্ষের চাল ধরতে না পারা এবং পালটা চাল দেয়ার যোগ্যতা না থাকা ।

 হেফাজত ইসলামের নেতৃত্ব তাদের আন্দোলনকে ধর্মীয় আন্দোলন দাবী করলেও প্রতিপক্ষ একে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবেই বিবেচনা করেছে আর তাই এর দমনে শুরু থেকেই রাজনৈতিক ও অন্যান্য পদ্ধতির প্রয়োগ করেছে ।

 আধুনিক যুগ মিডিয়ার যুগ তাই বর্তমানকালে যেকোন আন্দোলনে মিডিয়া গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে । কিন্তু মিডিয়ায় হেফাজতে ইসলামের শক্তিশালী অবস্থান না থাকা এবং বিপরীত শক্তির পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ জারী থাকায় এখনে মিডিয়া সম্পূর্ণরুপে হেফাজতে ইসলাম বিরুধী ভূমিকা পালন করে । যাও দু’একটি মিডিয়া হেফাজতে ইসলামের পক্ষে ছিল তাদের উপর প্রতিপক্ষ বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করে তাদেরকে হয় চুপ করিয়ে দেয় না হয় বন্ধ করে দেয় । তাই আগামীর আন্দোলনে মিডিয়ার বিষয়টিকে সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিয়ে আমলে নিতে হবে ।

 সমর্থক ও শুভাকাংখী রাজনৈতিক গোষ্ঠী শুধু মুখে সমর্থন দিলেও উক্ত গোষ্ঠী কর্তৃক তাদের সমর্থকদের সরাসরি এবং প্রত্যক্ষ্যভাবে মাঠে না নামানো এবং তৎক্ষণাৎ সমর্থক ও শুভাকাঙ্খী রাজনৈতিক নেতৃত্বের এগিয়ে না আসা । অন্যদিকে প্রতিপক্ষ শুরু থেকেই তার সকল সমর্থক ও শুভাকাংখী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ্যভাবে কাছে পেয়েছে যা তার আত্মবিশ্বাস ও শক্তিকে বৃদ্ধি করেছে ।

 আরো যে সকল বিষয়ে হেফাজত ভূল করেছে তার মধ্যে ঐতিহাসিক ভূলগুলো অন্যতম । যেমন বহুকাল থেকে তারা ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত অথবা অজ্ঞতার কারনে আধুনিক শিক্ষা, রজনীতি, সমাজনীতি, রণনীতি, অর্থনীতি ও নিজস্ব সংস্কৃতির প্রচার প্রসার থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে ফলে তাদের আদর্শ বিরুধীরা আধুনিক শিক্ষা অর্জন করে সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশানের প্রতিটা স্তরে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছে যারা এখন হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য অর্জনে প্রবল বাধার সৃষ্টি করছে ।

 সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ হচ্ছে রাজনৈতিক প্রাণী রাজনীতি থেকে সে কোনভাবেই মুক্ত নয় কিন্তু হেফাজতীগণ বহুকাল ধরে ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনীতি চর্চা ও রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে নিজেদের ও নিজ অনুসারীদের দূরে রাখার পাশাপাশি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত থেকেছে । অন্যদিকে তাদের আদর্শ বিরুধীরা ফাঁকা মাঠ পেয়ে বিনা বাধায় রাজনীতির সকল চলক ও রাষ্ট্র ক্ষমতার উপর শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে ।

 হেফাজতের আদর্শ বিরুধীরা হেফাজতের বিরুধীতায় সব সময় একতাবদ্ধ কিন্তু হেফাজতিগণ তাদের সমর্থক হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র ছোটখাট আকিদাগত পার্থক্যের কারনে একই মনোভাবাপন্ন অনেক গোষ্ঠী থেকে নিজেদের দূরে রাখেন । অথচ একই আদর্শে বিশ্বাসীদের মধ্যে ছোটখাটো পার্থক্য থাকলেও বিপদকালীন সময়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।

 ঐতিহাসিক কাল থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব সরকারি চাকরি-বাকরি থেকে নিজেদের এবং নিজ আদর্শের সমর্থকদের বিমুখ রাখার কারনে তাদের অনুসারী বা সমর্থকদের তুলনায় হেফাজতে ইসলামের আদর্শ বিরুধীরা সরকারী-বেসরকারী, সামরিক-বেসামরিক সকল ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ আধিপত্য নিশ্চিত করেছে ফলে প্রশাসন থেকেও তারা কোনরুপ সাহায্য সহযোগীতা পায়নি বরং তীব্র বিরধীতার মুখুমখি হয়েছে ।

পরিশেষে এতটুকু বলেই শেষ করব যে “ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা” তাই দুনিয়া ও আখেরাতের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটা সুকুমারবৃত্তির চর্চা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য । দুনিয়া হল আখেরাতের শষ্যক্ষেত্র অথচ আমরা একটাকে পাবার জন্য আরেকটাকে অস্বীকার করি যার সুযোগ নিচ্ছে ইসলাম বিরুধীরা । সূতরাং অতীত ও বর্তমানের যাবতীয় ভূল ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর পথে আমাদের পথচলা হোক আরো দূর্বার ও গতিময় ।

বিষয়: রাজনীতি

৩১৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File