প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা; মদীনা সনদ ও বিদায় হজ্জের ভাষণ

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:২০:৩৩ দুপুর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহানবী (সা.) মদীনা সনদ ও বিদায় হজে যা বলে গেছেন ঠিক সেভাবে দেশ চলবে। মদিনা সনদে সব ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধিকার যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, তার আলোকে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তুলবো। সকালে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শাহবাগর গণজাগরণ মঞ্চকে কেন্দ্র করে শুরু করা হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে সরকারকে নাস্তিকদের মদতদাতা বলার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ জবাব দিলেন।

যে কোন ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোন ধর্মের অবমাননা বরদাশত করা হবে না। নবী করিম (স.) কে কটূক্তি করলে আমরা মানব না। ব্যবস্থা নেবোই।

মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

http://www.mzamin.com/details.php?nid=NTA1OTc=&ty=MA==&s=MzY=&c=MQ==

প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা আলোকে আমরা একটু মদীনা সনদ ও বিদায় হজ্জের ভাষণের দিকে আলোকপাত করব । প্রথমেই নজর দিব মদীনা সনদের দিকে । দেখা যাক কি আছে তাতে !

৬২২ খ্রীস্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনা নগরীতে হিজরতের করেন এবং মদীনা/মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে ছিল গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ। তাই কলহে লিপ্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাতৃত্ব্য ও সম্প্রীতি স্থাপন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হযরত মুহাম্মদ (সাHappy ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত। এর প্রথম ১০ ধারায় বলা হয় যে, মুহাজির (দেশত্যাগী বা যারা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছিল), বনু আউফ, বনু সাইদা, বনু হারিস, বনু জুশাম, বনু নাজ্জার, বনু আমর, বনু নবীত ও বনু আউস পূর্বহারে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত নিয়মনীতি এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পণের মাধ্যমে বন্দীদের মুক্ত করবে। ১১ থেকে ২০ ধারায় মুসলমানদের পারষ্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কিত আইন বিধৃত হয়। ২১ থেকে ২৬ ধারায় হত্যাকারীর শাস্তি, কোনো মুসলমান কোনো অন্যায়কারীকে আশ্রয় দিলে তার শাস্তি, কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসা পদ্ধতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইত্যাদী বিষয়ক আইন সন্নিবেশিত হয়। ২৭ থেকে ৩৬ ধারায় সন্নিবেশিত হয় বিভিন্ন গোত্রের স্বরুপ সম্পর্কিত বিধান। পরবর্তী ধারাসমূহে যুদ্ধনীতি, নাগরিকদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ, নিজ নিজ ব্যয় নির্বাহ, এ সনদে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা, বন্ধুর দুষ্কর্ম, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ, নাগরিকের অধিকার, আশ্রয়দানকারী ও আশ্রিতের সম্পর্ক, নারীর আশ্রয়, সনদের স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শান্তি ভঙ্গের আশন্কা দেখা দিলে করণীয়, কুরাইশদের ব্যাপারে ব্যবস্থা, মদীনার উপর অতর্কিত আক্রমণ হলে করণীয় ইত্যাদী সন্নিবেশিত হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই প্রথম লিখিত চুক্তি ও সংবিধান। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টির মতে-" Out of the religious community of all Madinah the later and largest state of Islam arose" অর্থ্যাৎ মদীনা প্রজাতন্ত্রই পরবর্তীকালে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূল স্হাপন করে। উক্ত সংবিধানে সকল পক্ষ মেনে নিয়ে স্বাক্ষর দান করেছিল।

মদীনা সনদের মূল বিষয়বস্তু ছিল:

১) সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ [q]ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।

২.হযরত মুহাম্মদ (স) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন।

৩) কোন সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদীনা বা মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনরুপ সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারবে না।

৪) মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৫) মদিনার উপর যে কোন বহিরাক্রমণ কে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে। এবং সেই আক্রমণ কে প্রতিরোধ করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে এক জোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।

৬) রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

৭) অসহায় ও দূর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

৮) সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদীনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।

৯) কোন লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে। তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায় কে দায়ী করা যাবে না।

১০) মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।

১১) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক।

১২) মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুমতি ব্যতীত মদীনাবাসীগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।

১৩) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।[/u]

http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0_%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A6%A6

এবার দেখে নেয়া যাক বিদায় হজ্জেরভাষণে আল্লাহর রাসূল কি বলেছেন !

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণ

শুক্রবার, ৯ জিলহজ, ১০ হিজরী সনে আরাফার দিন দুপুরের পর রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লক্ষাধিক সাহাবির সমাবেশে হজের সময় এই বিখ্যাত ভাষণ দেন| হাম্‌দ ও সানার পর স্বীয় ভাষণে ইরশাদ করেনঃ

আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নেই| তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই|

আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন| তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন| আর তিনি একাই বাতিল শক্তিগুলো পরাভূত করেছেন|

হে আল্লাহর বান্দারা! আমি তোমাদের আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর বন্দেগির ওসিয়ত করছি এবং এর নির্দেশ দিচ্ছি|

হে লোক সকল! তোমরা আমার কথা শোন| এরপর এই স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কি না জানি না|

হে লোক সকল! আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, হে মানবজাতি! তোমাদের আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে পয়দা করেছি এবং তোমাদের সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো| তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর দরবারে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে| ইসলামে জাতি, শ্রেণীভেদ ও বর্ণবৈষম্য নেই| আরবের ওপর কোনো আজমের, আজমের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই| তেমনি সাদার ওপর কালোর বা কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই| মর্যাদার ভিত্তি হলো কেবলমাত্র তাকওয়া |

আল্লাহর ঘরের হিফাযত, সংরক্ষণ ও হাজিদের পানি পান করানোর ব্যবস্থা আগের মতো এখনো বহাল থাকবে|

হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকরা! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাযির না হও| আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনোই উপকার করতে পারব না| যে ব্যক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মাওলা বা অভিভাবককে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর লা’নত|

ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে| প্রত্যেক আমানত তার হকদারের কাছে অবশ্যই আদায় করে দিতে হবে| কারো সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয়| সুতরাং তোমরা জন অপরজনের ওপর জুলুম করবে না| এমনিভাবে কোনো স্ত্রীর জন্য তার স্বামী সম্পত্তির কোনো কিছু তার সম্মতি ব্যক্তিরেকে কাউকে দেয়া হালাল নয়|

যদি কোনো নাক, কান কাটা হাবশি দাসকেও তোমাদের আমির বানিয়ে দেয়া হয় তবে সে যত দিন আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে, তত দিন অবশ্যই তার কথা মানবে, তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে|

শোনো, তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে| পাঁচ ওয়াক্ত সালাত যথারীতি আদায় করবে, রমজানের রোজা পালন করবে, স্বেচ্ছায় ও খুশি মনে তোমাদের সম্পদের জাকাত দেবে, তোমাদের রবের ঘর বায়তুল্লাহর হজ করবে আর আমিরের ইতা’আত করবে, তা হলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে|

হে লোক সকল! আমার পর আর কোনো নবী নেই, আর তোমাদের পর কোনো উম্মতও নেই| আমি তোমাদের কাছে দু’টো জিনিস রেখে যাচ্ছি| যত দিন তোমরা এ দু’টোকে আঁকড়ে থাকবে, তত দিন তোমরা গুমরাহ হবে না| সে দু’টো হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত| তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে| কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দীনের ব্যাপারে এই বাড়াবাড়ির দরুন ধ্বংস হয়েছে|

এই ভূমিতে আবার শয়তানের পূজা হবে এ বিষয়ে শয়তান নিরাশ হয়ে গেছে| কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা তার অনুসরণে লিপ্ত হয়ে পড়বে| এতে সে সন্তুষ্ট হবে| সুতরাং তোমাদের দীনের বিষয়ে তোমরা শয়তান থেকে সাবধান থেকো| শোনো, তোমরা যারা উপস্থিত আছো, যারা উপস্থিত নেই তাদের কাছে এই পয়গাম পৌঁছে দিয়ো| অনেক সময় দেখা যায়, যার কাছ পৌঁছানো হয় সে পৌঁছানেওয়ালার তুলনায় অধিক সংরক্ষণকারী হয় |

তোমাদের আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে| তখন তোমরা কী বলবে? সমবেত সবাই সমস্বরে উত্তর দিলেনঃ আমরা সাক্ষ্য দিব, আপনি নিশ্চয় আপনার ওপর অর্পিত আমানত আদায় করেছেন, রিসালতের দায়িত্ব যথাযথ আনজাম দিয়েছেন এবং সবাইকে নসিহত করেছেন |

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে পবিত্র শাহাদাত অঙ্গুলি তুলে আবার নিচে মানুষের দিকে নামালেন |

হে আল্লাহ ! তুমি সাক্ষী থাকো | হে আল্লাহ | তুমি সাক্ষী থাকো |


http://www.peaceinislam.com/mujib7/6958/

যাই হোক প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন মহানবী (সা.) মদীনা সনদ ও বিদায় হজে যা বলে গেছেন ঠিক সেভাবে দেশ চলবে। সেহেতু আমরাও তার এ ঘোষণায় আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন ই প্রমাণ করবে এ ব্যপারে তিনি কতটা আন্তরিক । পাশাপাশি এও বুঝা যাবে যে কে আসল ধর্ম ব্যবসায়ী ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File