রাসূল(সঃ) এর প্রতি কটুক্তিকারি কবি কাব বিন আশরাফ হত্যার ঘটনা

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ রিজভী ১০ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:১২:২৪ দুপুর

কাব বিন আশরাফ ছিলো একজন ইহুদী নেতা এবং খুবই প্রভাব সৃষ্টিকারী জ্বালাময়ী কবি। যখন বদরে মুসলমানদের বিজয়ের সংবাদ মদীনায় পৌঁছালো, তখন কাব বিন আশরাফ সেই সংবাদ শুনে বলল, "যদি এই সংবাদ সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য মাটির নিচে থাকাই তার উপরে থাকার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ মৃত্যুই আমাদের জন্য শ্রেয়। কুরাইশদের পরাজয়ের পর আর বেঁচে থেকে কি লাভ!"

সে মুশরিকদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে কবিতা রচনা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো শুরু করলো। এরপর সে মক্কায় তার কবিতা ছড়িয়ে দিলো। কুরাইশদের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করে যুদ্ধে তাদের ক্ষয়-ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ করলো। শুধু এ পর্যন্তই নয়, এর থেকেও আরো বেড়ে গিয়ে সে এবার করে তার কবিতার মাধ্যমে মুসলিম নারীদেরকেও কটাক্ষ করা শুরু করলো। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

من لى بكعب إبن الأشرف فإنه قد أذى الله و رسوله

অর্থ: "কে এমন আছে? যে কাব ইবনে আশরাফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে! কেননা সে আল্লাহ এবং তার রাসূলকে কষ্ট দিচ্ছে।"

রাসূলের এই আহ্বান শুনে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রা. যিনি আউস গোত্রের একজন বিশিষ্ট আনসার সাহাবী ছিলেন তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, "হে আল্লাহর রাসূল! আদেশ করুন আমি আছি। আপনি কি এটা চাচ্ছেন যে আমি তাকে হত্যা করি?"

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "হ্যাঁ।"

রাসূলুল্লাহ সা. এর পক্ষ থেকে নির্দেশনা পেয়ে এবার মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রা. এবার অঙ্গীকার করলেন। প্রিয়নবী সা. কে কথা দিলেন যে তিনি নিজে কাব ইবনে আশরাফকে হত্যা করবেন।

বাসায় গিয়ে বিষয়টি নিয়ে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রা. চিন্তা করতে লাগলেন। ব্যাপারটা তার কাছে যেন কঠিন মনে হলো। কারণ কাব ইবনে আশরাফ তার সমর্থক দিয়ে পরিবেষ্টিত একটি দূর্গে থাকতেন যা ছিলো ইহুদী বসতির মধ্যে। তাই এই দুর্ভেদ্য দূর্গের ভেতর গিয়ে তাকে হত্যা করাটা ছিলো অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ।

তিনি ভাবতে লাগলেন কিন্তু কোন কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি তাঁর নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিল। জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য সামান্য কিছু আহার্যের বাইরে তিনি পানাহার করতে পারছিলেন না। এভাবে প্রায় তিনদিন কেটে গেলো।

এই খবর আল্লাহর রাসূলের নিকট পৌঁছলে তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, "তোমার কি হয়েছে হে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ? এটা কি সত্য যে তুমি পানাহার করা বন্ধ করে দিয়েছো?"

মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ রা. বললেন, "জি হ্যাঁ।"

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, "কেন?"

তিনি বললেন, "আমি আপনার কাছে একটি অঙ্গীকার করেছি আর সেই অঙ্গীকার পূরণ করা নিয়েই আমি চিন্তিত।"

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন,

إنما عليك الجهد

অর্থ: "তোমার কাজ তো কেবল চেষ্টা করা।" (সামগ্রিক ফলাফলের দায়িত্ব মহান আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও)

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আসুন আমরা এ বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবি। আমরা একটি মুহূর্তের জন্য থামি এবং হৃদয়েরর দৃষ্টি দিয়ে বিষয়টি অনুধাবনের চেষ্টা করি যেমন কি অধিক পরিমাণ আনুগত্য ও উদ্দীপনার এই সাহাবীর (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তার উপর সন্তুষ্ট হোন) মধ্যে ছিল। তিনি পরিস্থিতি নিয়ে এত বেশী চিন্তিত ছিলেন যে, তিনি নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছিলেন না। কারণ এটি ছিল তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি অঙ্গীকার করেছেন, দিয়েছেন এবং তার পর তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন যে তিনি কি সেই অঙ্গীকার পালন করতে পারবেন কিনা।

যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সাহস দিলেন, আশ্বস্ত করে বললেন, "তুমি তোমার চেষ্টা কর, আর বাকীটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও", তখনিই তিনি আশ্বস্ত হলেন এবং পুনরায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে শুরু করলেন।

আজকে রাসূলূল্লাহ সা. এর অবমাননার বিষয়টি নিয়ে আপনি কতটুকু চিন্তিত? আমরা কতটুকু উদ্বিগ্ন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মানের, ইসলামের মর্যাদা এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর কিতাবের বিষয়ে? আমরা বিষয়গুলোকে কতটা গুরুত্ব সহকারে নেই?

মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রা. একাধারে তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত তার প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন। আজ আমরা মুসলিমদের মাঝে পুনরায় এই সাহাবীর মনোভাবের পুনরাবৃত্তি চাই।

মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রা. তার দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি একটি পরিকল্পনা করলেন। এজন্য রাসূলের কাছে একটি বিষয়ের অনুমতি চাইলেন। প্রিয়নবী সা. এর কাছে এসে তিনি বললেন,

"হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে তাহলে আপনার বিরুদ্ধে কথা বলার অনুমতি দিতে হবে।" [পরিকল্পনার বিষয় হলো যে, আমাকে আপনার ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলতে হবে] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "এ ব্যাপারে তোমাকে অনুমতি দেয়া হলো।"

এবার মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ রা. আনসারদের মধ্যকার আওস গোত্র থেকে অল্প কয়েকজনকে নিয়ে ছোট একটি জামাত গঠন করলেন। যাদের মধ্যে একজন ছিলেন আবূ নায়লা। এটি কথিত আছে যে আবূ নায়লা ছিলেন কাব বিন আশরাফের সৎভাই। তাঁরা কা'ব ইবন আশরাফের জন্য একটি ফাঁদ পাতলেন।

মুহাম্মাদ বিন মাসলামা রা. তার ক্ষুদ্র দলটি নিয়ে কাব ইবন আশরাফের সাথে সাক্ষাত করতে গেলেন। কা'ব এর সাথে দেখা হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী আল্লাহর রাসূলের দিকে ইঙ্গিত করে কাবকে বললেন,

"এই লোকটি আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে একটি পরীক্ষা ও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে একটি দুর্যোগ এবং তার জন্যই পূরো আরব আমাদের শত্রু হয়ে গেছে এবং আমাদের সাথে লড়াই করছে।"

কাব বললো, "আমি তো এটি জানতাম। তাই তো তোমাদের আগেই বলেছি এবং সামনে তোমরা আরও বিপদে পড়বে, খারাপ সময় দেখবে।"

মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ বললেন, "আমরা অপেক্ষা করতে চাই এবং দেখতে চাই এর শেষ কিভাবে হয়। তিনি এখন কা'বের সাথে একটি ভাব তৈরী করার চেষ্টা করতে লাগলেন। তিনি বললেন,

"হ্যাঁ, কাব, লোকটার জন্য আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটছে, আর্থিকভাবে একটু সমস্যায় পরে গেছি। তোমার কাছ থেকে আমরা কিছু ধার নিতে চাই, যার বিনিময়ে প্রয়োজনে তোমার নিকট কিছু জামানাতও রাখতে রাজি আছি।"

কা'ব বলল, "ঠিক আছে, তাহলে তোমাদের সন্তানদের রেখে যাও।"

তাঁরা বললো, "তোমার কাছে আমাদের সন্তানদের রেখে গেলে তাদের বাকী জীবন এই খোঁটা শুনতে হবে যে, সামান্য ঋণের জন্য তাদের পিতা

তাদেরকে বন্ধক রেখেছিল। এটি তাদের সারা জীবনের জন্য একটি লজ্জাস্কর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।"

কা'ব বললো, "তাহলে তোমাদের স্ত্রীদের রেখে যাও।"

তারা বললো, "তোমার মতো সুদর্শন পুরুষের নিকট আমরা কিভাবে আমাদের স্ত্রীদের রেখে যাবো? তার চেয়ে বরং আমরা আমাদের অস্ত্রগুলো তোমার নিকট বন্ধক রেখে যেতে পারি।"

সে বলল, "ঠিক আছে, এটি হতে পারে।"

মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ কা'বের জন্য এভাবে ফাঁদ পাতলেন। যাতে তার কাছে পরের বার অস্ত্র আনতে গেলে সে সন্দেহ না করে। তিনি পরবর্তী সাক্ষাতের জন্য রাতের একটি মুহূর্তকে নির্ধারণ করলেন এবং নির্ধারিত সেই সময়ে গভীর রাতের উপযুক্ত এবং সঠিক সময়ে তার কাছে ফিরে এলেন। ঘরের বাইরে থেকে এবার তিনি কা'বকে ডাক দিলেন।

কাবের স্ত্রী সেই আওয়াজ শুনে বলল, "আমি এই ডাকের মধ্যে রক্তের গন্ধ পাচ্ছি।"

কা'ব বলল, চিন্তা করো না, "এটি হচ্ছে আমার বন্ধু মাসলামাহ এবং আমার ভাই আবু নায়লা।"

এতে বুঝা যায় যে, তাদের মাঝে জাহেলিয়াতের সময় থেকেই সুসম্পর্ক ছিলো, বন্ধুত্ব ছিলো।

অতঃপর সে নিচে গেলো মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ রা. ও তার সাথীদের সাথে দেখা করতে। ইতোমধ্যে তারা একটি সংকেত ঠিক করে নিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ তাদের বললেন, "আমি কৌশলে ওর মাথা ধরবো। যখন তোমরা আমাকে ওর মাথা ধরতে দেখবে, তখনই তালোয়ার দিয়ে তাকে শেষ করে দেবে।" এটাই ছিল তাদের সংকেত।

কাব আসতেই তারা তাকে বললেন, "আজকের রাতটি শি'ব আল আযুজে গিয়ে গল্প করে কাটিয়ে দিলে কেমন হয়?"

সে বলল, "বেশ।"

এভাবে তারা তাকে তার দূর্গ থেকে বের করে শি'ব আল আযুজ নামক স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হলো।

সেখানে পৌঁছানোর পর, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ কাবকে বললেন, "বাহ! তোমার থেকে তো অনেক সুন্দর ঘ্রান আসছে! আমি কি এর ঘ্রান নিতে পারি?" এটা বলে তিনি কা'বের চুলের দিকে ইঙ্গিত করলেন। চুলে তেলজাতীয় কোন সুগন্ধী লাগানো ছিল।

সে বলল, "হ্যাঁ, নাও।"

মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ তার হাত দিয়ে কাবের মাথাটাকে টেনে নিলেন এবং শুকে দেখলেন। তিনি বললেন, "এটাতো দারুণ। (এটি ছিল দেখার জন্য একটি পরীক্ষা।)"

তিনি বললেন, "তুমি কি আরেকবার আমাকে এর ঘ্রান নিতে দেবে?"

সে বলল, "হ্যাঁ, নাও।"

এবার তিনি তার মাথার চুল গুলোকে ভালোভাবে ধরলেন এবং তালোয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করতে থাকলেন। সাথে আসা আওসের সাহাবীরাও এগিয়ে এলেন। কিন্তু সেগুলো তাকে মারার জন্য যথেষ্ট ছিল না এবং সে সাহায্যে জন্য চিৎকার করে উঠল। তাৎক্ষণিকভাবে সবগুলো দূর্গতে আলো জ্বলে ওঠল। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ বললেন,"আমার মনে পড়ল যে আমার কাছে একটি ছুরি আছে। তাই আমি সেটা বের করে তা দিয়ে তার তলপেটে আঘাত করলাম। একেবারে নিম্নাংশের হাড় পর্যন্ত সেটি গেঁথে দিলাম এবং কাজ শেষ করে দ্রুত সে স্থান ত্যাগ করলাম।"

মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাহ এবং আওসের লোকেরা এভাবেই সেই পাপাচারী শয়তানকে দেখে নিয়েছিলেন, যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিরস্কার করত।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. তার "আস সো-রি মিল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল" বা "রাসূলকে অভিশাপকারীর বিরুদ্ধে উদ্যত তালোয়ার" নামক কিতাবে এই ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই ঘটনা উল্লেখ করার পর তিনি কিছু বিষয় উল্লেখ করেন যা আমরা আলোচনা করব।

প্রথমেই তিনি সীরাতের একজন বিজ্ঞ শায়খ আল ওয়াকিদী রহ. এর বর্ণনা আনেন। আল ওয়াকিদী এই ঘটনার পরিণতি সম্পর্কে বলেন,

"এটি একটি খুবই শক্তিশালী এবং বিশেষ অভিযান ছিল এবং এর ফলাফলও ছিল ব্যাপক। এর ফলে মদীনার চারপাশের ইহুদী গোষ্ঠী এবং কাফির সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।"

ওয়াকিদি রহ. বলেন, "সকালে ইহুদীরা মুশরিকদের সাথে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমাদের মধ্যে একজন শীর্ষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে গত রাতে হত্যা করা হয়েছে।"

তারা বলল, "কুতিলা গিলাহ" এবং গিলাহ মানে হচ্ছে গুপ্তহত্যা। এই শব্দটির সাথে নেতিবাচক অর্থ জড়িত কারণ এর মানে হচ্ছে এই ব্যক্তি খুন হয়েছে এবং তা হয়েছে আকস্মিকভাবে। সে এই ব্যাপারে জানত না। এটি দ্বিপাক্ষিক ছিল না, একে অপরের বিরুদ্ধে ছিল না, তাকে গোপনে তার অবগতির বাইরে হত্যা করা হয়েছে।

তারা বলল, "তাকে কোন অপবাদ ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে।" কেন তাকে হত্যা করা হল, এটাই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রশ্ন।

কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইহুদীদের মধ্যে একটি চুক্তি ছিল। সীরাতে এটি ভালোভাবেই উল্লেখ আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আসেন তখন তাঁর সাথে সকল ইহুদীদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। এখন কাব ইবনে আশরাফকে হত্যা করা হয়েছে, কেন? এটা কেন হল?

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বললেন?

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

إنه لو قر كما قر غيره ممن هو على مثل رأيه ما قتل. ولاكنه نال منا الأذى وهجانا بشعر ولم يفعل هذا أحد منكم إلا كان السيف

"সে যদি শান্ত হয়ে যেত সইে ব্যক্তিদের অনুরূপ যারা তার মতামত অনুসরণ করে অথবা একই মত পোষণ করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হত না। কিন্তু সে আমাদের ক্ষতি করছে, তার কবিতা দিয়ে আমাদের মানহানি করেছে এবং তোমাদের মধ্যে যেই এই কাজটি করত আমরা তালোয়ার দিয়ে এর বোঝাপড়া করতাম।"

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে "কাব ইবনে আশরাফরে মতো আরো অনেকে আছে যারা অন্তরে এই বিশ্বাস ধারণ করে কিন্তু তাদেরকে সেজন্য হত্যা করা হয়নি।" তার অবিশ্বাসের জন্য তাকে হত্যা করা হয়নি, এই জন্য হত্যা করা হয়নি যে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঘৃনা করত, এই জন্যও না যে সে মুসলমিদের ঘৃনা করত।

না! এরকম অনকেইে আছে, যাদরে অন্তরে এই ব্যাধি আছে কিন্তু আমরা তাদরেকে ছেড়ে দিয়েছি। সে যদি শান্ত হয়ে যতে অন্যদের মত, যারা শান্ত হয়ে গিয়েছিল আমরা তাকে হত্যা করতাম না। কিন্তু সে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে এবং তার কবিতা দ্বারা আমার মানহানি করছে।

এরপর তিনি ইহুদীদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার করে দিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন ইহুদী বা মুশরিক যদি কথার মাধ্যম, কবিতা বা মিডিয়ার মাধ্যমে আমার মানহানি করার চেষ্টা করো, তাহলে আমরা তাকে এভাবেই দেখে নেবো। তোমাদের আর আমাদের মধ্যে তলোয়ার ব্যতীত আর কিছুই করার থাকবে না! সেখানে কোন সংলাপ হবে না, কোন ক্ষমা করা হবে না, কোন সহমর্মিতা থাকবে না, মীমাংসার কোন উদ্যোগ নেয়া হবে না। আমার আর তোমাদের মধ্যে তখন থাকবে শুধুই তলোয়ার। এরপর তিনি তাদেরকে ডেকে একটি দলীলের স্বাক্ষর করতে বললনে যেখানে তারা সবাই সম্মতি জানাল যে তারা তাঁর বিরুদ্ধে আর কোন কথা বলবে না।

ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, এই ঘটনাটি এ বিষয়ের একটি শক্তিশালী প্রমাণ যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অবমাননাকারীদের হত্যা করার ব্যাপারে মুসলিমদেরকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করা হবে। এমনকি যদি তারা মুসলিমদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে তবুও। এটা এতই কঠিন একটি বিষয় যে, মুসলিমদের সাথে যৌথ অঙ্গীকারভুক্ত কোনো অমুসলিম এটি করলেও তার বিরুদ্ধে একই কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

ইবনে তাইমিয়্যাহ তার কিতাবে এই হুকুমের বিরুদ্ধে উম্মোচিত কিছু যুক্তি ও সংশয়েরও অপনোদন করেছেন। সেগুলোর জবাব দিয়েছেন। তিনি সেই যুক্তিগুলো খন্ডন করতে এই ঘটনাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন।

কিছু লোক হাদীসের অর্থকে বিকৃত করতে চেয়েছে এবং বলেছে যে, কা'বকে হত্যা হয়েছে কারণ সে কাফিরদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করছিল।

ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, না! তাকে হত্যা করা হয়েছে তার কবিতার জন্য, যেটি তার মক্কায় যাওয়ার পূর্বে ছিল। তাই তার মক্কায় যাওয়া এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে উৎসাহিত করার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই, স্পষ্টরূপে এই সিদ্ধান্তটি তার কবিতার জন্যই দেয়া হয়েছিল। তারপর তিনি বলেন,

কাব ইবনে আশরাফ যা করেছিল তার সবকিছুই ছিল আকর্ষণীয় কথার দ্বারা ইসলামের ক্ষতিসাধন। হত্যাকৃত কাফিরদের প্রতি তার শোক প্রকাশ এবং তাদের যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করা, তার অভিশাপ, অপবাদ, ইসলামকে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করা, ছোট করে দেখা এবং কাফিরদের ধর্মকে অগ্রাধিকার দেয়া - এসব কিছুই ছিল তার মুখ থেকে বের হওয়া কাব্যিক ছন্দের কারসাজি।

সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারিরীক যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিলো না। জড়িতছিল মুখ নিসৃত সাহিত্য আর সাংস্কৃতিক যুদ্ধে। তার আক্রমণ ছিলো আকর্ষণীয় শব্দাবলীল মাধ্যমে। সে মাধুর্যপূর্ণ বাক্যবিন্যাসের দ্বারা রচিত কাব্য দিয়ে ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি করছিলো।

আর এটিই হচ্ছে একটি হুজ্জাহ - এটি একটি প্রমাণ তাদের বিরুদ্ধেও যারা এই প্রিয়নবী সা এবং ইসলামের অবমাননা করবে। এটি পরিস্কার, যে ব্যক্তি কবিতা ও অপবাদ দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ক্ষতি করবে, তার রক্ত কোনভাবেই সুরক্ষিত নয়। -এই ছিলো কা'ব ইবনে আল আশরাফের ঘটনা।

[taken primarily from 'the dust will never settle down', one of the great works of sheikh anwar al-awlaki]

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File