একটি ছবি এবং বাংলাদেশের মিডিয়া পাড়ার আরেকটি পঁচন
লিখেছেন লিখেছেন উচিত কথা ১২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:২৯:১৮ বিকাল
ছবিটি’র সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার আছে কি? ছবিটির মধ্যমনি কালো জ্যাকেট পরিহিত দু’হাত তুলে যাকে মোনাজাত করতে দেখছেন, তিনি বাংলাদেশের লক্ষ কোটি তরুনের প্রাণের স্পন্ধন আগামীদিনের বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক বিএনপি’র সিনিয়র সহসভাপতি তারেক রহমান, আর যেখানে দাড়িয়ে আছেন সেটি শেখ মুজিবের মাজার প্রাঙ্গন, যে দিকে মুখ করে তিনি দাড়িয়ে আছেন সেটি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের কবর। বিভিন্নসূত্র মতে ছবিটি ২৭ জানুয়ারী ’০৪ দিবাগত রাতে তোলা। গোপালগঞ্জে প্রতিনিধি সম্মেলন শেষে ঢাকা ফিরে আসার আগে তিনি যান টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের মাজারে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মাজারের খাদেমকে ডেকে কবর জিয়ারত করেন এবং জিয়ারত শেষে তার আত্মার শান্তির জন্য মোনাজাত করেন। সে সময় ব্যপারটি কম বেশী জানাজানি হলেও অতটা প্রচার পায়নি হয়তো তারেক রহমানের স্বভাবসূলভ উদার আর প্রচারবিমূখ নীতির কারনেই। আর এরকম একটি ঘটনা আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনা পরবর্তীতে জানতে পারেননি এমনটি বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারন থাকতে পারেনা।
এ ছবিটির একটা সুন্দর, গঠনমূলক এবং সম্ভাবনাময় বার্তা ছিল।তারেক রহমান চেয়েছিলেন তার পূর্বসূরী জিয়াউর রহমানের পদাংক অনূসরন করে একটি আধূনিক বাংলাদেশ গড়তে। আর তা করতে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সকল কুষ্মান্ডতা, জড়তা, শঠতা, হীনমন্যতা, বিবেধ পরিহার করে উদার হতে হবে।শেখ মুজিবকে নিয়ে তর্কের যেমন শেষ নেই তেমনি বিতর্কেরও।কিন্তু উদারতায় বিতর্কের কোন স্থান থাকতে পারেনা। কোন সমালোচনাকে সামনে নিয়ে উদার হওয়া যায়না। অন্যকে কোন দীক্ষা দেয়ার সে বিদ্যায় আগে নিজেকেই দীক্ষিত হতে হয়।হয়তো এমনটি ভেবেই তারেক রহমান শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করে নিজের উদারতাই তুলে ধরতে চেয়েছেন।
বেগম জিয়াতো বটেই তারেক জিয়াও বরাবরই একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আর সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার জন্য দরকার নিজেদের রাজনৈতিক যুদ্ধাংদেহী মনোভাব পরিহার করা। বহুদলীয় গনতন্ত্রের দেশে একের সাথে আরেকের মতবেদ থাকতেই পারে, কিন্তু কারো সাথে শত্রুতা থাকবে কেন? চিরাচরিত এ রাজনৈতিক শত্রুতাকে বর্জন করে ভিন্নমতের প্রতি জাতীকে শ্রদ্ধামনোনশীল করে তোলে উন্নয়নের স্বার্থে ঐকমত্যের এক ছাতার নীচে নিয়ে আসার জন্য তারেক রহমানের উদ্যোগ ছিল চোখে পড়ার মত প্রশংসনীয়। শুধু শেখ মুজিবের কবর জিয়ারতই না বর্তমান অগনতান্ত্রিক সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কেও একবার ফুলের তোড়া পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন অবশ্য যদিও সজীব ওয়াজেদ জয় তা প্রত্যাখান করেছিলেন।
অবশ্য তারেক রহমানের এসব উদার মনমানসিকতার তথা শেখ মজিবের কবর জিয়ারত এবং তার দৌহিত্রকে ফুলের তোড়া দেয়ার বিপরীতে পুরস্কারও পেয়েছেন চমকপ্রদভাবে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দীর্ঘদিনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ী থেকে দেশের তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে জোর করে অসম্মানের সাথে বাড়ী থেকে বের হতে হলো। জিয়াউর রহমানকে আই এস আই এর এজেন্ট হতে হলো।প্যাকেজ পুরস্কারের অংশ হিসাবে ভবিষ্যত তাদের পুরস্কারের তালিকায় নাকি রয়েছে জিয়উর রহমানের বিরোত্তম খেতাব কেড়ে নেয়া, তাঁর মাজার ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার। বাজারে এমনটিও চাউর আছে যে কোনদিন রাতের অন্ধকারে জিয়াউর রহমানের মাজার ভেঙ্গে ফেলতে পারে।
এ যদি হয় বর্তমান একনায়কতান্ত্রিক শেখ হাসিনার মালকানাধীন সরকারের মনমানসিকতা, তাহলে হঠাত এ ছবিটি কেন? আর এ ছবিটি নিয়ে এত লেখালেখিই বা কেন? আমাদের স্মৃতিশক্তি যদি একেবারে নষ্ট হয়ে না যায়, দিন তারিখ ক্ষন কিংবা সন মনে করতে না পারলেও তারেক রহমান যে একবার শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন তা সচেতনমহল মাত্রই জ্ঞাত। হঠাত এ ছবিটি সামনে এনে তারেক রহমান অনেক উদার মনের মানুষ ছিলেন, শেখ হাসিনা সৃষ্ট মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের অত্যাচারের অনেকটা পঙ্গুত্বভরন করে বিদেশের মাটিতে চিকিতসাধীন আছেন, দেশে গনতন্ত্রের আকাল পড়েছে তাই তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, এমনটি কি? বাহ!এমনটি হলেতো কথাই ছিলনা এক তারেক রহমান কেন, দেশের প্রতিটি মানুষই উদার হয়ে যেত।
আসলে ব্যাপারটি ঐরকম না, বাস্তবতা অনেক ভিন্ন এবং অনেক সূদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রে ভরপূর। শেখ হাসিনা কিংবা সুবিধাভূগী আওয়ামীরা বরাবরই মনে করে বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তাদের ব্যাক্তিগত সম্পদ এবং মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র নায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু কালের আবর্তে সেই শেখ মুজিব যখন ইতিহাসের কাছে ধরাশয়ী, ইতিহাসের কাঠগড়ায় বিশেষ করে সম্প্রতি একে খন্দকার, তাজউদ্দিন কন্যা এবং তারেক রহমান যখন শেখ মুজিবের কুকীর্তিগুলো একের পর জনসম্মূখে নিয়ে আসছেন তখন তাদের প্রয়োজন ছিল ১৮০ ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘুরে দাড়ানো। কিন্তু যেভাবে মিথ্যার উপর গড়ে উঠা মহা পুরুষ শেখ মুজিবের সমাধি থেকে একের পর এক মিথ্যা ইতিহাসের ইট গুলি খসে পড়তে শুরু করেছে তাতে করে ১৮০ ডিগ্রী ধনাত্মক এঙ্গেলে ঘুরাতো দূরের কথা পারতপক্ষে ১৮০ ডিগ্রী ঋনাত্মক হয়ে ঘুরতে বসেছে। তাই এ মুহুর্তে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধুর মত করে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সার্টিফিকেট। আওয়ামী ইতিহাসবিদরাতো বটেই আওয়ামী কলমবাজরাও বসে থাকেননি।অবশেষে খুজে পেলেন তারেক রহমানের এ ছবিটি। ব্যাস একসাথে হুমড়ী খেয়ে পড়লেন কল্পকাহিনী বলা শুরু করলেন। এখানে আওয়ামী ভাড়াটে কলামিষ্ট কিংবা আওয়ামী সাংবাদিকরা ছবিটি জনসম্মূখে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য তারেক রহমান একসময় শেখ মুজিবকে জাতির পিতা কিংবা ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন হঠাত তিনি কেন শেখ মুজিবকে ‘পাকবন্ধু’ বললেন তার প্রতিক্রিয়া দেখোতে। যেভাবেই প্রথমে তারেক রহমানের এরকম একটি কর্মের জন্য তাকে প্রশংসা করা হোক না কেন তাদের লেখনীতে তারা বুঝাতে চেয়েছেন তারেক রহমান নষ্ট কিংবা ভ্রষ্টের পথে।
প্রকৃত পক্ষে তারেক জিয়ার এরকম একটি উদার কাজের বিপরীতে আওয়ামী ভাড়াটে লেখকদের উচিত ছিল একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের উদারতাকে সামনে নিয়ে এসে শেখ হাসিনাগংগদের হিংসাত্মকমূলক একনায়কতান্ত্রিক আচরন ছেড়ে দিয়ে উদার গনতান্ত্রিক পথে ফিরে আসার আহবান জানানো। কিন্তু তারা তা না করে বরং ‘প্রতিহিংসামূলক প্রচারনাই কি উদার রাজনীতি? কিংবা নিজেকে খাটো করবেন না তারেক রহমান’ এরকম কলাম লিখে প্রকারন্তরে তারেক জিয়ার দোষই খুজতে চেয়েছেন। যেমন কুকুর তেমন মুগুর না হয়ে কুকুর যত হিংস্রই হোক না কেন তাকে মাংস ভাত দিয়ে পুষতে হবে -সাংবাদিকতার নামে এরকম অসংখ্য লেখা দেখে মনে হয় তারেক রহমানের উদারতার সাক্ষ্য এছবিটি মিডিয়া পাড়ায় নতুন করে পচন ধরিয়েছে।
___________________মম, দাম্মাম, ১২ নভেম্বর ২০১৪
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পুরাই ভন্ড একটা পোলা
তার ইদানিং কালের কাঁদা ছুড়াটা খুবই দৃষ্টিকটু।
বিএনপিকে খুশী করার জন্য নয়, এটা সত্য যে আ’লীগ থেকে বিএনপি অনেক উদার। তবে সেক্ষেত্রে মনে হয় আ’লীগের চেয়ে রাজনীতিও কম বুঝে।
যেমন নিয়োগ বানিজ্যে আ’লীগ ১০০ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে তার শতভাগই হয় দলীয়, এবার সেটা টাকা খেয়ে হোক আর যেভাবেই হোক।
আর বিএনপি ১০০ নিয়োগ দিলে তার মধ্যে অর্ধেকই হয় আ’লীগের সেটা টাকার কাছে ওরা সবাইকে সমান করে ফেলে।
বঙ্গবন্ধুর মাজারে তারেকের এই ছবি দেখে আ’লীগের নেতারা খুব নাচন দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে---- ছবিটি থেকেও অন্যদলের নেতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শনের একটি উদাহরণ প্রকাশ পেয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন