দেশে নব্য হিটলারের জন্ম হয়েছে……….
লিখেছেন লিখেছেন উচিত কথা ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:১১:১২ সকাল
শুধুই কি হিটলার, আর মুসোলিন? মেকিয়াভেলী মন খারাপ করবেনা? আর প্লেটো’র তত্বের ধারকই বা কে হবে?
কেমন আছে প্রিয় মাতৃভূমি? আর এর সন্তানেরাই-বা কেমন আছে?এক কথায় জবাব দেয়া যাবে কি? দুধ ভাতে? ডাল ভাতে? মাছ ভাতে?মাংস পোলাওতে?নাকি পান্তা আর কাঁচা মরিচে?অথবা খেয়ে, না খেয়ে? এর কোনটিই না, আবার হয়তো সব কটি'ই।কিন্তু কেন? কেউ মাংস পোলাও খাবে আবার কেউ পান্তা খেতে গিয়ে কাচা মরিচ পাবেনা। এমনটিতো হবার কথা ছিলনা। হে মাতৃভূমি দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর এক সাগর রক্ত ঝরিয়ে তোমাকে অর্জন, তারপর অতি আদরে নাম রাখা বাংলাদেশ। তোমাকে অর্জন করতে গিয়ে ঝরেছে লক্ষ, লক্ষ প্রাণ আর কলঙ্ক-ভোজা মাথায় নিয়েছে দুলক্ষ মা-বোন। এত ত্যাগের বিনিময়ে তোমার সন্তানরদের আজ এ অবস্থা কেন?
স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যতো ছিল গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা -যার মধ্য দিয়ে শোষনমুক্ত সমাজ গড়ে তোলে দেশের প্রত্যেক মানুষকে স্বাধীনতার সূফল ভোগ করতে দেয়া। ধনী আর দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে আনা? কোথায় আজ গনতন্ত্র? আর গনতন্ত্র থাকলে গনতন্ত্রের ঠিক সম্পূর্ন বিপরীত মুসোলিন, হিটলার আর মেকিয়াভেলী’র নামটাই বা কেন কেন উচ্চারিত হবে স্বাধীন বাংলাদেশের গনতন্ত্রকামী মানুষের মুখে?পৃথিবীর সভ্য মানুষগুলো যখন এই একনায়কতান্ত্রিক মতবাদগুলোর সম্পূর্ন বিরোধী তখন মুষ্টিমেয় ক্ষমতালোভী শাসক গোষ্ঠী কেনইবা এগুলোকে আকড়ে থাকতে চায়? কি ছিল এই মুসোলিনী, হিটলার আর মেকিয়াভেলীর মতবাদে?
ফ্যাসিবাদের মূল হোতা ছিলেন ইতালীর বেনিটো মুসোলিনী। রোম জয়ের ঠিক দুবছর পূর্বে অথ্যাত ১৯২০ সালে তিনি ইতালীতে ‘ফ্যাসিষ্ট’ নামে একটি দল গঠন করেন। ফ্যাসিবাদের মূল বক্তব্য ছিল Everything for the state, nothing against the state, nothing outside the state -অথ্যাত সব কিছুই রাষ্ট্রের জন্য, রাষ্ট্রর বিরুদ্ধে কোন কিছুই না, আর রাষ্ট্রের বাইরে কোন কিছু নেই। ১৯২২ সালে ইতালীর রাজধানী রোম জয়ের পর মুসোলিনী তার ফ্যাসিবাদ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে যখন দেখলেন যে, ধর্ম এই তত্ব বাস্তবায়নে বড় বাধা তখন তিনি যেকোন ধর্মের সাথে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন করে শাসক শ্রেনীর একচেটিয়া আধিপাত্য ও কর্তৃত্ব স্থাপনে উতসাহিত হয়ে উঠেন।
ফ্যাসিবাদের মতে রাষ্ট্রই সর্বশক্তিমান, রাষ্ট্র ঐক্য ও কল্যাণের প্রতীক। ব্যাক্তির জন্য রাষ্ট্র নয় বরং রাষ্ট্রের জন্য ব্যাক্তি। ফ্যাসিবাদ ব্যাক্তি স্বাধীনতা এবং গনতান্ত্রিক চিন্তাভাবনায় বিশ্বাস করেনা।ফ্যাসিবাদের তত্বমতে দলীয় প্রধান, সরকার প্রধান, এবং রাষ্ট্র প্রধান একই ব্যাক্তি হবেন। সমগ্র রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রন করবে একটি মাত্র দল। বিরোধী দল বা মত বলতে কিছুই থাকবেনা। মিডিয়া বা প্রচার মাধ্যম সরকারের পক্ষ এবং সরকারী দলের পক্ষেই প্রচার, প্রকাশনা করবে। সরকারের বিপক্ষে কোন কিছুই প্রচার কিংবা প্রকাশনা বের করতে পারবেনা।
এরপর হিটলার। এডলফ হিটলার মুসোলিনীর চেয়ে অধিক ক্ষমতা সম্পর্ন হলেও মূলতঃ তাত্বিক দিক দিয়ে ছিল মুসোলিনীর শিশ্য। ১৯৩৮ সালে মুসোলিনীরে অনুকরনেই ‘নাৎসী’ নামের রাজনৈতিক দলটি গঠন করে জার্মানীর ক্ষমতা দখল করেন। ১৯৩৯ সালে ইতালী তথা মুসোলিনীর সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সূচনা করেন। পৃথিবীর নৃশংস হত্যাকারীদের মধ্যে হিটলারই সবচেয়ে বেশী কুখ্যাত।হিটলারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন জোসেফ গোয়েবলস। তার তথ্যটি সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। যা Big Lie Thoery হিসাবেও পরিচিত। তার সূত্রটি ছিল “If you tell a lie big enough and keep repeating it, people will eventually come to believe it. The lie can be maintained only for such time as the State can shield the people from the political, economic and/or military consequences of the lie. It thus becomes vitally important for the State to use all of its powers to repress dissent, for the truth is the mortal enemy of the lie, and thus by extension, the truth is the greatest enemy of the State.”
যদিও তার সংক্ষিপ্ত রুপ আমরা সবাই কম বেশী জানি। সংক্ষিপ্ত রুপটি ছিল ‘একটা মিথ্যাকে বার বার বলতে থাকলে এবং প্রচার করতে থাকলে এক সময় তা সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।‘ হিটলারের গোপন পুলিশ বাহিনীর নাম ছিল গেষ্টাপো। এই বাহিনী বিনা কারনে লোকজনকে ধরে নিয়ে নির্বিচারে হত্যা করতো। আর এ হত্যার জন্য কখনই তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হতোনা।
কিন্তু হিটলার, মুসোলিনী কিংবা গোয়েবলসকে আরেকটু পিছনে রেখে নিকোলো মেকিয়াভেলী তার 'দি প্রিন্স' গ্রন্থে ১৫০০ শতকের শুরুর দিকে স্বৈর শাসকদের জন্য দেয়া দর্শন ছিল আরো ভয়াভহ। মেকিয়াভেলীর এই দার্শনিকতা ‘মেকিয়াভেলিয়ান’ বিশেষন হিসাবে ব্যবহৃহত হয়। তার মতে, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গেলে সৃষ্টিকর্তা, ধর্ম, নীতি, নৈতিকতা কিছুই স্বীকার করা যাবেনা। শাসক হবে শৃগালের মত ধূর্ত ও সিংহের মত হিংস্র। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে জনগনকে সবসময় ভীত সন্ত্রস্র করে রাখতে হবে।আইন প্রয়োগে সুফল না আসলে পাশবিকতার পথ বেছে নেয়া যেতে পারে।আর পাশবিকতার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখালে তা হিতে বিপরীত বয়ে আনতে পারে।শাসক তার শাসন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কোন ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারবে।ধর্ম, নীতি নৈতিকতার ব্যপারে ‘দ্বৈত নীতি’ অবলম্বন করতে পারবে। জনগনের জন্য আইন কানুন মানা অপরিহার্য, শাসকের জন্য নয়।শাসক প্রয়োজন অনুযায়ী আইন অনুসরন করবেন এবং প্রয়োজনে নতুন আইন, বিধি বিধান, নীতি পরিবর্তন কিংবা সংযোজন করবেন।শাসকদের জন্য কপোটতা বা ভাঁড়ামো দোষের না, প্রয়োজনে বেশ ধরবেন অথবা ভান করবেন।ভিন্ন পরিস্থিতিতে সব কিছু জনগনকে খুলে বলবেন না। সময় এবং পরিস্থিতির সাথে তাল মিলাতে গিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী ওয়াদা করবেন, দয়া দেখাবেন, মানবতা রক্ষা করবেন, ধর্ম মানবেন, ধর্ম বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন। কৌশলে মানুষের সাথে প্রতারনা করবেন। মানুষ যাতে প্রতারনার কৌশল ধরতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকবেন। যেকোন পথ অবলম্বন করে শাসককে ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। আর ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে সন্ত্রাসী, গুন্ডামী, ভন্ডামী, বিশ্বাসঘাতকা করা কোন দোষ বা অপরাধ বলে গন্য হবেনা।
০৫ জানুয়ারীর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের আগ-পর অনেকে বলে আসছেন হিটলারী কিংবা মুসোলিনী কায়দায় সরকার দেশ পরিচালনা করছে। গত কয়েকদিন আগে বেগম খালেদা জিয়া তার নাটোরের জনসভায় বলেছেন দেশে নব্য হিটলারের উথ্যান ঘটেছে। ব্যাপারটা গভীরভাবে অবলোকন করলে দেখা যায় এ সরকার আসলে এককভাবে হিটলার, মুসোলিনী কিংবা মেকিয়াভেলীর দর্শন মতে দেশ চালাচ্ছে এমনটি মনে হয় বলা কঠিন।
তবে দেশের শাসন কার্য যেভাবে চলছে তাতে মনে হয় বিখ্যাত দার্শনিক সর্কেটিস এর ছাত্র আরেক বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটোর সেই বিখ্যাত উক্তির যথার্থ কার্যকারীতা এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান –‘Democracy passes into Despotism’ -অথ্যাত গনতন্ত্র সৈরতন্ত্রের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। অনেকটা বোতলটা দেখতে পানির মনে হলেও ভেতরে আসলে মদ। আসলে এখানে মূল উদ্দেশ্য ক্ষমতা। আর ক্ষমতার জন্য চাই আরো ক্ষমতা। সেটা অস্ত্র, গোলাবারুদ, কিংবা বিদেশী যেকোন আধিপাত্যবাদই হোক না কেন। কারন ক্ষমতাশীনরা তাদের ক্ষমতার জন্য মনে করে জনগন না বরং Power makes remain to power.
Government of the people, by the people, for the people গনতন্ত্র সম্পর্কে আব্রাহাম লিংকনের সেই বিখ্যাত উক্তি আগে পরিবর্তিত Government off the people, buy the people, far the people মনে হলেও এখন আর জনগনের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই জনগনকে কেনার্ও প্রয়োজন নাই সুতরাং এখন যদি কেউ বলে Government off the people, far the people মনে হয় ভুল হবেনা।
প্রশ্ন আসতেই পারে এতো দেখছি হিবিজিবি অবস্থা একেবারে হযবরল, তাহলে দেশটা চলছে কিভাবে?এ প্রসঙ্গে দুই পয়সার আমলের জোকস টাইপের একটা কিছু হয়তো উদাহরন হিসাবে টানা যেতে পারে -এক লোক যর কাছে মাত্র ছিল দুই পয়সা, এক মিষ্টির দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, হঠাত তার মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছিল। মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখে সর্বোচ্চ দু’পয়সা দিয়ে একটি মিষ্টি খাওয়া যাবে। কিন্তু তার সব খাওয়া চাই। তাই সে ভাবতে লাগলো কিভাবে খাওয়া যায়। হঠাত মাথায় ধুরন্ধরী বুদ্ধি চলে এলো। সে দোকানের কর্মচারীকে বলল বড় দেখে একটা বোল বা ঘামলা নিয়ে আসতে। কর্মচারী তা নিল। তারপর দোকানে থাকা বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি, চমচম, দদি, রসমালাই,জিলাপী, আমত্তি, কাচাগোল্লা ঐ বোলে নিতে বলল। কর্মচারী তার কথানুযায়ী তাই করল। এবার ঐ দু-পয়সাওয়ালা লোকটি বলল এবার ভাল করে ঘুটা দাও। কর্মচারী তাই করলো। তারপর লোকিট আদেশ দিল এবার এ থেকে আমাকে দু’পয়সার দাও।
বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় থাকা। জনগনের উপর বিশ্বাস কম। তাই জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রথমে হয়তো চেয়েছেন হিটলারী, মুসোলিনী, মেকাভেলিয়ান যে কোন একটি কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকা। কিন্তু এককভাবে কোনটি অনুসরন করেই সাফল্য আসছিলনা। আবার এ মতবাদগুলোর মধ্য থেকে কোনটি অনুসরন করছে জনগনও বুঝতে পারছেনা। তবে দেশের গনতন্ত্র যে এখন প্লেটোর তত্বানূনাসারে স্বৈরতন্ত্রের ভিতর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে, তা বলা যায়। একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে এখানে হিটলার, গোয়েবলস, মুসোলিনী, মেকিয়াভেলী’র ফ্লেভার বিদ্যমান। হয়তো বলা যেতে পারে সরকার যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই এক বোলে সবগুলো মতবাদ নিয়ে ঘুটা দিয়ে সেখান থেকে এক চিমটি জনগনের উপর প্রয়োগ করে করে ক্ষমতার স্বাধ ধরে রাখতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হবে কি? এখানে বলে রাখা ভাল ঐ দুই পয়সাওয়ালা মিষ্টির স্বাধ নিতে যাওয়া বেচারার শেষ পরিনতি কিন্তু ভাল ছিলনা; এখন এ সরকারের শেষ পরিনতি কি হবে, তা হয়তো সময় –ই- বলে দিবে।
_______________মম, দাম্মাম, ০৪ নভেম্বর ২০১৪
বিষয়: বিবিধ
২২১৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিশ্লেষণ ধর্মী সুন্দর লেখনী!ধন্যবাদ আপনাকে!
তবে...... দু;পয়সার ঐ ধুরন্ধর ব্যক্তির শেষ পরিণাম ভালো না হলেও সে কিন্তু দোকানের বার টা বাজিয়ে ছেড়েছে!
আগে থেকেই সাবধান না হলে-
পরিস্হিতি অনুধাবন করতে না পারলে সীমাহীন ক্ষতির শিকার হতেই হবে!
এক সময়ের নৃশংশ খুনী হিটলারকে এখন অনেকেই পছন্দ করতে শুরু করেছে ।
যার মুক্তির জন্য মানুষ রোজা রেখেছে তার মৃত্যুর পর তারা চোখের পানিও ফেলেনি ।
ইন্টারমেডিয়েটে পঠিত ইংরেজী প্যাট্রিয়ট কবিতার কথা প্রায়ই মনে পড়ে । কিভাবে একজন হিরো বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভিলেনে পরিনত হয় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন