Mr. Minister মজিবুল হকের বিয়ে বৈধ, তবে .......
লিখেছেন লিখেছেন উচিত কথা ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:২৮:২৩ সকাল
একজন সত্তর ছুঁই ছু্ঁই বুড়ো বিয়ে করলেন তার নাতনী বয়সী একজন উচ্চ শিক্ষিতা সম্ভাবনাময়ী তরুনীকে।সম্ভবত কিছুটা হলেও আর্থিক অনটনীও বটে।আর এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড। দুষ্ট লোকেরা অনেক কান্ডই ঘটিয়েছেন। ভদ্রলোকেরাও কিন্তু পিছিয়ে ছিলেন না মোটেও।অশ্লীলতাও পৌছেছে তার সীমা অতিক্রম করে।সামাজিক মিডিয়া বাদই দিলাম কেননা এখানে নিজস্ব বিবেকবোধ ছাড়া আর বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই বললেই চলে। তবে সামাজিক মিডিয়াগুলোক যে রসদ জমিয়েছে মিডিয়াগুলো তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মিডিয়াকে বড় বড় রাঘববোয়ালরা দুশে তাই আমার মত চুনোপুটিও দুশছে ব্যাপারটা আসলে তা না। গনতান্ত্রিক দেশে গনতন্ত্রের আকালে মানুষ শত অবিশ্বাসের পরও মিডিয়াতেই তাদের শেষ বিশ্বাস রাখতে চায়। আর মানুষের এ বিশ্বাসের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই মিডিয়া যে যার মতো করে, যা ইচ্ছা খাইয়ে দিচ্ছে, আর আমরাও তা গিলে নিচ্ছি অনেকটা বধ্য ছেলের মতো অথবা একান্ত নিরুপায় হয়ে। এখানে কোনটা মিডিয়া আর কোনটা আওয়ামী মিডিয়া তা বুঝাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। অবশ্য যদিও অনেকে বলে থাকেন এখন মিডিয়ার খুব কিঞ্চিত অংশই মিডিয়া আর বাকী পুরোটাই আওয়ামী মিডিয়া। মিডিয়ার বর্তমান অবস্থা দেখে রবীন্দ্রনাথের অবতারনিকার কথাই মনে পড়ে ‘এ বাড়ি থেকে এ-দেশীয় সামাজিক জীবনের স্রোত যেমন সরে গেছে তেমনি পূর্বতন ধনের স্রোতেও পড়েছে ভাঁটা।‘
ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াগুলো ২৪ ঘন্টাই ক্ষুধার্থ থাকে, তাই এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ২৪ ঘন্টাই এর খাবার যোগাড়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তরতাজা খাবার যোগাতে না পারলে অবোধ প্রাণী গরুর মত ভেতর থেকে জাবর কাটাতে হয়। তবে গৃহস্থের অবস্থা ভাল না থাকলে গরু যেমন খড় কুটার বাইরে তরতাজা ঘাস কিংবা খইল ভূষি পায়না, মিডিয়াগুলোর অবস্থাও তাই। তারপরও একই খাদ্য বার বার খেতে দিতে হয়তো গৃহস্থেরও বিরক্তি লাগে। তাই ঘাষ যোগাতে না পারলে কলাপাতা কিংবা কলাগাছ। তবুওতো ভিন্নতা। মিডিয়াগুলোর অবস্থাও অনেকটা সেরকম, তারা কলাগাছের পরিবর্তে অনেক সময় ক্ষমতাশীনদের অথবা ক্ষমতাবানদের আশীর্বাদপূষ্ট হয়ে কলাগাছের ছায়াও খাইয়ে থাকে। এখানে বাঁধা গরুর যেমন কিছু করার থাকেনা তেমনি মিডিয়ার দর্শকদেরও। গরু অবুঝ প্রাণী তাই কিছু বলতে পারেনা কিন্তু মানুষ সৃষ্টিকূলের শ্রেষ্ঠ। তাই এত চেতনার ভীড়ে চেতনায় চেতনায় ধাক্কা খেয়ে যথন কিছুটা চৈতন্য ফেরত আসে তখন ভাবতে থাকে, হায়! এ কি করলাম? কেন করলাম? এ-তো উচতি হয়নি?
তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম রাজনীতিবিদ মুজিবুল হক চেতনা বিলাসী লোক। সারা জীবন চেতনার বিলাসীতায় গা ভাসিয়ে চৈতন্য হারিয়ে ফেলেছিলেন, তাই বিয়ে করতে পারেননি। ৬৭ টি ফেরিয়ে ৬৮তে এসে চৈতন্য ফিরে এল। তাই হঠাত একদিন মুজিব কিত্তনের পাশাপাশি বিতর্কিত সংসদে গনতন্ত্রের আরেক শব-যাত্রী মমতাজের ‘ফাইটা যায়, বুকটা ফাইটা যায়’ গানের সূর মোর্চনায় শরীরে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে নিজেও গেয়ে উঠলেন ‘সবাইতো সুখী হতে চায়।‘ হৈ রৈ পড়ে গেল!কে রে! আমাদের চিরকুমার মুজিবুল না? ইশ! কি হাসি, ঠাট্র!। তারপর, কি ব্যাপার মুজিব ভাই? সহজ সরল অথচ অশ্লীতায় ভরা উক্তি ‘আমি বিয়া করমু।‘
বিয়ে করবেন, ভাল কথা। কিন্তু বিয়ের নামে গত কয়েক মাসে জাতিকে যে অশ্লীল জাতীয় বিনোদন উপহার দিলেন, এতে জাতী কি বার্তা পেল? জাতীর কথা বলছি এজন্য যিনি সারা জীবন বেহুশ থেকে হঠাত হুশ ফিরে পেলেন যে সঙ্গীহীন জীবন মানে জীবন না, তাই জীবন সায়াহেৃ একজন সঙ্গীনী চাই, তিনি কিন্তু বাংলাদেশের আর আট দশ জন মানুষের মত সাধারন মানুষ না। একজন মন্ত্রীও বটে! বৈধ কিংবা অবৈধতার প্রসঙ্গ বাদই দিলাম। একজন মন্ত্রী মানে একটা দেশের, একটা সমাজের বর্তমান কিংবা ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতিনিধি।
মুসলমানতো বটেই এবং মানুষ হিসাবে কারোই হয়ত দ্বিমত থাকার কথা না, তার বিয়ে নিয়ে। আবার ইসলাম ধর্মের কথা চিন্তা করতে গেলে বিয়েতো একটি অবশ্যই করনীয় কাজ, তবে তা অবশ্যই সামর্থের দিক দিয়ে নির্দিষ্ট বয়সে হওয়াই বাঞ্চনীয়। কারন পবিত্র ইসলাম ধর্মে বিয়ে একদিকে ফরজ আরেকদিকে সুন্নত আবার বিশেষ অবস্থা ক্ষেত্রে হারামও করা হয়েছে। যেমনঃ যার আর্থিক, শারীরিক, মানসিক সামর্থ্য আছে একজন নারীকে শরীয়ত সম্মত ভাবে চালানোর, তার জন্য বিয়ে তখন ফরয হবে যদি তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রন না রাখতে পারেন। আর যদি সকল সামর্থ্য আছে এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেন তাহলে বিয়ে সুন্নত।অপরদিকে উল্লেখিত সামর্থ্যের একটিরও ঘাটতি থাকলে, ঐ ঘাটতি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির জন্য বিয়ে হারাম।
আমি বরাবরই ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসী তাই তার বিয়েতে আমার কোন মতপ্রার্থক্য থাকার কথা না।একসময় দেখা যেত মানুষের বয়সের সাথে সাথে পোষাক পরিচ্ছদেরও পরিবর্তন ঘটতো, বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে পোষাক। আজকাল আমরা পোষাক পরিচ্ছদে তার উল্টো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে যত রঙ্গিন পরতে পারে সে ততো মনের দিক দিয়ে নিজেকে যৌবনাদীপ্ত মনে করি। হয়তো যুক্তি থাকতেই পারে দেহের বয়স আছ ভাল কথা কিন্তু মনের বয়স থাকবে কেন? মন তো আর বাহ্যিক দৃষ্টিনন্দন ব্যাপার না, যে যার মত করে দেখে। মনের রং কিংবা মনের বয়স ধরে রাখার স্বার্থে একটু রঙিন জামাকাপড় পরা যেতেই পারে। কিন্তু জীবন সঙ্গীনি? তাও কি আজ পোষাক পরিচ্ছদের মতই ধরে নিব?
এখানে নীতি, নৈতিকতা, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা কিছুই থাকবেনা? হায়াত মওউত আল্লাহর হাতে। তারপরও জীবনের একটি স্বাভাবিক গতি, প্রকৃতি থাকবেনা? সবই বৈচিত্রময় হয়ে উঠবে? মানুষের মৃত্যু নিয়ে যখন কথা উঠে তখন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে আমরা ধরে নেই যখন মালিকের পক্ষ থেকে ডাক আসবে তখন চলে যেতে হবে। তারপরও মানুষ অসুস্থ্য হলে আমরা চিকিতসকের সরনাপন্ন হই। চিকিতসা নেই, কিডনী ট্রান্সফার করি, চোখের কর্ণিয়া ট্রান্সফার করি। সর্বশেষ চিকিতসা বিজ্ঞান দাবী করছে মানব দেহে তারা লিভারও ট্রান্সফার এ সফলতা পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এত কিছু করার পরও ‘কুল্লু নাফসুল জায়েকাতুল কাতুন মাউত –সকল প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাধ গ্রহন করিতে হইবে।‘
মানুষের মৃত্যু দিন তারিখ সময় পঞ্জিকার পাতায় নির্দিষ্ট করা থাকেনা। তারপরও মানুষের জন্ম, স্থান, জীবনযাত্রার মান, চিকিতসা পদ্ধতি ইত্যাদির উপর করে যুগ যুগ ধরেই মানুষের আয়ুর উপর গবেষনাতো ছিলই এবং একটা গড় আয়ুর ব্যবস্থা চালু ছিল বা আছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০.৩৬ বছর, এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৬৮.৪৮ বছর আর নারীদের ৭২.৩১ বছর (তথ্য সি.আই.এ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক ২৯-১০-১৪)।
বাদ দিলাম মানুষের বয়স, বাদ দিলাম চেতনা, আজীবন যে মানুষটি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন যৌক্তিক কারনে তার অতিবৃদ্ধ বয়সে একান্ত ব্যাক্তিগত কাজগুলোতে সহায়তা দেয়ার জন্য কিংবা রোগসয্যায় সেবা শ্রুশ্রুশা বা দেখাশুনা করার জন্য তার অতি আপন একজন মানুষ দরকার ধর্মীয়, সামাজিক সমস্ত বিতর্কের উধ্বে উঠে, সুতারাং বিয়েটাই উত্তম পথ। তাই বলে বৃটিশ আমলে জন্ম নেয়া একজন বৃদ্ধের সাথে মাঝখানে ভারত বর্ষ, সামন্তবাদী পাকিস্তানী উপনিবেশ পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের শৈশবে জন্ম নেয়া এক বালিকার সাথে! মুজিবুল হকের জন্ম তারিখ ৩১ মে ১৯৪৭, আর হনুফা আক্তার রিক্তার ২০ মে ১৯৮৫। যে প্রধানমন্ত্রী মুজিবুল হককে রেলওয়রে ইঞ্জিন আর হনুফা আক্তার রিক্তাকে ট্রেনের বগি উপাধী দিয়ে মন্ত্রী সভায় বসে হাসি তামাসা করে বললেন তাহলে এবার ইঞ্জিনের সাথে বগি লাগছে! তিনি কি একবারও ভেবে দেথেছেন বৃটিশ আমলের স্টিম লোকোমোটিভ ইঞ্জিন এর সাথে ২০১৪ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের সুপার সনিক ট্রেনের বগি না হোক অন্তত ডেমু ট্রেনের বগি কতটাই না বেমানান! বৃটিশ আমলের বাস্প চালিত ইঞ্জিন যেখানে যাদুঘরে পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ, সেখানে তিনি তা রিক্তা নামের তরুনীর সাথে ইঞ্জিন হিসাবে জুড়ে দেয়ার জন্য উতসাহিত হলেন কেন?
মন্ত্রী মুজিবুল হককে তার নেত্রী অনেক আদর করেন। রাজা কিংবা রাণী তার সহচরদের অন্যায় আবদার, অপকর্ম রক্ষার্থে প্রজাকূলকে শূলে চড়িয়ে দিতে পারেন, হঠাত নাই করে দিতে পারেন, আর পিতৃহীন গেঁয়ো এক সাবালীকা কণ্যাকে তার চরণদাষী করার সাহস দিতে পারবেননা, তা কি হয়? নেত্রীর সাহসে একেতো উলাল বুড়ি, আরো পাইছে ঢোলের বাড়ি -অতিউদ্যোমে বিয়ের নামে ব্যাক্তি মুজিবুলকে আপাততঃ অশ্লীল বালকদের ভাষায় কোরা কিংবা আনকোরা নামক কিছু একটার সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিল বটে! কিন্তু জাতী হিসাবে আমাদের জন্য এক বড় ধরনের অশনী বার্তা যে দিয়ে গেল, তা আপাততঃ আমরা স্বীকার না করলেও ভবিতব্য নিকটতম ইতিহাস কিন্তু ঠিকই আমাদের স্মরন করিয়ে দিবে, অনেক চরম মূল্য দিয়ে।
যদি বয়সের চিন্তাও করি, তাহলে দেখা যায় একজন মুজিবুল হক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তার ‘হক মৃত্যু’ও আশা করেন তাহলে আর তার হাতে সময় আছে এক বছরের চেয়েও কম।আর ঐ রিক্তা নামের অসহায় (অসহায় বলছি এজন্য কোন সহায় মেয়েই ঘটা করে এরকম একটি বিয়ে করতে পারে তা বিশ্বাসযো্গ্য নয়, শিক্ষিত সচল ঘরের মেয়েতো দূরের কথা কোন অশিক্ষিত ভিখারীনির মেয়েও না)মেয়েটির সামনে জীবনের পুরো সময়। ধরে নিলাম মুজিবুল হক সুখী মানুষ, পয়সাওয়ালা মানুষ রোগবালা হলে চিকিতসার সামর্থ আছে তাই তার গড় প্রাপ্য বয়সের চেয়ে অতিরিক্ত বোনাস বয়সটা জয় করে নিলেন (আল্লাহ মাফ করুক), তিনি ১০০ বছর হায়াত পূর্ন করবেন। তাহলে এই রিক্তাকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকোতে জীবিত অথচ মৃত এক লাশ টানা ছাড়া আর কি ই বা করার থাকতে পারে?আবার তিনি যেহেতু বিতর্কিত মন্ত্রী সভার সদস্য এবং নিজেকে যতই সত এবং দরিদ্র পরিচয় দেন না কেন যে হারে বিয়েতে উড়িয়েছেন তাতে করে তিনি যে দূর্নীতিগ্রস্থ সভা-সদের সদস্য ছিলেননা বা হবেননা তার নিশ্চয়তা কে দিবে? সূতরাং এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে খুব নিকট ভবিষ্যতে যদি সরকার পরিবর্তন হয় তাহলে তাকে সবাইতো সুখী হতে চায় গান গাওয়ার পরিবর্তে জেল খানার সম্বল ঘটি বাটি কম্বল গেয়ে হনুফাতো দূরে থাক সূর্যের আলো থেকেও বঞ্চিত হতে পারে।
আমাদের নারীবাদীরা কোথায় আজ? জনমনে প্রশ্ন উঠেছে আজকে যদি একই ঘটনা দাড়ি, টুপি পরা কোন ইসলামী সংগঠনের নেতা ঘটাতেন, তাহলে তারা কি ঘরে থাকতেন, নাকি শাহবাগের পাকা সড়কে ইমরান বাহীনির সাথে লগি বৈঠা নিয়ে নৌকায় সওয়ারী হতেন? এত নীরব কেন সবাই? মাওলানা, মৌলভী, টুপি, দাড়ি হলে চেতনায় সুড়সুড়ি লাগে আর আওয়ামী মন্ত্রী হলে চেতনা ঘুমিয়ে থাকে, কেন? তাহলে এসব চেতনার জন্যও কি হারবাল কসমেটিকস এর সাথে হারবাল চিকিতসা জরুরী হয়ে পড়েছে?
কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সিনেমা পাড়ার লোকজন কই? আজীবন দেখিয়ে আসলেন সম্পদ আর প্রভাব প্রতিপত্তির গুনে এসব মুজিবুল হকরা গরীবের মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়, জোর করে বিয়ে করতে চায়, বিয়ে না দিতে চাইলে কনের বাপ-দাদাকে বসত ভিটা থেকে উতখাত করে। এগুলো সব অনৈতিক কাজ। রিক্সাওয়ালা, জেলের সাথে বিয়ে দিব, না হয় কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেব তবুও বুড়োর কাছে না। বিয়ের নামে বুড়োকে ভীমরতি রোগে ধরেছ! কই গেলেন আপনারা? নাকি উনি মন্ত্রী! মন্ত্রীর আবার বয়স কিসের? জনগনের ট্যাক্সে চলা পুলিশ যেখানে তাকে পাহারা দেয়, স্যালুট করে, তাকে আবার ভীমরতি রোগে ধরে কি করে? স্বাভাবিকভাবেই উপলদ্ধি করছি, এতদিন আপনারা যারা এ চরিত্রগুলো নির্মান করেছেন সেগুলো কি ভুল ছিল? যেহেতু আজ কথা বলছেন না, তার মানে ঐ চরিত্রগুলো ভুল ছিল, তাদেরও আজ সময় এসেছে সে চরিত্রগুলোর মুছে ফেলে জাতীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া।
সারা জীবন জেনে এসেছি অপশাসনের সময় কবিদের জন্ম হয়, আর এখন দেখছি অপশাসনের সুখাণলে পড়ে তাদের কবিসত্বার মৃত্যু ঘটেছে। সব খালি চেতনার বড়ি খেয়ে ঘুমায়। কোন কলামিষ্টকেও দেখিনি এ নিয়ে দুকলম লিখতে। লিখবে কি করে কলামিষ্টদের জায়গায় আজ স্থান করে নিয়েছে কলমবাজরা যারা চটি আর কল্পকাহীনি লিখে পত্রিকার পাতা পূর্ন করে রাখে।একান্ত নিরুপায় হয়ে মানুষ এখন ফেসবুক, টুইটার ব্লগ মূখী হয়েছে। গত ক’দিনে ফেসবুক ওয়াল দেখলে দেখা যায় এ নিয়ে যেমন হৈ হল্লা হয়েছে আবার অনেকের মানবিক ইন্দ্রিয়গুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে আমরা হাসি ঠাট্রায় রুপান্তর করতে করতে এমন গন্তব্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছি আমাদের গৌরবান্বিত অর্জন বলতে আর কিছুই থাকছেনা।
স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রধান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। সে মুক্তিযুদ্ধও আজ বিতর্কিত হতে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের মহান নায়করা আস্তে আস্তে যেভাবে রাজাকার উপাধিতে ভুষিত হচ্ছেন। এক সময় প্রশ্ন আসতেই পারে। তাহলে কে করেছে মুক্তিযুদ্ধ? এখানে আমাদের ত্যাগই বা কোথায়? এতো দেখছি অন্যের দয়ার দান। যে দান করেছে সে যদি কখনও দৈন্যগ্রস্থ হয়ে পড়ে আর দান ফিরিয়ে নেয় অথবা দখলে উদ্ধত হয় তখন আমাদের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব রইল কি করে?
দ্বিতীয় অর্জন ধরতে গেলে দীর্ঘ নয় বছর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের পর আবার গনতন্ত্র ফিরে পাওয়া। শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ গনতন্ত্রে যখন দেখি পতিত স্বৈরাচার পীর সাহেব সেজে গনতন্ত্রের ছবক দেয় আর একজন রউফুন বসুনিয়া, ডাক্তার মিলন, জেহাদ, নুর হোসেনের আত্মা বিদ্রুপ করে বলতে থাকে ‘ওরে অভাগা! এরশাদ যদি আজ তোদের গনতন্ত্রের পীরই বনে যায় তাহলে আমাদের পরপারে পাঠালি কেন?’ তাহলে কি এরশাদ ভুল করেনি ক্ষমতা ছেড়ে? ভুল করেনি আজ যারা এরশাদকে তাদের ক্ষমতার ভাগাভাগিতে উভয় লিঙ্গ বানিয়ে রেখেছে, তারা? কেননা, কই তারাতো আজ পর্যন্ত জাতীর কাছে প্রকাশ্যে কিংব অপ্রকাশ্যে ক্ষমা চায়নি ‘প্রিয় দেশবাসী আমরা এরশাদকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে ভুল করেছিলাম। এরশাদ সঠিক ছিল, আমরাও সঠিক আছি। ভুল করেছে এ নুর হোসেনের দলের লোকরা।‘
১৭০০ লোকের আবাসভূমি হনুফা আক্তার রিক্তার মিরখোলা গ্রামে যেভাবে প্রায় দু’শো গাড়ী বহর নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের সমাগম ঘটালেন জাতীয় পতাকায় সুসজ্জিত বুড়ো বর মজিবুল হক। তাকে অনেকটা দখলদারের দখলদারিত্ব ছাড়া আর কি আখ্যা দেয়া যেতে পারে। রিক্তার মা জোসনা বেগম যখন বাপ মরা ৫ ভাই আর দু’বোনের অতি আদরের ছোট বোনটিকে এ বুড়োর হাতে তুলে দিচ্ছিলেন আর অজোর ধারায় কাদছিলেন, সাথে গ্রামবাসীর কান্না এমনটি প্রমান করা অস্বাভাবিক না যে সচরাচর সিনেমা নাটকে দেখা গরীবের মেয়ের প্রতি ধন্যাড্য প্রভাবশালীদের কুনজরের বর্তমান ডিজিটাল প্রতিচ্ছবিই হয়তো এটি।
বিশেষ করে বিয়ের পরদিন সকালে যখন নির্লজ্জ কিংবা অতি উতসাহী মিডিয়া কর্মীরা হাজির হলো মুজিবুল হকের বেইলী রোডের মন্ত্রী পাড়ার বাড়ীতে। মন্ত্রী যখন লুঙ্গি আর পাঞ্জাবী পরা অবস্থায় সাংবাদিকদের প্রশ্নত্তোরে ‘ঠিক সময়েই বিয়া করছি, এ বয়সে বিয়ে না করলে বঙ্গবন্ধু কন্যার আশীর্বাদ পেতাম কি করে?’ তখন ভিতর থেকে হনুফা আক্তার রিক্তার কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল? মন্ত্রীকে জিঙ্গেস করতেই জবাব দিলেন, ‘মায়ের লাইগ্যা কান্দে।‘ প্রশ্ন মন্ত্রী বা মন্ত্রীদের মিডিয়া এতদিন প্রচার করে আসলেন হনুফার সাথে দীর্ঘ তিন বছরের মন দেয়া নেয়া, সেখানে কান্নাকাটি কেন? মন্ত্রী বলে কথা! তাছাড়া মিনিষ্টারস এপার্টমেন্টের ১ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলার ১৪ টি বড় সড় কক্ষে রিক্তার মা কেন তার ১৪ গোষ্টির আত্মীয় স্বজন এনে রাখলেও স্থান সংকুলানের অভাব পড়ার কথা না। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় -ডাল ম্যা কুছ কালা হ্যা।
গত মাসাধিক কাল ধরে এরকম একটি অসাম্যঞ্জস্য বিয়েকে উতসাহিত না করে, প্রচার প্রচারনার নামে গোপালভুড়ি বিনোদন উপহার না দিয়ে এ বিয়ে কেন হচ্ছে, এতে প্রকৃত পক্ষে কনে পক্ষ রাজী ছিল কিনা, নাকি বরবারই আধিপাত্য ছিল তা বের করতে পারতো। তাহলে আপাততঃ কারো কুমার জীবনের অবসান এ অসহায় কুমারীতে না ঘটলেও দীর্ঘ পড়ে থাকা হনুফার বাকী জীবনের সময়গুলো দুখের অনল থেকে বেঁচে যেত।
কোটি টাকা খরচ করে এ রাজকীয় বিয়ের নামে ২৯ বছর বয়সী একজন সম্ভাবনাময় নারী স্বত্যা হত্যার মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুন হীরক রাজার খেতাবে কিংবা গোপাল ভাঁড়ের মত চিরাচরিত হাসি ঠাট্রার পাত্রে পরিনত না করে তিনি একজন অসহায় তার বয়সের কাছাকাছি তালাকপ্রাপ্তা কিংবা বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তার দলের স্বামীহারা কোন নারীকে বিয়ে করতেই পারতেন।প্রচার প্রসারনার যদি এতই দরকার ছিল তাহলে যে টাকা খরচ করে একজন রিক্তাকে ঘরে তুললেন তা দিয়ে কমপক্ষে আরো ১০০০ অসহায় দুঃস্থ নারীকে বিয়ের ব্যবস্থা করে কন্যা দায়গ্রস্থ পিতাকে মুক্ত করে সুকর্ম করতে পারতেন। আঠার বছর মেয়েদের বিয়ের বয়স করলে তারা ভেগে গিয়ে বিয়ে নামক বস্তুটি সেরে ফেলতে পারে তাই বয়স ১৬ তে নামিয়ে আসার মত গোজামিল দেয়া প্রতি মন্ত্রী এ বিয়েতে উপস্থিত থেকে ডুগডুগি বাজিয়েও চরম অনৈতিকতার পরিচয়ই দিয়েছেন।
ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে এ বিয়েকে বৈধ মনে হলেও সামাজিক এবং নৈতিকতার দৃষ্টিকোন থেকে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েই যায়।০৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল কিন্তু জনগন অংশ গ্রহন করেনি যে প্রক্রিয়াজনিত ত্রুটির কারনে তারপরও তাকে বৈধ নির্বাচন বলে চালিয়ে দিয়ে নিজেরা দেশ সেবার নামে দেশ শোষনে নেমে পড়েছেন। ঠিক তেমনিভাবে এ বিয়েকেও সব আয়োজনে সঠিক দাবী করলেও ০৫ জানুয়ারীর মত একটা ফাক রয়েই গেল। প্রচলিত বিয়ের মত এখানে কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন রোষ্ট, জালি কাবাব, মিনারেল ওয়াটার, কোল্ড ড্রিঙ্কস খেয়ে তৃপ্তির ঢেকর তুললেও বিবেকের কাছে তাদের প্রশ্ন জাগেতেই পারে যে জাতীয় পতাকা অর্জন করা হয়েছিল আধিপাত্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্তির লক্ষে আজ সেই জাতীয় পতাকা উড়িয়েই অনেকটা মধ্যযুগীয় পূনরাবৃত্ত ঘটানো হলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায়।
বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথা বন্ধের অগ্রনীয় নায়ক স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধে যেমন তর্ক আছে তেমনি বিতর্কও। জানিনা আজ বেঁচে থাকলে এ তর্ক বিতর্কের সমাধান দিতে পারতেন কিনা। তবে একথা অনেকটা নিশ্চিত তিনি বেঁচে থাকলে মন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ের বরযাত্রী হয়ে তার বিখ্যাত বানী বদলে বলতেন ‘আমি সন্নাসী, তাই জগতে নিজেকে দাসী নয়, প্রভূ বলেই মনে করি’ অথবা ‘এক রিক্তা কি যদি শত রিক্তাকেও কোরবানী দিলে বুড়ো বয়সে সুখ পাওয়া যায় -আমি রাজী আছি।‘ আমরা যা-ই বলিনা কেন রিক্তা নামের যে মেয়েটির জন্য আমরা কান্নাকাটি করছি সে ও হয়তো কিছু সময় কান্নাকাটি করে মহা প্রতাপশালী হয়ে উঠবে স্বামীর ক্ষমতার সূত্র ধরে কিছু সময়ের জন্য মাত্র। কিন্ত আমরাতো এই কিছু সময়ের প্রতাপশালী রিক্তাকে চিনিনা। আমরা যে রিক্তাকে চিনি তার জন্য স্বামী বিবেকানন্দের আরেকটি বাক্য দিয়েই শেষ করি ‘যদি ব্যাক্তিগত সুখ এবং পাশবপ্রবৃত্তির পরিতিপ্তির চেষ্টা সমাজে বিস্তার লাভ করে, তার ফল নিশ্চয় অশুভ হবে –দুষ্টপ্রকৃতি, অসুর ভাবের সন্তান জন্মাবে।‘ আর যা- ই হোক রিক্তার ঘরে সন্তান আসলে তা যেন দুষ্টপ্রকৃতির কিংবা অসুর ভাবের না হয়, তাহলে এসমাজের শত সহস্র রিক্তাদের জীবনে আর কিছুই অবশিষ্ট রইলনা বা থাকবেনা।
______________মম, দাম্মাম, ০২ নভেম্বর ২০১৪
বিষয়: বিবিধ
৩২৫২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক দীর্ঘ উপস্হাপনা! 'সাবলিল যুক্তি' ও 'চিন্তার খোরাক' পড়া চালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে শেষ পর্যন্ত! অন্য এক অনুভূতি-অন্য এক চিন্তা জাগিয়ে দিলেন!
অনেক ধন্যবাদ একটি প্রয়োজনীয় সুন্দর পোস্টের জন্যে।
আপনার পেটের ভেতরে এত কথা!
ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন
ধন্যবাদ আপনার উপলদ্ধির জন্য।
সুন্দর যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ ......
এটুকু আপনার সাথে ফান করেছি ।
এবার আসল কথা বলি আপনি যা বলেছেন উচিত কথাই বলেছেন ভাল লেগেছে ধন্যবাদ ।
সবাই ধের্য্য ধরে কষ্ট করে লেখাটি পড়েছেন এতেই আমি ধন্য।আপনাদের মূল্যবান মতামত দেখে ভীষন ভাল লাগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে। সবাই ভাল থাকুন, নিরাপদে থাকুন মন থেকেই প্রত্যাশা করছি -মম, ০৪ নভেম্বর ২০১৪
মন্তব্য করতে লগইন করুন