দুঃখিত Mr. Minister আপনাকে দোয়া করতে পারছিনা
লিখেছেন লিখেছেন উচিত কথা ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:২৫:২৪ সকাল
মিঃ Minister আপনি চিরকুমার সমিতির সাথে প্রতারনা কিংবা গাদ্দারী করে বয়োবৃদ্ধ বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসছেন তাতেও আমার আপত্তি নেই, কেননা আমি চিরকুমার সমিতির সদস্য না বা চিরকুমারের মতো একটি সমিতি করে মানুষ নামের সৃষ্টির সেরা জীবটিকে পৃথিবী থেকে বিলীন করে দিব তার সপক্ষ শক্তিও আমি না।আপনার অর্ধেক বয়সের চেয়েও কম বয়সী একটি অসহায় মেয়ে আজ থেকে কয়েক বছর আগে আপনার কাছে একটি চাকুরীর সুপারিশের জন্য গেলে আপনি তার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে আর ভবগিরি কিংবা সাধু সন্নাসী নয় বরং বেলাতো অনেক হলো এবার ঘরে চলো বলে ঘরমুখী হলেন তাতেও আমার বাধা নেই অথবা আপনি সারা জীবনে অনেক কামিয়েও নিজেকে গরীব দাবী করে এসে শেষ পর্যন্ত কোটি টাকা খরচ করে রাজকীয় বিয়ের উপাধি পেয়েছেন তাতেও আমার মাথা ব্যাথা নেই। আপনি সত, দয়ালু তাই সরকারের অবৈধ মন্ত্রী সভায় থেকে আপনার হবু শ্বশুর বাড়ীতে যাওয়ার জন্য রেল সুবিধা নেই তাই আপনি সরকারী কোষাগার থেকে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন রাস্তা কিংবা ঘরবাড়ি নির্মান করে দিয়েছেন তাতে আপত্তি থাকলেও সেটাও জোরাল না।আমার আপত্তিটা অন্য জায়গায়-
মিঃ মিনিষ্টার দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়ার আগেই একজন শেখ হাসিনা আপনাকে দোয়া করে দিয়েছেন এবং আপনি বলেছেন এখানে (গায়ে হলুদ) আসার আগে আপনি তার সাথে দেখা করেছেন, উনি আপনার নেত্রী, উনি আপনাকে অনেক আদর-স্নেহ করেন, আপনার নিজের এবং আপনাদের দাম্পত্য জীবন সুখী সমৃদ্ধ হোক সে প্রত্যাশা করেছেন এবং আপনি খুব হাস্যোজ্জলভাবে বলেছেন আপনি তার কর্মী।
মিঃ মন্ত্রী আমার আপত্তি আপনার শেষ কথাটিতেই। আপনি তার কর্মী এবং যেভাবে বলেছেন তাতে বুঝা যায় আপনি শুধু কর্মীই না বরং অতি বিশ্বস্তও এবং কাছেরও বটে।বিয়ে মানে শুভ কাজ আর আনন্দের সেটা ৬৭ কিংবা ৯৭ বছরে হোক, তা দোষের না। আপনার চেয়েও বেশী বয়সে অনেকে বিয়ে করেন বিশেষ করে আপনার পূর্বসূরী প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদই তার উতকৃষ্ট উদাহরন হতে পারে। বিয়ে মানে আনন্দ, তাই বলে সব বিয়ে? আসলে আনন্দটা নির্ভর করে সময় এবং অবস্থার উপর। জোর করে মানুষকে দুঃখ দেয়া যায় কিন্তু আনন্দ দেয়া যায় না। তাই কিছু আনন্দ দেখে দুঃখ স্মৃতিগুলোই ভেসে উঠে আর সে দুঃখ স্মৃতিগুলো যদি হয় নিকট অতীতের তাহলেতো কথাই নাই। অবশ্য এসব কথা আপনার মত দেখতে সহজ সরল অথচ কঠিন হৃদয়ের মানুষদের বুঝার কথা না। তবে এসব দুঃখ সৃষ্টিতে একজন মুজিবুল হক হিসাবে আপনার অবদানও কম না। আপনি ০৫ জানুয়ারীর অতি নিকট আগ-পর বাংলাদেশের অনেক দুঃষ্কর্মেরই অংশীদার এবং অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্বের দাবীদারও বটে।
আপনার অবৈধ চাকুরীটি যে মন্ত্রনালয়টিকে কেন্দ্র করে সেটি এখন দক্ষিনপূর্ব এশিয়ায় রেল দূর্ঘটনার জন্য চ্যাম্পিয়ন। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো আগামী কয়েকমাসে বাংলাদেশ রেল দূর্ঘটনার জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি চিনিয়ে আনতে পারবে। কালো বিড়ালের কালো থাবা থেকে মুক্ত হওয়ার পর গত দুবছরের চেয়েও একটু বেশী সময়ে রেল দূর্ঘটনায় প্রায় দু’শ লোক মারা গেছে এবং শত শত লোক আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করেছে কিংবা অনেকে আছেন অন্যের সাহায্য ছাড়া এক মূহূর্তও চলতে পারেননা। আপনি আজীবন বিয়ে বিরোধী ছিলেন হয়তো গত তিন বছর ধরে হবু বউয়ের সাথে বেশী বয়সী প্রেমে মত্ত থাকার কারনেই এদিকে তেমনটি নজর দিতে পারেননি, তাই এমনটি ঘটতে পারে। কিন্তু একবারও কি এসব পরিবারগুলোর খোজ খবর নিয়েছেন? এরা কেমন আছে?এদের জীবন জীবিকা কি করে চলছে?
যতটুকো জানি আপনার হবু বউয়ের নাম রিক্তা। বয়স ত্রিশোর্ধ। আপনার ঘাপিলতির কারনে আহত হওয়া এরকম অসংখ্য রিক্তা আছে যাদের জীবনে সখ ছিল তারাও একদিন বিয়ের পিড়িতে বসবে, গায়ে হলুদ হবে, বাসর হবে। কিন্তু তাদের শখগুলো আজবীন হারিয়ে গেছে আপনার তৈরী করা নিয়তির অজানা ট্রেনে। অনেকে বলেন আপনি নাকি বলেন বুড়ো হলেও আপনার ইঞ্জিন শক্তিশালী তাই আপনি কোন লক্কর জক্কর বগি না বরং কারো মতে আনকোরা বগি লাগাচ্ছেন যদিও নিন্দুকেরা অনেক কিছুই বলে। কিন্তু আপনার কারনে এরকম অসংখ্য আনকোরা ইঞ্জিন বা বগি যে একেবারে বিকল বা দুমড়ে মুছড়ে পড়লো নিজের সুখের কথা ভাবতে গিয়ে একবারও তাদের কথা ভেবেছেন কি? তাদের জন্য কিছু করাতো দূরে থাকুক, কই কোনদিন তো শুনিনি জাতীর কাছে তাদের রুহ’র জন্য শান্তি কামনা করতে কিংবা তাদের বেচে যাওয়া শোকসন্তপ্ত মানুষগুলোর জন্য।
মিঃ মিনিষ্টার আপনারতো মানুষের কাছ থেকে দু’হাত পেতে চাওয়ার মানুষ না! আপনি যে হাতের স্পর্শ নিয়ে এসে আবার হাত পেতেছেন মানুষের কাছে দোয়ার জন্য। তিনিতো দু’হাতে বিশ্বাস করার শিক্ষা আপনাকে দেয়ার কথা না? আপনারা একহাতে পারদর্শী। আর এ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রাখতে গিয়ে এদেশের গনতন্ত্র কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি অসংখ্য মায়ের বুক খালি করেছেন, বঞ্চিত করেছেন অনেক বোনকে তার ভাইয়ের আদর থেকে।ছোট শিশুটিকে আজও দেখতে দেননি তার পিতাকে। আপনি আজ গায়ে যে হলুদ দিলেন কিংবা আপনার হবু স্ত্রী রিক্তা। আপনি খোজ নিয়ে দেখেন, এরকম এখনও কত রিক্তার হাতের মেহেদী না শুকাতেই তাদের মুজিবুল হককে কেড়ে নেয়া হয়েছে -তাদের জীবন থেকে। বিশ্বাস না হলে, ঢাকা সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টুর বাড়িতে গিয়ে খোজ নেন। গুম হয়ে যাওয়ার মাত্র ৭ মাস আগে নুহাস নামে এক তরুণীকে পিন্টু বিয়ে করেছিল। হাতের মেহেদীর রঙ মুছতে না মুছতেই তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় আপনাদের বাহিনীরা। আদৌ পিন্টু বেঁচে আছে কিনা, নুহাস তা জানেনা। এখনও অপেক্ষার প্রহর গুনেই যাচ্ছে।
মিঃ মিনিষ্টার আপনারা আজ যে হাত পেতে মানুষের দোয়া চাইছেন সে হাতগুলোর ইশার আপনাদের গত ৬-৭ বছরে প্রায় ৪০০ লোককে ধরে নিয়ে গেছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম ছাড়া আরো অসংখ্য মানুষ। এরা কোথায় আছে, কিভাবে আছে? বলে দিবেন কি? কারন যে হাতগুলো খুলে আপনার নবদাম্পত্য জীবনের জন্য মানুষ আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের কাছে দোয়া চাইবে সেই হাতগুলো এখন এ অসহায় মানুষগুলোর জন্য দোয়ায় ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। এছাড়া প্রতি নিয়ত যে ভাবে নদী হাটে ঘাটে লাশ পড়ে থাকে, কবে কোথায় তাদের লাশগুলো পাওয়া যাবে মানুষের মন সেদিকেই দৃষ্টিবদ্ধ থাকে।
Mr. Minister চৌদ্দ গ্রাম থেকে লাকসাম কতদূর? চৌদ্দগ্রমা এবং লাকশাম কুমিল্লা জেলা্তেই। প্রায় বছর খানেক আগে গুম হওয়া হুমায়ুন কবির পারভেজ এখন কোথায় আছে? তার বাড়ীতো লাকশামে।রাজনৈতিক মত বিরোধিতা বাদ দিলে সে আপনার পড়শী। তার স্ত্রী শাহানাজ কাঁদতে কাঁদতে কান্না হারিয়ে ফেলেছে। আপনি তো আজ বাদে কাল রিক্তার স্বামী হবেন। কোথায় যাবেন, কি করবেন প্রতি নিয়ত তাকে জানাবেন। অথচ আপনার অতি নিকটে থাকা শাহানাজের স্বামীকে আপনি বা আপনার বাহিনীরা বাচিয়ে রেখেছে নাকি মেরে ফেলেছে, তা বলবেন কি? যদি মেরেই ফেলে. তাহলে কোথায় তার লাশ পুতে ফেলা হয়েছে? তা জানা যাবে কি?লাশ পুতে রাখলে এতদিনে তা থাকার কথা না, অন্তত হাড়গোড়তো পাওয়া যাওয়া কথা। বিয়ে উপলক্ষে আপনি অনেক উপহার পাবেন, আপনার হবু স্ত্রী রিক্তাও পাবে। দিন না অন্তত এই বেচারী শাহনাজকে তার স্বামীর বাম হাড়ের বাকী অংশটুকো যাকে দিয়ে নাকি শাহনাজকে বানানো হয়েছিল। শাহনাজ আর হয়তো কোনদিন রিক্তার মতো একজন মজিবরকে বুকের সাথে টেনে না-ই-বা শরীরে ঘ্রান নিতে পারলো অন্তত হাড়টুকো বুকের সাথে চেপে ধরে বলতেতো পারবে কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? কোথায় ছিলে এতদিন তুমি। তুমি কি আর কোনদিনই আমার সাথে কথা বলবেনা, তোমার সাথে আমার অনেক কথা ছিল? হাড়টুকো জড়িয়ে ধরে বলতে পারবে তুমি অত্যাচারী মজিবরদের অত্যাচারের শিকার হয়ে রক্ত রক্তশূন্য হয়ে শুকিয়ে গেছো আর আমি তোমাকে না পাওয়ার বেদনায় প্রানশূন্য হয়ে গেছি, বাঁচার অদম্য সাহস হারিয়ে ফেলেছি।
মিঃ মিনিষ্টার আপনারা অবৈধতার অবৈধ এবং আরো অবৈধ মিলে প্রায় চারশো হর্তকর্তা মিলেইতো পুরো দেশটাকে গিলে খাচ্ছেন, নিয়ন্ত্রন করছেন, করাচ্ছেন। আপনারা যা বলেন তাই হযে যায়। আপনি শুধু একজন, ব্যাস, শুধু একজন হুমায়ুন কবির অথবা ইলিয়াস আলী অথবা চৌধুরী আলম অথবা পিন্টুর দায়িত্ব নিন, এদের মধ্যে একজনকে এনে দিন। তারপর আমি প্রান খুলে আপনার জন্য দোয়া করবো। যদি এ একটি কাজ করতে না পারেন তাহলে ধরে নিবো, যে হাতের স্পর্শ নিয়ে আপনি গর্ববোধ করেন আপনি বরাবরই সে হাতেরই মানুষ। আপনাকে দোয়া করা মানেই সে হাতকে শক্তিশালী করা, আর সে হাতকে শক্তিশালী করা মানেই আরো অসংখ্য ইলিয়াসী আলী, শাহনাজ, নুহাস তৈরী করা। কিন্তু আমি বা আমরাতো এমনটি চাইনা, মিঃ মিনিষ্টার মজিবুল হক। এমনটি চাইলে আপনি আজ যে রিক্তাকে নিয়ে জীবনের শেষ সময় সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছায় মশগুল আছেন; আগামীদিন যে সেও একজন শাহনাজ কিংবা নুহাস হয়ে যেতে পারে! সুতরাং আপনার মতো একজন অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠীর দিকে না চেয়ে একজন রিক্তার দিকে তাকিয়ে আপনাকে আমি দোয়া করতে পারছিনা।
Sorry, Mr. Minister আমি আপনাকে দোয়া করতে পারছিনা।
________________মম, দাম্মাম, ৩০ অক্টোবর ২০১৪
বিষয়: বিবিধ
২২০২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসম্ভব বাস্তবতার নিরিখে অসাধারণ একটি লেখনীর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
Sorry, Mr. Minister আমি আপনাকে দোয়া করতে পারছিনা।
মনে হচ্ছে এখনই খামে ভড়ে পাঠিয়ে দেই রেলমন্ত্রীর কাছে।
আমার এক বাল্য বন্ধু আছে, সে নাকি রেলমন্ত্রীর কলেজ জীবনের বন্ধু; তারসাথে নাকি পারিবারিক যোগাযোগ আছে। চেষ্টা করবো আমার ঐ বাল্যবন্ধুর মাধ্যমে আপনার এই বার্তা রেলমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিতে। তবে আপনি যদি অনুমতি দেন
তিনি তো উদ্দীপনা পাচ্ছেন। জানেন না আপনি?
খালি বেশতি কথা বলেন!
অসম্ভব বাস্তবতার নিরিখে অসাধারণ একটি লেখনীর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
মন্ত্রির চোঁখে পড়বেতো লেখাটি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন