সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল - কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
লিখেছেন লিখেছেন উচিত কথা ০১ মার্চ, ২০১৩, ০৪:২৯:৪৩ বিকাল
হঠাৎ করেই যেন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। চরম এক অস্থিরতা চারদিকে। মানুষের মনে কোন শান্তি বা স্বস্তি নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও বেকুব বনে গেছেন। তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে এতে কার কি বলার আছে, কেবল মাত্র সংক্ষুব্ধ দল বা ব্যক্তি ছাড়া। পরিস্থিতি এমনটাই ছিল। প্রধান বিরোধীদল বিএনপির পক্ষে অবস্থান নেয়া ছিল সত্যিই কঠিন। কারণ, দলের দু’জন নেতা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এর মধ্যে ‘শাহবাগে গণজাগরণ’ হয়ে গেল। এটাও এক নাটকীয় ঘটনা। কয়েকজন ব্লগার এ ঘটনা ঘটিয়েছেন এখন আর কেউ এটা বিশ্বাস করে না। শুরুতে তাই মনে হতো। টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বিষয়টি খোলাসা করে দিয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধের তিনটি মামলার রায় হয়েছে। আবুল কালাম আযাদের রায় নিয়ে তেমন হইচই হয়নি। কারণ হতে পারে দুটো। তার এখন আর কোন দল নেই। বহু আগে জামায়াতে ইসলামী ছেড়েছেন। দুই নম্বর হতে পারে তার প্রতীকী ফাঁসি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। তিনি কোন দূরদেশে অবস্থান করছেন। কিভাবে তিনি গেলেন বা কোথায় আছেন তা এখনও রহস্যঘেরা। সমালোচকরা নানা কথাই বলেন। এর মধ্যে যুক্তি আছে, নেইও। আবদুল কাদের মোল্লার মামলার রায় নিয়েই যত গোলমাল। যাবজ্জীবন সাজা মানতে পারেননি তরুণরা। তাই তারা শাহবাগে জাগরণের চেষ্টা করেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা সফল হন। বিরোধী বিএনপিও এতে সমর্থন দেয়। আইন সংশোধন হয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ প্রসঙ্গে বলেছে, ‘যে দেশে আইনের শাসন নিয়ে সরকার পরিচালিত হয় সেখানে আদালতের রায় তাদের পছন্দ না হলে তারা আদালতের সেই রায়কে পাল্টে দিতে একটি আইন করতে পারে না। এক্ষেত্রে আইনের যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে বিচার প্রক্রিয়া যে প্রশ্নবিদ্ধ তাতে কোন সন্দেহ নেই।’ একথা ঠিক, শাহবাগের আন্দোলন মিশরের তাহরির স্কোয়ার অথবা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট দখলের আন্দোলনের অবিকল কিছু নয়। বরং উল্টোটাই দেখা গেছে। খাওয়া দাওয়া, নানা সুযোগ সুবিধা ছাড়াও নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে চব্বিশ ঘণ্টা। এ থেকে সরকার ফায়দা তুলতে চেয়েছে। কিছুটা পেয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে গিয়েছিল। এ ঘটনায় মানুষ সাময়িককালের জন্য হলেও হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মা নিয়ে দুর্নীতি ভুলে গেছে। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির কথা মানুষ এখন আলোচনা করছে না। মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও একই সুরে কথা বলছে। ক’দিন আগেও যারা সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এসব মিডিয়া আরেকটা ওয়ান ইলেভেন তৈরি করতে চাচ্ছে। এখন এই মিডিয়া কোরাস গাইছে এক সুরে। যদিও কেউ কেউ তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বলছেন, শাহবাগকে বিকল্প সরকার বানিয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তখন প্রতিদিনই তার সমালোচনা করতো কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা। একদিন সকাল বেলা তার প্রাইভেট সেক্রেটারি এসে বললেন- স্যার, আজকে আনন্দবাজার পত্রিকা আপনার প্রশংসা করেছে। শেরেবাংলা তখন বললেন- তাই নাকি? তাহলে তো মনে হয় আমি সঠিক পথে নেই।যাই বলুন না কেন, যেভাবেই মূল্যায়ন করুন না কেন, শেখ হাসিনা যে মস্তবড় এক চাল চেলেছেন তা নিয়ে কি কারো মনে সন্দেহ আছে!
হিসাবটা গোলমাল হয়ে গেল সাঈদীর ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে। দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লো। ৫৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ এসেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ৩শ’ জন। পুলিশও মারা গেছে। এখানেই কি শেষ? বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, শুরু হলো মাত্র। সিএনএন বলেছে, স্থিতিশীলতার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ। একবাক্যে বাংলাদেশের মানুষ সবাই স্বীকার করবেন। থমথমে অবস্থা। বাংলাদেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। ঘরে ঘরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে কোন দিকে যাচ্ছে প্রিয় মাতৃভূমি। জামায়াতবিরোধী ধর্মীয় সংগঠনগুলোও মাঠে। ব্লগার রাজীবের ব্লগের লেখা নিয়ে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বলছেন, একজন নাস্তিককে নিয়ে সরকার কেন মাতামাতি করছে। সরকারপ্রধান কেন সবকিছু না জেনে তাকে জাতীয় বীর ঘোষণা করলেন। তাদের আন্দোলন অবশ্য অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। সরকারের তরফে তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করা হয়েছে। হাটহাজারীর জনপ্রিয় পীর সাহেবের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ফলাফল কি তা জানা যায়নি। আতঙ্ক এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে, লোকজন মসজিদে যেতেও ভয় পাচ্ছে। অনেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। বলছেন, তারা কেন জামায়াতকে সমর্থন দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবে। আর তারা যদি আল কায়েদার পথ বেছে নেয় তখন অশান্ত হবে বাংলাদেশ। তাদের রয়েছে বুদ্ধি ও শিক্ষা। তাদের পেছনে টাকার জোগান থাকবে নিরবচ্ছিন্নভাবে। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র আগাম সতর্ক করেছে। বাস্তব অবস্থা কিন্তু তাই। পাকিস্তান কাঁদছে। আফগানিস্তান জ্বলেপুড়ে ছাই। কেউ আমাদেরকে সেদিকে নিয়ে যাবার জন্য টানছে কিনা তা পর্যালোচনা করে দেখার সময় এসেছে। ক্রিকেটার কাম পলিটিশিয়ান ইমরান খান পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন- অনেক হয়েছে। আসুন সবকিছু ভুলে গিয়ে পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য ভাবি। আমরা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি। ভুলভ্রান্তি একপাশে রেখে তালেবানের সঙ্গেও কথা বলি। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্বময়। অর্থনীতি নাজুক হতে চলেছে। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির। বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ। একমাত্র পুঁজি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সেটাও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত কি হয় বলা যাচ্ছে না। তবে মদিনা থেকে এক ধরনের পরামর্শ গেছে জেদ্দায়। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বন্ধ করার দাবি এবং ব্যাংকটির স্বাভাবিক কাজকর্ম চালাতে বিঘ্ন ঘটানোয় আন্তর্জাতিক ১৪টি সংস্থার পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে, যারা এই ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার। ৮০ লাখ গ্রাহকের এই ব্যাংকটির ৪৫% বিনিয়োগ রয়েছে শিল্পখাতে। বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার শিল্প কারখানা এই ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারকে এ ব্যাপারে চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা কি চান পরিষ্কার করতে হবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও মাঠে নামতে যাচ্ছে। তাদের কৌশল কি হবে তা পরিষ্কার হবে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, বিএনপি ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম থেকে উঠে দেখছে খেলাতো তাদের বাদ দিয়েই হচ্ছে। যে খেলা হোক না কেন, পরিস্থিতি যে কোন সময় যে কোনদিকে মোড় নিতে পারে।
বাতাসে নানা কথাই চাউর হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। শেষ পর্যন্ত কি দাঁড়াবে তা বোধকরি রাজনীতির কারবারিরা জানেন। শুধু জানেন না জনগণ। তাদের সামনে এক অনিশ্চিত অবস্থা। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ। একের পর এক হরতালে পরীক্ষার রুটিনও বদল হচ্ছে। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। চালের দামে ঊর্ধ্বগতি। আগে আন্দোলন হতো শহরকেন্দ্রিক। এখন কিন্তু এই আন্দোলন গ্রামেও ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার অন্তত ৮টি স্থানে গ্রামের মানুষ যোগ দিয়েছে।
সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, ‘৭১ সালের আগে শত্রুমিত্র চেনা যেত। পাকিস্তান ছিল শত্রুর কাতারে। এখন একই বাড়িতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাস। তাই কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে দেখতে হবে, যাতে ভ্রাতৃঘাতী কোন যুদ্ধে আমরা লিপ্ত না হই।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন