বিতাড়িত অভিশপ্ত শয়তানের কুমন্ত্রনা হতে আমার রব আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে শুরু করছি। সৈয়দ হূমায়ুন কবির, ইসলামী সমাজ।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপন২ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৬:১১:৩৩ সন্ধ্যা
বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ মানুষই ‘ইসলাম’ শব্দটি বল্লে বা শুন্লে মনে করে এটা অন্যান্য বিভিন্ন ধর্মের মতো মুসলমানদের ধর্মের নাম। আসলে বিষয়টি তা নয়। ‘ইসলাম’ নিছক কোন ধর্মের নাম নয়। ইসলাম মূলত সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও একমাত্র রব আল্লাহ প্রদত্ত সমগ্র মানব জাতির ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর আইন-বিধান সম্বলিত পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা; একমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, প্রভূত্ব ও কর্তৃত্বের ভিত্তিতে তাঁরই দাসত্ব ও তাঁরই আইনের আনুগত্য করার ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থা মেনে চললে দুনিয়াতে লাভ হবে শান্তি ও কল্যাণ এবং আখিরাতে জাহান্নামের কঠিণ শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে লাভ হবে জান্নাত। যে ব্যবস্থা মেনে না চললে দুনিয়াতে হবে অশান্তি ও অকল্যান এবং আখিরাতে হবে নিশ্চিত জাহান্নাম।
‘ইসলাম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে– আত্মসমর্পণ। ইসলাম’এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে- মানব জাতি তাদের সমগ্র জীবন তথা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও একমাত্র রব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সকল আদেশ নিষেধ মান্য করে তাঁর প্রদত্ত সকল আইন-বিধানের যথাযথ আনুগত্য করার মাধ্যমে তাঁর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পিত থেকে জীবন পরিচালনা করা। অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত থেকে মানব জাতির সমগ্র জীবন পরিচালনা করা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সত্য সঠিক ও কল্যাণের পথে চলার জন্য পথ প্রর্দশক হিসাবে আদিপিতা আদম (আঃ) থেকে শুরু করে তাঁর সর্বশেষ নাবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত অনেক নাবী ও রাসূল দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন এবং মানব জাতির অবস্থা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ইসলাম এর মৌলিক নীতি ও আইন-বিধান প্রদান করেছেন। সকল নাবী ও রাসূলগণ ইসলাম এর অনুসারী ছিলেন এবং তাদের জাতির লোকদেরকে ইসলাম এর দিকে আহ্বান করেছেন। সর্বশেষ নাবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির কল্যাণ তথা মানবতার কল্যাণে সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবন পরিচালনার জন্য মৌলিক নীতিসমূহ এবং প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর আইন-বিধান প্রদান করে সকল অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করে জীবন বিধান হিসাবে ইসলাম কে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। কাজেই ইসলাম’ই সার্বভৌমত্ব, আইন–বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত মানব জাতির জন্য কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা।
মানুষের সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবন পরিচালনার জন্য সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত পরিপূর্ণ ও কল্যাণকর একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’এর মৌলিক বিষয়গুলো হচ্ছে– (১) সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাসহ মানব জাতির সকল দিক ও বিভাগে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর; মানুষের নয়। এটাই আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং ইসলামের মূল বিষয়। ফলে (২) দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা একমাত্র আল্লাহর; অন্য কারো নয় এবং এর বাস্তবায়নে (৩) শর্তহীন আনুগত্য- অনুসরণ ও অনুকরণ একমাত্র আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর অন্য কারো নয়। ইসলাম এর এই মৌলিক তিনটি বিষয় যে ব্যক্তি এবং যে সমাজ ও রাষ্ট্রের অধিবাসীগণ স্বীকার করে গ্রহণ করে নেয় সে ব্যক্তির অবস্থান ‘ইসলাম’ এ স্বীকৃত এবং সে সমাজ ও রাষ্ট্র “ইসলামীসমাজ” বা “ইসলামীরাষ্ট্র” হিসাবে স্বীকৃত হয়। আর এই তিনটি মৌলিক বিষয়ের যে কোন একটিও যদি কোন ব্যক্তির জীবনে অনুপস্থিত থাকে তাহলে সে ব্যক্তি নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ বহু আমল করা সত্বেও সে ব্যক্তি নিশ্চিতভাবে ইসলামে নেই; যদি সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের পরিবর্তে মানুষের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকে এমতাবস্থায় যদিও আল্লাহর বহু আইন-বিধান ঐ সমাজ ও রাষ্ট্রে কার্যকরী থাকে তবুওসেসমাজওরাষ্ট্র “ইসলামীসমাজ” বা “ইসলামীরাষ্ট্র” নয়। কারণ, জাতির মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব আল্লাহর স্বীকার করে নিলে আল্লাহকেই একমাত্র রব মানা হয় এবং দাসত্ব, আইনের আনুগত্য আল্লাহর করা হয়; কিন্তু তা মানুষের স্বীকার করে নিলে এক্ষেত্রে মানুষকে ‘রব’ মানা হয়, মানুষের দাসত্ব করা হয় এবং আনুগত্য করা হয় মানব রচিত ব্যবস্থা ও মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের; যা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শির্ক। ফলে সে সমাজ হয় জাহিলী সমাজ বা শির্ক ভিত্তিক সমাজ এবং জাতির মানুষ শির্ক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়ে মহাক্ষতিতে নিমজ্জিত হয়। এর ফলে জাতির সকল মানুষের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যায় এবং জান্নাত হারাম হয়ে জাহান্নামের আগুনেই তাদের স্থায়ী আবাস হয়। এহেন পরিস্থিতিতে যতক্ষণ না জ্ঞানের ভিত্তিতে বুঝে কোন ব্যক্তি বা সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব অমান্য ও অস্বীকার করে আল্লাহকেই সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক স্বীকার করে মেনে নিয়ে রাব্বুনাল্লাহ বলে ঈমান এর ঘোষণা না দিবে ততক্ষণ সে ব্যক্তি ঈমানদার বা বিশ্বাসী নয়; সে সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষও ঈমানদার বা বিশ্বাসী নয়। যদিও সে সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন মৃত্যুর মালিকসহ বহু ব্যাপারে আল্লাহকে রব বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নানাবিধ আমলও করে। ফেরাউন, নমরুদ, আবুজাহিল, আবুলাহাবরাও আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতাসহ বহুক্ষেত্রে আল্লাহকে বিশ্বাস করা ও কিছু আমল করা সত্ত্বেও সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের মালিক আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের দাবী করেছিল এবং জাতির মানুষ তাদের এই মিথ্যে দাবী মেনে তাদের মনগড়া আইনের আনুগত্য করার কারণে উভয় পক্ষের কেউই আল্লাহর কাছে ঈমানদার বা বিশ্বাসী হিসাবে স্বীকৃত নাহয়ে কাফির, মুশরিক ও তাগুত হিসাবে গণ্য হয়েছিল।
কাজেই বর্তমান বিশ্বের মানুষও যদি সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের মালিক আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষকে গ্রহণ করে নেয়, তাহলে ঈমানদার বা বিশ্বাসী বলে গণ্য হওয়ার কোন যুক্তি বা দলিল আছে কি? কোন যুক্তি ও দলিলের ভিত্তিতে তারা ঈমানদার বা বিশ্বাসী বলে গণ্য হবে? এ সহজ বিষয়টি বুঝার জন্য অনেক বিদ্যা বুদ্ধির প্রয়োজন আছে কি? অথচ বর্তমান বিশ্বের মুসলিম পরিচয় দানকারীগণসহ গোটা মানব জাতি সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌমত্বের মিথ্যা দাবী মেনে মানব রচিত ব্যবস্থা গণতন্ত্র/ রাজতন্ত্র/ সমাজতন্ত্র/ সামরিকতন্ত্র/ একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি মানব রচিত ব্যবস্থা এবং মানুষের মনগড়া আইনের আনুগত্য করার মাধ্যমে মানুষের দাসত্ব করে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে চরম বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা এবং শির্ক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়েছে। ফলে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতের আমলসহ সকলের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দুনিয়ার জীবনে দুর্ভোগ ও অশান্তির মাত্রাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সকলেই ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে; আর পরকালের স্থায়ী জীবনে জান্নাত হারাম হয়ে জাহান্নামের আগুনেই সকলের স্থায়ী আবাস গড়ার কাজই করা হচ্ছে! যদিও কেউই তা চায় না। যদিও কেউই চায়না যে, আল্লাহর সাথে শির্ক ও আল্লাহর অবাধ্যতা করে তাঁর বিশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে দুনিয়ার জীবনে দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কাল কাটাতে এবং জাতীয় জীবনে অনৈক্য, দলাদলি, সংঘাত, সংঘর্ষ, হত্যা, খাদ্যদ্রব্যসহ সকল দ্রব্যমূল্যের ক্রম উর্ধ্বগতিতে জনজীবন দুর্বিসহ ও অশান্তিময় হোক এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পানি, বাতাস, আগুন, আসমান ও যমিনসহ অন্যান্য সকল সৃষ্টিকূলের অসহযোগিতায় বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সুনামী, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, দাবানল, অচিন রোগ-ব্যধি ইত্যাদি নানাবিধ দুর্যোগ তথা আল্লাহর আযাব গযবে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হতে; আর পরকালে জান্নাত হারাম হয়ে জাহান্নামের আগুনেই নিজেদের স্থায়ী আবাস গড়তে! কিন্তু পরিণতি তেমনটিই হচ্ছে। যা খুবই উদ্বেগ ও চিন্তার বিষয়!
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা বুঝতেই পারছিনা যে, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাম্রাজ্যে বসবাস করা সত্বেও সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌমত্ব মেনে মানব রচিত ব্যবস্থা ও মানুষের মনগড়া আইনের আনুগত্য করে আমরা মানুষের দাসত্ব করছি! যা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ, আল্লাহর চরম অবাধ্যতা, তাঁর সাথে শির্ক এবং ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ! ফলে আমাদের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং জান্নাত হারাম হয়ে জাহান্নামেই আমাদের স্থায়ী আবাস তৈরী হচ্ছে। আমরা যে ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ শিরকে জড়িত হয়ে আছি, তা বুঝতে পারছিনা বিধায়; আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হচ্ছেনা এবং শির্ক থেকে মুক্তও হতে পারছিনা। যার ফলে শির্ক নিয়েই মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে এবং পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম!
যেহেতু আমরা মানুষসহ আসমান, যমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যস্থিত সকল কিছু নিয়ে বিদ্যমান এই বিশাল সাম্রাজ্যের সৃষ্টিকর্তা এবং সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ; মানুষ নয়। সেহেতু সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক আল্লাহই হলেন মানব জাতিসহ সকল সৃষ্টিকূলের জন্য একমাত্র আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা। আল্লাহই আমাদের রিযিকদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা, আমাদের কর্মের হিসাব গ্রহনকর্তা এবং কর্মফল প্রদানকর্তা অর্থাৎ আল্লাহই হলেন সমগ্র বিশ্বজগতের সকলের জন্য একমাত্র রব-সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক, আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা । আমরা মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই রিযিক ভোগ করে জীবন ধারণ করছি এবং আল্লাহরই দয়ার দান আমাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, বাক্শক্তি, কর্মশক্তি ও মেধাবুদ্ধি ব্যবহার করেই এই দুনিয়ার জীবনে যে যার পেশায় নিয়োজিত থেকে উন্নতি সাধন করছি এবং আল্লাহরই নির্ধারিত সময়ে আমরা মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হবো এবং আবার আল্লাহর কাছেই আমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে এবং এই দুনিয়ার জীবনে আমরা যদি আল্লাহর বাধ্যগত (অনুগত) হয়ে ঈমানের ভিত্তিতেজীবন গঠন ও পরিচালনা করি তাহলে ঈমানের ভিত্তিতে জীবন অতিবাহিত করার কর্ম সমূহের প্রতিফল হিসাবে চির সুখের স্থান জান্নাতের অধিবাসী হবো আর আমরা যদি তা না করে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে শির্কের ভিত্তিতে জীবন অতিবাহিত করি তাহলে শিরকের ভিত্তিতে কৃতকর্র্ম সমূহের প্রতিফল হিসাবে চির কষ্টের স্থান জাহান্নামের আগুনে বসবাস করতে বাধ্য হবো। কাজেই, মানুষের অধিকার আদায় ও সংরক্ষণ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন, শোষণমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করে দেশ ও জাতির সকলের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন এবং সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে শান্তি ও কল্যাণ এবং আখিরাতের স্থায়ী জীবনে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করতে হলে- সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব তথা ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ এই শির্ক পরিত্যাগ, অমান্য ও অস্বীকার করে আমাদের নিজেদেরকে এবং সমাজের সকল মানুষদেরকে মানুষের গোলামী থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। কল্যাণ ও মুক্তির লক্ষ্যে এর কোন বিকল্প নেই। আর এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন–বিধান ও কর্তৃত্ব এই মহামিথ্যা ও শির্ক অস্বীকার, অমান্য ও পরিত্যাগ করে “আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার ও গ্রহনের ভিত্তিতে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্বকারী নিঃস্বার্থ, ত্যাগী, মানবদরদী ঈমানদার নেতা বা আমীর’এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত্ব সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রদর্শিত শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশ ও আল্লাহরই আইন–বিধানের আনুগত্য করে শুধুমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করতে হবে। এছাড়া দুনিয়াতে শান্তি ও কল্যাণ এবং আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ অসম্ভব।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলকুরআনে আমাদের তথা মানব জাতির সকলকে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ প্রদান করেন– “হে মানুষ সকল! তোমরা সেই ‘রব’এর (সকল নির্দেশ ও আইন-বিধানের আনুগত্য করার মাধ্যমে তাঁরই) দাসত্বকরো; যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, আশা করা যায় তোমরা (দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রকার ক্ষতি থেকে) রক্ষা পেতে পারবে। যিনি তোমাদের জন্য যমিনকে বিছানা বানিয়েছেন, আকাশকে ছাঁদ বানিয়েছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে ফল, ফসলাদি উৎপন্ন করে তোমাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তোমরা এসব জানো; (সুতরাং সাবধান!) কাউকে তাঁর সমকক্ষ গণ্য করোনা” (সুরা বাকারা:২১, ২২)। অর্থাৎ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাসহ জীবনের কোন ক্ষেত্রেই সৃষ্টিকর্তা ‘রব’ আল্লাহ ব্যতীত (ফিরাউন, নমরুদ’এর মতো আবু জাহিল, আবু লাহাব বা অন্য কোন মানুষ বা) অন্য কাউকে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের মালিক তথা ‘রব’ স্বীকার করে সৃষ্টিকর্তা ‘রব’ আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করে আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থা ও আল্লাহ প্রদত্ত আইন-বিধানের আনুগত্য বাদ দিয়ে মানব রচিত ব্যবস্থা গণতন্ত্র/ রাজতন্ত্র/ সমাজতন্ত্র/ সামরিকতন্ত্র/ একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি কোন ব্যবস্থা ও মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের আনুগত্য করে মানুষের দাসত্ব করোনা।
আল্লাহ আমাদের সকলকেই এই দুনিয়ার জীবনে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করার যোগ্যতা দিয়ে এবং কেবলমাত্র তাঁরই দাসত্ব, তাঁরই আইন-বিধানের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন। এজন্যই আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ট, আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক এবং আমরা মানুষ তাঁরই প্রতিনিধি এবং তাঁরই দাস। এখন আমরা মানুষ যদি আল্লাহকেই আমাদের সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক, আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা মেনে তাঁরই দাসত্ব এবং তাঁরই আইন-বিধানের আনুগত্য করে আমাদের সমাজ রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবন পরিচালনা করি, তাহলে আমাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবেন, তাঁর অশেষ রহমত বরকত আমাদের উপর সদা বর্ষিত হতে থাকবে, তাঁর অন্যান্য সৃষ্টিকূল আলো, বাতাস, আগুন, পানিসহ সকল সৃষ্টিই আমাদেরকে সহযোগিতা করবে; ফলে আমাদের দুনিয়ার জীবন সকল প্রকার দুর্যোগ ও দুর্ভোগ থেকে মুক্ত থাকবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্বকারী নেতার নেতৃত্বে আল্লাহরই আইন-বিধান দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হলে মানুষের মাঝে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে, সকল প্রকার বৈষম্য দূর হবে, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল মানুষের মৌলিক অধিকারসহ সকল অধিকার আদায় ও সংরক্ষণ হবে, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠিত হবে, শোষণমুক্ত অর্থনীতি এবং সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে। ফলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এবং দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের দুনিয়ার জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে; আর আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ঈমানদারগণ মৃত্যু পরবর্তী আখিরাতের স্থায়ী জীবনে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে চির সুখের আবাস জান্নাতে স্থান পাবে। সার্বিক বিশ্লেষণে একথাই সত্য বলে প্রমাণিত হয় যে, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ই মানব জাতির দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের জন্যই একমাত্র কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।
যেহেতু আমরা সকলেই বিশ্বাস করি যে আসমান, যমিন ও এ’দুয়ের মধ্যস্থিত সকল কিছু এবং আমরা মানুষসহ বিশ্বজগতের এই বিশাল সাম্রাজ্যের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং আমরা খাদ্য, পানীয়সহ যা কিছু খেয়ে ও পান করে জীবন ধারণ করি সেগুলোর সৃষ্টিকর্তাও আল্লাহ। আমাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, বাক্শক্তি, কর্মশক্তি ও মেধাবুদ্ধি এগুলোও যে আল্লাহরই দয়ার দান সেকথাও আমরা বিশ্বাস করি। আমরা যেহেতু এও বিশ্বাস করি যে, আমারা যে পৃথিবীতে বসবাস করছি তাও আল্লাহর সাম্রাজ্যের বাহিরে নয় এবং এই বিশাল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকও একমাত্র আল্লাহ এবং এই বিশাল সাম্রাজ্যের সকল কিছু এমনকি আমাদের মস্তিষ্ক, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, স্নায়ুতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র আল্লাহর আইন-বিধানের আনুগত্য করেই পরিচালিত হচ্ছে এবং সকলেই তাদের নিজ নিজ কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু বিশ্বজগতের এই বিশাল সাম্রাজ্যের সৃষ্টিকর্তা ও মালিক আল্লাহ, সেহেতু বিশ্বজগতের এই বিশাল সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিকও আল্লাহ; মানুষ নয়।
বিষয়: বিবিধ
৯৬৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
করছে। সেই কাজই করতে হবে।এ অবস্হায়
শুধু মারখেতে হবে। মার দেওয়া যাবে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন