ইসলামী সমাজ’এর সমাজ কাঠামো ও কর্মনীতি সৈয়দ হূমায়ুন কবির। আমীর, ইসলামী সমাজ।

লিখেছেন লিখেছেন স্বপন২ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:৩৫:২৯ বিকাল



(ক) আমীর: আল্লাহর আনুগত্য এবং আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর শর্তহীন আনুগত্যের অধীন ইসলামী সমাজ ও সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মূল নেতাই ইসলামী সমাজ-এর আমীর। আমীর-ই সমাজ, সংগঠন ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা পরিচালনার মূল ও প্রধান প্রতিনিধি (খলিফা) এবং সকল ক্ষেত্রে দায়িত্ববান। আমীর আলকুরআন ও সুন্নাহ্‌র ভিত্তিতে নিজে পথ চলবেন এবং সমাজ ও সংগঠনের সকল সদস্য ও কর্মীদের পরিচালনা করবেন। “মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব অমান্য এবং মানব রচিত ব্যবস্থা ও এর ধারক-বাহক নেতা বা সরকারের আনুগত্য অস্বীকার করা ঈমান-এর পূর্ব শর্ত বিধায়; মানব রচিত ব্যবস্থার আনুগত্যের অধীনে থেকে ইসলামী সমাজ বা সংগঠনের আমীর হওয়া বা আমীর থাকার কারো কোন অধিকার নেই। আমীর শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করবেন। মানব রচিত ব্যবস্থার ধারক-বাহক শক্তির কোন ভয়ই তিনি করবেন না। আল্লাহর মহব্বতেই তিনি সকলকে নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী ভালবাসবেন এবং ‘আদ্বীন-ইসলামী জীবন বিধান সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলের সার্বিক কল্যাণে আলকুরআন ও সুন্নাহ্‌র ভিত্তিতে যে কোন সময় সমাজ ও সংগঠনের যে কোন বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমীর মূলতঃ আল্লাহর মনোনীত। কেননা আমীর হওয়ার যোগ্যতা যার মধ্যে থাকবে তিনিই আমীর হবেন। যার আমীর হওয়ার যোগ্যতা নেই সে আমীর হতে পারেনা, হওয়া ঠিক নয়। যোগ্যতা মূলতঃ আল্লরাহর দান। আমীর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে কিংবা ইন্তেকাল করলে আমীর হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নিবেদিত কর্মীদের পরামর্শের ভিত্তিতে আমীরের দায়িত্ব গ্রহন করবেন।

(খ) মা‘মুর: ইসলামী সমাজ-এর সকল সদস্য ও কর্মী ভাই এবং বোনেরা কুরআন ও সুন্নাহ্‌র ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ঈমানী দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আমীর’এর নির্দেশ পালন করবেন। আমীরের নির্দেশ পালনকারী প্রত্যেক সদস্য/সদস্যা বা কর্মীর পরিচয় হচ্ছে মা’মুর। আমীর আলকুরআন ও সুন্নাহ্‌র ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা ও রাখার লক্ষ্যে নেতৃত্ব দিবেন এবং মা’মুর আলকুরআন ও সুন্নাহ্‌র ভিত্তিতে আমীরের পরিচালনায় এ লক্ষ্যে ঈমানী দায়িত্ব পালন করবেন।

(গ) দায়িত্বশীল: সংগঠন পরিচালনা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে আমীর বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ্য ও ত্যাগী কর্মীদের মধ্য থেকে দায়িত্বশীল মনোনীত করবেন।

(ঘ) মহিলা সদস্যা: মহিলা সদস্যাগণ আমীর-এর নিয়ন্ত্রনে থেকে বিশেষভাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে ঈমানী দায়িত্ব পালন করবেন।

আমীর, দায়িত্বশীল এবং সকল মামুর নিম্নে বর্ণিত ৪টি মূলনীতি মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন।

১) আল্লাহর আনুগত্য

২) আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য

৩) আমীর-এর আনুগত্য এবং

৪) পরস্পর কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে আলকুরআন ও সুন্নাহ্‌র ভিত্তিতে মতবিরোধকৃত বিষয়ের মিমাংসা গ্রহণ করা ও মেনে চলা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফরমান- হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর এবং তোমাদের উলীল আমর-এর (আমীরের) অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে সামগ্রিক দায়িত্ব সম্পন্ন দায়িত্বশীলগণের। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনো ব্যাপারে মতবিরোধ-মতবৈষম্যের সৃষ্টি হয়, তবে উক্ত ব্যাপারটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল’এর দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাকো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম এবং কল্যাণকর কর্মনীতি (সুরা নিসা:৫৯)।

আল্লাহর বিশেষ সাহায্যে ঈমানদার সৎকর্মশীল আমীরের সার্বিক নেতৃত্ব কোন সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হলে এ মূলনীতি গুলোর অধীন থেকে ইসলামী সমাজ একমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের ভিত্তিতে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত রাষ্ট্রের মডেলে ইসলামী রাষ্ট্র (খিলাফাত ব্যবস্থা) পূণঃ প্রতিষ্ঠা করবে ইন্‌শাআল্লাহ। ফলে সকল মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার আদায় ও সংরক্ষণ হবে, শোষণমুক্ত অর্থনীতি এবং সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠিত হবে; আর তখনই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ ও অন্যান্য সামাজিক অপরাধ সমূহ বন্ধ হবে, দ্রব্যমূল্যের ক্রম উর্ধগতি নিয়ন্ত্রণ হবে, সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ পাবে ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

ইসলামীসমাজ–এরকর্মসূচী

চরিত্রবান ত্যাগী কর্মী গঠনের লক্ষ্যে ইসলামী সমাজ-এর কর্মসূচী হচ্ছে-

১) সাপ্তাহিক ও মাসিক কর্মী বৈঠক

২) বিশেষভাবে আলকুরআন ও সুন্নাহ্‌র প্রশিক্ষণ মূলক বৈঠক

৩) সাংগঠনিক সফর এবং সাধারণ বৈঠক ও সভা

৪) শিক্ষা বৈঠক, শিক্ষা শিবির, ও কর্মী সম্মেলন।

আল্লাহ প্রদত্ত্ব কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম’কে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার মহান দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দেশবাসীকে সচেতন করা এবং সাংগঠিত করার লক্ষ্যে ইসলামী সমাজ-এর কর্মসূচী-

১) সভা, সমাবেশ, গণ জমায়েত ও অহী’র মিছিল ইত্যাদি।

২) গণ সংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি।

৩) ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও দ্বীনি বই-পত্র বিলি।

৪) জন কল্যাণ মূলক (সামর্থানুযায়ী) প্রয়োজনীয় কর্মসূচী।

৫) একমাত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণ মূলক উদ্যোগ এবং কর্মসূচীতে যথাসাধ্য সহযোগীতা দান।

ইসলামীসমাজ-এরআয়েরউৎসওব্যয়ের খাত

আয়ের উৎস:

১) কর্মীদের নিয়মিত মালি কুরবানী।

২) সদস্য ও কর্মীদের বিশেষ দান, এককালীন দান।

৩) সমর্থক ও শুভাকঙ্খীদের এককালীন ও বিশেষ দান।

ব্যয়ের খাত:

১) অফিস ভাড়া ও আনুসঙ্গিক খরচ।

২) সাংগঠনিক সফর ও যোগাযোগ খরচ।

৩) প্রচার ও প্রকাশনা খরচ।

৪) নিবেদিত কর্মীদের বিশেষ প্রযোজনে সামর্থানুযায়ী প্রয়োজনীয় খরচ।

৫) জনকল্যাণে সামর্থের প্রেক্ষিতে যথাসাধ্য সহযোগীতা খরচ।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান, সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি এবং বিশেষ সাহায্য লাভের লক্ষ্যে আমীর, মা’মুর সকলের তাঁরই সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলাই ইসলামী সমাজ-এর সকল কর্মকান্ডের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।

সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রিয় গ্রহণযোগ্য বান্দা হিসাবে কবুল করুন। আমীন!

আলকুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী সমাজ’কে জানুন! নিজে বাঁচুন! জাতিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377833
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০২:৪৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

চিন্তা ও চেতনাকে শাণিত করতে চমৎকার একটি লিখা উপহার দেয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
377843
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৯
স্বপন২ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপা, পড়ার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File