তাওহীদ নিয়ে আলোচনা, আবু যারীফ। ইসলামী সমাজ।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপন২ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:২৫:৩১ রাত
খাঁটিভাবে আল্লাহ্’র দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা করার জন্য চাই র্শিক মুক্ত ঈমান, পরিপূর্ণ তাওহীদ। আল্লাহ’র মনোনীত নাবী-রাসূলগণ সর্বপ্রথম যে বিষয়ের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন তা হলো তাওহীদ। তাওহীদ হচ্ছে কোন জিনিসকে এক ও একক বলেসাব্যস্ত করা। আর সমগ্র বিশ্বজাহানের জন্য একমাত্র আল্লাহ্’ই হচ্ছেন এক ওএকক সত্ত্বা। “আল্লাহ্ পাক তাঁর নাম, সত্ত্বা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারেএক ও একক এবং এ সকল বিষয়ে তাঁর সাথে কারো কোন অংশ নেই, থাকতেও পারে না” এটাই হচ্ছে তাওহীদ। আর আল্লাহ্ পাক কে তাঁর নাম, সত্ত্বা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে এক ও একক জানা এবং মানার নামই তাওহীদ গ্রহণ। তাওহীদ গ্রহণ হচ্ছে আল্লাহ্ তা’য়ালার হক্ব যা গ্রহণ করা বান্দাহ্’র উপর ফরযকৃত বিষয়সমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। হযরত মু’য়ায বিন জাবাল (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “বান্দাহদের উপর আল্লাহ্’র হক্ব হচ্ছে এই যে, তারা আল্লাহ্’র দাসত্ব ও আনুগত্য করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবে না।” (মুসলিম:কিতাবুল ঈমান, হা/৫১, বা.ই.সে)
তাওহীদ দ্বীনের সর্বশ্রেষ্ঠ বুনিয়াদ। সকল মূলনীতির মূল এবং আমলের ভিত্তি। ইসলামী শরীয়াহ্’র আলোকে তাওহীদ তিন প্রকার:
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ্, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ ও তাওহীদুয্ যাত ওয়াল আসমা ওয়াস্ সিফাত।
১। তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ্ : আল্লাহ্’র রুবুবিয়্যাতে তাওহীদ অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহ্’র, মানুষের নয়। এটাই আল্লাহ্’র প্রতি ঈমান। আল্লাহ্’র রুবুবিয়্যাতে তাওহীদ-এর ঘোষণা হচ্ছে- “রাব্বুনাল্লাহ্” অর্থাৎ আল্লাহ্ই আমাদের একমাত্র রব্ব-সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক, সার্বভৌম আইনদাতা, বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা, অন্য কেউ নয়। এছাড়া সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা, রিযিকদাতা, শৃংখলা বিধানকারী, পূর্ণতাদানকারী, হাশরের ময়দানে একত্রে জমাকারী এবং (সমগ্র সৃষ্টি জগৎ) নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা’য়ালাই হচ্ছেন এক ও অভিন্ন রব্ব। তিনি অফুরন্ত নেয়ামতের মাধ্যমে গোটা সৃষ্টি জগৎকে প্রতিপালন করছেন। মহান আল্লাহ্’র প্রতি আমরা সহ সমগ্রসৃষ্টির এ আক্বীদা পোষণের নামই হচ্ছে রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ। মহান আল্লাহ্’ই যে একমাত্র রব্ব এ সম্পর্কে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে-
“তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের রব্ব, সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।” (সূরা যুমার ৩৯:৬)
“তিনি আল্লাহ্, তোমাদের রব্ব, সকল কিছুর স্রষ্টা, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা কোন দিকে বিভ্রান্ত হচ্ছো?” (সূরা মু’মিন ৪০:৬২)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব্ব এবং তোমাদেরও রব্ব। কাজেই তোমরা তাঁর ইবাদাত কর, এটাই হলো সরল-সঠিক পথ।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৬৪)
“আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে রব্ব রূপে গ্রহণ করো। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দিবেন?” (সূরা আলে ইমরান ৩:৮০)
সূরা আলে ইমরানের ৬৪নং আয়াতে আরো বিস্তারিতভাবে আল্লাহ্ ব্যতিত একাধিক রব্ব গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের আরো অনেক সূরায় আল্লাহ্’র রুবুবিয়্যাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে: সূরা ফাতিহা ১:২, সূরা আল-বাকারাহ২:২১-২২, সূরা আলে ইমরান ৩: ৫১,১৯৩, সূরা আন’আম ৬:২৩, সূরা আ’রাফ ৭:৫৪, সূরা ইউনুস ১০:৩১-৩২, সূরা ইউসুফ ১২:৩৯-৪০, সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:১০২, সূরা মারইয়াম ১৯:৩৬, সূরা ত্ব-হা ২০:৪৯,৫০, সূরা মু’মিনুন ২৩:৮৬-৮৯, সূরা শুয়ারা২৬:২৩-২৬, সূরা ইয়াসীন ৩৬:৮৩, সূরা হাদীদ ৫৭:৮ ইত্যাদি।
আল্লাহকে একমাত্র রব্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ব্যতীত ঈমানদার হওয়াই সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে তাই হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে:
হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে বলতে শুনেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে এবং আন্তরিকতার সাথে মেনে নিয়েছে, সে প্রকৃত ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করেছে। (সহীহ মুসলিম, অনু-১২, হা-৫৯, বা.ই.সে)
২। তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ : আল্লাহ্’র উলুহিয়্যাতে তাওহীদ অর্থাৎ দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা একমাত্র আল্লাহ্’র, অন্য কারও নয়। উলুহিয়্যাতে তাওহীদের অঙ্গীকার হচ্ছে- ‘‘আশ্হাদু আল্লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ্” অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নেই কোন ইলাহ্ (মা’বুদ)- দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী সত্তাএকমাত্র আল্লাহ্ ব্যতীত। এটা মূলতঃ ইসলামের অঙ্গীকার। একমাত্র আল্লাহ্ তা’য়ালাকেই তাঁর সমগ্র সৃষ্টি জগতের উপর উলুহিয়্যাত এবং উবুদিয়্যাতের অধিকারী হিসেবে জানা এবং যাবতীয় ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর এই একত্বের স্বীকৃতি দান করা, সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহ্’র জন্যই দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনাকে নিরঙ্কুশ করা। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
“আর তোমাদের ইলাহ্ হচ্ছেন এক ইলাহ্ (একজনই)। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ্ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।” (সূরা বাকারা ২:১৬৩)
“আর আল্লাহ্’র ফরমান হলো, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না। ইলাহ্ তো মাত্র একজন। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো।” (সূরা নাহল ১৬:৫১)
‘আমি মানুষ ও জীন জাতিকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদাতের জন্য।’ (সুরা জারিয়াত ৫১:৫৬)
এছাড়াও একইভাবে পবিত্র কুরআনের আরো অনেক স্থানে এক ইলাহ্’র ইবাদাত করা ও একাধিক ইলাহ গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে যেমন: সূরা আল ইমরান ৩:১৮,৫১, সূরা নিসা ৪:১৭১, সূরা মায়েদা ৫:৯৩, সূরা আন’আম ৬:১৯, সূরা কাহফ ১৮:১১০, সূরা আম্বিয়া ২১:২১,১০৮, সূরা হাজ্জ ২২:৩৪, সূরা ফুসসিলাত ৪১:৬, সূরা নাহল১৬:২২, সূরা মারইয়াম ১৯: ৩৬,৮১, সূরা ইয়াসীন ৩৬:৭৪ ইত্যাদি।
৩। তাওহীদুয্ যাত ওয়াল আসমা ওয়াস্ সিফাত : অর্থাৎ আল্লাহ্’র সত্তা, নাম ও গুণাবলীর তাওহীদ। “আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সত্তায় অবিভাজ্য, গুণরাজিতে অনুপম এবং কার্যাবলীতে অংশীদারহীন, এক, একক এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী, এ ক্ষেত্রে কোনক্রমেই কেউ তাঁর সমকক্ষ ও অংশীদার হতে পারে না” এ সব সত্যেরই নাম তাওহীদুয্ যাত ওয়াল আসমা ওয়াস্ সিফাত। আর এ সব আক্বীদাহ পোষণ করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ্’র যাত ওয়াল আসমা ওয়াস্ সিফাত-এর তাওহীদ গ্রহণ। ইরশাদ হচ্ছে-
“বলুন! তিনি আল্লাহ্, এক একক। আল্লাহ্ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন, সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরা ইখলাস ১১২:১-৪)
আল্লাহ্’র কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ্’য় আল্লাহ্’র যে সকল সুন্দর নাম ও গুণাবলী উল্লিখিত হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে এবং স্বীকৃতি দিতে হবে। আল্লাহ্ তা’আলার যাত ও সত্তার জন্য শোভনীয় ও সামঞ্জস্যশীল অনেক ইসম ও সিফাতের অর্থ এবং হুকুম আহকাম কুরআন ও সুন্নাহ্’য় বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে আল্লাহ্ তাঁর নিজ সত্তার জন্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্’র জন্য যেগুলোকে ইতিবাচক বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এর কোন একটিকেও অস্বীকার করা যাবে না, নিরর্থক বা অকার্যকর বলা যাবে না, পরিবর্তন করা যাবে না এবং আকার আকৃতিও দেয়া যাবে না। সাথে সাথে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্’র কামালিয়াতের ক্ষেত্রে যেসব দোষ-ত্রুটিকে নেতিবাচক হিসেবে ঘোষণা করেছেন সেগুলোকে নেতিবাচক হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। কালামে পাকে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে-
“আর আল্লাহ্’র রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, তোমরা সে নামে তাঁকে আহ্বান করো। আর সেসব লোকদের তোমরা পরিত্যাগ করো, যারা তাঁর নামসমূহে বিকৃতি সাধন করে। তারা যা করতো অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিদান দেয়া হবে।” (সূরা আল আরাফ ৭:১৮০)
“কোন কিছুই তাঁর মত নেই, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শূরা ৪২:১১)
কোন অবস্থাতেই আল্লাহ্’র গুণ অস্বীকার করা, এসবের বিকৃত অর্থ করা, উপমা দেয়া, ধরন বর্ণনা করা যাবে না। অতএব তিনি কোন কিছু তাঁর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়াকে অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর নিজের জন্য সকল কিছু শোনা ও দেখাকে খাছ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা গেলো যে, সিফাত (গুণ) সাব্যস্ত করার দ্বারা সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া অপরিহার্য হয় না এবং এটাও বুঝা গেল যে, সাদৃশ্য অস্বীকার করেই সিফাতকে সাব্যস্ত করতে হবে। আল্লাহ্’র নামসমূহ ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে অস্বীকার ও সাব্যস্ত করার ব্যাপারে মু’মীন মুসলমানের আকীদাহ্ এই যে, কোন সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তাঁর গুণাবলী সাব্যস্ত করতে হবে এবং বাতিল করা ছাড়াই তাঁর গুণাবলীকে পবিত্র রাখতে হবে।
আল্লাহ সকল অর্থ ও বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ যাত, মর্যাদা ও গুণাবলীর দিক থেকে সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী। তিনি মহান আরশে এমনিভাবে সমাসীন যেমনটি তাঁর আজমত, জালালত এবং উচ্চ মর্যাদার জন্য শোভনীয় ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর জ্ঞান যাহের, বাতেনএবং ঊর্ধ্বলোক ও অধঃজগতকে বেষ্টন করে রেখেছে। জ্ঞানের দ্বারা তিনি বান্দাহর সাথেই রয়েছেন। বান্দাহদের সকল অবস্থা তিনি জানেন। তিনি বান্দাহদের অতি নিকটে রয়েছেন। তাদের ডাকে তিনি সাড়া দেন। তিনি সর্বতভাবে সমস্ত সৃষ্টিজগতের কাছে মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে মুক্ত। কিন্তুসদা-সর্বদা সৃষ্টি জগতের সবকিছুই নিজের অস্তিত্বের ব্যাপারে এবং প্রয়োজন মিটানোর ব্যাপারে তাঁর মুখাপেক্ষী। কেউ কোন মুহূর্তের জন্যও তাঁর দৃষ্টির বাইরে থাকতে পারে না। দ্বীন ও দুনিয়ার যে কোন নেয়ামত তাঁরই কাছ থেকে আগমন করে। আবার যে কোন দুঃখ তিনিই দূর করেন। তিনিই কল্যাণ দানকারী এবং দুঃখ লাঘবকারী। কোন কিছুই তিনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। একমাত্র ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্যই তিনি ইসলাম নামক জীবন বিধান দান করেছেন। তিনি তাওবা কবুলকারী, ভুল মার্জনাকারী এবং ক্ষমাশীল। যারা তাওবা করে, ক্ষমা চায় এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে তাদের বড় বড় গুনাহকে তিনি ক্ষমা করে দেন। একজন ব্যক্তি যদি র্শিক মুক্ত সামান্য আমলের মাধ্যমেও তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে তিনি তার শুকরিয়া গ্রহণ করেন। আর শুকরিয়া জ্ঞাপনকারীদের জন্য তিনি তাঁর রহমত আরো বৃদ্ধি করে দেন।
তাওহীদ হচ্ছে মানুষের জীবনে নিরাপত্তার ভিত্তি। কারণ, এর দ্বারাই সে নিরাপত্তা ও শান্তি পায়। একত্ববাদী মু’মিন আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। তাওহীদ ভয়ের সমস্ত দ্বার বন্ধ করে দেয়, যেমন রিযিকের ব্যাপারে, জানের ব্যাপারে, পরিজনের জন্য, মানুষ হতে, জিন হতে, মৃত্যু হতে এবং অন্যান্য ভয়-ভীতি হতেও। অন্যেরা যখন ভয়ের মধ্যে থাকে তখন তাকে দেখায় নির্ভীক। যখন মানুষ চিন্তাপেরেশানীতে জর্জরিত, তখন সে থাকে অবিচলিত। আর এই নিরাপত্তা মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থল হতে নির্গত হয়। কোন প্রহরীর প্রহরায় এই নিরাপত্তা অর্জিত হয় না।এতো হলো দুনিয়ার নিরাপত্তা। আর আখিরাতের নিরাপত্তা তো আরও বড় এবং চিরস্থায়ী। কারণ তারা আল্লাহ্’র জন্য ইখলাছের সাথে ইবাদাত করেছে এবং আল্লাহ্’র একত্ববাদের সাথে কোন র্শিক মিশায়নি। কারণ র্শিকই হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম।
তাওহীদ বান্দাহর দুঃখ-দুর্দশা ও কষ্ট লাঘব করে। বান্দাহ তাওহীদ ও ঈমানের পূর্ণতা অনুযায়ী দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা ও বেদনাকে উদার চিত্তে এবং প্রশান্ত মনে গ্রহণ করে নেয়। সাথে সাথে আল্লাহ্’র দেয়া পরীক্ষাকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়।
তাওহীদ হচ্ছে মানুষের মনের শক্তির উৎস। তা তাকে মানসিক শক্তি যোগায়। ফলে তার অন্তর আল্লাহ্ হতে প্রয়োজন প্রাপ্তির আশায় ভরে যায়। তাঁর উপর বিশ্বাস জন্মে এবং তাঁর উপর ভরসা করে, তাঁর বিচারে মন খুশী থাকে, তাঁর হতে প্রদত্ত বিপদে সহ্য ক্ষমতা আসে। সৃষ্টির মুখাপেক্ষিতা হতে সে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পাহাড়ের মত অটল হয়ে যায়। যখনই সে কোন বিপদে পতিত হয়, তখনই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ্’কে ডাকতে থাকে। সে কখনও বিপদ মুক্তির জন্য কিংবা মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য আল্লাহ্’কে বাদ দিয়ে পীর-মুর্শিদদের স্মরণ করে না, কোন কবর, মাজারে মৃতদের কাছে ফরিয়াদ করতে যায় না। তাদের নিদর্শন হচ্ছে নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিম্নোক্ত হাদীসে:
“যখন কোন কিছু চাও শুধু আল্লাহ্’র কাছেই চাও, যখন কোন সাহায্য চাও তাঁর কাছেই চাও।” (তিরমিযী)।
তাঁরা সাথে সাথে আল্লাহ্ পাকের ঐ কথার উপরও আমল করে-
“যখন আল্লাহ্ পাক তোমাকে কোন বিপদ স্পর্শ করান, তখন তিনি ছাড়া কেউ তাকে দূর করার নেই।” (সূরা আনআম ৬:১৭)
তাওহীদ হচ্ছে ভ্রাতৃত্ব এবং একতার বন্ধনের মূল। কারণ তা কখনই এমন অনুমতি দেয় নাযে, আল্লাহকে ছেড়ে একদল লোক অপর দলকে রব্ব হিসেবে মানবে। কারণ, উপাসনা করতেহবে একমাত্র আল্লাহ্’র জন্য এবং সমস্ত মানুষের ইবাদাত পাওয়ার যোগ্যতা একমাত্র তিনিই রাখেন। আর সমস্ত আবেদদের তাজ হচ্ছেন মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে আল্লাহ নির্বাচন করেছেন সকলের মধ্য হতে।
প্রকৃত আল্লাহ্ ওয়ালা তাওহীদপন্থী মুসলমানের আক্বীদা এই যে, তারা ঘোষণা করে: আল্লাহ-ই হলেন একমাত্র রব্ব, একমাত্র মালিক এবং একমাত্র ইলাহ্। জাত, সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতায় ও অধিকারে পূর্ণাঙ্গ একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী তিনি। তাই মু’মিনগণ নিষ্ঠার সাথে একমাত্র আল্লাহ্’রই দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা করে। তিনিই একমাত্র রব্ব এবং আকাংখিত একক ইলাহ। তিনিই সেই প্রথম সত্তা যার পূর্বে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিলো না। তিনিই সর্বশেষ সত্তা যার পরে কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকবে না। তিনিই ‘যাহের’ যার উর্ধ্বে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। তিনিই ‘বাতেন’ যিনি ছাড়া চিরন্তন কোন সত্তা নেই।
তাওহীদের সুমহান মর্যাদার বিষয় হচ্ছে এই যে, তাওহীদ বান্দাহকে সৃষ্টির দাসত্ব, সৃষ্টির প্রতি ভয়, সৃষ্টির নিকট থেকে কিছু পাওয়ার আশা এবং সৃষ্টিরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দান করে। অর্থাৎ সে যাই করে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টির লাভের জন্যই করে। মূলতঃ এটাই হচ্ছে বান্দাহর জন্যপ্রকৃত সম্মান ও মর্যাদার বিষয়। এর দ্বারাই মানুষ আল্লাহ্ তা’য়ালাকে রব্ব, মালিক এবং ইলাহ হিসেবে মেনে নিয়ে প্রকৃত দাসে পরিণত হয়। ফলে সে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছুই কামনা করে না। তাঁকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না।একমাত্র তাঁর দরবার ছাড়া আর কারো কাছে আশ্রয় চায় না। এভাবেই তার পরিপূর্ণ কামিয়াবী আর সফলতা অর্জিত হয়। তাওহীদের আরো ফজিলত এই যে, তাওহীদ বান্দাহর হৃদয়ে যখন পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং পর্ণূ ইখলাসের সাথে তা অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তার অল্প আমলই অনেক আমলে পরিণত হয়। তার কথা ও কাজের সওয়াব সীমা ও সংখ্যার হিসেব ছাড়াই বৃদ্ধি পেতে থাকে। কেননা সপ্তাকাশ ও জমিনে তথা সৃষ্টিজগতে যা কিছু আছে তার সব মিলিয়েও বান্দাহর ইখলাসের সাথে গ্রহণকৃত ‘রাব্বুনাল্লাহ্’ ও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমার সমকক্ষ হয় না।
তাওহীদের আরো মর্যাদা এই যে, তাওহীদবাদী ব্যক্তিদের ইহ জীবনের সাফল্য, বিজয় সম্মান, হেদায়াত লাভ, সহজ পথের সুবিধা, দূরাবস্থার সংশোধন এবং কথা ও কাজে দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা’আলা স্বয়ং জিম্মাদার হয়ে যান। ঈমান, তাওহীদ এবং ইখলাস দ্বারা যার হৃদয় ভরে যায়, সে আল্লাহ্ তা’আলার যাবতীয় নির্দেশ হাসিমুখে মেনে নেয়, গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং গুণাহর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তাওহীদের ব্যাঘাত ঘটায় না। মোটকথা পরিপূর্ণভাবে যে ব্যক্তি তাওহীদকে আঁকড়ে ধরবে, সে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে স্বীয় মর্যাদাপূর্ণ স্থান বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিশেষ প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’য়ালার প্রতি পরিপূর্ণ ভয় থাকা। তাঁর উপর এমনভাবে তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা যার ফলে কোন বিষয়েই তার অন্তর মাখলুকের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। অন্তর দ্বারা তার কাছে সম্মান ও মর্যাদা কামনা করে না। তার মুখ নিঃসৃত কোন কথা অথবা তার কোন অবস্থার দ্বারা মাখলুকের কাছে কিছুই চায় না, বরং তার ভিতর ও বাহির, কথা ও কাজ, ভালোবাসা ও ক্ষোভ এবং তার সার্বিক অবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য-অনুসরণ ও অনুকরণ করা। এক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন মর্যাদাও স্তরের অধিকারী হয়ে থাকে। মনের আশা-আকাংখা আর বাস্তবতা বর্জিত দাবির নাম তাওহীদের বাস্তবায়ন নয়। বরং তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হয় অন্তরে এমন ঈমান, ইসলাম এবং ইহসানের মূল শিক্ষা বদ্ধমূল করার মাধ্যমে যা আমলে সালেহ, মহৎ ও সুন্দর চরিত্র দ্বারা প্রকাশিত হয়।
বিষয়: বিবিধ
১২৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন