ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সুচনাঃ প্রহসনের বিচারে আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির আদেশ যেভাবে
লিখেছেন লিখেছেন ফয়েজ রহমান ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৭:১০ রাত
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পিরোজপুর জেলা ইউনিট কমান্ড ঐ জেলার রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধীদের যে তালিকা দিয়েছেন তাতে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম ছিল না। ঐ তালিকার ৪৬ নং ক্রমিকে পরিষ্কার উলেখ আছে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের নাম দেলোয়ার সিকদার। তার পিতার নাম রসুল সিকদার। অথচ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম তার দাখিল এবং আলিম পাসের সার্টিফিকেটে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আছে। তার পিতার নাম ইউসুফ সাঈদী। এই দু’টি ডকুমেন্ট প্রসিকিউশনই (সরকার পক্ষ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছেন। তারপরেও সেটা আমলে না নিয়ে দেলোয়ার সিকদার ওরফে দেলু ওরফে দেইল্যা রাজাকারের অপরাধ বিশ্বখ্যাত আলেমে দ্বীন ও মোফাসসিরে কুরআন মাওলানা সাঈদীর ঘাড়ে চাপিয়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে যেমনটি চেয়েছেন সরকার এবং তাদের লালিত-পালিত শাহবাগীরা। এই রাজাকার দেলু সিকদারের গ্রামও ভিন্ন। তার গ্রামের নাম চিলা যা পিরোজপুর শহরের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অদূরে। অন্যদিকে আলvমা সাঈদীর গ্রামের নাম সাইদখালী। সর্বোপরি ঐ দেলোয়ার সিকদারই যে বর্তমান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তার পক্ষে প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্রও দাখিল করেননি প্রসিকিউশন।অনুসন্ধানে জানা যায়, চিলা গ্রামের সিকদার বাড়ির রসুল সিকদারের ৬ জন পুত্র সন্তান ছিল। তারা হলেন- ১। এনায়েত সিকদার, তিনি ব্যবসা করতেন বর্তমানে কিছু করেন না। ২। বেলায়েত সিকদার গৃহস্থালীর কাজ করেন। ৩। দেলোয়ার সিকদার (অবিবাহিত) কুখ্যাত রাজাকার ছিল, পিরোজপুর দখলদারমুক্ত হবার পরপরই মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তেজিত জনতার হাতে নিহত হয়। প্রসিকিউশন ডকুমেন্টের ৩ নাম্বার ভলিউমের ২১৩ নং পৃষ্ঠায় ৪৬ নাম্বার ক্রমিকে তার নাম রাজাকার হিসেবে উলেখ আছে। এই তালিকাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক প্রণীত তালিকা। ৪। মতিয়ার রহমান সিকদার বাস মালিক সমিতিতে চাকরি করে, ছেলে-মেয়ে আছে। ৫। ফুল সিকদার (মৃত)। ৬। চান সিকদার এনজিও কর্মী। তিনি ছাড়া সবাই সিকদার বাড়িতে বসবাস করে।
দেলোয়ার সিকদারের দাদা অর্থাৎ রসুল সিকদারের পিতার নাম আঃ ওহাব সিকদার। রসুল সিকদারের স্ত্রীর নাম বড়ু বিবি। ৬ ছেলের পাশাপাশি তার ছিল ৩ জন কন্যা সন্তান। তারা হলেন- ১। রিজিয়া বেগম-স্বামী মখলেস সান্নামত, ২। আনো বেগম-স্বামী মকু মিয়া, গ্রাম-খানা কুনারি, ৩। মন্ড বেগম-আফজাল চৌকিদার।
মুক্তিযুদ্ধ শুরচ হওয়ার পর এই দেলোয়ার শিকদার ওরফে দেলু শিকদারের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও গণহত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, স্বাধীনতাকামী মানুষদের বাড়িঘর পাক হানাদার বাহিনীকে দেখিয়ে দেয়াসহ বহুবিধ অপরাধের সাথে জড়িত ছিল সে। তার অঞ্চল ছিল নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি (বর্তমান জিয়ানগর থানা) এলাকা। পিরোজপুর শত্রচমুক্ত হওয়ার পর পিরোজপুর ও নাজিরপুরের মধ্যবর্তী একটি স্থান থেকে স্থানীয় মানুষ তাকে আটক করে প্রথমে গণধোলাই দেয়। পরে তাকে পিরোজপুর শহরে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হলে মুক্তিকামী মানুষ তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। তার লাশও শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বা কেউ খোঁজ করেনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর মামলা নং ICT-BD Case No. 01 of 2011 এ বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারচল হকের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল গত ২৮ শে ফেব্রচয়ারি ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে তার বিরচদ্ধে আনীত মোট ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ট্রাইব্যুনাল চার্জ নং-৮ এবং ১০-এ মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অন্য অভিযোগসমূহে লঘুদন্ড হবে বিবেচনায় পৃথক কোন দন্ডাদেশ প্রদান করেন নাই। মোট ৩৮টি অনুচ্ছেদে ২৫৬টি প্যারায় এই রায় প্রদান করা হয়েছে।
প্রসিকিউশন সরকার পক্ষের মামলা হলো ফরমাল চার্জ সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং প্রদর্শিত দলিলপত্র থেকে দেখা যায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যিনি ঐ সময় তাদের কথিত মতে দেলু বা দেলোয়ার শিকদার নামে পরিচিত ছিল, যে পারেরহাটে মুদির ব্যবসা করতো। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচ হলে তিনি ভাল উর্দু জানার কারণে পাকিস্তান আর্মির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং পাকিস্তান আর্মিদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন বা পাকিস্তান আর্মিদের ঐ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সহায়তা প্রদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে আত্মরক্ষার্থে পিরোজপুর হতে যশোরের বাঘারপাড়া থানার দহকলা গ্রামের রওশনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে আত্মগোপন করে সৌদি আরব চলে যান, ১৯৮৬ সালে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পিরোজপুরে ধর্মসভা করে।
আসামী পক্ষের মামলা হলো তিনি কখনও দেলু বা দেলোয়ার শিকদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, তিনি কখনই মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনি স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকে ওয়ায়েজীন হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিল করতেন। বিশেষত যশোর জেলায় ওয়াজ মাহফিল করতেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচর আগে যশোরের নিউমার্কেট এলাকায় নিউ টাউনে বসবাস করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচ হলে তিনি নিউ টাউন হতে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করার পর মাহিরনের পীর সাহেব সদরচদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে পরবর্তীতে দহকলার রওশন আলীর বাড়িতে জুলাই-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং পরে নিজ এলাকায় ফেরত আসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ সমাপ্ত হবার পরও বেশ কিছুদিন নিজ এলাকায় থাকার পর খুলনায় যান এবং সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াজ মাহফিল করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন। এরপরে তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার রাজনৈতিক ভূমিকা এবং তিনি জনপ্রিয় ওয়ায়েজীন হওয়ার কারণে তার বিরচদ্ধে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে যার সাথে তার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। এই অভিযোগসমূহকে আলvমা সাঈদী শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
মাওলানা সাঈদীর বিরচদ্ধে আনীত যে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে ফজলে কবিরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সমস্ত বিষয়ের পাশাপাশি রায়ে আরও কিছু বিষয় উলেখ আছে যেমন, তিনি রাজাকার ছিলেন, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন বা তার নাম দেলু ছিল মর্মে ট্রাইব্যুনাল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন সেগুলো সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান করা প্রয়োজন। মামলা পরিচালনার সময় এসব বিষয় আসামীপক্ষ সঠিকভাবে উপস্থাপন করলেও রায়ে তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি।
প্রথমত :- তার নাম সংক্রান্ত তথ্য : প্রসিকিউশন পক্ষ হতে বরাবর তার নাম দেলু, দেইলv বা দেলু শিকদার হিসেবে দাবি করা হইলেও মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে প্রসিকিউশন পক্ষ কোন প্রামাণ্য তথ্য ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন নাই। ফরমাল চার্জে তাকে ঐ নামে অভিহিত করা হইলেও ইহার সমর্থনে প্রসিকিউশন পক্ষ কোন দালিলিক প্রমাণ হাজির করে নাই। এমনকি এই মামলার নালিশ দায়েরকারী অর্থাৎ PW-1 মাহবুবুল আলম হাওলাদার নিজে বাদি হয়ে জিয়ানগর থানায় যে এজাহার দায়ের করেন বা এই মামলার অপর সাক্ষী PW-6 আব্দুল মানিক পসারী পিরোজপুর থানায় যে মামলা দায়ের করেন তাতেও দেলোয়ার শিকদার বা দেলু শিকদার বা দেইলv উলেখ ছিল না যা আসামীপক্ষ হতে প্রদর্শনী F এবং W হিসেবে চিহ্নিত হয়। উপরন্তু যে সমস্ত সাক্ষী বিজ্ঞ প্রসিকিউটরগণ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এবং পরিকল্পতভাবে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীতে দেলু শিকদার কথাটি না থাকলেও সাক্ষীদের আদালতে দেলোয়ার সিকদার বলতে বাধ্য করেছে। সাক্ষীরা যে তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দীতে দেলোয়ার শিকদার কথাটি বলেন নাই তা তদন্তকারী কর্মকর্তা PW-28 জেরায় স্বীকার করেছেন। আসামীর নাম ১৯৭১ সাল পর্যন্ত শিকদার ছিল মর্মে দাবি করলেও প্রসিকিউশনের দাখিল করা প্রদর্শনী হতে দেখা যায় যে সাঈদী সাহেবের ১৯৫৭ সালের দাখিল সার্টিফিকেটে তার নাম দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এবং তার পিতার নাম ইউসুফ সাঈদী লেখা আছে। শিক্ষা জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অর্থাৎ ১৯৫৭ সালের দাখিল সনদে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী লেখা থাকলেও প্রসিকিউশন পক্ষ পরবর্তীকালের অর্থাৎ ১৯৬০ সালের আলীম সনদের বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভুলভ্রান্তিকে পুঁজি করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়মানুযায়ী সংশোধিত আলীম সনদেও সংশোধনের পূর্বেও সিকদার কথাটি লেখা ছিল না। উপরন্তু এই মামলার গুরচত্বপূর্ণ সাক্ষী PW-23 মধুসুদন ঘরামী জেরায় এটা স্বীকার করেছেন যে, পারেরহাটে রাজাকার বাহিনী গঠনকারীদের মধ্যে ছিল দেলোয়ার শিকদার, পিতা- রসুল সিকদার যিনি স্বাধীনতার পরে গণরোষে নিহত হয়। তিনি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ডকে সনাক্ত করেন নাই এই ক্ষেত্রে সহজেই অনুমেয় যে প্রসিকিউশন পক্ষ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে দেলোয়ার শিকদার হিসেবে চিত্রায়িত করার যে অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল তার রায়ের প্যারা পনেরতে আসামীর বর্ণনায় যে সমস্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তা একপেসে এবং সাক্ষ্য প্রমাণ নির্ভর নয়।
ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার জন্য মৃত্যুদন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে তার স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলা বিবেচনায় আনা হয়নি
* ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী ছেলে মেয়ে শাশুড়ী শ্যালক শ্যালিকা জীবিত থাকলেও তাদের সাক্ষী করা হয়নি
বিশ্ববরেণ্য মোফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যে দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে তার প্রথমটি হলো ইব্রাহিম ওরফে কুট্টি হত্যা। এই ইব্রাহিম ওরফে কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীসহ ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছিল। তার মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম ছিল না। এমনকি রাজাকার দেলোয়ার সিকদারের (যার অপরাধ মাওলানা সাঈদীর ঘাড়ে চাপিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে) নামও ছিল না। সরকার পক্ষ (প্রসিকিউশন) ঐ মামলার কোন নথি ট্রাইব্যুনালে হাজির করেনি। আসামীপক্ষ দাখিল করলেও তা বিবেচনায় নেননি ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদানের সময়। ইব্রাহিম ওরফে কুট্টির স্ত্রী, শ্যালক, শ্যালিকা, ছেলে, মেয়ে, শাশুড়ী সবাই জীবিত থাকলেও তাদের কাউকেই সাক্ষী করা হয়নি। নিকটাত্মীয়দের বাদ দিয়ে অনেক দূরে বাড়ি এমন অনাত্মীয় ব্যক্তির মৌখিক কথার ওপর ভিত্তি করে ট্রাইব্যুনাল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে। মমতাজ বেগমের স্বাধীনতার পরপরই দায়ের করা মামলাকে গুরচত্ব না দিয়ে ৪২ বছর পরে অনাত্মীর দূরের লোকদেরকে শিখিয়ে দেয়া কথার ভিত্তিতেই শুধু রায় দেয়া হয়েছে তা নয়- ঐ মামলার সার্টিফাইড কপি মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী (DW-13) দাখিল করেছেন। সেটাও আদালত বিচেনায় নেননি। আসামী পক্ষের সাক্ষীদের কোন বক্তব্যই বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সরকার পক্ষের সাক্ষীদের কোন বক্তব্যই বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সরকার পক্ষের সাক্ষীদের জেরাও বিবেচনায় না নিয়ে নজিরবিহীন এক রায় প্রদান করা হয়েছে।
মূল চার্জে বর্ণিত অভিযোগে বলা হয়, ৮ মে ১৯৭১ বেলা ৩টার সময় সাঈদী সাহেবের নেতৃত্বে তিনি এবং তার সহযোগীরা পাকিস্তানী আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে মানিক পশারীর বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তারকাজের লোক ইব্রাহিম ওরফে কুট্টি ও তার ভাই মফিজ উদ্দিন পশারীকে ধৃত করে তাদের বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে সাঈদী সাহেবের নির্দেশে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফেরার পথে তার ইঙ্গিতে ইব্রাহিম কুট্টিকে পাকিস্তানী আর্মিরা গুলী করে হত্যা করে ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। মফিজউদ্দিনকে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে অত্যাচার করে এবং পারেরহাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।
প্রসিকিউশন পক্ষ উক্ত বক্তব্যের সমর্থনে সরকার পক্ষের সাক্ষী PW-2, PW-4, PW-6, PW-7, PW-8, PW-9, PW-10, PW-11, PW-12 দেরকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে মর্মে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উলেখ আছে। দেখা যায, এছাড়াও ট্রাইব্যুনাল PW-2, PW-13, PW-15এবং PW-17 কে মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন করে উক্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এই বিষয়ে আসামী পক্ষের বক্তব্য ন্যূনতম বিবেচনায় আনেন নাই। এমনকি সম্পূর্ণ আইনও বিধি বহির্ভূতভাবে আসামী পক্ষের গুরচত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বিশেষত প্রদর্শনী-A বিচেনায় না নিয়ে চরম অন্যায় কাজ করেছেন বা বিচারের নামে চরম অবিচার সম্পন্ন করেছেন। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের যুক্তি তর্কের ধারে কাছেও যান নাই। মৃত্যুদন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণকে শুধুমাত্র জুলুম ও নির্যাতনের সাথে তুলনা করলেই যথার্থ হবে না কারণ এ ধরনের বিচারকগণ তাদের শপথ ভঙ্গ করে একতরফাভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য যে মূল্যায়ন করেছেন তাতে তারা বিচারক হিসেবে কর্মরত থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞগণ। এই চার্জের উলেখিত সাক্ষীদের মধ্যে PW-6 আব্দুল মানিক পশারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে পিরোজপুর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছিলেন যা পূর্বে উলেখ করা হয়েছে। উলেখিত এজাহারে তিনি তার কথিত ভাই মফিজ উদ্দীন পসারীর আটক ও নির্যাতনের কোন বর্ণনা দেন নাই এমনকি তাকে সাক্ষীও করেন নাই (অবশ্য পরেতাকে উলেখিত মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করলে কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দী লিপিবদ্ধকরা হয়) যদিও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় চলিশ বছর পরে ভেবে চিন্তে এই এজাহার তিনি দায়ের করেছিলেন। তিনি ঐ মামলায় ইব্রাহিম কুট্টির পিতার নাম সইজুদ্দিন লিখেছিলেন। তিনি ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদানকালে নিজেকে কথিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে দাবি করে সাক্ষ্য প্রদান করেন। অথচ চড-১০, চড-১১ জেরায় জানান যে, মানিক পশারী তার পরিবারের সকল সদস্যসহ ঘটনার আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই চার্জে ঘটনার সময় বেলা ৩টার কথা বলা হলেও চড-২ এবং চড-৭ এর মতে ঘটনা বেলা ১০-১১টার সময়ের মধ্যে ঘটেছে। চড-৭ মফিজ উদ্দীন কথিত ঘটনার নির্যাতিত এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে দাবি করলেও তার বক্তব্য যে, বিশ্বাসযোগ্য নয় তার প্রমাণ হল মানিক পশারীর দায়েরকৃত এজাহারে মফিজ পশারীর আটক বা নির্যাতনের কোন বর্ণনাই নাই (প্রদর্শনী- ড) এবং মফিজ উদ্দীন পশারী ঐ মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রদত্ত জবানবন্দিতে (প্রদর্শনী ড-২) পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন যে তিনি ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করতে দেখেন নাই।
উপরন্তু প্রদর্শনী-অ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের ১৯৭২ সালে দায়েরকৃত মামলা অনুসারে তার স্বামী ইব্রাহিম কুট্টিকে তাদের নলবুনিয়ার বাড়িতে ১লা অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে হত্যা করে তার লাশ পাড়েরহাটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার ভাই সাহেব আলী ওরফে সিরাজকে এবং তার মাকে আটক করে পিরোজপুরে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও সাহেব আলীর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। উক্ত মামলায় ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু ঐ এজাহার বা অভিযোগপত্রে সাঈদী সাহেবের নাম নাই। উক্ত এজাহারটি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তার ছেলে মাসুদ সাঈদী প্রদর্শনী-অ হিসেবে দাখিল করেন। এই মামলার জি আর বহি তলবের জন্য আসামীপক্ষ হতে বার বার আবেদন করা হলেও কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া তা নাকচ করা হয়েছে। এটা যে ইচ্ছাকৃতভাবে সাঈদী সাহেবকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তা রায়ের ধরন দেখলে বোঝা যায়। আরেকটি দলিল থেকেও আসামীপক্ষের বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় যে, ইব্রাহিম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে হত্যা করে লাশ পাড়েরহাট দিয়ে বলেশ্বর নদীর ঘাটে ফেলে দেয়া হয়। এটা প্রসিকিউশন ডকুমেন্টের মধ্যে শামিল আছে। এটা ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জিয়ানগর উপজেলার রিপোর্ট যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত এবং বিষয়টি চড-১ ও চড-২৮ কর্তৃক জেরায় স্বীকৃত।
ইব্রাহিম ওরফে কুট্টি হত্যার বিচারের বড় দাবিদার ঘটনার ৪০ বছর পরেও হতে পারতেন তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, শ্যালক, শ্যালিকা, শ্বাশুড়ি এরা। কিন্তু তারা কেউ ট্রাইব্যুনালে নালিশ করেননি এমনকি সাক্ষী হিসেবেও এসে বিচার দাবি করেননি। ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই তার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। তিনি এখনো জীবিত আছেন, তাতে তিনি পরিষ্কার উলেখ করেছেন যে তার স্বামীকে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর তার পিতার নলবুনিয়াস্থ বাড়িতে (ইব্রাহিমের শ্বশুর বাড়ি) হত্যা করা হয়। অন্যদিকে ৬নং সাক্ষী মানিক পশারী ও ৭নং সাক্ষী মফিজ উদ্দীনের সাক্ষ্য অনুসারে ইব্রাহিম কুট্টিকে চিতলিয়া গ্রামে মানিক পশারীর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পাড়েরহাট ব্রিজের ওপর গুলী করে হত্যা করা হয় ৮ মে ১৯৭১ তারিখে। প্রশ্ন দাঁড়ায় কার কথা সত্য স্ত্রীর কথা না আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও বর্তমান সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী মানিক পশারী আর মফিজ উদ্দীনের কথা? মমতাজ বেগমের দায়েরকৃত ঐ মামলার বিবরণে বলা হয়, ১ অক্টোবর শুক্রবার ভোর রাতে তার পিতার বাড়িতে থাকা অবস্থায় বেড়ার ফাঁক দিয়ে গুলী করে হত্যা করা হয়। মমতাজ বেগম নিজেও আহত হন। তার মা সেতারা বেগম ও ভাই সিরাজকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পিরোজপুর নিয়ে সিরাজকে হত্যা করা হয় এবং মাকে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রসিকিউশন দুরভিসন্ধিমূলকভাবে জীবিত থাকলেও মমতাজ বেগম, সেতারা বেগম কাউকেই সাক্ষী করেনি। ঐ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইব্রাহিম কুট্টির শ্যালক মোস্তফা হাওলাদার এবং শ্যালিকা রানী বেগম জীবিত থাকলেও তাদের হাজির করা হয়নি। এমনকি ইব্রাহিমের ছেলে মাহবুব এবং মেয়ে রোকসানা বেগম জীবিত আছে তাদেরও সাক্ষী করা হয়নি। তারা ট্রাইব্যুনালে এসে বিচারপ্রার্থী হয়নি। মায়ের চেয়ে যেন মাসির দরদ বেশি। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, শ্বাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকার চেয়ে ভিন্ন গ্রামের মানিক পশারী আর মফিজের দরদ বেশি।
ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের দায়েরকৃত মামলায় যে ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছিল তাতে মাওলানা সাঈদী তো নয়ই ঐ দেলোয়ার সিকদারের নামও ছিল না এজন্যই সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ঐ মামলার নথি আনা হয়নি এবং ইব্রাহিম কুট্টির কোন নিকটাত্মীয়কেও সাক্ষী করা হয়নি। যাদেরকে আসামী করা হয়েছিল তারা হলো (১) পাকিস্তান আর্মি পিরোপজপুর ক্যাম্প, (২) দানেশ মোলv, চেয়ারম্যান পারেরহাট ইউনিয়ন, (৩) আতাহার আলী, পিতা- আইন উদ্দিন হাওলাদার, সাং- বারইখালী, (৪) আশ্রাব আলী, পিতা- আহমদ আলী, সাং- টেংরাখালী, (৫) আব্দুল মান্নান হাওলাদার, পিতা- হাসেম আলী হাওলাদার, গ্রাম- বাদুরা, (৬) আইউব আলী, পিতা- আরব আলী, (৭) কালাম চৌকিদার, পিতা- আব্দুস সোবহান, (৮) রচহুল আমিন, পিতা- আনোয়র হোসেন, সাং- পারেরহাট, (৯) আব্দুল হাকিম মুন্সী, পিতা- মাইনউদ্দিন, সাং- বারইখালী, (১০) মমিন উদ্দিন, পিতা- আবদুল গণি, সাং- গাজীপুর, (১১) সেকান্দার আলী সিকদার, পিতা- মুনসুর আলী সিকদার, সাং- হোগলাবুনিয়া, (১২) শামসুর রহমান, (পুলিশ কর্মকর্তা) পিরোজপুর থানা, (১৩) মোসলেম মওলানা, পিতা- মৃত মোদাচ্ছের গাজী, সাং- বাদুয়া। ঐ মামলায় ৯ জন সাক্ষী ছিলেন। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, দেলাওয়ার হোসেন, তাহের আলী, আব্দুস সাত্তার, সেতারা বেগম, রানী, আজাহার আলী, মুহাম্মদ আলী ও মকরম সিকদার।
প্রদান করেন। অথচ PW-10, PW-11 জেরায় জানান যে, মানিক পশারী তার পরিবারের সকল সদস্যসহ ঘটনার আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই চার্জে ঘটনার সময় বেলা ৩টার কথা বলা হলেও PW-2 এবং PW-7 এর মতে ঘটনা বেলা ১০-১১টার সময়ের মধ্যে ঘটেছে। PW-7 মফিজ উদ্দীন কথিত ঘটনার নির্যাতিত এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে দাবি করলেও তার বক্তব্য যে, বিশ্বাসযোগ্য নয় তার প্রমাণ হল মানিক পশারীর দায়েরকৃত এজাহারে মফিজ পশারীর আটক বা নির্যাতনের কোন বর্ণনাই নাই (প্রদর্শনী- W) এবং মফিজ উদ্দীন পশারী ঐ মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রদত্ত জবানবন্দিতে (প্রদর্শনী W-2) পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলেন যে তিনি ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করতে দেখেন নাই।
উপরন্তু প্রদর্শনী-A পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের ১৯৭২ সালে দায়েরকৃত মামলা অনুসারে তার স্বামী ইব্রাহিম কুট্টিকে তাদের নলবুনিয়ার বাড়িতে ১লা অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে হত্যা করে তার লাশ পাড়েরহাটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার ভাই সাহেব আলী ওরফে সিরাজকে এবং তার মাকে আটক করে পিরোজপুরে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও সাহেব আলীর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। উক্ত মামলায় ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু ঐ এজাহার বা অভিযোগপত্রে সাঈদী সাহেবের নাম নাই। উক্ত এজাহারটি মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তার ছেলে মাসুদ সাঈদী প্রদর্শনী-A হিসেবে দাখিল করেন। এই মামলার জি আর বহি তলবের জন্য আসামীপক্ষ হতে বার বার আবেদন করা হলেও কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া তা নাকচ করা হয়েছে। এটা যে ইচ্ছাকৃতভাবে সাঈদী সাহেবকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তা রায়ের ধরন দেখলে বোঝা যায়। আরেকটি দলিল থেকেও আসামীপক্ষের বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় যে, ইব্রাহিম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে হত্যা করে লাশ পাড়েরহাট দিয়ে বলেশ্বর নদীর ঘাটে ফেলে দেয়া হয়। এটা প্রসিকিউশন ডকুমেন্টের মধ্যে শামিল আছে। এটা ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জিয়ানগর উপজেলার রিপোর্ট যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত এবং বিষয়টি PW-1 ও PW-28 কর্তৃক জেরায় স্বীকৃত।
ইব্রাহিম ওরফে কুট্টি হত্যার বিচারের বড় দাবিদার ঘটনার ৪০ বছর পরেও হতে পারতেন তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, শ্যালক, শ্যালিকা, শ্বাশুড়ি এরা। কিন্তু তারা কেউ ট্রাইব্যুনালে নালিশ করেননি এমনকি সাক্ষী হিসেবেও এসে বিচার দাবি করেননি। ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই তার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। তিনি এখনো জীবিত আছেন, তাতে তিনি পরিষ্কার উলেখ করেছেন যে তার স্বামীকে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর তার পিতার নলবুনিয়াস্থ বাড়িতে (ইব্রাহিমের শ্বশুর বাড়ি) হত্যা করা হয়। অন্যদিকে ৬নং সাক্ষী মানিক পশারী ও ৭নং সাক্ষী মফিজ উদ্দীনের সাক্ষ্য অনুসারে ইব্রাহিম কুট্টিকে চিতলিয়া গ্রামে মানিক পশারীর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পাড়েরহাট ব্রিজের ওপর গুলী করে হত্যা করা হয় ৮ মে ১৯৭১ তারিখে। প্রশ্ন দাঁড়ায় কার কথা সত্য স্ত্রীর কথা না আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও বর্তমান সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী মানিক পশারী আর মফিজ উদ্দীনের কথা? মমতাজ বেগমের দায়েরকৃত ঐ মামলার বিবরণে বলা হয়, ১ অক্টোবর শুক্রবার ভোর রাতে তার পিতার বাড়িতে থাকা অবস্থায় বেড়ার ফাঁক দিয়ে গুলী করে হত্যা করা হয়। মমতাজ বেগম নিজেও আহত হন। তার মা সেতারা বেগম ও ভাই সিরাজকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পিরোজপুর নিয়ে সিরাজকে হত্যা করা হয় এবং মাকে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রসিকিউশন দুরভিসন্ধিমূলকভাবে জীবিত থাকলেও মমতাজ বেগম, সেতারা বেগম কাউকেই সাক্ষী করেনি। ঐ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইব্রাহিম কুট্টির শ্যালক মোস্তফা হাওলাদার এবং শ্যালিকা রানী বেগম জীবিত থাকলেও তাদের হাজির করা হয়নি। এমনকি ইব্রাহিমের ছেলে মাহবুব এবং মেয়ে রোকসানা বেগম জীবিত আছে তাদেরও সাক্ষী করা হয়নি। তারা ট্রাইব্যুনালে এসে বিচারপ্রার্থী হয়নি। মায়ের চেয়ে যেন মাসির দরদ বেশি। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, শ্বাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকার চেয়ে ভিন্ন গ্রামের মানিক পশারী আর মফিজের দরদ বেশি।
ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের দায়েরকৃত মামলায় যে ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছিল তাতে মাওলানা সাঈদী তো নয়ই ঐ দেলোয়ার সিকদারের নামও ছিল না এজন্যই সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ঐ মামলার নথি আনা হয়নি এবং ইব্রাহিম কুট্টির কোন নিকটাত্মীয়কেও সাক্ষী করা হয়নি। যাদেরকে আসামী করা হয়েছিল তারা হলো (১) পাকিস্তান আর্মি পিরোপজপুর ক্যাম্প, (২) দানেশ মোলv, চেয়ারম্যান পারেরহাট ইউনিয়ন, (৩) আতাহার আলী, পিতা- আইন উদ্দিন হাওলাদার, সাং- বারইখালী, (৪) আশ্রাব আলী, পিতা- আহমদ আলী, সাং- টেংরাখালী, (৫) আব্দুল মান্নান হাওলাদার, পিতা- হাসেম আলী হাওলাদার, গ্রাম- বাদুরা, (৬) আইউব আলী, পিতা- আরব আলী, (৭) কালাম চৌকিদার, পিতা- আব্দুস সোবহান, (৮) রচহুল আমিন, পিতা- আনোয়র হোসেন, সাং- পারেরহাট, (৯) আব্দুল হাকিম মুন্সী, পিতা- মাইনউদ্দিন, সাং- বারইখালী, (১০) মমিন উদ্দিন, পিতা- আবদুল গণি, সাং- গাজীপুর, (১১) সেকান্দার আলী সিকদার, পিতা- মুনসুর আলী সিকদার, সাং- হোগলাবুনিয়া, (১২) শামসুর রহমান, (পুলিশ কর্মকর্তা) পিরোজপুর থানা, (১৩) মোসলেম মওলানা, পিতা- মৃত মোদাচ্ছের গাজী, সাং- বাদুয়া। ঐ মামলায় ৯ জন সাক্ষী ছিলেন। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, দেলাওয়ার হোসেন, তাহের আলী, আব্দুস সাত্তার, সেতারা বেগম, রানী, আজাহার আলী, মুহাম্মদ আলী ও মকরম সিকদার।
বিশাবালী হত্যার স্থান ও বর্ণনা সরকারি ডকুমেন্টেই যেখানে দু’রকম সেই অপরাধে মৃত্যুদন্ড নজীরবিহীন
* সত্য কথা বলতে আসা সুখরঞ্জন বালীকে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন ও মোফাসসিরে কুরআন আল্লমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যে দু’টি চার্জে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আরেকটি হলো চার্জ নং-১০। যাতে উমেদপুর গ্রামে বিশাবালী নামক এক ব্যক্তিকে ২ জুন ১৯৭১ তারিখে হত্যার কথা বলা হয়েছে। একইসাথে চার্জ নং ১১’তে ঐ ঘটনায় ২৪টি হিন্দু বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া এবং এই মামলার বাদী মাহবুবুল আলমের বাড়ি লুটের অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল-১ প্রদত্ত রায়ে উলেখ করেছেন। তবে ৮ ও ১০ নং চার্জে যেহেতু মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সেহেতু ১১ সহ অন্য ৬টি প্রমাণিত অভিযোগে তার চেয়ে লঘুদন্ড হবে বিধায় ১১ নং চার্জে অতিরিক্ত কোনো সাজা দেয়া হয়নি। এই ১০ ও ১১ নং অভিযোগ সম্পর্কে সরকার পক্ষই (প্রসিকিউশন) যে তথ্য দিয়েছে তাতেই ঘটনার তারিখ ও স্থান নিয়ে ভিন্নতা রয়েছে। এই অভিযোগে বিশাবালীর পরিবারের কেউ সাক্ষী দিতে আসেনি বা কথিত ২৪টি পুড়িয়ে দেয়া হিন্দু বাড়িরও কেউ বা ঐ গ্রামের কেউ সাক্ষ্য দিতে আসেনি। উপরন্তু বিশাবালীর আপন ভাই সুখরঞ্জন বালী আসামীপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আসলে ট্রাইব্যুনালের গেইট থেকেই আসামীপক্ষের আইনজীবীর গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আজও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি যে, তাকে সরকার গুম করে দিয়েছে না লুকিয়ে রেখেছে। অথচ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তার ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। দু’জন মিথ্যাবাদী, প্রতারক, ক্রিমিনাল আদেশে অভিযুক্ত দু’জন সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তির তথ্য বিবেচনা করে বিশ্বখ্যাত আলেমের ফাঁসি দেয়া হয়েছে। ঐসব সাক্ষীর চরিত্র, কাজের জেরা এবং আসামীপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনা না করে ট্রাইব্যুনাল অবিচারক সুলভ এক তরফা রায় দিয়েছেন যা, কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। উত্তাল শাহবাগী আন্দোলনের মধ্যে তাদেরই উদ্যোক্তা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আনোয়ার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক ঘাদানিক নেতা মুনতাসির মামুনসহ বিপুলসংখ্যক শাহবাগীদের এজলাস উপচেপড়া ঘেরাওয়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক।
চার্জ-১০ এবং চার্জ-১১-এর সমর্থনে PW-1, PW-5, এবং PW-9 কে প্রসিকিউশন পক্ষ সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেন। তারা তাদের জবানবন্দিতে বিশাবালীকে উমেদপুরে হত্যা করা হয়েছে এবং উক্ত হত্যাকান্ড এবং লুটের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করেছেন। সেইসাথে চার্জ-১১ তারা শুনেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন।
এই মামলার PW-1 (প্রসিকিউশন উইটনেস-১) মাহবুবুল আলম হাওলাদার কত বড় মিথ্যাবাদী তার প্রমাণ হল তিনি তার জবানবন্দিতে দাবি করেছেন যে, জনৈক খলিলুর রহমান ২ জুন ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তান আর্মির PW-1-এর বাড়ি যাবে বিষয়টি তাকে সকাল বেলা অবহিত করেছিলেন। অথচ সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং প্রদর্শনী হতে দেখা যায় ঐ খলিলুর রহমানের জন্ম ১৯৭২ সালে। তিনি হাসিনা একাডেমিতে চাকরি করেন। আমরা যদি ধরেও নিই যে, তার জন্ম তারিখ দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কমিয়ে লেখা হয়েছে সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক বিবেচনায় একজনের বয়স কত কমানো যায় বড় জোর ৫ বছর। এক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে খলিলুর রহমানের বয়স বড়জোর ৩ বছর হতে পারে। তার পক্ষে PW-1 কে খবর দেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখা যায় না। মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বয়স ১৯/২০ ছিল মর্মে গ্রদত্ত বক্তব্য গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ রেজিস্ট্রেশন কার্ড অনুযায়ী
মাহবুবল আলম হাওলাদারের বয়স ঐ সময় ১৯/২০ ছিল না তার বয়স ছিল ১০/১১ বছর। তার জেরায় স্বীকৃত মতে ১৯৭০ সালে সে ছাত্র ছিল। সে কোন ক্লাসের ছাত্র ছিল সে জেরায় তা উলেস্নখ করে নাই। উপরন্তু প্রদর্শনী- AM (আসামীক্ষের প্রদর্শনী) হতে দেখা যায় তার বড় বোন মাতোয়ারা বেগমের জন্ম হয় ১৯৫৭ সালে। সে ক্ষেত্রে মাহবুবের জন্ম তার বড় বোনের আগে হওয়ার কোন কারণ নেই। জেরায় বর্ণিত মতে তার বড় ছেলের বয়স ছিল ১৫ বছর। এ থেকে বোঝা যায় তার জন্মতারিখ কমবেশি ১৯৫৯/১৯৬০ হওয়ারই কথা। যেহেতু তিনি ১৯৭৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন সেহেতু ঐ সময়ে তার জন্ম ঐ রকম হওয়াই স্বাভাবিক। PW-5 মাহাতাবের ÿÿত্রেও প্রদর্শনী-T (মাহতাব উদ্দিন হাওলাদারের SSC রেজিস্ট্রেশন কার্ড) অনুযায়ী তার জন্মতারিখ এরকমই হবার কথা।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রিপোর্ট হতে দেখা যায় নিহত বিশাবালীকে উমেদপুরে নয় উমেদপুর থেকে কয়েক মাইল দূরে বলেশ্বর নদীর ঘাটে হত্যা করা হয়েছে এবং উক্ত বিষয়টি উলেস্নখিত রিপোর্টে থাকার কথা PW-1 এবং PW-28 তদমত্ম কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জেরায় স্বীকার করেছেন। এক্ষত্রে খুব সহজেই বলা যায় যে, PW-1 এবং PW-5 এর বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। PW-9 মুরগি ও মাছ চুরির দায়ে অভিযুক্ত আলতাফ হাওলাদারের বিষয়ে বলা যায় যে, ঐ দিন ঐ সময় ঘটনাস্থলে তার উপস্থিত হবার কোন কারণ ছিল না। সাধারণভাবে পাক আর্মি আসার কথা শুনলে লোকজন নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিতেন। অথচ তার স্বাভাবিকভাবে ঐ দিন উমেদপুরে থাকার কথা থাকলেও সেখানে কেন উপস্থিত হলেন তার বিশ্বাসযোগ্য কারণ জবানবন্দী থেকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আরও উলেস্নখ করা প্রয়োজন যে উমেদপুরে ঘটনা ঘটলেও উমেদপুরের কোন ব্যক্তিকে উক্ত ঘটনার সমর্থনে সাক্ষী হিসেবে প্রসিকিউশন পক্ষ উপস্থাপন করেন নাই। বিশাবালীর ভাই সুখাবালী (সুখরঞ্জন বালী) সাঈদী সাহেবের পক্ষ সাক্ষী দিতে আসলে তাকে আইনজীবীর গাড়ি হতে অপহরণ করা হয়।
অপহৃত হওয়ার আগে সুখরঞ্জন বালীর সাÿাৎকার প্রকাশিত হয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় যার শিরোনাম ছিল ‘ট্রাইব্যুনালে সত্য ঘটনা বলতে চাই’। সাÿাৎকারটি এখনও পাওয়া যায় নিমণবর্ণিত ঠিকানা ও তারিখের আমার দেশ পত্রিকায়।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/11/06/171928 অনলাইন বস্নগ Exclusive: Wife of abducted witness Shukh Ronjon Bali speaks out http://bangladeshwarcrimes.blogspot.com/search/label/Abduction%20of%20witness তেও রয়েছে।
http://www.facebook.com/photo.php?v=4392664776675 ঠিকানায় রয়েছে সুখরঞ্জন বালী সম্পর্কে আরো তথ্য যা পাঠক দেখতে পারেন সহজেই। টিভিতে দেয়া সাÿাৎকার রয়েছে। http://www.facebook.com/photo.php?v=344332122350623 ঠিকানায়। সত্য কথা বলতে চেয়েছিলেন তিনি। তার আগেই তাকে গুম করে দিয়েছে সরকার।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত The Economist Reports on Shukh Ronjon Bali
http://www.economist.com/blogs/banyan/2012/11/bangladesh তে রয়েছে আরো তথ্য।
এ থেকে স্পষ্ট যে প্রকৃত সত্যটা কি তা লুকানোর জন্য সরকার পক্ষ কিভাবে প্রশাসনিক যন্ত্র ব্যবহার করেছে। সত্য বলতে চাওয়া একটি গরীব মানুষকে গুম করে দিয়ে তার পরিবারকে ঘোরতর অন্ধকার অমানিশায় ফেলে দেয়া হয়েছে।
স্বীকৃত মতে মাহবুবুল আলমের বাড়িতে কথিত ঘটনা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘটলেও তার বড় ভাই আব্দুল বাতেন হাওলাদার এবং তার আপন মৃত ভাই আব্দুল মজিদ হাওলাদারের স্ত্রী জীবিত থাকলেও মাহবুবুল আলমের অভিযোগ সমর্থন করবে না জেনেই তদমত্মকারী কর্মকর্তা তাদেরকে সাক্ষী করেন নাই তা নয় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন নাই। এমনকি ঐ গ্রামের কোন ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয় নাই। স্বীকৃত মতে PW-1 এবং PW-5 ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নয়। উলেস্নখিত মিথ্যাচারের কারণে তাদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, অভিযোগ ১০ এবং ১১ প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও আসামীকে অন্যায়ভাবে দ- প্রদান করা হয়েছে। যেদিন রায় দেয়া হয়, সেদিন ছিল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিশাল এজলাস কক্ষ উপচে পড়া মানুষ যাদের মধ্যে সাংবাদিক বাদে অধিকাংশই ছিল শাহবাগী আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও নেতা-কর্মী। তাদেরকে ট্রাইব্যুনাল পাস দেয়। আর এটর্নি জেনারেল নিজে কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে তাদের বসার ব্যবস্থা করেন। তার পরেও কয়েকশ মানুষ এজলাস কক্ষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। এভাবে বিচারকদের ঘেরাও করে সব রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে একরকম বিচারকদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকারের পছন্দমতো রায় আদায় করে নেয়া হয়। ইতোমধ্যেই কেউ কেউ জুডিশিয়াল কিলিং এর আদেশ বলে এই রায়কে অভিহিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী না আসলেও পারেরহাটের ৩০টি দোকান ও সেলিম খানের বাড়ি লুটের অভিযোগ প্রমাণিত!
বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরচদ্ধে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে ৬ এবং ৭ নং অভিযোগ প্রমাণিত বলে উলেখ করা হয়েছে। তবে অন্য দুটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়ায় লঘু শাস্তি বিবেচনায় পৃথক কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। কিন্তু এই দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন বিচারক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। কোন প্রত্যক্ষদর্শীকে সরকার পক্ষ এই দুটি অভিযোগে হাজির করতে পারেননি। যাদেরকে অভিযোগের সমর্থনে হাজির করা হয়েছে তারা দূরবর্তী সাক্ষী। তারা যে বানোয়াট কাহিনী বলেছেন তা ধরা পড়েছে জেরায়। কিন্তু সেটা রায় প্রদানের সময় বিবেচনায় আনা হয়নি। পারেরহাট বাজারের ৩০/৩৫টি দোকানে লুটপাট, মাখন সাহার দোকানের মাটির নীচ থেকে ২২ সের সোনা-রূপা মাটি খুড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া এবং সেলিম খানের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ প্রমাণ করতে ঐসব দোকানের কোন মালিক বা কর্মচারী যেমন আসেনি তেমনি সেলিম খান নিজে ট্রাইব্যুনালে আসলেও সাক্ষ্য না দিয়ে চলে গেছেন। ভিকটিমদের কেউ আসেনি এবং প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষীও আসেনি। যারা এসেছেন এই দুটি অভিযোগের সমর্থনে তারা একে তো দূরবর্তী সাক্ষী দ্বিতীয়ত তারা সবাই নিজেরাই ফৌজদারী অভিযোগে অভিযুক্ত যাদের চরিত্র ও বিশ্বাসযোগ্যতা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তার পরেও এসব সাক্ষীদের শোনা কথার উপর ভিত্তি করে বিশ্বখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা সাঈদীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ ৬ (পাড়েরহাট এলাকায় ধর্ষণ ও সম্পত্তি লুট)-এর সরকার পক্ষের মামলাটি ছিল এইরূপ যে ৭ই মে ১৯৭১ মাওলানা সাঈদী শান্তি কমিটির সদস্যদের নিয়ে পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান আর্মিদের স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগ, হিন্দু সম্প্রদায় এবং স্বাধীনতার সপক্ষের লোকদের বাড়ি চিহ্নিত করে দেয় পাক আর্মিরা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে এবং মাখন লাল সাহার দোকান থেকে ২২ সের সোনা ও রচপা লুট করে নিয়ে যায়। এই অভিযোগের সমর্থনে প্রসিকিউশন পক্ষ PW-1, PW-2, PW-3, PW-4, PW-8, PW-9, PW-12, এবং PW-13 কে উপস্থাপন করেছে। উলেখিত সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উলেখিত সাক্ষীদের কেউই কথিত লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নয়। তাদের কেউই পাড়েরহাটের দোকানদার বা দোকানের কর্মচারী নয়। PW-1, PW-2, PW-8, পাকিস্তানি আর্মিদের আসার কথা শুনে পাড়েরহাটে গিয়ে সেখানে ৫২ জন পাকিস্তানি আর্মিকে আসতে দেখেন। মাহবুবুল আলম হাওলাদার ৩০/৩৫ টি দোকানের এবং ২২ সের সোনা-রূপা লুটের কথা বললেও তিনি কোন আওয়ামী লীগ নেতা বা মাখনলাল সাহা ছাড়া অন্য কোন হিন্দু ব্যক্তি বা স্বাধীনতার সপক্ষের লোকজনের বাড়িঘর লুটপাট ঐ দিন হয়েছে মর্মে কোন বক্তব্য দেন নাই। জেরার জবাবে তিনি আরো জানান যে, মাখন সাহার দোকান লুটপাটের সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। PW-2 রচহুল আমীন নবীন জবানবন্দীতে উলেখ করেন ৭ই মে ১৯৭১ তারিখে ৩০/৩৫ টি দোকান লুট হয় এবং মাখন সাহার দোকান থেকে ২২ সের সোনা-রূপা লুট হয়।
কিন্তু জেরায় জানান ২২, সের সোনা-রূপা লুটের খবর ঐ দিন সন্ধ্যায় তিনি জেনেছেন।পাড়েরহাটের লুট হওয়া দোকানদারের নাম তিনি বলতে পারন না। PW-3 মিজানুর রহমান তালুকদার এর উদ্ধৃতি দিয়ে ৭ই মের ঘটনার যে উলেখ করা হয়েছে সেই বক্তব্যসমূহ তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট বলেন নাই (PW-3 এবং PW-28 এর জেরা)। এছাড়াও PW-3 তার জেরায় স্বীকার করেছেন যে, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচর পর থেকে ১৭ই মে পর্যন্ত তিনি রাজারহাটেই থাকতেন। কাজেই তার পক্ষে এ ঘটনা দেখা সম্ভব ছিল না। PW-4 সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার PW-1 এর মতই ৭ই মের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দী দিয়েছেন। তার জবানবন্দী হতে দেখা যায় তিনি কথিত ঘটনার সময়ের পূর্বে এবং পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও সোনা-রূপা লুটের ঘটনাটি তিনি অন্য লোকের কাছে শুনেছেন। উপরন্তু তিনি এই ৭ই মের বর্ণনাসমূহ তদন্ত কর্মকর্তার নিকট বলেন নাই (PW-4 এবং PW-28 এর জেরা)। PW-8 মোস্তফা হাওলাদার নিজেকে ঝালমুড়ি বিক্রেতা দাবী করেন এবং বলেন যে, তিনি ৭ই মে পাকিস্তানি আর্মিদের পাড়েরহাটে আসার প্রত্যক্ষদর্শী। অথচ তিনি তার জবানবন্দীতে মাখন সাহার দোকান লুটের বর্ণনা দেন নাই।
তিনি তার জেরায় জানান,১৯৭১ সালের ৮ই মের আগের ৭ দিন প্রতিদিনই তিনি সকাল বেলা ছোলা-মুড়ি বিক্রি করতে পাড়েরহাট যেতেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকতেন। অথচ তিনি মাখনলাল সাহার দোকান লুট দেখতে পেলেন না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। PW-9 আলতাফ হাওলাদার ৭ই মে তারিখের লুটপাটের কোন বর্ণনাই দেন নাই। PW-12 মাওলানা সাঈদীর প্রতিদ্বন্দী স্থানীয় এম.পি এ, কে,এম,এ আউয়াল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নন। তিনি ঘটনা শুনেছেন। PW-13 গৌরঙ্গ চন্দ্র সাহা তার জবানবন্দীর কোথাও ৭ই মে বা পাড়েরহাটে লুটপাটের কোন ঘটনার সাথে সাঈদী সাহেবকে জড়িয়ে কোন বক্তব্য প্রদান করেন নাই।
উলেখিত বিশেষন থেকে এটা পরিষ্কার যে, উলেখিত মাখনলাল সাহার দোকান লুটের কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নাই। যে সমস্ত সাক্ষীদের বক্তব্যকে বিশ্বাস করা হয়েছে তাদেরকে বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারণ দেখা যায় না। উপরন্তু স্বীকৃতমতে পাড়েরহাটে ১৯৭১ সালে ৩ শতাধিক স্থায়ী দোকান ছিল ঐ দোকানগুলোর কোন মালিক কর্মচারী জীবিত নাই একথা বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারণ নাই। উপরন্তু মাখনলাল সাহা ছাড়া অন্য কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্য কোন ব্যক্তি, আওয়ামী লীগের কোন নেতা বা স্বাধীনতা যুদ্ধ সমর্থনকারী ব্যক্তির বাড়ি ঘর লুন্ঠিত হয়েছে এই মর্মে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় সহজেই অনুমান করা যায় যে, সাক্ষীরা শেখানো বক্তব্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছে। সেই সাথে আরো একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে, প্রসিকিউশনের ৭ তারিখের উলেখিত বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ প্রসিকিউশনের দাখিলি (Relied on ) ‘‘The Associates of pakistian Army ( লেখক এ এস, এম শামসুল আরেফিন) হতে দেখা যায় যে, মাখনলাল সাহার দোকান লুটের ঘটনা নবম মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে ঘটেছে। অথচ ৭ই মের কথিত ঘটনায় সাঈদী সাহেবকে দন্ডিত করা হল।
চার্জ নং ৭ (শহীদূল ইসলাম খান সেলিম কে নির্যাতন, তার বাড়ি লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ) এর সমর্থনে PW-1 মাহবুবুল আলম হাওলাদার PW-8 মোস্তফা হাওলাদার এবং PW-12 এ, কে,এম, এ আউয়াল দের বক্তব্যের উপর নির্ভর করেছে প্রসিকিউশনে। ট্রাইব্যুনাল উলেখিত সাক্ষীদের বিশ্বাস করে এবং DW-3, DW-7, DW-15 দের বক্তব্যের উলেখযোগ্য অংশ বাদ দিয়ে বা বিবেচনায় না এনেই উক্ত চার্জে দন্ড প্রদান করেছেন। প্যারা-১৩৯ এ দুইটি গ্রামে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হলেও শুধুমাত্র দুই গ্রামের একটি বাড়ির বর্ণনা চার্জে দেয়া হয়েছে। PW-1 মাহবুবুল আলম হাওলাদার তার জবানবন্দীতে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম খানের বাড়ি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের কথা বললেও তিনি জেরায় (পাতা-২২) স্বীকার করেন যে, তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না।
তিনি তার জবানবন্দীতে নুরচল ইসলাম খানকে নির্যাতনের কোন বর্ণনা দেন নাই বা শহীদুল ইসলাম সেলিম কে মুক্তিযোদ্ধা উলেখ করেন নাই। PW-8 মোস্তফা হাওলাদার ৭ই মের পরের দিন ১৫/১৬ জন সেনাবাহিনীর লোকজন ও ৩০/৩৫ জন রাজাকার নিয়ে নুরচ খানের বাড়ি সাঈদী সাহেব কর্তৃক দেখিয়ে দেয়ার কথা বলেন। তিনি খালের ওপার থেকে নুরচ খানের বাড়িতে ধোঁয়া উঠতে দেখেন। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তিনিও PW-1 এর মতই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। PW-12 এ, কে,এম,এ আউয়াল সাহেবও স্বীকৃত মতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নয়। তিনি চিথলিয়া গ্রামের নুরচল ইসলামের বাড়ি পোড়ানোর কথা জবানবন্দীতে উলেখ করেন। উলেখিত সাক্ষীদের মধ্যে PW-8 এবং PW-12 উলেখিত বক্তব্য সমূহ আই.ও (IO) এর নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীতে বলেন নাই যা PW-28 এর বক্তব্য হইতে স্বীকৃত। এছাড়াও ট্রাইব্যুনাল যে সমস্ত DW- এর সাক্ষ্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন তারা সকলেই দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছেন সাঈদী সাহেব স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন না এবং কোন অপরাধের সহিত তিনি জড়িত ছিলেন না। অন্যদিকে এই মামলার কথিত ভিকটিম মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম খান সেলিমকে সাক্ষী হিসেবে মান্য করলেও তাকে দুই দুইবার ঢাকায় এনে সেইফ হোমে আটকে রেখে সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে সাক্ষ্য প্রদাণে ব্যর্থ হয়ে তার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীকে সাক্ষ্য হিসেবে ধারা ১৯(২) অনুযায়ী গ্রহণের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেন। উলেখিত সাক্ষ্য প্রমাণ এবং সেইফ হাউজে সংরক্ষিত ডকুমেন্ট পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, শহীদুল ইসলাম খান সেলিম বা নুরচল ইসলাম খানকে অত্যচারের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। তাদের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতেও পারে কিন্তু তাতে সাঈদী সাহেব জড়িত ছিলেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই।
সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় এই মামলার গুরচত্বপূর্ণ সাক্ষী PW-1 মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার তার স্ত্রীর নিকট যৌতুক দাবী করায় দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি। PW-2 রচহুল আমীন নবীন নকলের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, PW-4 সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার কলা চুরির দায়ে দন্ডিত এবং ট্রলার ছিনতাই এর অভিযোগে অভিযুক্ত, PW-5 মাহতাব উদ্দীন হাওলাদারের বিরচদ্ধে মুরগী এবং গাছ চুরির অভিযোগ রয়েছে। PW-11 আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। PW-12 স্থানীয় এম.পি. এ, কে,এম,এ আউয়াল ছাড়া সমাজের সম্মানিত কোন ব্যক্তিকে প্রসিকিউশন পক্ষ সাক্ষী হিসেবে হাজির করেননি। এ, কে,এম,এ আউয়াল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নন।
সাক্ষী সাঈদী সাহেবের নাম না বললেও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত বলে উদ্ভট রায় প্রদান
৫ বছরের কম বয়সী ৩ বোন ধর্ষণ আর দেড়শ লোককে জোর করে মুসলমান বানানোর অভিযোগই হাস্যকর
কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আসেনি। তারপরেও চার্জ নং ১৪, ১৬ এবং ১৯ কে প্রমাণিত বলে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মধুসুধন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণের বিষয়ে একমাত্র সাক্ষী তার স্বামী মাওলানা সাঈদীর নামও বলেননি, তাকে কাঠগড়ায় সনাক্তও করেননি। এই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী বলে যার কথা বলা হয়েছে তিনি জীবিত থাকলেও তাকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি। অথচ এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উলেখ করা হয়েছে। গৌরাঙ্গ সাহার বয়স ১৯৭১ সালে ছিল ৭ বছর। তার ছোট ৩ বোনকে ধর্ষণের অভিযোগই যেখানে হাস্যকর প্রমাণিত বলে উন্মাদের মত রায়ে উলেখ করা হয়েছে। দেড় থেকে ২শ লোককে সাঈদী সাহেব জোর করে মুসলমান বানিয়েছিলেন মর্মে অভিযোগ করা হলেও হাস্যকর এই অভিযোগ প্রমাণ করতে একমাত্র ভিকটিম জানেন না ঐ মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিনের নাম। অথচ অভিযোগ করা হয় যে টুপি, তসবিহ, জায়নামায দিয়েছিলেন মুসলমান করার পর। আর নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে পড়তে বাধ্য করা হতো। এছাড়াও আসামীপক্ষের কোন বক্তব্য এবং প্রদর্শিত ডকুমেন্টও রায় প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হয়নি।
চার্জ নং ১৪, ১৬ এবং ১৯ এই তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত বলে এমনই উদ্ভট রায় দেয়া হয়েছে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ে। এই ৩টি অভিযোগ প্রমাণিত বলে রায়ে উলেখ করা হলেও পৃথক কোন শাস্তি দেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়ায় এসব অভিযোগে লঘু শাস্তি হবে বিধায় তা পৃথকভাবে কার্যকর করার প্রয়োজন নেই। তবে যেহেতু প্রমাণিত বলে রায় দেয়া হয়েছে সেহেতু এগুলো দন্ডযোগ্য অপরাধ। এই ৩টি অভিযোগের রায় পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, কতটা অসঙ্গতি ও অসততার সাথে সম্পূর্ণ একতরফা রায় দেয়া হয়েছে।
চার্জ-১৪ (হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ এবং শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণ) : এই চার্জের সমর্থনে ট্রাইব্যুনাল PW-1, PW-3, PW-4 এবং PW-23 এর সাক্ষ্য বিবেচনায় এনে দন্ড প্রদান করেছেন। উলেখিত সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় PW-1, মাহবুবুল আলম হাওলাদার PW-3 মিজানুর রহমান তালুকদার এবং PW-4 সুলতান আহমেদ, শেফালী ঘরামীকে ধর্ষণের বিষয়ে কোন বক্তব্যই প্রদান করেন নাই। যদিও তারা সাধারণভাবে ১৯৭১ সালে ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের বর্ণনা দিয়েছেন। জিয়ানগর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রিপোর্ট (যা PW-1 কর্তৃক প্রদত্ত এবং PW-1 এবং PW-28 কর্তৃক স্বীকৃত) অনুসারে। জিয়ানগর উপজেলায় কোন বীরঙ্গনা নাই। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে জিয়ানগর উপজেলায় (যেখানে শেফালী ঘরামীর বাড়ি) কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে নাই। এই মামলার অপর সাক্ষী শেফালী ঘরামীর স্বামী মধুসুদন ঘরামী PW-23 আদালতে এসে সাক্ষ্য প্রদান করলেও তিনি কথিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নন। তার এবং আইও (IO) এর বর্ণনা মতে এই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হল মধুসুদন ঘরামীর মৃত ভাই সাধু ঘরামীর স্ত্রী শোভা ঘরামী জীবিত এবং মধুসুদন ঘরামীর সাথে বসবাস করলেও তাকে এই মামলায় সাক্ষী বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নাই। মধুসুদন ঘরামীর সাক্ষ্য হতে দেখা যায় তার স্ত্রী তাকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম বলেন নাই। তিনি তাকে জানিয়েছিলেন যে, তাকে যে মুসলমান করেছিল সে ঐ ধর্ষণের সময় এসেছিল। মধুসুদন ঘরামী জেরায় জানান, পারেরহাটে রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিল দেলোয়ার শিকদার যার পিতা রসুল শিকদার। সে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জনরোষে নিহত হয়। তাকে প্রসিকিউশন জোর করে সাঈদীর নাম বলানোর চেষ্টা করলে তিনি তখন সাঈদীর নাম শোনেন নাই বলে জানান। উপরন্তু তিনি সাঈদী সাহেবকে ডকে সনাক্তও করেন নাই। অন্যদিকে তার বক্তব্যের Contradiction সমূহ (IO কর্তৃক স্বীকৃত) বিবেচনায় আনলে সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে তার কোন অভিযোগই থাকে না। এই চার্জের অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে কোন সাক্ষী কোন বক্তব্যই প্রদান করেন নাই। কাজেই উলেখিত বিবেচনায় খুব সহজ এবং স্বাভাবিকভাবে বলা যায় যে, উলেখিত এই চার্জটি প্রমাণিত না হওয়ার পরেও ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ প্রমাণিত বলে রায় প্রদান করেছেন।
চার্জ নং-১৬ (তিনজন মহিলাকে আটক, ধর্ষণ এবং অপরাধে সহায়তা) : এ অভিযোগে বিস্তারিত বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১০/১২ জন স্বশস্ত্র রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের নিয়ে গৌরাঙ্গ সাহার পারেরহাট বন্দরের বাড়িতে গিয়ে তার তিন বোন মহামায়া, অন্নবানী ও কমল রানীকে অপহরণ করে পিরোজপুর পাকিস্তানী আর্মির ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তিনদিন ধরে তাদের ধর্ষণ করা হয়। এই বক্তব্যের সমর্থনে ট্রাইব্যুনাল PW-13, PW-3 এবং অজিত কুমার শীলের জবানবন্দি প্রদর্শনী-২৬৪ বিবেচনায় এনে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন কিন্তু ট্রাইব্যুনাল আসামীপক্ষের জেরায় এবং যুক্তি-তর্কে উপস্থাপিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় আনেন নাই। আসামীপক্ষ কর্তৃক PW-13 গৌরাঙ্গ সাহাকে জেরা এবং PW-13 প্রদর্শনী-AP (জিয়ানগর উপজেলার ভোটার তালিকা, জন্ম তারিখ ০৮-০৭-১৯৬৩) পর্যালোচনায় দেখা যায় যদিও PW-13 ১৯৭১ সালে তার বয়স ২৭ দাবি করেছেন কিন্তু বাস্তবে ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ৬/৭ বছর সেক্ষেত্রে তার উলেখিত তিন বোনের বয়স তিন থেকে পাঁচ বছরের বেশি হবার কথা নয়। কাজেই গৌরাঙ্গ সাহার বোনেরা সাবালিকা ছিল এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আরেকটি কথা বিশেষভাবে উলেখ করা প্রয়োজন যে, এই যে গৌরাঙ্গ সাহা তার তিন বোন ধর্ষণের বিচার দীর্ঘ ৪০ বছর পর বিচারের জন্য সাক্ষী দিয়ে গেলেন সেই গৌরাঙ্গ সাহা বিগত ৪০ বছর তার ঐ বোনেরা এবং জন্মদাত্রী মা কোথায় কিভাবে আছে বেঁচে আছে না মরে গেছে তার কোন খোঁজ-খবর রাখে না বা জানে না। উপরন্তু সাক্ষী দেয়ার পর সে মিষ্টি খেয়ে আনন্দ উলvস করে (সেইফ হোমের ডকুমেন্ট) এই সাক্ষীকে বিশ্বাস করে কোন দন্ড প্রদান করা হলে ন্যায়বিচার সমাহিত করা হয়েছে বলে ধরে নেয়াটা স্বাভাবিক।
সাক্ষী হিসেবে PW-3 এর বক্তব্য আনা হয়েছে কিন্তু তিনি এ ঘটনার কোন বক্তব্য দেননি। উপরন্তু PW-13 এর বক্তব্য অনুযায়ী উলেখিত সাক্ষীসহ কেউ তার বোন অপহরণ ও ধর্ষণ সম্পর্কে অন্যান্য সাক্ষী বা অন্য কেউ জানেন কি না তা বলতে পারেননি। উপরন্তু চার্জ-১৬ আলোচনায় উলেখিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রিপোর্ট অনুযায়ী জিয়ানগর থানায় কোন বীরঙ্গনা না থাকায় প্রমাণ করেন যে, চার্জ-১৬ উলেখিত কোন ঘটনাই ঘটে নাই।
চার্জ নং-১৯ (হিন্দুদেরকে মুসলমান বানানো) : এই অভিযোগের বর্ণনায় ২০ জনের নাম উলেখসহ ১০০/১৫০ জনেরও অধিককে জোর করে মুসলমান বানানোর অভিযোগ সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে আনা হয়েছে। এই বক্তব্যের সমর্থনে ট্রাইব্যুনাল PW-2, PW-3, PW-4, PW-13 এবং PW-23 এর বক্তব্যেকে বিশ্বাস করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন কিন্তু তিনি এ বিষয়ে আসামীপক্ষের বক্তব্য একটি মাত্র বাক্যেও আলোচনায় আনেন নাই এক্ষেত্রে আসামীপক্ষের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার যে ১৫০/২০০ জন ব্যক্তিকে জোর করে মুসলমান বানানোর বর্ণনা দেয়া হলেও যে মসজিদে নিয়ে গিয়ে মুসলমান বানানো হয় এবং নামায পড়তে বাধ্য করা হয় মর্মে দাবি করা হয় সেই মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন বা কোন মুসলxকে এই মামলায় সাক্ষী করা হয় নাই। চার্জ-১৪ এবং চার্জ-১৬ তে বর্ণিত কারণে PW-13 এবং PW-23 কে বিশ্বাস করার কোন কারণ দেখা যায় না। PW-2, PW-3, PW-4, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী নন এবং PW-2 ও PW-3 স্বীকৃতমতে মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ সময় পারেরহাট এলাকাতে ছিলেন না। উপরন্তু যে সমস্ত সাক্ষী ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকান্ডের বিষয়ে জনপ্রিয় ওয়ায়েজীন সাঈদী সাহেবের মতো একজন বিখ্যাত ব্যক্তির বিরচদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারে তাদের বক্তব্য শুধু অর্বাচীনরা বিশ্বাস করতে পারে।
প্রমাণ না থাকলেও শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার সাজিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭১ সালে রাজাকার ছিলেন না, তিনি শান্তি কমিটিরও সদস্য ছিলেন না। এমনকি তার বিরচদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তা যে সময়ে সংঘটিত হয়েছে মর্মে অভিযোগে বলা হয়েছে ঐ সময়ে তিনি পারেরহাট বা পিরোজপুরেই ছিলেন না। রাজাকার দেলু সিকদার ওরফে দেলোয়ার সিকদারের অপরাধ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর ঘাড়ে চাপিয়ে দায়েরকৃত অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল সত্য ধরে নিয়ে তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। এই দেলু সিকদার শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং রাজাকার বাহিননীর সদস্য হিসেবে নিজে অপরাধ করেছেন এবং পাকিস্তান বাহিনীকে অপরাধে সহযোগিতা করেছেন। যে সময়ের অভিযোগ সেই সময় তিনি যশোরে রওশনের বাড়িতে ছিলেন। ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায়ে সেটা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সরকারপক্ষের অভিযোগ হলো তিনি স্বাধীনতার পরে রওশনের বাড়িতে পালিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেটা প্রমাণের জন্য রওশনকে সরকারপক্ষ সাক্ষী হিসেবে আনেননি। আসামীপক্ষের সাক্ষী হিসেবে রওশন সাক্ষ্য দিয়ে জানিয়েছেন যে সাইদী সাহেব তার বাড়িতে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ শুরচ হলে এপ্রিলের প্রথম থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সময়ে। ট্রাইব্যুনাল গত ২৮ ফেব্রচয়ারি প্রদত্ত রায়ে রওশনের বক্তব্য সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন। তার বক্তব্য বিবেচনায় নেননি। তার বক্তব্য বিবেচনায় নিলে প্রমাণ হতো যে সাঈদী সাহেব রাজাকার ছিলেন না। তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন না। স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকান্ডেই তিনি জড়িত ছিলেন না।
প্রসিকিউশন পক্ষের মামলা হলো : ফরমাল চার্জ সাক্ষীদের জবানবন্দি এবং প্রদর্শিত দলিল পত্র হইতে দেখা যায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যিনি ঐ সময় তাদের কথিত মতে দেলু বা দেলোয়ার সিকদার নামে পরিচিত ছিল যে পারেরহাটে মুদির ব্যবসা করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচ হলে তিনি ভাল উর্দূ জানার কারণে পাকিস্তান আর্মির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং পাকিস্তান আর্মিদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন বা পাকিস্তান আর্মিদের ঐ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সহায়তা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে আত্মরক্ষার্থে পিরোজপুর হতে যশোরের বাঘারপাড়া থানার দহকলা গ্রামের রওশনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে আত্মগোপন করে সৌদী আরব চলে যান। ১৯৮৬ সালে আত্মপ্রকাশ করেন এবং পিরোজপুরে ধর্মসভা করেন।আসামীপক্ষের মামলা হলো তিনি কখনো দেলু বা দেলোয়ার সিকদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, তিনি কখনো মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনি স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকে ওয়ায়েজীন হিসেবে দেশে বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ-মাহফিল করতেন। বিশেষত যশোর জেলায় ওয়াজ মাহফিল করতেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচর আগে যশোরের নিউমার্কেট এলাকায় নিউ টাউনে বসবাস করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরচ হলে তিনি নিউ টাউন হতে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করার পর মহিরনের পীর সাহেব সদরচদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে দহকলার রওশন আলীর বাড়িতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত অবন্থান করেন। পরে নিজ এলাকায় ফেরত আসেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সমাপ্ত হবার পরও বেশ কিছুদিন নিজ এলকায় থাকার পর খুলনায় যান এবং সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াজ মাহফিল করতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা নির্বাচিত হন। পরে তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার রাজনৈতিক ভূমিকা এবং তিনি জনপ্রিয় ওয়ায়েজীন হওয়ার কারণে তার বিরচদ্ধে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে যার সাথে তার ন্যূনতম সম্পর্ক নাই। এই অভিযোগসমূহকে আলvমা সাঈদী শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার হিসেবে বর্ণনা করেছেন।তার বিরচদ্ধে আনীত যে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বাইরে মিথ্যা অভিযোগ হলো তিনি রাজাকার ছিলেন, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন বা তার ডাক নাম দেলু সিকদার ছিল। সাঈদী সাহেব কখনোই দেলু সিকদার বা দেলোয়ার সিকদার ছিলেন না সেটা আমরা পূর্ববর্তী সিরিজে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছি।
ট্রাইব্যুনাল তার রায়ের অনুচ্ছেদ ১২তে সাঈদী সাহেবকে রাজাকার বাহিনী এবং শান্তি কমিটি বা পিস কমিটির সদস্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এটা যথার্থ আইনসঙ্গত বা সাক্ষ্য প্রমাণভিত্তিক কোনটাই নয়। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল PW-১ মাহবুবুল আলম হাওলাদার PW-২ রচহুল আমীন নবীন, PW-৩ মিজানুর রহমান তালুকদার, PW-৪ সুলতান আহমেদ হাওলাদার, PW-৫ মাহতাব উদ্দীন হাওলাদার, PW-৬ মানিক পশারী, PW-৭ মফিজউদ্দিন পশারী, PW-৮ মোস্তফা হাওলাদার, PW-৯ আলতাফ হোসেন হাওলাদার, PW-১০ বাসুদেব মিস্ত্রি, PW-১১ আঃ জালাল শেখ, PW-২৬ আবেদ খান, প্রদর্শনী-৩৫, প্রদর্শনী-৮, প্রদর্শনী-১১ এবং প্যারা ৮১ তে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও বেআইনীভাবে ডা. এম এ হাসানের যুদ্ধাপরাধের তালিকা ও বিচার প্রসঙ্গ প্রকাশকাল ২০০৯ এবং অন্য একটি মামলায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক দাখিলকৃত শান্তি কমিটি-১৯৭১, প্রকাশকাল ২০১২-এর উদ্ধৃতি দিয়ে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এমনকি আসামীপক্ষের বক্তব্যের একটি মাত্র বাক্য বিবেচনায় না নিয়ে উক্তরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উলেখ করা যায়, ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধের ঐ অঞ্চল (পিরোজপুর)-এর সাব সেক্টর কমান্ডার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড শামসুল আলম তালুকদার (DW-১) পারেরহাটের ক্যাম্প কমান্ডার খসরচল আলম (DW-৫) এবং অন্যান্য DW আসামীপক্ষের সাক্ষী এবং আসামী পক্ষ থেকে প্রদর্শিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (প্রদর্শনী- AK) জেলার ইতিহাস (প্রদর্শনী- AJ) এবং ঐ অঞ্চলের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন এর ‘‘মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সেই উন্মাতাল দিনগুলো’’ (প্রদর্শনী-R) বিবেচনায় আনেন নাই।উলেখিত সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রসিকিউশন পক্ষ (সরকারপক্ষ) সাঈদী সাহেবকে বাজাকার প্রমাণের জন্য মূলত যে সমস্ত দলিলপত্রের ওপর নির্ভর করেছেন তার প্রতিটি ২০০০ সালের পরবর্তীতে রচিত বা লিখিত। কিন্তু উক্ত দলিলসমূহ প্রস্ত্ততকারী বা লেখক বা সংবাদদাতা জীবিত থাকলেও তাদের কাউকে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়নি বরং তাদেরকে হাজির করা সম্ভব নয় মর্মে প্রসিকিউশন পক্ষে আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেছেন। প্রদর্শনী-১১তে ৪/১১/২০০৭ তারিখের দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার রিপোর্টটি ‘‘একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ঐ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এই সম্পর্কে প্রথম দুটোই আসামীপক্ষের বক্তব্য ছিল যে ঐ কমিশনের সদস্য ছিলেন এই ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং অপর সদস্য ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। কাজেই তারা বিচারকার্যে অংশগ্রহণ বা পরিচালনা করার উপযুক্ত ব্যক্তি নন কিন্তু বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তার বিরচদ্ধে আনীত অভিযোগ নিষ্পত্তি করার সময় বলেন যে, Non-Active Participation এর কারণে তা বিচারকে প্রভাবিত করবে না যদি এই রিপোর্টটি সেক্রেটারিয়েট সদস্যদের অংশগ্রহণ ছাড়াই প্রস্ত্তত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেই রিপোর্টটির ওপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পূর্ণ বেআইনী।
প্রদর্শনী-৩৫ মূলে দাখিলকৃত দলিলটির ওপর নির্ভর করে প্রসিকিউশন পক্ষ সাঈদী সাহেবকে রাজাকার হিসেবে প্রমাণের প্রয়াস পেয়েছেন। সে সম্পর্কে বলা যায় যে, উক্ত রিপোর্ট সম্পাদনকারী ডা. এম.এ হাসান জীবিত আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন টকশোতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু কেন তাকে এই মামলায় প্রসিকিউশন সাক্ষী করলেন না তা বোধগম্য নয়। এ সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় জেরা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কোন যৌক্তিক জবাব দিতে পারেন নাই।
উপরন্তু এই রিপোর্টটির যাচাই প্রক্রিয়া আইনসম্মত, গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ তদন্তকারী কর্মকর্তা জেরার জবাবে জানান যে, তিনি পিরোজপুরের জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক সেন্টুর নিকট ১৭-৮-২০১০ তারিখে যাচাই করে এর সত্যতা পান। অথচ তিনি জেরায় স্বীকার করেন যে, তিনি ১৮-৮-২০১০ তারিখে সর্ব প্রথম পিরোজপুরে যান। কাজেই এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
সাঈদী সাহেব রাজাকার ছিলেন মর্মে যে সমস্ত সাক্ষী আদালতে এসে মৌখিক সাক্ষ্য প্রদান করেছেন তাদের বক্তব্য প্রচুর গরমিল, বৈপরিত্য, বৈসাদৃশ্য এবং পরস্পর সাংঘর্ষিক। এ সমস্ত সাক্ষীর বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তারা এমনও বক্তব্য প্রদান করেছেন যে, পাকিস্তানী আর্মি পারেরহাটে আসার অর্থাৎ ৭ মে’র এক মাস পূর্বে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। যার সদস্য ছিলেন সাঈদী সাহেব। এটা যদি সত্য ধরে নেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি গঠনের পূর্বে পিরোজপুরে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এমনকি তাদের বক্তব্য অনুযয়ী এপ্রিল মাসে পারেরহাটে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়েছে যা বিশ্বাস করার কোন কারণ নাই। এটা হাস্যকরও বটে। উপরন্তু PW-12 স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মাওলানা সাঈদীর প্রতিদ্বন্দ্বী এ. কে. এম. এ আওয়াল এর বক্তব্য থেকে দেখা যায় মে মাসের শেষের দিকে পাকবাহিনী আসার পরে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। যদিও তিনি পরবর্তীকালে ৭ মে পাকবাহিনী আসার পরবর্তীতে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। এটিকে সত্য ধরে নিলে অন্য সকল সাক্ষীর বক্তব্য অর্থাৎ রাজাকার বাহিনীর গঠন ও উহার সদস্য হওয়ার বিষয় কথিত বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। প্রসিকিউশনের দালিলিক কাগজপত্র এবং মৌখিক সাক্ষ্যতেই যেখানে তথ্যে এত বৈপরিত্য সেখানে মাওলানা সাঈদীর রাজাকার শান্তি কমিটির সদস্য থাকার প্রশ্নই অবান্তর।
স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তীকালে সাঈদী সাহেব প্রথমে দহকলার রওশনের বাড়ি এবং পরবর্তীতে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপন করে থাকেন মর্মে ট্রাইব্যুনাল যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রায় দিয়েছেন তা বিশ্বাসযোগ্য, আমলযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল যে সমস্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অনুচ্ছেদ-৩৪-এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ট্রাইব্যুনাল শুধু PW-4, PW-8, PW-12 এবং PW-14 দের জেরার এই অংশটুকু অর্থাৎ ’৭১ সালে সাঈদী সাহেব দুই সন্তানের পিতা ছিলেন এবং প্রদর্শনী-১৫১ তে সাঈদী সাহেবের দ্বিতীয় সন্তান শামীম সাঈদীর জন্ম তারিখ ০১-০১-৭২ লেখা আছে এবং PW-2 রচহুল আমীন নবীন, PW-12 এ.কে.এম.এ আউয়াল আসামীকে পারেরহাটে দেখেননি এবং লোকজনের কাছে শুনেছিলেন যে, সাঈদী সাহেব পালিয়ে গেছেন কাজেই আসামী পক্ষের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা যথার্থ নয়। কারণ প্রদর্শনী - ১৫১ বিধি ১০ অনুযায়ী জব্দ করা হয় নাই বা কোন আইনগত কর্তৃত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে বা আইনসম্মত উপায়ে সংগৃহীত হয় নাই। উপরন্তু আমাদের দেশে জন্ম তারিখ সাধারণত দাখিল বা এসএসসি সনদ অনুযায়ী লেখা হয়। আমাদের দেশে চাকরি বা অন্যান্য সুবিধার জন্য সাধারণভাবে ছেলে-মেয়েদের বয়স ২-৩ বছর কম দেখানো হয়ে থাকে। উপরন্তু ট্রাইব্যুনাল বয়স বিবেচনার ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি বা আচরণ করেছেন। PW-1 সাক্ষ্য প্রদানকালে তার বয়স ৬০ বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সালে বয়স ছিল ২০ বছর, অথচ তার এসএসসির রেজিস্ট্রেশন কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৫৯ সালে এবং জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী তার বড় বোন মাতোয়ারার জন্ম ১৯৫৭ সালে। PW-23 গৌরাঙ্গ সাহা ১৯৭১ সালে তার বয়স ২৭ বছর দাবি করলেও তার জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ০৮-০৭-১৯৬৩ দেখা যায়। এক্ষেত্রে এই দুইজন সাক্ষীর বক্তব্য বিবেচনায় আসার কোন যৌক্তিক কারণ ছিল না। অথচ ট্রাইব্যুনাল কোন কারণ ছাড়াই তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। উপরন্তু PW-15 এবং PW-16 অর্থাৎ সোলায়মান আলী এবং জুলফিকার আলীর বক্তব্য অনুযায়ী দেখা যায় ১৯৭০ সালে সাঈদী সাহেবকে তারা যাশোরে দেখেছেন এবং PW-24 হোসেন আলীও প্রসিকিউশনের বক্তব্যকে সমর্থন করেন নাই। উপরন্তু সাঈদী সাহেবকে স্বাধীনতার পরে যাশোরে রওশন-এর বাড়িতে দেখেছেন এমন কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হাজির করেন নাই বরং শোনা সাক্ষী হাজির করেছেন।
আসামী পক্ষ কোন পি প্রমাণে ব্যর্থ হলেই প্রসিকিউশনের বক্তব্য গৃহীত হবে এটা আইনের বিধান নয় বরং প্রসিকিউশনের বক্তব্য প্রসিকিউশনকে প্রমাণ করতে হবে এটাই আইনের বিধান। সাঈদী সাহেব স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রওশনের বাড়িতে ছিলেন মর্মে প্রসিকিউশন ৩ জন সাক্ষী (PW-15, PW-16, এবং PW-24) ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করলেও তাদের মধ্যে PW-24 হোসেন আলী প্রসিকিউশনের বক্তব্যকে নিশ্চিতভাবে সমর্থন করেন নাই। PW-15 এবং PW-16 দুই জনই আওয়ামী লীগের নেতা তাদের সাক্ষ্যে উলেখ আছে। এছাড়াও তাদের সাক্ষ্য হতে দেখা যায় তারা কেহই সাঈদী সাহেবকে রওশনের বাড়িতে দেখেন নাই বরং তারা শোনা কথার ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্য দিয়েছেন। PW-15 সোলায়মান শেখ জেরায় জানায়, দেশে ফিরে আসার পর সাঈদী সাহেবের সাথে তার দেখা হয় নাই। তিনি তোজাম্মেল হোসেন, হোসেন আলী, জুলফিকার আলী এবং সদরচদ্দিন গংদের নিকট থেকে বিষয়টি শুনেছেন। PW-16 জুলফিকার আলী তার জেরায় জানান, ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তিনি জানতে পারেন রওশন আলীর বাড়িতে এক অপরিচিত লোক আশ্রয় নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাকে রওশন আলীর বাড়িতে দেখার বিষয়টি প্রমাণিত হয় না। কারণ তারা যাদের কাছ থেকে সাঈদী সাহেবকে রওশন আলীর বাড়িতে থাকার কথা শুনেছেন। তাদের মধ্যে একজন রওশন আলী এবং অপরজন হোসেন আলী। এদের কেউই প্রসিকিউশনের বক্তব্য সমর্থন করেন নাই।
রওশনের বাড়িতে সাঈদী সাহেবের অবস্থান এই মামলায় অত্যন্ত গুরচত্বপূর্ণ বিষয়। সত্য প্রমাণের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি ছিল প্রসিকিউশন রওশনকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে হাজির করবে। কিন্তু তা করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা রওশনের বাড়িতে তদন্ত করতে গিয়েছেন। তার ভিডিও ছবিও দেখিয়েছেন যাতে রওশনকে দেখা যায়। কিন্তু তাতে রওশনের কোনো বক্তব্য নেই। তাকে সাক্ষী হিসেবেও হাজির করা হয়নি। সত্য প্রমাণের জন্য আসামীপক্ষের সাক্ষী হিসেবে রওশন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সরকার পক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী তাকে ব্যাপক জেরা করেন। জবানবন্দী ও জেরায় তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মাওলানা সাঈদী তার বাড়িতে ছিলেন। পরে তিনি পিরোজপুরে চলে যান। রায় প্রদানের সময় রওশনের বক্তব্য মোটেও বিবেচনায় নেনটি বিচারকরা। বিবেচনায় নিলে মাওলানা সাঈদী বেকসুর খালাস পেতেন। কারণ তার বিরচদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সবই মে ও জুন মাসের।শহীদুল ইসলাম : বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও নীলনকশার অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলায় জড়িয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনের মাহফিলে তার বুলন্ধ আওয়াজ কমিয়ে দেয়াই দেশী-বিদেশী চক্রের মূল টার্গেট। এজন্য যেন তেনভাবেই হোক তাকে মামলায় ফাঁসাতে হবে। হয়েছেও তাই। এজন্য দেখা যায়, তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার অনেক আগেই চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মাওলানা সাঈদীর গ্রেফতারের আবেদন করেছেন। একই বিষয়ে দু’টি মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় সেই বিষয়ে আরেকটি নালিশী মামলায় তাকে দন্ড দেয়া হয়েছে। বিচারবিভাগের মুখে কালিমা লেপন করে বিদেশে অবস্থানরত আহমেদ জিয়াউদ্দিনের লিখিত শর্তে চার্জ ফ্রেমিং অর্ডারসহ নানা অনিয়ম করা হয়েছে এই মামলায়। স্কাইপি কেলেঙ্কারির সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম পদত্যাগ করলেও সেই কেলেঙ্কারির উদ্ভূত ফসলের ওপর মামলা চলমান রাখা হয়েছে এবং সেই কেলেঙ্কারির ওপরই শেষ পর্যন্ত বিশ্ববরেণ্য এই আলেমে দ্বীনকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এইভাবে শুরচ থেকে শেষ পর্যন্ত একদিকে বর্তমান সরকারের চরম জিঘাংসার শিকার হয়েছেন মাওলানা সাঈদী। অন্যদিকে পদে পদে অনিয়ম, অবিচারের শিকার হয়েছেন তিনি।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারচল হকের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৮ ফেব্রচয়ারি মাওলানা সাঈদীকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দিয়ে যে রায় দিয়েছেন তার প্যারা তেষট্টিতে আসামী পক্ষের বক্তব্যের অবমূল্যায়ন করে তদন্তাধীন বিষয়ে বিচার নিষ্পত্তি করে ট্রাইব্যুনাল বেআইনী কর্মসম্পাদন করেছেন। ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে চার্জ- ৭, ৮, ১০ এবং ১১-এর উলেখ না করে দু’টি মামলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিচারাধীন থাকার বিষয়টিকে এই বিচারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয় বলে উলেখ করেছেন। তবে তার এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় কারণ, উলেখিত মামলা দু’টির প্রথমটি হল PW-1 মাহবুবুল আলম হাওলাদার কর্তৃক জিয়ানগর থানায় দায়েরকৃত এজাহার (প্রদর্শনী-F) নং-৪ (৯) ২০০৯ যাতে অভিযোগ নং- ১০ এবং ১১-এর উলেখ আছে এবং PW-6 আব্দুল মানিক পশারী কর্তৃক পিরোজপুর থানায় দায়েরকৃত এজাহার (ডিফেন্স প্রদর্শনী-W) নং ৯ (৮) ২০০৯ চার্জ নং- ৭ এবং ৮-এ বর্ণিত ঘটনার বর্ণনা আছে। এই দু’টি মামলাসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তদন্তাধীন আছে (আইওএর ২৫/০৪/২০১২ জেরা, পাতা ৩১)। উক্ত মামলায় আসামী/দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জেলহাজতে আটক আছে। স্বীকৃত মতে (জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে) কোনো তদন্তাধীন বিষয়ে বিচার শুরচ হতে পারে না। তদন্ত শেষ হলেই কেবল মামলা শুরচ হতে পারে। এখানে মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়ে গেছে অথচ মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
রায়ের প্যারা ৬৪তে স্কাইপি সংলাপ এবং ই-মেইল যোগাযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধ বিবেচনায় বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কথপোকথনকে বিবেচনায় আনেননি। এক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিষ্কার বিষয় হলো এই মামলায় চার্জ গঠনের আদেশ থেকে শুরচ করে রায়ের কাঠামো পর্যন্ত সমাপ্ত আদেশ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছ থেকে নিজামুল হক নাসিম সাহেবের নিকট প্রেরিত হয়। তিনি বিচারক হিসাবে বহাল থাকলে রায়ও জিয়াউদ্দিন কর্তৃক তার নিকট প্রেরিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তিনি পদত্যাগ করলেও স্কাইপি সংলাপ ও ই-মেইল যোগাযোগের কোনো বক্তব্যকে অস্বীকার করেননি। বরং আহমেদ জিয়াউদ্দিন ঐ যোগাযোগকে বৈধ এবং গর্বের বিষয় বলে দাবি করেছেন। আরও বলা যায় যে, স্কাইপি সংলাপ এবং ই-মেইল যোগাযোগের বক্তব্য ও সিডি ‘দৈনিক আমার দেশ’ এবং বগ হতে সংগ্রহপূর্বক দাখিল করা হয় যা পাবলিক ডকুমেন্ট হিসাবে বিবেচিত। আরও উলেখ করা প্রয়োজন যে, উলেখিত স্কাইপি সংলাপ এবং ই-মেইল যোগাযোগ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ আদেশ প্রদান করলেও তা মহামান্য আপিল ডিভিশনের চেম্বার জজ কর্তৃক স্থগিত করে দেয়াতে উক্ত স্কাইপি সংলাপ এবং ই-মেইল যোগাযোগ প্রচারের এবং ব্যবহারের আইনগত কোনো বাধা ছিল না বা নাই। এছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী কোনো বিচারক বিচারাধীন কোনো বিষয়ে ফ্যামিলি মেম্বারসহ কারো সাথে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন না। উলেখিত সংলাপ ও ই-মেইল যোগাযোগ হতে দেখা যায়, পরবর্তীকালে সংশোধিত বিধি প্রয়োগ করে আসামীর অর্জিত অধিকার অর্থাৎ সাক্ষী এবং ভিকটিমদের পার্টিকুলারসহ তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার অধিকার থেকে আসামীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আসামীর সাক্ষীর সংখ্যাকে সীমিত করা হয়েছে। আসামীর জেরা করার অধিকারকে সীমিত করা হয়েছে এবং দু’শতাধিক প্রদর্শনীর ওপর জেরা করার অধিকার খর্ব করে গিলটিন প্রয়োগ করা হয়েছে। বিষয়সমূহ উত্থাপন করে পুনঃবিচারের আবেদন করা হলে তা নাকচ করা হয়েছে। এটর্নি জেনারেল শুনানিকালে এই স্কাইপি সংলাপ ও ই-মেইল যোগাযোগকে ট্রাইব্যুনালের সম্পদ হিসাবে উলেখ করেছেন। স্কাইপি সংলাপ থেকে দেখা যায়, সম্ভবত এমিকাস কিউরি নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি কি ধরনের জঘন্য প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন এবং সরকারের মনমতো রায় প্রদান করলে প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি সিনহা তাকে প্রমোশন দিয়ে আপিল বিভাগে নেয়ারও প্রতিশ্রচতি দিয়েছিলেন। কাজেই এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বলা যায়, স্কাইপি সংলাপ ও ই-মেইল বাধাগ্রস্ত করেছে আসামীর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে রচদ্ধ করেছে। উলেখিত বাধা ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত বিচার বাতিল না করে নিজামুল হক নাসিম সাহেব কর্তৃক গৃহীত সাক্ষ্যগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে রায় প্রদান কোনো মতে আইন সিদ্ধ নয়।
প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী আলvমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭১ সালে বিজয় অর্জনের পর আত্মরক্ষার্থে প্রথমে যশোর দহকলায় আশ্রচয় নেন এবং পরবর্তীতে শিকদার নাম পরিবর্তন করে সাঈদী নাম ধারণ করে ১৯৮৬ সালে আত্মপ্রকাশ করেন মর্মে যে বক্তব্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ প্রসিকিউশন উত্থাপন করেছেন তাতে দেখা যায়, PW-15 এবং PW-16-এর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি স্বাধীনতার পরপরই রওশনের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং তারপর পালিয়ে সৌদি আরব চলে যান (The associate of Pakistan Army. 1971-এর বর্ণনা অনুযায়ী)।
বাস্তবে এই বক্তব্য যে সত্য নয় তার যথেষ্ট প্রমাণ প্রসিকিউশনের দাখিলি ডকুমেন্ট এবং DW-13 দাখিলকৃত সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। প্রসিকিউশনের দাখিলি বস্ত্ত প্রদর্শনী (XI) থেকে দেখা যায়, আলvমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৩ সালে ঢাকার আরমানী টোলায় ওয়াজ মাহফিল করেছেন। PW-28-এর সংগৃহীত পুলিশ রিপোর্ট (জেরায় স্বীকৃত) অনুযায়ী আলvমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নিজ এলাকাতে বসবাস করার পর খুলনায় যান এবং সেখানে বসবাস আরম্ভ করেন। পরবর্তীতে ঢাকার শহীদবাগে আসেন। পিরোজপুর, খুলনা এবং ঢাকার সংশিষ্ট এলাকার পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী PW-28 এই তথ্যটি প্রদান করেন। প্রসিকিউশনের ফরমাল চার্জ হতে দেখা যায়, সাঈদী সাহেবকে ১৯৭৫ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ দেয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে সৌদি আরবে পালিয়ে থাকার কল্পকাহিনী প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যপ্রমাণ হতেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়। যদিও বিষয়টি অসত্য প্রমাণের জন্য আসামীপক্ষ হতে কোনো প্রমাণ দাখিল অপ্রয়োজনীয় ছিল তথাপি উলেখিত বিষয়টি অর্থাৎ তার দেশে থাকার বিষয়টি সমর্থন করার জন্য DW-13 বেশ কিছু দলিলপত্র ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছেন (প্রদর্শনী- Z-AI)। এর মধ্যে উলেখযোগ্য হলো ১৯৭৫ সালে তার নিজ ঠিকানায় পাসপোর্ট এবং ঢাকার মতিঝিলে টিএন্ডটি কলোনি মাঠে ১৯৭৪ সালের ২৯, ৩০ এবং ৩১ ডিসেম্বর ওয়াজ মাহফিল করেছেন তার খবর প্রকাশিত হয়েছে যার প্রদর্শনী- BJ চিহ্নিত হয়েছে।
এই মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা যে সরকারের নির্দেশে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের রাজনৈতিক নীলনকশা তথা আলvমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরচদ্ধে হীন চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্য করা হয়েছে তার প্রমাণ হল তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দি জেরা এবং PW-2 রচহুল আমীন নবীনের জেরার প্রদত্ত বক্তব্য। প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০ জুলাই ২০১০ সালে PW-1 মাহবুবুল আলম হাওলাদার আলvমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় নালিশ করেন বা ঐ তারিখে তদন্ত সংস্থায় ডায়রি নং- ১০০/A হিসাবে নথিভুক্ত হবার পরেরদিন নালিশ-২ হিসাবে রেকর্ড হয় এবং তদন্তভার তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীনের ওপর অর্পিত হয়। কিন্তু বাস্তবে এই তারিখে বহু পূর্ব হতেই তদন্তকারী কর্মকর্তা সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী মামলা সাজাতে থাকেন। তার প্রমাণ হল তদন্তকারী কর্মকর্তা তার জবানবন্দিতেই উলেখ করেছেন যে, তিনি ২৯-০৩-২০১০ তারিখে আলvমা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেফতার করার জন্য চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আবেদন করেন। তার জেরা হতে দেখা যায়, তিনি ২০১০ সালে মার্চ/এপ্রিল মাসে প্রদর্শিত স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ উত্তোলন করেছেন। PW-2 রচহুল আমীন নবীন তার জেরায় স্বীকার করেছেন, ২০১০ সালের মার্চ মাসে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে তার দেখা হয়েছে এবং ঐ সময় অন্য কয়েকজন সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দি দিয়েছেন।
নালিশী রেকর্ড এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হবার ১০০ দিনেরও পূর্বে তদন্তকারী কর্মকর্তা কিভাবে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যুর আবেদন জানালেন, কিভাবে স্থির ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করলেন, কিভাবে রচহুল আমীন নবীনসহ অন্য সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করলেন বা তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হবার ১০০ দিনেরও পূর্বে এই কাজগুলো করা সম্ভব ছিল কিনা প্রশ্ন করা হলে যেকোনো স্বাভাবিক বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি সহজ ও সরল ভাষায় উত্তর দিবেন সম্ভব ছিল না। আসামীপক্ষের যুক্তি-তর্ক শুরচর সর্বপ্রথম বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছিল তারা বিষয়টির উত্তর বা ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য প্রসিকিউটরদের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন (ট্রাইব্যুনালের ভিডিও ফুটেজ) কিন্তু প্রসিকিউটরদের কেহই এই প্রশ্নের কোনো উত্তর প্রদান করেননি। আসামী আলvমা সাঈদী আশা প্রকাশ করেছিলো, শুধুমাত্র এই বিষয়টি বিবেচনায় আনলে প্রসিকিউশনের মামলা যে সাজানো তা প্রমাণিত হবে। কিন্তু বিচারকগণ কোন বিবেচনায়, কোন যুক্তিতে, কোন কারণে এতবড় বিষয়টি সম্পর্কে কোনো আলোচনা করলেন না তা বোধগম্য না হবার কোনো কারণ নেই। বরং একথা সহজেই অনুমেয় যে বিচারকবৃন্দ রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে যে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সাঈদী সাহেবের বিরচদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে তাকে আইনসিদ্ধ করা এবং এ কারণে উলেখিত বিষয়সমূহ বিচারকগণ পরিকল্পিতভাবে আসামীপক্ষের আইনসম্মত যুক্তিসমূহ বিবেচনায় না এনে প্রসিকিউশনের কপচানো বুলির সাথে একমত হয়ে তাদের মনমতো রায় প্রদান করেছেন।
বিষয়: বিবিধ
২১৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন