ইসলামপন্থীদের ঐক্যঃ বাঁধা হলো দেওবন্দী, সালাফি ও জামা’আতি মানসিকতা WRITTEN BY ডক্টর আবদুস সালাম আজাদী
লিখেছেন লিখেছেন স্বপন১ ১৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:০৯:৫৪ সকাল
বাংলাদেশের ইসলাম ও স্বাধীনতার জন্য এখন দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থীরাই একমাত্র শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এই শক্তির অনৈক্যের জন্য কয়েকটি মোর্চা আজ দ্রুততার সাথে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। সবচেয়ে মারাত্মক মোর্চাটা হলো far left তথা নাস্তিক বাম। জড়ো হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বিরোধী ভারতপন্থী মোর্চা। সংঘবদ্ধ হয়েছে ইসলাম বিরোধী কিছু অন্য ধর্মাবলম্বি কিংবা ইসলামপন্থীদের কিছু ভ্রান্ত দল।
দেওবন্দী মানসিকতা
যারা আজ মুলধারার ইসলামপন্থী তাদের মধ্যে একদল হলো দেওবন্দের মুখপাত্র বা তাদের অনুসারী। এরা জনগনের খুব কাছা কাছি, এবং সার্বিক ভাবে ইসলামের ব্যাপারে তারাই বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহনে ভূমিকা রাখে। সত্যি বলতে কি, সরকারও এদেরকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এদের অনেক কিছু সুন্দর, কিন্তু নিজদেরকে ইসলামের এমন Sole agent (একমাত্র সেবক) মনে করেন তারা যে, তাদের বা আকাবিরের মতের বাইরে কোন মত কে ইসলাম সম্মত মনে করেনা। অন্যদের আলিমতো মনে করেই না, তাদের থেকে ইসলাম সম্পর্কে কোন কিছু এলেই তার বিরোধিতা যেন শরিয়াতের একমাত্র কাজ মনে করা হয়।
সালাফি মানসিকতা
দেওবন্দী মাসলাকের সম্পূর্ণ বিপরীতে সালাফি চিন্তা ধারা। শিরক ও বিদআত মুক্ত ইসলাম মেনে চলতে তাদের মত আর কোন মুসলিম দলকে আমি প্যারালাল হিসেবে চিন্তা করতে পারিনা। কিন্তু তাদের মানসিকতা হলো তাদের বাইরে যারাই মাযহাব মেনে চলে, কিংবা দেওবন্দের আক্বীদায় বিশ্বাস করে, অথবা তাসাউফ মেনে চলে, অথবা ইসলামি আন্দোলন করে তারা যেন ইসলামের গন্ডির বাইরে। এদের আতিশুদ্ধ আমল তাদের কে এমন ভাবে গর্বিত বানিয়ে দিয়েছে যে, অন্য মুসলমানদের কোন আমল ই আর যেন ইসলামি নেই। ফলে অন্যদের সাথে মিশতে পারার যোগ্যতাই এরা যেন হারিয়ে ফেলেছে।
জামা’আতি মানসিকতা
জামাআতে ইসলামি হাল জামানার ইসলামের রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের গর্বিত অংশিদার। এর আগে মুসলিম লীগ, নেযামে ইসলাম ইত্যাদী দল ইসলামী রাজনীতিতে সফলকাম হলেও এরা (জামাআতে) মনে করে ইসলামের সামগ্রিকতাকে তারা সার্থকতার সাথে দেশের কাছে পরিচিত করতে পেরেছে। ইসলামি ব্যংক এবং বিশাল ইসলামি সাহিত্যের ভান্ডার এদের হাতে বিকশিত হয়েছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েদেরকে সার্থক ভাবেই দ্বীনি চেতনায় ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। আলিম সমাজকে ইসলামি রাজনীতিতে শামিল করতে পেরেছে। মসজিদে মাদ্রাসায়, ঘরের দহলিজে এমনকি কোন একটা ফাঁকা যায়গা পেলেই এরা বসে যায় দ্বীন শেখার অভীপ্সা নিয়ে। দ্বীনী ইলমকে মানুষের দোরগড়ায় এমন ভাবে এনে দিয়েছে দল টি যে, আজ বাংলাদেশের সচেতন প্রতিটি নাগরিক তাদের কে ইসলামের রক্ষাকারি বড় শক্তি হিসাবে মেনে নিয়েছে। ইসলামের শত্রুরা তো এই দলকেই একমাত্র ইসলাম রক্ষাকারী দল হিসেবে মেনে নিয়ে তাকেই তাদের শত্রুতার টার্গেট বানিয়ে নিয়েছে। এমন কি ইসলাম বিরোধিদের বিরুদ্ধে যে কেও হুঙ্কার দিক, মানুষ তাকে জামাআতী বা জামাআতের এজেন্ট মনে করে।
এ দলটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো delusion। তারা মনে করে এই দলটিই একমাত্র ইসলামি আন্দোলন, আর যারা আছে তারা সব ইসলামের দৃষ্টিতে অপূর্ণাংগ। এই ধারণা কে সবচেয়ে যিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি হলেন বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতির নামকরা সিপাহসালার অধ্যাপক গোলাম আযম (র)। তিনি জামাআতের কাজকে একমাত্র ইকামাতে দ্বীনের কাজ মনে করে অন্য সবার কাজগুলোকে খিদমাতে দ্বীনের পর্যায় গন্য করেছেন। ইক্বামতে দ্বীন বইটা নিয়ে আমার দ্বিমত সেই আশির দশক থেকেই। ১৯৮৬ সালে মরহুম গোলাম আযম সাহেবকে যেদিন প্রথম পেয়ে ছিলাম, এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিসের ভিত্তিতে তিনি ইক্বামতে দ্বীন ও খিদমাতে দ্বীন পরিভাষা তৈরি করলেন?
মূলত সবাই ইক্বামাতে দ্বীনের কাজ করে। হয়ত কেও বড় আংগিকে, কেও ছোট আংগিকে। যারা । যারা নেতৃত্ব দেন সবাইকে এক করে ফেলেন, ফলে গড়ে ওঠে বিশাল উম্মাহ, মুসলিম মিল্লাহ। সালাহুদ্দিন আইউবি, মুহাম্মাদ আল ফাতিহ, মাহদী তাওমার্ত, আহমাদ বিন ইরফান সবাই ছিলো এই সংস্কৃতির বাহক। মুসলিমদের আলাদা করে লাভ নেই, এক করতে পারাটাই বড় কল্যানের, বড় যোগ্যতার। আমি নিশ্চিত গোলাম আযম (র) ছিলেন মুসলিম ঐক্যের পুরোধা, কিন্তু ব্যর্থতার কেন্দ্র চিহ্নিত করা আমাদেরও দ্বায়িত্ব। এই বইটা যতদিন জামাআতের পাঠ্য সূচিতে থাকবে ততদিন জামাআত অন্যদেরকে সমকাতারে ভাবতেই পারবেনা।
জামাআত ইসলামীর অনেকে বলে থাকেন জামাআতে ইসলামী অন্যকোন ইসলামী দল বা অন্দোলনকে সঠিক ইসলামী আন্দোলন মনে করে না এই কথাটা সঠিক নয়। আর অধ্যাপক গোলাম আযম খেদমতে দ্বীন বলতে শুধু তাবলীগ জামাআতকেই বুঝিয়েছেন। তাদের জন্য বলা আবশ্যক আমি উনার সোহবতে থাকা মানুষ। অনেক কথার সাথে দ্বিমত করেছি উনার সাথে, তিনি হাসি মুখে মেনেও নিয়েছেন। উনি তাবলীগ কে ইসলামি আন্দোলন মনে করতেন না। অথচ মাওলানা মাওদূদী তাবলীগ কে ‘এক আযীমুশ্বান ইসলামী তাহরিক’ শীরোনামে এক আর্টিকেল লিখেছেন, তা দেখানোর পর অধ্যাপক সাহেব বলেছিলেন, আসলে আমি প্রবন্ধ টা পড়িনি।
ঐক্যের প্রক্রিয়া
উল্লিখিত তিনটি দলের মানসিকতাই আমাদের ইসলামি শক্তির ঐক্যের অন্তরায়। ঐক্যের বাপারে সব বাঁধা দূর করতেই হবে। আমি হলাম ই্বকামতে দ্বীন ও ইসলামী আন্দোলনের উপর একজন গবেষনা করা মানুষ,রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় সহ ৫ টা জগৎ বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে।। আবুল হাসান নাদাওয়ি, গোলাম আযম, মাওলানা আব্দুর রহীম, ইউসুফ ক্বারাদাওয়ী, রাশেদ গানুশিদের পাশে যেয়ে যতটুকু জ্ঞান পেয়েছি তার আলোকেই এই কথাগুলো বললাম।
দেওবন্দীরা তাদের মসজিদ মাদ্রাসা কিংবা দাওয়াতের ময়দানে সবাইকে এক করতে পেরেছিলো একসময়। সহীহ আক্বীদার একমাত্র ধারক হয়েও ইবনে তাইমিয়্যাহ ফাসিক নেতার অধীনে থেকে জিহাদও করতেন প্রতিনিয়ত। মাওদূদী (র) সাহেব তো বলেই দিয়েছেন তাদের জামাআত ‘আলজামাআত’ নয়। পাকিস্থানের কাযী হুসাইন আহমাদ বলেছেন, তুমি যদি নামাজি হও, ইসলাম এর সঠিক জ্ঞান রাখো, এবং ইসলাম কে বিজয়ী শক্তি হিসাবে দেখতে চাও ও তার জন্য কাজ করতে চাও, তাহলে তুমি একজন জামাআতের রুকন। পাকিস্তানে ঐক্যের প্রক্রিয়ায় মাওলানা মওদুদীর ৩টা বই নিয়ে অভিযোগ আসে : রাসায়েল মাসায়েল, খেলাফাত মুলুকিয়াত, ইসলামি রেনেসাঁ। এই বই গুলো ভুল বলা যাবে না, কিন্তু কিছু বিতর্কিত বিষয় ছিল, উনারা তার কারনে বাদ দিতে বলেছিলেন। কাযি হুসাইন তা মেনে নেন, কারন এই সব বই কুরআন বা হাদীস নয়, আর এগুলো সিলেবাসে না রাখলেও মানুষ পড়তে পারবে। তার চিন্তা ভালো ই ছিলো।
এখন এই দেশের ইসলাম পন্থীদের এক হতেই হবে। এবং এই ইগো গুলো বাদ দিতে হবে। আর এই মানসিকতাগুলো ঠিক করতেই হবে। যারাই এই কাজে এগিয়ে আসেবন, আল্লাহর বন্ধুত্বে তারাই এগিয়ে এলো।
বিষয়: বিবিধ
২৬০০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একতা সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বড় বাঁধা হল অন্যের সমালোচনা করা। যা আপনি করলেন।
যেসব দলের নাম নিলেন তাদের সমালোচনা দাব দিয়ে ভাল কাজ গুলোর প্রশংসা করে তাদেরকে কাছাকাছি আনা সম্ভব। আপনার পোষ্ট আরো বিভক্তি বাড়াবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন