ইসলামী আন্দোলনে আত্মমর্যাদাবান নেতা দরকার বেতনভোগী আমলা নয় ,লিখেছেন; ডাক্তার ফিরোজ মাহবুব কামাল
লিখেছেন লিখেছেন স্বপন১ ০২ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৫৫:১৩ রাত
সমগ্র মানব-ইতিহাসে নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের কোরবানী ছিল অতুলনীয়। ফলে তাঁরা মহান আল্লাহর অতুলনীয় সাহায্যও পেয়েছিলেন। প্রাণে প্রকৃত ঈমান এলে আল্লাহর পথে আত্মত্যাগও আসে। আর আত্মত্যাগ এলে, মহান আল্লাহর সাহায্যও আসে। তখন বিজয়ও অনিবার্য হয়। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর নিজেদের সে বিণিয়োগটি কই? তারা ইসলামী আন্দোলনে যা কিছু দিয়েছেন তা থেকে নিয়েছেন অনেক বেশী। অনেকে তাদের নিজেদের পেট বা সংসার চালানোর অর্থ নিয়েছেন দলীয় কর্মীদের দান-খয়রাতের অর্থ থেকে। আল্লাহর কাছে দুটি বিষয়ের হিসাব হয়। একটি হলো তার ঈমান, অপরটি হলো সৎ আমল। এই দু’টি গুণের কারণেই ঈমানদার আল্লাহর দরবারে পুরস্কৃত হয়।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহপাক বলেছেন, “ইন্নাল্লাযীনা আমানু ওয়া আমিলুস সালেহাত, কানাত লাহুম জান্নাতুল ফিরদাউসি নুযুলা।” অর্থঃ নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনলো এবং নেক আমল করলো তাদের জন্য আবাসস্থল হল জান্নাতুল ফেরদৌস।-(সুরা কাহফ, আয়াত ১০৭)ঈমানদারের কাজ তাই, ঈমানে ও সে সাথে নেক আমলের সামর্থে লাগাতর প্রবৃদ্ধি আনা। অন্য কোন যোগ্যতার আগে একজন ব্যক্তির প্রকৃত যোগ্যতা যাচাই হয় মূল এ ক্ষেত্র দু’টিতে। ব্যক্তির বড় নেক আমল হলো, হালাল রুজী অর্জনের মাধ্যমে নিজের ও নিজ পরিবারের ভরণ-পোষনের সামর্থ। সে সাথে অন্যের উপকারের সামর্থ। অথচ খয়রাতের উপর নির্ভরতা সে সামর্থই হরন করে নেয়।
ঈমানদারগণ শিক্ষক হন, ডাক্তার হন, ব্যবসায়ী বা কৃষক হন তো সে আমলের সামর্থ বাড়াতেই। পেশাগত জ্ঞানার্জনও তাই ফরয। এমন জ্ঞানার্জনের তাগিদে প্রাথমিক কালের মুসলমানগণ এমনকি গ্রীক বা অন্যভাষী কাফেরদের লেখা বইও জায়নামাজে বসে পড়েছেন। এমন পেশাদারি জ্ঞান না থাকলে যেটি বাড়ে সেটি পরনির্ভরতা। তখন নিজের ও নিজ পরিবারের পেট চালাতেও তাদের নির্ভর করতে হয় কর্মীদের দেয়া সাদকা বা দান-খয়রাতের উপর।
বাংলাদেশের কোন কোন ইসলামে দলে একারণেই বেড়ে উঠেছে প্রচুর পরজীবী নেতা-কর্মী। এবং বেড়েছে তাদের কায়েমী স্বার্থ। এতে মারা পড়েছে সমাজ বিপ্লবের প্রেরণা। তারা আর কি নেতৃত্ব দিবেন? তাদের বরং দীবা-রাত্র ব্যস্ত থাকতে হয় দলের উপর প্রতিষ্ঠিত নিজেদের কায়েমী স্বার্থের পাহারাদারিতে। কর্মীদের ব্যস্ত থাকতে হয় ইয়ানত বা সাদকা সংগ্রহে। নীচের তলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তখন গড়ে উঠে তোষামোদী চরিত্র। কথা হলো, এরূপ বেতনভোগী নেতাকর্মীদের দিয়ে কঠোর আমলাতন্ত্র গড়ে তোলা যায়, সংগঠনকেও দীর্ঘায়ু দেয়া যায়, কিন্তু তা দিয়ে কি আন্দালনও গড়া যায়? বরং এমন পরজীবী নেতাদের তখন এজেন্ডা হয়, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দুর্বৃত্ত ধণি বা রাজা-বাদাশাহর দরবারে ধর্ণা দেওয়া।
আন্দোলন গড়তে হলে মেরুদন্ডধারি ও আত্মমর্যাদাবান নেতা দরকার। সেটি কি বেতনভোগী আমলাদের দিয়ে হয়? কোন ব্যক্তিকে তার উপার্জনের পেশা থেকে উঠিয়ে এনে পরনির্ভর ও পঙ্গু করা যায়, কিন্তু নেতা বানানো যায় না। বরং এরূপ ছিন্নমূল করাতে যেটি বেড়ে উঠে সেটি হলো মোসাহেবী বা চাটুকারী চরিত্র।
যারা প্রকৃত নেতা তারা নিজ নিজ পেশায় থেকেও বিশাল বিশাল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। এমনই এক নেতা ছিলেন কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি ছিলেন সে আমলে ভারতের এক বিখ্যাত ও ব্যস্ততম ব্যারিস্টার। কিন্তু তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আন্দোলনের। তার সে নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। সেদিন তিনি যে কাজটি করেছিলেন তা ছিল বিস্ময়কর। বাঙ্গালী, পাঞ্জাবী, পাঠান, বেলুচ, বিহারী, অসমী, সিন্ধি এরূপ নানা ভাষাভাষী বিভক্ত মুসলমানদেরকেই শুধু একত্রিত করেননি, একতাবদ্ধ করেছিলেন সূন্নী-শিয়া, দেওবন্দি, বেরলভী, আহলে হাদীস- এরূপ নানা ফেরকায় বিভক্তদেরও। অথচ এতবড় বিশাল কাজ করতে গিয়ে তিনি তার আইনপেশা ছাড়েননি।
আরেক উদাহরণ হলো হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)। তিনি তাঁর বিশাল ফেকাহগত কাজ চালিয়েছেন নিজের কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি। চাষাবাদ, ব্যবসাবাণিজ্য, পশুপালনের ন্যায় নানা পেশায় ব্যস্ত থেকেছেন উচ্চদায়িত্বশীল পর্যায়ের সাহাবায়ে কেরামও। নিজেদের উপর্জন থেকে তারা শত শত উট, ভেড়া এবং অর্থ আল্লাহর রাস্তায় দান করেছেন। অথচ পেশাগত কোন কাজকর্ম বা ব্যবসা-বাণিজ্য নেই ইসলামী আন্দোলনের শত শত নেতা-কর্মীদের। বেতনভূগী এসব সার্বক্ষণিক নেতাদের হাতে বিস্তর সময়, অথচ দেশে তারা কোন আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেনি। একখানি মানসম্মত বই লেখা দূরে থাক, তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে পত্রিকায় ক্ষুদ্রাকারের প্রবন্ধ লেখাও।
ইসলামী আন্দোলনের আরেকটি বিশাল ক্ষতি করেছেন তারা অন্য ভাবে। সেটি হলো, ক্যাডার পদ্ধতির মাধ্যমে নিজ দলে যোগ্যবান প্রতিদ্বন্দী নেতাকর্মীদের প্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর পাহারাদারির ব্যবস্থা করেছেন। অথচ কোন সমাজ বিপ্লবই নিছক ক্যাডারদের দিয়ে গড়ে উঠে না। খরস্রোতা নদীর সৃষ্টিতে যেমন হাজার হাজার ঝর্ণাধারার মিলন ঘটাতে হয়, তেমনি আন্দোলন গড়তে হলেও নানা মতের ও নানা গুণের মানুষের জন্য সংগঠনে স্থান করে দিতে হয়। এজন্য সংগঠনের চাই বিশাল ধারনক্ষমতা। কিন্তু সে ধারনক্ষমতা বাংলাদেশের কোন ইসলামি সংগঠেনর কি আছে?
কোনস্বনামধন্য প্রফেসর, কোন জেনারেল, বড়মাপের কোন লেখক বা বুদ্ধিজীবী, কোন বিজ্ঞানী বা সুপ্রিমকোর্টের কোন বিপারপতিকে ধারণ করার ক্ষমতা কি এসব দলের আছে? একই ধরণের খেলোয়াড়দিয়ে একটি ফুটবল টিমও গড়া যায় না। তাই অভিন্ন গুনের ক্যাডার দিয়ে সংগঠন গড়া গেলেও তাদেরদিয়ে আন্দোলন গড়া যায় না। সমাজ বিপ্লবও সৃষ্টি হয় না।
বিঃদ্রঃ ফিরোজ ভাইয়ের লেখা, আমি কপি পোষ্ট করছি মাএ
বিষয়: বিবিধ
১৯১৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন