শিবিরের ক্রান্তিকালঃ১৯৮২ সালের কথকতা-৭
লিখেছেন লিখেছেন স্বপন১ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৩৮:১০ সকাল
গোটা দেশে যখন যুবশিবিরকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবির এবং জামাতে ইসলামীর মধ্যে বাদানুবাদ, বিতর্ক এবং হুমকি-ধমকি চলছে তখন হঠাৎ করে অধ্যাপক গোলাম আযমের সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। তিনি সিলেট এসেছেন এটা আমার জানা ছিল না। এক শবেবরাতে বন্ধুবর আব্দুল হামিদ মানিককে নিয়ে রিক্সায় চড়ে শহর দেখতে বেরিয়েছি। নয়া সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ মনে হলো খায়রুন্নেসা ভাবীর হাতে তৈরি শবেবরাতের মিষ্টি খেয়ে যাই। তাদের বাসার সামনে রিক্সা থামিয়ে কলিং বেল টিপলাম। দরজা খুললেন অধ্যাপক ফজলুর রহমান। আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘আপনি এসেছেন, খুব ভালো কথা। আসুন, বসুন। প্রফেসার গোলাম আজম তো এখন মিটিংয়ে। দেখি কালকে আপনার জন্যে সময় পাওয়া যায় কি না।’ এ কথা বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি ভেতরে চলে গেলেন। বাধ্য হয়ে বসতে হলো। ফিরে এসে বললেন, ‘আপনি এসেছেন, প্রফেসার সাহেব খুশি হয়েছেন। কালকে ১০টায় তিনি আপনাকে সময় দিয়েছেন।’ অযাচিত সাক্ষাতকারের দিনক্ষণ নিয়ে তার বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম, শবে বরাতের মিস্টি খাওয়া আর হলো না।
পরদিন যথাসময়ে সেখানে হাজির হলাম। প্রফেসার সাহেব খুব আন্তরিকতার সাথে আমার সাথে কোলাকুলি করলেন। খোঁজ খবর নিলেন, কি করছি, কি ভাবে দিনকাল চলছে। খুচরা ব্যক্তিগত খবরা-খবর। এর পর কিছু সিরিয়াস বিষয় অবতারণা করলেন। বললেন, ‘এই যে তোমরা ইসলামী আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, এটা কি ঠিক হলো?’
আমি বললাম, ‘বিচ্ছিন্ন কোথায়? আগে আমাদের শুরু ছিল রাসুলে করীম (স) থেকে, মধ্যখানে লম্ফ দিয়ে সোজা মওলানা মওদুদী। এখন রাসুলে করীম (স) থেকে শুরু করে সাহাবায়ে কেরাম, সলফে সালেহীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন সবার সাথে আছি। গত ১৪ শ বছর যাবত যারা দ্বীনের কাজ করেছেন এবং এখনো করছেন তাদের সকলের সাথে এখন আমরা সম্পৃক্ত। এটা কি বৃহত্তর সংযুক্তি বা ঐক্য নয়।’
আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে তিনি শুধু মুচকি হাসি দিলেন। তারপর প্রসঙ্গ পাল্টে দিয়ে বললেন, ‘তোমরা এ সব কি শুরু করছো? আমি সিলেটের সোলায়মান হলে বক্তৃতা দেব শোনে হলের সর্বত্র যুবশিবির জিন্দাবাদ লিখে রেখেছো, এর অর্থ কি?’
আমি বললাম, ‘আপনি যে সিলেট আসবেন এ খবর যুব শিবিরের কে কতটুকু জানে আমি জানি না। আমি যুব শিবিরের কোন দায়িত্বশীল নই। আমিও আপনার প্রোগ্রাম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। গতরাত হঠাৎ করে এ বাসায় এসে জানলাম আপনি সিলেট এসেছেন। তা ছাড়া আমি দেখেছি, যুব শিবির শহরের সর্বত্র দেয়াল লিখন করেছে। আমার মনে হয় এর অংশ হিসেবেই তারা সোলায়মান হলের দেয়ালেও লিখেছে। আপনার আগমনের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না।’
আমার জবাব শুনে তিনি এ ব্যাপারে আর কোন প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। আরো কিছু প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক আলাপ হলো। এক সময় আমি বললাম, ‘জামাতের তো টাকা আছে। চাইলে তারা কিছু সিনেমা-নাটক তৈরি করতে পারে।’
তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘সিনেমা-নাটক কি ভাবে করবে? মহিলাদের অংশ গ্রহণ ছাড়া বানিজ্যিক ভাবে সিনেমা নাটক সফল হবে না।’
আমি বললাম, ‘মহিলারা অংশ নিবে।’
– ‘এটা কি বলো? মহিলারা কি নিকাব পরে সিনেমায় অংশ নিবে?’
– ‘নিকাব পরবে কেন? মুখ খোলা রাখবে। মুখ খোলা রাখাতে কোন দোষ নেই।’
– ‘মুখ কি ভাবে খোলা রাখবে? এটা তো বৈধ নয়। তুমি কি পর্দা ও ইসলাম বই পড়োনি?’
– ‘পড়েছি। ভালো করেই পড়েছি। সেখানে মাওলানা মুখ ঢেকে রাখার পক্ষে অনেক যুক্তি-তর্কের অবতারণা করেছেন। কিন্তু মুখ ঢাকা রাখার ব্যাপারে কুরআন-হাদীস থেকে কোন রেফারেন্স দেননি। তা ছাড়া মুখ ঢাকা ফরজ হলে কুরআন বা হাদীসে তা স্পষ্ট করে তা বলে দেয়া হতো। কোন ফরজ কাজকে আল্লাহ বা তাঁর রাসুল (স) অস্পষ্ট রাখবেন তা ভাবা যায় না। ’
আমি এ কথা বলার পর এ ব্যাপারে তিনি আর কোন কথা বলেননি। আমি বললাম, ‘জামাত নাটক-সিনেমা নিজ নামে না করে বিত্তশালী লোকদের এ দিকে উৎসাহিত করতে পারে। অর্থের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রীদের এ কাজে পাওয়া যাবে। তারা যদি স্কার্ফ মাথায় দিয়ে এবং শালীন পোশাক করে নাটক-সিনেমায় অভিনয় করে তা হলে বাংলাদেশী তরুণীরা সহজেই এ দিকে আকৃষ্ট হবে। এমনটি করা গেলে শালীন পোশাক এবং স্কার্ফ বাঙালি ফ্যাশনে পরিণত হবে।’
তাঁর চেহারা দেখে মনে হলো আমার এ কথা তার কিছুটা পছন্দ হয়েছে। স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন, ‘ঠিক কাছে, তোমার প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবো।’
একদিন ঢাকা থেকে ইসলামী ব্যাংকের তদানীন্তন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক লস্কর খবর পাঠালেন। তিনি ইসলামী ব্যাংকের সিলেট শাখার জন্যে স্থান নির্ধারণের উদ্দেশ্যে সিলেট আসছেন, আমার সহযোগিতা দরকার। সময় মত তিনি আসলেন। তাঁর কাছে দুটি জায়গার প্রস্তাব ছিল। তাঁর সাথে গিয়ে জায়গাগুলো দেখলাম। আরো দুয়েকটি প্রস্তাব এলো। সেগুলোও দেখলাম। দুপুরে আমার বাসায় ডাল-ভাত খেলেন। তখন বললেন, ‘এতক্ষণ যে কাজ করলাম এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ তোমার সাথে আছে।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী সেটা?’ বললেন, ‘তোমাকে জামাতের সদস্য হতে হবে।’ জানতে চাইলাম, ‘আপনি কি জামাতের সদস্য হয়েছেন?’ জানালেন, তিনি জামাতের সদস্য হননি। বললাম, ‘যে সংগঠনের সদস্য আপনি হননি, সে সংগঠনের সদস্য হবার জন্যে আমাকে চাপ দেয়ার মানে কি?’ বললেন, ‘আমার কথা ভিন্ন। কিন্তু তোমাকে হতে হবে।’ বললাম, মাফ করবেন। এটা সম্ভব নয়।’ এর পর তিনি এ প্রসঙ্গে আর কোন কথা বাড়াননি।
ঢাকা থেকে ছাত্রশিবির, যুবশিবির এবং জামাতের নেতৃবৃন্দ সিলেট এলে তাদের কেউ কেউ দয়া করে আমাকে দেখতে এসেছেন আমার চা-পাতার দোকানে। যুবশিবিরের আহমদ আব্দুল কাদের এবং মুজাহিদুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের সাইফুল আলম খান মিলন এবং ডাঃ আমিনুল ইসলাম মুকুল, জামাতে ইসলামীর মুহাম্মদ কামরুজ্জামান চা-পাতার দোকনে এসেছেন। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আবু তাহের এবং ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাক চা-পাতার দোকানে আসেননি, বাসায় এসেছেন। আমার মনে হয় অন্য সকলের আগমন ছিল সৌজন্য মূলক এবং মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের আগমন ছিল নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে রেখে। তাঁর আগমনের একটা পটভূমি রয়েছে।
আগেই বলেছি, ছাত্রশিবির এক সময় ঘোষণা করে, যারা শিবিরের সাথী হবে তাদের জামাতে ইসলামীকে একমাত্র ইসলামী আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করে নিতে হবে। এর ফলে ছাত্রশিবিরের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ছাত্রশিবিরের এ সিদ্ধান্ত সারা দেশে শিবিরের মধ্যে ভাঙন-ক্রিয়াকে ধারালো ও তরান্বিত করে। আমি ভাবছিলাম, শিবিরের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ও পোলারাইজেশন লক্ষ্য করে জামাত এ ব্যাপারে একটা সমঝোতার পথে এগিয়ে আসবে। সিলেট জেলা জামাতের আমীর অধ্যাপক ফজলুর রহমানকে প্রায়ই একটা কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলতেন, ‘যুব শিবিরের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আমি যুবশিবিরকে জামাতেরই যুবফ্রন্ট হিসেবে দেখি।’ আমার জানামতে সে সময় জামাতে ইসলামীর আরো অনেকে এ মনোভাব পোষণ করতেন।
কিন্তু আমি দেখলাম, যুবশিবির, জামাত এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে বিরোধ, উত্তেজনা, পারস্পরিক চরিত্র হনন দিনে দিনে বাড়ছে। বিরোধী পক্ষের সাথে লড়াইয়ের পরিবর্তে তারা পরস্পর লড়াই করে সময় ও শক্তি ক্ষয় করছে। এ লড়াই এবং শক্তি ক্ষয় বন্ধের জন্যে আমি আমীরে জামাতের কাছে দুটি চিঠি লেখি। আমরা জানি সময় অনেক সময় বড় বড় ক্ষত শুকিয়ে দিতে পারে। এখন যদি সকল পক্ষ যার যার মত কাজ চালিয়ে যেতে পারে তা হলে হয়তো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এক সময় সবাই মিলে একটা সমঝোতার পথ অন্বেষণ করা যেতে পারে। এ চিঠির জবাব দিতেই মুহাম্মদ কামরুজ্জামান আমার সাথে দেখা করতে আসেন। তিনি এসে বললেন, ‘প্রফেসার সাহেব আপনার চিঠি পেয়েছেন। আপনার উদ্বেগ এবং পরামর্শের জন্যে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সাথে সাথে একটা বার্তা আপনাকে পৌঁছে দিতে বলেছেন।’
আমি খুব ঔৎসক্যের সাথে জিজ্ঞেস করলাম, ‘সে বার্তাটি কী?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘অতীতে যা হবার হয়েছে তা ভুলে গিয়ে আপনাকে জামাতে ইসলামীতে যোগ দিতে বলেছেন। সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহের কারণে জামাতে ইসলামীর সদস্য হতে আপনার কোন অসুবিধা হবে না।’ তাঁর জবাব শোনে আমি কয়েক মিনিট চুপ থাকলাম। তারপর বললাম, ‘প্রফেসার সাহেবকে আমার সালাম এবং ধন্যবাদ জানাবেন। আমার প্রতি তাঁর সুধারণা এবং ভালোবাসার শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি। তবে তাঁকে বলবেন, জামাতে ইসলামীর সদস্যপদ গ্রহণের কোন ইচ্ছা আমার নেই। আমি বর্তমানে এ থেকে অনেক দূরত্বে অবস্থান করছি।’
কিছুদিন পর আমার অনেক পুরানো বন্ধু এবং বর্তমানে বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয় অধ্যাপক আব্দুল মুসাওয়ীর আমার বাসায় এলেন। তিনি তখন সাউদি আরবে থাকেন। প্রথমে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে অনেক খোঁজ-খবর নিলেন। জামাত, শিবির এবং যুবশিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী জানতে চাইলেন। রেখে-ঢেকে কিছু কথা বললাম। অনেক রাতে তিনি বিদায় নিলেন। এর দুয়েক দিন পর সন্ধ্যার পর ফোন করলেন অধ্যাপক ফজলুর রহমান। বললেন, তিনি এখনই আমার বাসায় আসতে চান, জরুরী কথা আছে। তিনি এলেন, তাকে সাদরে বসালাম। চা-বিস্কুট খেতে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী এমন জরুরী কথা?’ বললেন, ‘এই মাত্র প্রফেসার গোলাম আযমের ফোন পেলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আপনাকে এক্ষুনি যেন শাহ জালাল জামেয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেই। তিনি আপনাকে কালকেই সেখানে যোগ দিতে বলেছেন।’
তার কথা শোনে অবাক হলাম। কি এমন ঘটনা ঘটলো যার কারণে ঢাকা থেকে এ রকম হুকুমনামা এলো। আমার জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বললেন, ‘অধ্যাপক আব্দুল মুসাওয়ীরের সাথে আপনার আলাপ হয়েছে। তিনি ঢাকায় গিয়ে প্রফেসার সাহেবের সাথে দেখা করেছেন। অধ্যাপক আব্দুল মুসাওয়ীরের কথায় প্রফেসার সাহেব এতটা প্রভাবিত হয়েছেন যে সাথে সাথে আমাকে ফোন করে এ নির্দেশ দিয়েছেন।’
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, ‘আমি আপনার এবং প্রফেসার সাহেবের শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আপনার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আপনি আমাকে জামেয়াতে একটা চাকরি দেয়ার জন্যে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমার পক্ষে এখন আর জামেয়াতে যাওয়া সম্ভব নয়। আমি যে ভাবে আছি, অনেক ভালো আছি। এখন আমি অনেক স্বাধীন। কলেজে যাই, ক্লাস করি। তারপর সিলেট চলে আসি। বাকি সময় আমার নিজস্ব। জামেয়ায় গেলে গোলামী করতে হবে। আমি গোলামী করতে পারবো না।’
উল্লেখ্য, সে সময় আমি বন্ধুবর অধ্যাপক আব্দুল হান্নানের চাপে এবং তাজপুর কলেজের অধ্যক্ষ মুহিব উদ্দীনের অনুরোধে চুনারুঘাট কলেজ ছেড়ে তাজপুর কলেজে চলে এসেছি। তাজপুর কলেজ সিলেট শহরের খুব কাছে, কলেজের ক্লাস শেষে সিলেট শহরে সহজেই ফিরে আসা যেত। ততদিনে চা-পাতার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। ব্যবসায় কোন লাভ করতে পারিনি। বন্ধুবর আব্দুল কাইয়ূম অত্যন্ত বন্ধু-বৎসল এবং দানশীল। তিনি দয়াকরে ব্যবসায় দেয়া তার পুঁজি আর ফেরত নেননি। ততদিনে আমার স্ত্রী সিলেট শহরের কিশোরী মোহন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি জোগাড় করে নিয়েছেন। অবশ্য দু জনের চাকরির আয় সংসার পরিচালনার জন্যে যথেষ্ট ছিল না। আমার ঘনিষ্ট বন্ধু আব্দুল হামিদ মানিক, রাগিব হোসেন চৌধুরী, হারুনুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখের সহযোগিতায় সিলেট রেডিওতে কথিকা পড়ে এবং পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে কিছুটা বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের সৈয়দ মোস্তফা কামাল ডাকতেন বক্তৃতা দিতে। মাঝে মধ্যে যুবশিবিরের লোকেরাও ডাকতো আমাকে। ইসলাম বা সাহিত্য বিষয়ক আলোচনার জন্যে অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকেও দাওয়াত পেতাম। সিলেট প্রেসক্লাব, মুসলিম সাহিত্য সংসদ, বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন ইত্যাদি নিয়ে এ সময় খুব ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছি। শাহ জালাল জামেয়ায় গিয়ে জামাতে ইসলামীর গোলামীর চেয়ে এ সব নিয়েই আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। এর কয়েক বছর পর আমি সিলেট থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে লন্ডনে চলে আসি। গত ৯১ সাল থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে লন্ডনে বাস করছি।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এতোদিন পর এ সকল পুরানো কথা আলোচনার কী কোন প্রয়োজন আছে? আমার মতে অন্য কোন প্রয়োজন না থাকলেও ইতিহাসের একটা দায় আছে। সে দায় মুক্তির খাতিরেই এর অবতারনা।
আত্মকথনের একটা পর্যায় শেষ হলো। অনেক প্রশ্ন এসেছে। সকল প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু সেগুলোর হয়তো গুরুত্ব আছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি না।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন